আরব দেশের একদল দুর্ধর্ষ দস্যু এক গিরিপথের পাশে ঘাঁটি করে থাকত এবং সুযোগ মত পথিকদের কাফেলা আক্রমণ করে লুটতরাজ করত। আশেপাশের বাসিন্দারাও তাদের আক্রমণ ও অত্যাচার থেকে রেহাই পেত না। ফলে সেই গিরিপথ দিয়ে লোক চলাচল এবং বণিকদের ব্যবসা বন্ধ হবার উপক্রম হলো। স্থানীয় বাসিন্দারাও তাদের ভয়ে সর্বদা ভীত সন্ত্রস্থ থাকত। বাদশার সেনাবাহিনী যথেষ্ট চেষ্টা করেও তাদেরকেও দমন করতে সমর্থ হল না। কারণ তাদের আশ্রয়স্থল পাহাড়ের ওপরে এমন নির্ভত জংগলের মধ্যে অবস্থিত ছিল, যা খুঁজে বের করা এবং তাদেরকে গ্রেফতার করা সহজ সাধ্য ছিল না।
অথচ প্রজাসাধারণের জানমালের নিরাপত্তার খাতিরে এই দস্যুদেরকে নির্মল করা আশু প্রয়োজন। দেশের চিন্তাশীল নেতৃবৃন্দ ভাবলেন, এভাবে এদেরকে আরো কিছু দিন প্রশ্রয় দিলে এরা আরো শক্তিশালী হবে, তখন এদের মোকাবিলা করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে।
উচ্চ পর্যায়ের পরামর্শ সভা বসল। স্থির হল, একদল অভিজ্ঞ গুপ্তচর তাদের গতিবিধি লক্ষ্য করে তাদের আড্ডা আবিষ্কার করবে।
তারপর সাহসী দূরদর্শী এবং সমর কুশল একদল সৈন্য ওদের ঘাঁটির আশেপাশের জংগলে খুব সাবধানে লুকিয়ে থাকবে। যখন ওরা ডাকাতি শেষে ঘাঁটির ফিরবে এবং লুট করা মাল ও আস্ত্রশস্ত্র খুলে রেখে ঘুমিয়ে পড়বে , তখন তারা গুপ্তস্থান থেকে হঠাত ওদেরকে ঘিরে ফেলবে। যেমন কথা, তেমনি কাজ। যথাসময়ে দস্যুদেরকে বন্দী করে রাজদরবারে আনা হলো। বাদশা তাদের সবাইকে হত্যা করার হুকুম দিলেন।
দস্যুদের মধ্যে কচি বয়সের একটা ছেলেও ছিল। তার চেহারা ছিল যেমন সুন্দর, স্বাস্থ্যও ছিল তেমনি ভালো। দেখলে মনে হয় ভদ্র পরিবারের সন্তান। ছেলেটার প্রিয়দর্শন চেহারা দেখে একজন মন্ত্রীর প্রাণে স্নেহের সঞ্চার হলো, এমন সুন্দর একটা কিশোর বালককে হত্যা করতে তার মন কিছুতেই সায় দিচ্ছিল না। তিনি বাদশার সামনে নতজানু হয়ে করজোড়ে নিবেদন করলেনঃ জাঁহাপানা! দয়া করে যদি এ ছেলেটার প্রাণ ভিক্ষা দিতেন, তবে বান্দা চিরকৃতজ্ঞ ও বাধিত হত। হুজুরের অনুমতি পেলে আমি তাকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করতাম।
মন্ত্রীর সুপারিশে বাদশা বিরক্ত হলেন। তার রাজোচিত মার্জিত বুদ্ধিতে কাজটা সঙ্গত মনে হলো না। কারণ, বংশগত মন্দ স্বভাব সুশিক্ষায় পরিবর্তিত হয় না। তিনি মন্তব্য করলেনঃ
“নিচ বংশে জন্ম যার নিচ তার মন,
সুশিক্ষায় ভালো তা যে হয় না কখন।
অধমের শিক্ষাদান সার্থক না হয়,
গম্বুজের পরে যেমন ঢিল নাই রয়।“
এই দুষ্টু বদমায়েশদেরকে সমুলে বিনাশ করাই উত্তম। আগুন নিভিয়ে ফুলকি রেখে দেয়া বা সাপ মেরে তার বাচ্চা পোষা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
মন্ত্রী মহোদয় সবকিছু শুনলেন এবং অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভদ্রতার খাতিরে বাদশার কথা সমর্থন করলেন। বাদশার সুচিন্তিত অভিমতের ভুয়সী প্রশংসাও করলেন। সঙ্গে সঙে এও বললেনঃ হুজুর যা বলেছেন, তা বাস্তব সত্য। দস্যুদলে থেকে ছেলেটা বড় হলে পরিণামে দস্যু হতো। কিন্তু আমার মনে হয়, ছেলেটার একেবারে কচি বয়স। জীবন যৌবনের স্বাধ এখনও পায়নি।
কোনও প্রকারের পাপের কালিমা এখনও তার স্বচ্ছ অন্তঃকরণকে মলিন করেনি। ওদের জাতীয় নির্মম হিংস্র স্বভাবের মোহ আজো ওর কচি মনে দাগ কাটেনি। ফেরেশতার মত নিষ্পাপ কোমলমতি বালক। এখন থেকে যদি ওকে সুশিক্ষা দেয়া হয় এবং আমাদের মার্জিত ভদ্র পরিবেশে রেখে ভদ্রতা, মানবতা ও আদব-কায়দা শেখান হয়, তবে নিশ্চয় জ্ঞানী ও চরিত্রবান হবে। সৎ সংগে স্বভাব পরিবর্তনের সময় এখনও তার রয়েছে। হাদীস শরীফে আছেঃ প্রত্যেক শিশু প্রকৃতিগতভাবে সৎ মুসলিম হয়েই ভূমিষ্ঠ হয়।
পরে পিতামাতা তাকে নিজ নিজ ধর্মের বিধান শিক্ষা দেয়। বাবা-মা ইহুদি হলে ইহুদি, খ্রিষ্টান হলে খ্রিষ্টান এবং অগ্নি উপাসক হলে অগ্নি উপাসক দলভুক্ত হয়। ভাল লোকের সংশ্রবে থেকে কত মন্দলোক ভালো হয়ে যায়। আবার মন্দ লোকের সংশ্রবে থেকে কত ভালো লোকও মন্দ হয় যায়।
“নবীর পুত্র হলো কাফের মিশে সে কাফের সনে,
কুকুর সে পেল মানুষের মান সত্যের অনুগমনে।‘
মন্ত্রীমহোদয়ের যুক্তিপূর্ণ মন্তব্য শুনে সভাসদ্গণের অনেকে তার পক্ষ সমর্থন করলেন এবং তার সাথে ছেলেটার মুক্তির আবেদন জানালেন।
অগ্যতা বাদশাহ তার দন্ডাদেশ মওকুফ করে দিলেন এবং বললেনঃ আপনাদের অনুরোধে ওকে ক্ষমা করলাম বটে। কিন্তু কাজটা আমার বিবেচনায় সঙ্গত মনে হলো না। কারন জ্ঞানি লোকেরা বলে গেছেনঃ শত্রুকে অক্ষম মনে করে তুচ্ছ করা উচিত নয়। সঙ্কীর্ন পয়ঃপ্রণালী অনেক সময় বিরাট নদীতে পরিণত হতে দেখা গেছে।
মন্ত্রীমহোদয় আদর করে ছেলেটাকে বাড়ি নিয়ে এলেন এবং পরম যত্নে প্রতিপালিত করতে লাগলেন। তার সুশিক্ষার জন্য উপযুক্ত শিক্ষক নিযুক্ত করা হলো। ছেলেটা খুব মেধাবী ও হুঁশিয়ার ছিল। নিজ প্রতিভা বলে অল্প দিনের মধ্যে সে লেখাপড়ায় বেশ উন্নতি দেখাতে লাগল।
জ্ঞান-বুদ্ধি স্বভাব চরিত্র ও ভদ্র ব্যবহারে সে সবার প্রিয় পাত্র হয় উঠল।
শাহী দরবারের আদব-কায়দা ও চালচলনে সে বেশ অভ্যস্ত হলো।
একদা মন্ত্রীমহোদয় রাজদরবারে কথা প্রসঙ্গে ওই ছেলেটার গুণকীর্তন করে বললেনঃ সুশিক্ষা ওর ভেতর এমনি তাছির করেছে যে, তার পৈত্রিক অসভ্য স্বভাব একদম দূরীভূত হয়ে গেছে।
বাদশা একটু মুচকি হেসে বললেনঃ
পরিণামে শৃগাল বাচ্চা শৃগালই রয়,
যদিও সে লোকালয়ে সুশিক্ষিত হয়।
এভাবে কয়েকটা দিন গড়িয়ে গেল। গতিশীল দুনিয়ার চিরন্তন নিয়মে সেই বালকও যৌবনে পদার্পন করলো। মন্ত্রীর পালক পুত্র হিসেবে সবাই তাকে সমীহ করে চলে। তার বন্ধুবান্ধবেরও অভাব নেই।
দেশের ভেতর একদল দুষ্কৃতিকারী ছিল। ওই যুবক গোপনে গোপনে কবে তাদের হাতে হাত মিলিয়েছে তা কেউই টের পায়নি। একদিন সময় সুযোগমত সকল কৃতজ্ঞতার বন্ধন ছিন্ন করে সে তার প্রতিপালক মন্ত্রীকে ও তার উভয় পুত্রকে হত্যা করে তাদের সকল ধনসম্পদ নিয়ে দস্যু দলে ভিড়ে গেল এবং শহর ছেড়ে সেই পাহাড়ের ঘাঁটিতে গিয়ে বাবার স্থান অধিকার করে বসলো। এই সংবাদ শুনে বাদশা আক্ষেপ করে বললেনঃ
“নিকৃষ্ট লোহায় কভু হয়না তলোয়ার,
ইতর শেখে না কভু ভদ্র ব্যবহার।
বরষার বারি ঝরে সর্বত্র সমান,
কোথাও আগাছা জন্মে কোথা ফলে ধান।
লোনা জমি নেবে নাকো সোনার ফসল,
মেহনত যতই কর সকলই বিফল।
ভালোদের ক্ষতি করা অন্যায় যেমন,
মন্দদের হিত করা দোষের তেমন।‘
শিক্ষাঃ ইবলিসের ঔরষে ইবলিসই জন্ম হয়। সেখান থেকে ফেরেশতা বা মানুষ পয়দা হওয়ার চিন্তা করা যায় না। শত্রুর সন্তান চির শত্রুই হয়, তাকে দুধ কলা দিয়ে পোষা মানে শত্রুকে বলিষ্ঠ করে তোলা। জ্ঞানী লোকেরা কখনও আগুন নিভিয়ে ফুলকি রাখে না অথবা সাপ মেরে তার বাচ্চা পোষে না। পাপী লোকের সন্তানের মধ্যে এক সময় পাপের কালিমার বীভৎস রূপ ফুটে উঠবেই, তাকে সতই সাধু প্রকৃতির লোক মনে হোক না কেন। শুকরের বাচ্চা শুকরই হবে, যতই তাকে পোষা হোক না কেন, সুযোগ পেলে সে মলমূত্রে অবস্থান করবেই।
If you're planning to give your car a new look, one of your first questions…
If you're thinking about building a barndominium in 2025, you're not alone. These barn-style homes…
A dead or drained car battery can be a frustrating issue, especially when you're in…
Dreaming of a tropical escape but want to explore on your own terms? If you’ve…
Teaching your child to share is one of the most valuable lessons they’ll learn in…
Old gasoline sitting in your garage or shed can pose serious risks to your health,…