৫০০। মুহাম্মাদ ইবনু ‘আবদুল মালিক ইবনু আবূ মাহযূরাহ হতে তার পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি [আবূ মাহযূরাহ (রাঃ)] বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে আযানের নিয়ম শিখিয়ে দিন। তিনি আমার মাথার সম্মুখ ভাগে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, তুমি বলবেঃ আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার-উচ্চস্বরে। এরপর কিছুটা নীচু স্বরে বলবেঃ আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ। হাইয়্যা ‘আলাস সলাহ, হাইয়্যা ‘আলাস সলাহ। হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ, হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ। ফজরের সালাত হলে বলবেঃ আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম, আসালাতু খাইরুম মিনান নাউম (ঘুমের চেয়ে সালাত উত্তম-দু’বার)। আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।[1]
সহীহ।[1] আহমাদ (৩/৪০৮), বুখারী ‘আফ‘আলুল ‘ইবাদ’ (হাঃ ১৩৯) আবূ মাহযুরাহর হাদীস।
–
আযান সংক্রান্ত যা জানা জরূরীঃ
(ক) আযানের বিভিন্ন মাসায়িলঃ
(১) উচ্চকণ্ঠ ব্যক্তি ক্বিবলাহমুখী হয়ে দাঁড়িয়ে আযান দিবেন। তিনি দু’ কানে আঙ্গুল প্রবেশ করাবেন, যাতে আযানে জোর হয়। ‘হাইয়া ‘আলাস সলাহ ও হাইয়া ‘আলাল ফালাহ’ বলার সময় যথাক্রমে ডানে ও বামে কেবল মুখ ঘুরাবেন, দেহ নয়- (তিরমিযী, নায়লুল আওত্বার ২/১১৪-১১৬)। যখমী হলে বসেও আযান দেয়া যাবে- (বায়হাক্বী, ইরওয়াউল গালীল ১/২৪২)।
(২) জরূরী কোনো ওযর না থাকলে আযান শুনে মাসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া সুন্নাতের বরখেলাফ ও ঘোরতর অপরাধ। (সহীহ মুসলিম, ফিক্বহুস সুন্নাহ)।
(৩) যিনি আযান দিবেন, তিনিই ইক্বামাত দিবেন। তবে অন্যেও দিতে পারেন। অবশ্য কোনো মসজিদে নির্দিষ্ট মুয়াজ্জিন থাকলে তার অনুমতি নিয়ে অন্যের আযান ও ইক্বামাত দেয়া উচিত। তবে সময় চলে যাওয়ার উপক্রম হলে যে কেউ আযান দিতে পারেন। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৯০, ৯২)।
(৪) বিনা চাওয়ায় ‘সম্মানী’ গ্রহণ করা চলবে। কেননা মজুরীর শর্তে আযান দেয়া সম্পূর্ণ নিষেধ। তবে নির্দিষ্ট ও নিয়মিত ইমাম ও মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব গ্রহণ করা সমাজ ও সরকারের উপর অপরিহার্য। (আহমাদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ, আবূ দাঊদ-সনদ সহীহ, মিশকাত, ‘দায়িত্বশীলদের ভাতা’ অধ্যায়, হা/ ৩৭৪৮)
(৫) ভুমিষ্ট সন্তানের কানে আযান শুনাতে হয়। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নায়ল ‘আকীকা’ অধ্যায়, ইরওয়া হা/ ১১৭৩)। তবে ডান কানে আযান ও বাম কানে ইক্বামাত শুনানোর হাদীস যা হাসান ইবনু ‘আলী (রাঃ) থেকে মারফূ হিসেবে বর্ণিত হয়েছে, উক্ত হাদীসটি মাওযু বা জাল। ইরওয়া হা/ ১১৭৪, সিলসিলাহ যঈফাহ হা/ ৩২১)।
(৬) আযান উযু অবস্থায় দেয়া উচিত। তবে বে-উযু অবস্থায় দেয়াও জায়িয আছে। আযানের জওয়াব বা অনুরূপ যে কোনো তাসবীহ, তাহলীল ও দু‘আসমূহ নাপাক অবস্থায় পাঠ করা জায়িয আছে।
(৭) ইক্বামাতের পরে দীর্ঘ বিরতী হলেও পুনরায় ইক্বামাত দিতে হবে না। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৮৯, ৯২)
(৮) আযান ও জামা‘আত শেষে কেউ মসজিদে এলে কেবল ইক্বামাত দিয়েই জামা‘আত ও সালাত আদায় করা উচিত। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৯১) (তথ্যসূত্রঃ সালাতুর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ৪৬ পৃষ্ঠা)।
(৯) মহিলারাও আযান এবং ইক্বামাত দিতে পারবেন। এতে আপত্তি নেই। তবে না দিলেও জায়িয। (ইমাম শাফিঈ ও আহমাদ প্রমুখের অভিমত এটাই ইবনু আবূ শায়বাহ ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর আযান ও ইক্বামাত দেয়ার হাদীস দ্রঃ ১/২২৩, বাহরূর রায়িক ১/২৫ কেবল ইক্বামাত দেয়ার কথা রয়েছে, মাবসূত ১/১৩৩ আযান ইক্বামাত দু’টোই আলমুগনী ১/৪২২, ফিক্বহুস সুন্নাহ)।
(১০) কয়েক ওয়াক্ত ক্বাযা সালাতের জন্য এক আযান এবং একাধিক ইক্বামাত (অর্থাৎ প্রত্যেক ওয়াক্ত সালাতের জন্য আলাদাভাবে একবার করে ইক্বামাত) দিয়ে সালাত আদায় করবে। (সহীহ মুসলিম, আহমাদ)
(খ) আযানের জওয়াবে বাড়তি বিষয় পরিত্যাজ্যঃ আযানের দু‘আয় কয়েকটি বাড়তি বিষয় চালু রয়েছে, যা পরিহার করা উচিত।
(১) বায়হাক্বীতে বর্ণিত আযানের দু‘আর শুরুতে ‘‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আস-আলুকা বি হাক্বক্বি হাযিহিদ দা‘ওয়াতি।’’ অন্যান্য সহীহ হাদীসসমূহের পরিপন্থি হওয়ার কারণে এ অংশটুকুত শায।
(২) বায়হাক্বীর একই হাদীসে আযানের দু‘আর শেষে ‘‘ইন্নাকা লা তুখলিফুল মী‘আদ।’’ এ অংশটুকু শায।
(৩) ত্বাহাভীর শারহু মা‘আনিল আসারে বর্ণিত ‘‘আ-তি সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদান।’’ এ অংশটুকু শায ও মুদরাজ।
(৪) ইবনুস সুন্নীর ‘আমলুল ইয়াওমি ওয়াল লায়লাহ’ গ্রন্থে বর্ণিত ‘‘ওয়াদ দারাজাতার রফী‘আহ।’’ এটিও কতিপয় পান্ডুলিপির মুদরাজ বর্ণনা। কারণ ইবনুস সুন্নী হাদীসটি তার উস্তাদ ইমাম নাসায়ীর সূত্রে বর্ণনা করেছেন। অথচ নাসায়ীতে ঐ শব্দ দু’টি নেই, এমন কি অন্যদের নিকটও নেই। ইমাম সাখাবী (রহঃ) বলেন, ঐ শব্দগুলো কোনো হাদীসেই পাওয়া যায় না। হানাফী ‘আলিম ‘আব্দুল্লাহ দেহলভী (রহঃ) বলেন, ঐ দু’টি শব্দ মনে হয় মুদ্রক, প্রকাশক কিংবা সংশোধকের ভুল। আর ইমাম সাখাবীর নিকট ইবনুস সুন্নীর ঐ পান্ডুলিপির ছিলো যাতে উক্ত শব্দ দু’টি ছিলো না। সুতরাং কতিপয় পান্ডুলিপিতে প্রকাশিত উক্ত শব্দ দু’টি বিকৃত।
(৫) রাফি‘ঈর ‘আল-মুহাররির’ গ্রন্থে আযানের দু‘আর শেষে বর্ণিত ‘‘ইয়া আরহামার রা-হীমীন।’’ এটিও প্রমাণহীন। হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী ও মোল্লা ‘আলী ক্বারী হানাফী (রহঃ) বলেন, ‘‘ওয়াদ দারাজাতার রফী‘আহ’’ ও ‘‘ইয় আরহামার রা-হীমীন’’ শব্দগুলোর কোনো প্রমাণ নেই। ইমাম সাখাভী (রহঃ) বলেন, ঐ শব্দগুলো কোনো হাদীসেই পাওয়া যায় না। (দেখুন, শায়খ আলবানী, প্রণীত ইরওয়াউল গালীল, হা/ ২৪৩, মোল্লা ‘আলী ক্বারী হানাফী, মিরক্বাত (২/১৬৩), তালখীসুল হাবীর ১/৭৮, শামী ১/৩০, মাওযু‘আতে কাবীর- পৃষ্ঠা ৩৮, শারাহ নিকায়াহ ১/৬২, মাক্বাসিদুল হাসানাহ- ২১২ পৃঃ)।
(৬) আযান বা ইক্বামাতে ‘‘আশহাদু আন্না সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’’ বলা। (দেখুন, ফিক্বহুস সুন্নাহ)
(৭) আযানের দু‘আয় ‘‘ওয়ারযুক্বনা শাফাআতাহ ইয়অওমাল ক্বিয়ামাহ’’ বাক্যটি যোগ করা। এর কোনো শারঈ ভিত্তি নেই। তা সত্ত্বেও আযানের দু‘আয় রেডিও বাংলাদেশে ও বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে ভিত্তিহীন এ বাক্যটি প্রচার করা হয়।
অতএব উপরোক্ত বাক্যগুলো বলা থেকে বিরত থাকা উচিত। কেননা হাদীস বিকৃত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেছেনঃ ‘‘যে ব্যক্তি আমার নামে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যারোপ করলো (অর্থাৎ আমি যা বলিনি তা আমার দিকে সম্পর্কিত করলো) সে জাহান্নামে তার ঠিকানা করে নিলো।’’ (দেখুন, সহীহুল বুখারী)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ ‘‘যে ব্যক্তি আমার নামে এমন হাদীস বর্ণনা করলো, ধারণা করা যাচ্ছে যে সেটি মিথ্যা, সে অন্যতম মিথ্যাবাদী।’’ (দেখুন, সহীহ মুসলিম)।
একদা সাহাবী বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) রাতে শয়নকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শিখানো একটি দু‘আ যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে শুনান তখন তাতে ‘‘আমানতু বি নাবিয়্যিকাকাল্লাযী আরসালতা’’ স্থলে ‘‘বি রসূলিকা’’ বলায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রেগে উঠেন এবং তাকে বলেন, আমার শিখানো শব্দ ‘‘বি নাবিয়্যিকা’’ বলো, ‘‘বি রসূলিকা’’ নয় (অথচ এতে অর্থের কোনো তারতম্য ছিলো না)। (দেখুন, সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম)।
সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাবীর স্থলে রসূল শব্দ বলাটাই যখন অন্যায় ও বাড়াবাড়ি হলো, যে কারণে তিনি রেগে গেলেন, তখন আযানের দু‘আয় ঐ ধরণের ভিত্তিহীন শব্দ বলার পরিণতি কিরূপ হবে তা চিন্তার বিষয় কি? আল্লাহ আমাদেরকে সংশয়পূর্ণ ও মনগড়া বিষয় বর্জনের তাওফিক দান করুন- আমীন!
(গ) আযানের অন্যান্য পরিত্যাজ্য বিষয়ঃ
(১) ‘তাকাল্লুফ’ করাঃ আযানের উক্ত দু‘আটি রেডিও কথক এমন ভঙ্গিতে পড়েন, যাতে প্রার্থনার আকৃতি থাকে না। যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। কারণ নিজস্ব স্বাভাবিক সুরের বাইরে যাবতীয় তাকাল্লুফ বা ভাণ করা ইসলামে দারুনভাবে অপছন্দনীয়। (মিশকাত হা/ ১৯৩, ‘রিয়া হলো ছোট শিরক, আহমাদ, বায়হাক্বী)।
(২) গানের সুরের আযান দেয়াঃ গানের সুরে আযান দিলে একদা ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) জনৈক মুয়াজ্জিনকে ভীষণভাবে ধমক দিয়ে বলেছিলেন, আমি তোমার সাথে অবশ্যই বিদ্বেষ পোষণ করবো আল্লাহর জন্য। (ফিকহুস সুন্নাহ, সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম)।
(৩) আযানের আগে ও পরে উচ্চস্বরে যিকরঃ আজকাল জুমু‘আহর দিনে এবং অন্যান্য সালাতে বিশেষ করে ফাজরের আযানের আগে ও পর বিভিন্ন মসজিদে মাইকে ‘আসসালাতু ওয়াসসালামু ‘আলা রসূলিল্লাহ’ বলা হয়। এতদ্ব্যতীত হামদ্, নাত, তাসবীহ, দরূদ, কুরআন তিলাওয়াত, ওয়ায, গযল ইত্যাদি শুনা যায়। অথচ এগুলি বিদ‘আত এবং কেবলমাত্র ‘আযান’ ব্যতীত আর সবকিছুই পরিত্যাজ্য। এমন কি আযানের পরে পুনরায় ‘আসসালাতু আস্সালত’ বলে ডাকাও সাহাবী ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) প্রমুখ বিদ‘আত বলেছেন- (তিরমিযী, ফিকহুস সুন্নাহ)। তবে ব্যক্তিগতভাবে যদি কেউ কাউকে সালাতের জন্য ডাকেন বা জাগিয়ে দেন, তাতে তিনি অবশ্যই নেকী পাবেন। (সহীহুল বুখারী)।
(৪) বিপদে আযান দেয়াঃ বালা-মুসিবতের সময় বিশেষভাবে আযান দেয়াও কোনো দলীল নেই। কেননা আযান কেবল ফরয সালাতের জন্যই হয়ে থাকে, অন্য কিছুর জন্য নয়- (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৯৩)।
(৫) আঙ্গুলে চুমু দিয়ে চোখ রগড়ানোঃ আযান ও ইক্বামাতের সময় ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ শুনে বিশেষ দু‘আ সহ আঙ্গুলে চুমু দিয়ে চোখ রগড়ানো, আযান শেষে দু’ হাত তুলে আযানের দু‘আ পড়া কিংবা উচ্চস্বরে ওটা পাঠ করা ও মুখে হাত মোছা ইত্যাদির কোনো শারঈ ভিত্তি নেই। (ফিক্বহুস সুন্নাহ)। (সালতুর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৪৫ পৃঃ)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম শুনে বা মুয়াজ্জিনের আযানে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ শুনে কেউ আঙ্গুলে চুমু দিয়ে চোখ রগড়ালে তার জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শাফা‘আত হালাল হয়ে যাবে এবং তার চোখ অন্ধ হবে না ও চোখ উঠবে না- এ মর্মে বর্ণিত হাদীস দু’টি মিথ্যা ও বানোয়াট। আল্লামা সাখাভী (রহঃ) বলেন, দু’টো হাদীসই সহীহ নয় এবং এর কোনোটিরও সনদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছায় না- (ফিক্বহুস সুন্নাহ, ১/১২১)। ‘আবদুল হাই লাখনৌভী হানাফী (রহঃ) বলেন, আযান ও ইক্বামাতে যখনই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম শুনা যায় তখনই দু’ নখে চুমু খাওয়া কোনো হাদীসে অথবা সাহাবীদের কোনো আসারে প্রমাণ পাওয়া যায় না। তাই যে এরূপ বলে সে ডাহা মিথ্যুক। এ কাজ জঘন্য বিদ‘আত। (যাহরাতু রিয়াযিল আবরার, পৃষ্ঠা ৭৬, আইনী তুহফা)।
(৬) আযান ও ইক্বামাতে মনগড়া শব্দ যোগ করাঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাজরের আযানে ‘আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম’’ এবং ‘ইক্বামাতে ক্বাদকামাতিস সালাত’’ এবং ঝড়বৃষ্টির সময় ‘‘আলা-সল্লু ফী রিহালিকুম’’ ছাড়া অন্য কোনো শব্দ বাড়াননি। সুতরাং উক্ত বাড়তি শব্দগুলো সুন্নাত (যা সহীহ হাদীসসমূহ দ্বারা প্রমাণিত)। কিন্তু পরবর্তীকালে কিছু লোক আযানে সুন্নাতী শব্দের সাথে কতিপয় মনগড়া শব্দ ঢুকিয়ে দিয়ে আযানেও বিদ‘আত সৃষ্টি করেছেন। হিজরীর প্রথম শতরেক শেষ দিকে খলীফা কিংবা গভর্নর অথবা জনগণ যখন মসজিদে পৌঁছতো তখন মুয়াজ্জিন আযান এবং ইক্বামাতের মাঝে বারংবার বলতেন ক্বাদ ক্বামাতিস সালাহ এবং হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ। একদা বিখ্যাত সাহাবী ‘আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) কোনো মসজিদে ঐরূপ বলা দেখে নিজের সাথীকে বললেন, বিদ‘আতীদের মাসজিদ থেকে বেরিয়ে চলো। অতঃপর সেখানে তারা সালাত আদায় করলে না। (দেখুন, তিরমিযী ১/২৭)।
(ক) উমাইয়া খলীফাদের যুগে ‘‘হাইয়্যা ‘আলাস্ সালাহ ইয়া খলীফাতা রসূলিল্লাহ’’ শব্দগুলো বাড়ান হয়।
(খ) মিসরের শিয়া ফাত্বিমী খালীফাদের যুগে ৩৪৭ হিজরীতে, ‘‘মুহাম্মাদুন ওয়া ‘আলিয়ূন খাইরুল বাশার’’ শব্দগুলো যেগ করা হয়।
(গ) এক ফাত্বিমী খলীফা মুয়িয্য লি দীনিল্লাহ ৩৫৯ হিজরীতে ‘‘হাইয়্যা ‘আলা খায়রিল ‘আমল’’ শব্দগুলো জারি করেন।
(ঘ) ৪০১ হিজরীতে আযানের পর ‘‘আসসালাতু ‘আলা আমীরিল মু‘মিনীন ওয়া রহমাতুল্লাহ’’ শব্দগুলো সংযোজিত হয়।
(ঙ) ৪০৫ হিজরীতে ‘‘আসসালাতু রহিমাকাল্লাহ’’ বাড়ান হয়।
(চ) আবূল মায়মূন ইবনু ‘আব্দুল মাজীদ ৫২৪ হিজরীতে উক্ত (খ) ও (ঘ)-এ বর্ণিত শব্দগুলো আযান থেকে বাতিল করে দিলে ৫২৬ হিজরীতে হাফিয লি দীনিল্লাহ আবার তা জারি করেন।
(ছ) ৫৬৭ হিজরীতে সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ূবী ফাত্বিমী শিয়াদের দমন করে মিসরে আবার সুন্নাতী আযান প্রচলন করেন।
(জ) ৭৬০ হিজরীতে মুহতাসিব সালাহউদ্দীন ‘আব্দুল্লাহ বারীযী ‘‘আসসালাতু ওয়াসসালামু ইয়া রাসূলুল্লাহ’’ শব্দগুলো চালু করেন।
(ঞ) সিনেমার গানের সঙ্গে যে আযান দেয়া তা ফাত্বিমী রাফিযীদের তৈরীকৃত। হিজরীর অষ্টম শতকের শুরুতে নাজমুদ্দীন তাবান্দী নামক এক দারোগা ঐ ঢং চালু করেন। যা ৭৯১ হিজরীতে মিসর ও সিরিয়ার সমস্ত শহরে ছড়িয়ে পড়ে। (দেখুন, মাকরীযীর খিতাত ওয়াল আসার, ৪/৪৪-৪৭)।
হানাফী মাযহাবের দু’ নম্বর ইমাম আল্লামা আবূ ইউসূফ (রহঃ) বলেন, শাসক, মুফতি, ক্বাযী ও শিক্ষক প্রভৃতিকে অবহিত করানোর জন্য যদি মুয়াজ্জিন আযানের পর এ কথাগুলো বলে, ‘‘আসসালামু ‘আলাইকা ইয়া আমীর, হাইয়্যা ‘আলাস্ সালাহ হাইয়্যা আলাল ফালাহ, আসসালাতু ইয়ারহামু-কাল্লাহ’’ তাহলে কোনো আপত্তি নেই। ফাতাওয়াহ ক্বাযীখানও এটাকে গ্রহণ করেছেন।
কিন্তু ইবনুল মালিক উল্লেখ করেছেন যে, এ ব্যাপারে ইমাম আবূ হানিফা (রহঃ) ইমাম মুহাম্মাদ (রহঃ)-এর সাথে আছেন। এ সম্পর্কে ইমাম মুহাম্মাদ (রহঃ) বলেন, আবূ ইউসূফের জন্য আফসোস! যিনি শাসকদের জন্য আযানে বাড়াবাড়ি নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। (দেখুন, আল বাহরুর রায়িক, ১/২৬১, মাসবূত ১/১৩১, (তথ্যসূত্রঃ আইনী তুহফা সালাতে মুস্তাফা)।
অতএব সহীহ হাদীস মোতাবেক সুন্নাতী আযান দেয়া অপরিহার্য। এ ক্ষেত্রে যে কোনো ধরণের বাড়াবাড়ি করা সীমালঙ্ঘন, ভ্রষ্ঠতা ও চরম অন্যায়। তাই সহীহ হাদীসে বর্ণিত শব্দাবলী ছাড়া মানুষের মনগড়া সকল প্রকার শব্দ অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
If you're thinking about building a barndominium in 2025, you're not alone. These barn-style homes…
A dead or drained car battery can be a frustrating issue, especially when you're in…
Dreaming of a tropical escape but want to explore on your own terms? If you’ve…
Teaching your child to share is one of the most valuable lessons they’ll learn in…
Old gasoline sitting in your garage or shed can pose serious risks to your health,…
If you’re a fan of anime and are curious about the stranger, more supernatural side…