আল-হাকীম (সুবিজ্ঞ, সুদক্ষ)[1]
আল-হাকীম হলেন, যিনি সৃষ্টিকুলকে সুন্দর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন সেসব সৃষ্টিজগত ও তাদের আদেশ-নিষেধের ব্যাপারে যার রয়েছে সুউচ্চ হিকমত। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَمَنۡ أَحۡسَنُ مِنَ ٱللَّهِ حُكۡمٗا لِّقَوۡمٖ يُوقِنُونَ٥٠﴾ [المائدة: ٥٠]
“আর নিশ্চিত বিশ্বাসী জাতির জন্য বিধান প্রদানে আল্লাহর চেয়ে কে অধিক উত্তম?” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৫০]
অত:এব, তিনি কোন কিছু বৃথা সৃষ্টি করেন নি এবং কোন বিধানও তিনি অযথা শরী‘আতবদ্ধ করেন নি। সৃষ্টির শুরুতে ও শেষে সর্বাস্থায় তাঁর রয়েছে বিধান। তাঁর বিধিবদ্ধ তিনটি বিধানের ব্যাপারে কেউ অংশীদার নেই। তিনি বান্দার শরী‘আত, তাদের তাকদীর ও তাদের প্রতিদান এ তিন ব্যাপারে ফয়সালা দেন। হিকমত হলো বস্তুকে তার যথাযথ স্থানে রাখা এবং যেটিকে যেখানে নামানো প্রয়োজন সেটিকে সেখানে রাখা।[2]
আল-হাকীম পূর্ণাঙ্গ হিকমত ও সৃষ্টিকুলের মধ্যে পরিপূর্ণ হুকুম দেওয়ার গুণে গুণান্বিত। অত:এব, আল-হাকীম হলেন প্রশস্ত ব্যাপক ইলম ও সর্ববিষয়ে জ্ঞানের অধিকারী। তিনি বস্তুর মৌলিক জ্ঞান ও তাদের শেষ পরিণতি সম্পর্কে অবগত। তিনি সর্বময় প্রশংসা, পূর্ণ কুদরত ও অফুরন্ত রহমতের অধিকারী। তিনিই সব বস্তুকে তার যথাযথ স্থানে সংস্থাপন করেছেন, যাকে যে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করা দরকার তাকে সে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন। সুতরাং তাঁর কাজে কেউ কোন প্রশ্ন করতে পারে না এবং তাঁর হিকমতের ব্যাপারে কেউ সমালোচনাও করতে পারে না।
আল্লাহর হিকমত দু’প্রকার:
প্রথমত: সৃষ্টির ব্যাপারে তাঁর হিকমত। তিনি সৃষ্টিকুলকে যথার্যভাবে সৃষ্টি করেছেন। তাদেরকে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তাদের ব্যাপারে তাঁর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সত্য। তিনি সৃষ্টিকুলকে উত্তম আকৃতিতে ও পূর্ণাঙ্গ সুঠাম কাঠামোতে সৃষ্টি করেছেন। প্রত্যেক সৃষ্টিকে তার উপযোগী আকৃতি দান করেছেন; বরং তিনি সব সৃষ্টিকে তার প্রয়োজনীয় যাবতীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করেছেন। প্রত্যেক প্রাণীর প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তার উপযোগী করে তিনি সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং কেউ তাঁর সৃষ্টির মধ্যে ত্রুটি, কমতি ও ছেঁড়া-ফাটা দেখতে পাবে না। সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সৃষ্টিকুলের সমস্ত জ্ঞানবানরা একত্রিত হয়ে দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টির মতো কিছু সৃষ্টি করতে বা সৃষ্টিজগতে যেসব সুন্দর ও সুঠাম সৃষ্টি আছে তার কাছাকাছি কিছু তৈরি করতে চেষ্টা করে তাহলে তারা কেউ তা সক্ষম হবে না। কিভাবেই বা তারা এ কাজ করতে সক্ষম হবে? প্রজ্ঞাবান ও জ্ঞানীদের জন্য এটিই যথেষ্ট যে, তারা তাঁর হিকমতের অনেক কিছুই স্বীকার করে, এসবের কিছু কিছু সৌন্দর্য, সুষ্ঠ ও সুদৃঢ় সৃষ্টি সম্পর্কে তারা অবগত হয়। এ কথা সকলের কাছেই অত্যাবশ্যকীয় জ্ঞাতব্য বিষয়, যেহেতু তারা তাঁর মহত্ব ও পূর্ণাঙ্গ গুণাবলী জানে এবং সৃষ্টি ও এদের পরিচালনার ব্যাপারে তাঁর হিকমত অনুসন্ধান করে।
তিনি তাঁর বান্দাদেরকে তাঁর সৃষ্টির ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ করেছেন, তাদেরকে তাঁর সৃষ্টিজগত দেখতে আদেশ করেছেন, বারবার দৃষ্টিপাত ও চিন্তা করতে বলেছেন। তারা কি তাঁর সৃষ্টির মাঝে ত্রুটি বা অপূর্ণতা দেখতে পায়? তাদের চক্ষুসমূহ আল্লাহর সৃষ্টিজগত সম্পর্কে সমালোচনা করতে অবশ্যই অক্ষম হবে।
দ্বিতীয় প্রকার: তাঁর শরী‘আত ও আদেশ-নিষেধের ব্যাপারে হিকমত। আল্লাহ তা‘আলা যুগে যুগে বিভিন্ন শরী‘আত বিধিবদ্ধ করেছেন, বান্দাদেরকে তাঁর পরিচয় জানাতে ও তাঁর ইবাদত করতে তিনি কিতাবসমূহ নাযিল করেছেন এবং রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছেন। সুতরাং এর চেয়ে আর কি উত্তম হিকমত থাকতে পারে? এর চেয়ে কি উত্তম দয়া ও সম্মান হতে পারে? কেননা আল্লাহ তা‘আলার পরিচয় লাভ, একমাত্র তাঁর ইবাদত করা, তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করা, ইখলাসের সাথে তাঁর জন্য আমল করা, তাঁর শুকরিয়া ও গুণগান করার চেয়ে বান্দার জন্য সাধারণভাবে উত্তম কাজ আর কিছু হতে পারে না।
আল্লাহ যাকে এসব নি‘আমত দান করেন সে-ই সর্বাধিক সম্মানিত, সবচেয়ে সৌভাগ্যবান, অন্তর ও রূহের দিক থেকে সে সবচেয়ে সুখী ব্যক্তি। এছাড়াও এ পথটি চিরস্থায়ী জান্নাতে যাওয়ার একমাত্র পথ।
তাঁর নির্দেশ ও শরী‘আতে যদি এসব সুউচ্চ হিকমত নাও থাকত, যার মূল হলো কল্যাণ ও পূর্ণাঙ্গ ভোগ, এ কারণেই তিনি সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করেছেন, এ কারণে তারা প্রতিদান প্রাপ্ত হবে, এ কারণেই জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি করা হয়েছে- তাহলেও তাঁর জন্য যথেষ্ট হতো।
অধিকন্তু তাঁর প্রেরিত শরী‘আত ও দীন সব ধরণের কল্যাণ শামিল করেছে। তাঁর সংবাদসমূহ ইলম, ইয়াকীন, ঈমান ও সঠিক আক্বীদার ব্যাপারে অন্তর পূর্ণ করে দেয়, হৃদয়কে বক্রতা থেকে সঠিক করে, সব ধরণের বক্রতা ও কুসংস্কার দূর করে, যাবতীয় সুন্দর, উত্তম চরিত্র, সৎ আমল, হিদায়েত ও সূক্ষ্ম বুদ্ধি ইত্যাদির ফল দেয়। তাঁর আদেশ ও নিষেধ হিকমত, দীন ও দুনিয়ার যাবতীয় কল্যাণ ও সংস্কার অন্তর্ভুক্ত করে। কেননা তিনি সৃষ্টিকুলের শুধুই কল্যাণ ব্যতীত তাদেরকে কোন কিছুর আদেশ করেন না। আবার তাদের শুধু অকল্যাণ ব্যতীত তিনি তাদেরকে সেসব বস্তু থেকে নিষেধ করেন না।
ইসলামী শরী‘আতের অন্যতম প্রধান হিকমত হলো মানুষের অন্তর, আখলাক ও আমলকে সংশোধন করা এবং ব্যক্তিকে সহজ-সরল পথে সুদৃঢ়ভাবে অটল রাখা। আর সরল সঠিক পথে অটল থাকাই দুনিয়ার সংশোধন ও কল্যাণ লাভের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনিত সঠিক দীন ব্যতীত দুনিয়ার প্রকৃত সংশোধন ও কল্যাণ সাধিত হয় না। আর এ কথা সকল জ্ঞানীর কাছেই দৃশ্যমান ও জ্ঞাত। কেননা উম্মতে মুহাম্মাদী যখন দীনের মৌলিক বিষয়সমূহ, শাখা-প্রশাখা, সব ধরণের হিদায়েত ও নসিহত যথাযথ ভাবে পালন করেছিল ও মান্য করেছিল তখন তাদের ছিল অবিচল, সুদৃঢ় ও অটল অবস্থা এবং তারা কল্যাণে ভরপুর ছিল। কিন্তু তারা যখন দীনের পথ থেকে বিচ্যুত হলো, হিদায়েতের পথ বর্জন করল এবং দীনের সুউচ্চ শিক্ষায় তারা পথ নির্দেশনা নিতে ব্যর্থ হলো তখন তাদের দুনিয়া বিনষ্ট হলো, যেভাবে তাদের দীনও ধ্বংস হলো। পূর্ববর্তী উম্মতের দিকে তাকালে দেখা যাবে তারা শক্তি-সামর্থ্য ও সভ্যতা-সংস্কৃতিতে চরম শীর্ষে পৌঁছা সত্ত্বেও তারা যখন দীনের রূহ, রহমত ও ন্যায়-নীতি থেকে বিচ্যুত হলো তখন তাদের এসব শক্তি-সামর্থ্য ও শিক্ষা-সংস্কৃতি উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি সাধন করতে লাগল, এর কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণই বেশি। বিজ্ঞানী, জ্ঞানী-গুণী ও তাদের নেতা-নেত্রীরা তাদের সৃষ্ট এসব অকল্যাণ ও ক্ষতিকর জিনিসের মোকাবিলা করতে অক্ষম হলো। অধিকন্তু তারা তাদের বর্তমান অবস্থায় বহাল থাকলে তারা কখনও মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে না। এ কারণেই মহান আল্লাহর হিকমত অনুযায়ী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীন নিয়ে আগমন করেছেন এবং কুরআন তার সত্যতা ও তিনি যা নিয়ে আগমন করেছেন সেগুলো সত্যতার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। যেহেতু কুরআনের সবকিছুই পূর্ণ প্রজ্ঞাময়। তিনি (আল্লাহ) ব্যতীত এরূপ প্রজ্ঞাময় হতে পারে না। মোটকথা হলো, তিনি সৃষ্টিজগত ও তাদের শরী‘আত সবকিছুর ব্যাপারেই হাকীম। সবকিছুই তাঁর প্রজ্ঞা বিরাজমান। তিনি মাখলুকাতের তাকদীর, তাদের শর‘ঈ বিধান ও পুরষ্কার-শাস্তি সব ব্যাপারেই তিনি হাকীম তথা মহাবিচারক ও মহাপ্রজ্ঞাময়।
আহকামুল কদর ও আহকামুশ শর‘ঈ এর মধ্যকার পার্থক্য হলো, কদর বলতে তিনি যা কিছু সৃষ্টি করেছেন সেগুলো সম্পৃক্ত বিষয়কে বুঝায় অর্থাৎ তিনি সেগুলোকে সৃষ্টি করেছেন এবং নির্ধারিত পরিমাণে তা সৃজন করেছেন। তিনি যা কিছু চান তা হয়, আর তিনি যা চান না তা কখনও হবে না। অন্যদিকে আহকামুশ শর‘ঈ হলো তিনি যা কিছু শরী‘আতসম্মত করেছেন সেগুলো সম্পর্কিক বিষয়। বান্দা আহকামুল কাদর ও আহকামুশ শর‘ঈ এ দুটি থেকে বা যে কোন একটি থেকে মুক্ত হতে পারে না। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ যা কিছু পছন্দ করেন ও যে কাজে তিনি সন্তুষ্ট হবেন সেসব কাজ করেন সে উভয় হুকুমই একসাথে পালন করল। আর যে আল্লাহর অপছন্দনীয় ও নিষেধ কাজ করল সে শুধু আহকামুল কদরের কাজ করল। কেননা সে যা কিছু করে থাকে তা মূলত আল্লাহর ফয়সালা ও নির্ধারণেই করে থাকে। সে কাজে হুকমুশ শর‘ঈ পাওয়া যায় না; কেননা সে আল্লাহর পছন্দনীয় ও সন্তুষ্টির কাজ বর্জন করেছে। অত:এব, কল্যাণ, অকল্যাণ, আনুগত্য ও অবাধ্যতা সবকিছুই বান্দার সম্পৃক্ত কাজ ও আহকামুল কদরীর অনুগামী। সেগুলোর মধ্যে যেসব কাজ আল্লাহ পছন্দ করেন সেগুলো আহকামুশ শর‘ঈ ও শরী‘আত সম্পৃক্ত কাজ। আল্লাহই অধিক জ্ঞাত।[3]
[1] এ নামের দলিল হলো আল্লাহ তা‘আলার বাণী,
﴿إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌ حَكِيمٞ٢٨﴾ [التوبة: ٢٨]
“নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ২৮]
[2] আত-তাফসীর, ৫/৬২১।
[3] আল-হাক্কুল ওয়াদিহ আল-মুবীন, পৃ. ৫০-৫৪; তাওদীহুল কাফিয়া আশ-শাফিয়া, পৃ. ১১৯।
If you're planning to give your car a new look, one of your first questions…
If you're thinking about building a barndominium in 2025, you're not alone. These barn-style homes…
A dead or drained car battery can be a frustrating issue, especially when you're in…
Dreaming of a tropical escape but want to explore on your own terms? If you’ve…
Teaching your child to share is one of the most valuable lessons they’ll learn in…
Old gasoline sitting in your garage or shed can pose serious risks to your health,…