সাংহাই থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরের এক দৃষ্টিনন্দন শহর সুঝু। এর পুরাতন অংশের অলি-গলির গোলকধাঁধাঁয় লুকিয়ে রয়েছে ইসলামের দীর্ঘ অতীত ইতিহাসের খন্ডচিত্র। জিনজিয়াং উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মুসলমানদের সাথে যে আচরণ করা হয়েছে তা তুলে ধরে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত প্রকাশিত গল্পগুলো এ বিষয়টিকে অস্পষ্ট করে দেয় যে, একসময় চীনা সম্রাটরা ইসলামকে অত্যন্ত সম্মান করতেন।
লিখিত রেকর্ড এবং স্টিলে খোদাই করা রাজকীয় শিলালিপি থেকে এটি স্পষ্ট যে, এসব ইসলামী সমাজ চীনা সম্রাটের আনুকুল্য লাভ করেছিল – বিশেষত তাং (৬১৮-৯০৭), ইউয়ান (১২৭১-১৩৬৮)), মিং (১৩৬৮-১৬৪৪ এবং চিং (১৬৪৪-১৯১২) এর শামনামলে। ইসলামকে তার নৈতিকতার কারণে সাম্রাজ্যবাদী আদালত ইতিবাচকভাবে দেখেছিল, যা সাম্রাজ্যভিত্তিক বিভিন্ন জাতির মধ্যে ঐকতান ও শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল।
উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে পশ্চিম চীনে প্যানথিয়ন ও টঙ্গানের অভ্যুত্থানের আগে যখন লাখ লাখ মুসলমান নিহত বা বাস্তুচ্যুত হয়, তখন দেশটিতে খ্রিস্টান মিশনারী ও বিশেষত রাশিয়ান পন্ডিতরা ইসলামকে ক্রমবর্ধমান হুমকি হিসাবে বিবেচনা করছিল। ইসলামকে পাশ্চাত্যের অনেকেই চীনের জাতীয় ধর্ম হওয়ার সম্ভাবনা হিসাবে দেখেছিল যা চীনকে বিশ্বের বৃহত্তম ইসলামী দেশে পরিণত করবে।
ইসলাম ও চীন । সাংহাই থেকে হাই-স্পিড ট্রেনে ২০ মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত সুঝু আজ ১২ কোটি মানুষের একটি প্রাণবন্ত, ধনী শহর। উত্তর-পশ্চিমে শহরের প্রাচীরের ঠিক বাইরেই ‘ইসলামিক সুঝু’ রয়ে গেছে। উত্তরের বাণিজ্যিক ও বিনোদনমূলক জেলা শিলুতে একমাত্র সক্রিয় মসজিদ রয়ে গেছে তাইপিং ফেং।
তাইপিং ফেং ২০১৮ সালে পুনরুদ্ধার করা হয়, যেখানে স্থানীয়রা এবং মুসলিম পর্যটকরা সালাত আদায় করেন। এটির আশপাশে ছোট গলিতে গাদাগাদি করে রয়েছে ছোট ছোট রেস্তোঁরা, হোটেল, ক্যান্টিন, খাবারের স্টল যা উইঘুর এবং হুই মুসলমানদের খাবার সরবরাহ করে।
১৯৪৯ সালের আগে বিভিন্ন আকার এবং সামাজিক গুরুত্বসহ সুঝুতে কমপক্ষে দশটি মসজিদ ছিল। অধিকাংশেই ব্যয়বহুল আসবাবপত্র এবং দৃষ্টিনন্দন সাজসজ্জাসহ প্রশস্ত বিল্ডিং ছিল। নামাজের অন্য ঘরগুলো ছিল ছোট। এর মধ্যে একজন মহিলা ইমামের নেতৃত্বে মহিলাদের মসজিদ ছিল।
মহিলাদের মসজিদ বাওলিনকিয়ান ছিল চারটি মসজিদের একটি যা কিং রাজবংশের সময়ে নির্মিত হয়। সবগুলোই শহরের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রাচীরের অভ্যন্তরে ধনী ইয়াং পরিবারের সাথে সংযুক্ত ছিল। ১৯২৩ সালে নির্মিত মসজিদ ইয়াং পরিবারের তিন বিবাহিত মহিলার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যিনি এ বিল্ডিংটি দান করেন এবং এটিকে মহিলাদের মসজিদে পরিণত করার জন্য অন্যান্য মুসলিম পরিবার থেকে অর্থ সংগ্রহ করেন। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় (১৯৬৬ থেকে ১৯৭৬) কুরআন-মাজিদ, পুস্তকাদিসহ মসজিদের পাঠাগারটি ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং ভবনটি পারিবারিক বাড়িতে পরিণত হয়। বাড়িটিতে মসজিদের আর কোনো চিহ্নই নেই।
ইয়াং পরিবারের আরেকটি মসজিদ তিজুনং কিং সম্রাট গুয়াক্সুর শাসনকালে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে ১৮৭৯ থেকে ১৮৮১ সালে নির্মিত হয়েছিল। সুঝুর বৃহত্তম এ মসজিদটি ছিল ৩ হাজার বর্গ মিটারেরও বেশি আয়তনের যা সাতটি উঠানের বৈশিষ্ট্যযুক্ত। জুমার নামাজের মূল হলটিতে দশটি কক্ষ ছিল এবং এতে ৩শ’ মানুষের স্থান হত। উঠানে একটি মিনার এবং একটি তারাখচিত একটি গম্বুজ ছিল।
এখন একটি মাধ্যমিক স্কুল, বাইরের আর্কিটেকচার এবং প্রাচীন কাঠের খোদাই করা পাশের দরজা দেখে চেনা যায়। একটি স্মৃতিসৌধের প্রবেশদ্বার পেরিয়ে এখনও গাছগুলোয় বেষ্টিত প্রধান উঠোনের চিহ্ন রয়েছে। এখন একটি বিশাল ফুটবল মাঠ রয়েছে এবং ওয়াকওয়ের পাশের গাছগুলোর কাটা ডালগুলো দেখা যায়। নীল টাইলসে আবৃত অজুখানাটি একটি মসজিদের অতীতের উপস্থিতি পরিষ্কারভাবে প্রমাণ করে।
তিয়ানকুকিয়ান মসজিদটি ১৯০৬ সালে নির্মিত হয়েছিল এবং বর্তমানে দরিদ্র নগরবাসীর বসবাস রয়েছে। সম্ভবত সাংস্কৃতিক বিপ্লব চলাকালে এটিকে আবাসিক ভবনে পরিণত করা হয়। প্রায় ২ হাজার বর্গমিটার জুড়ে মসজিদ এলাকায় ছিল একটি মূল হল, একটি অতিথি হল এবং অজুখানা।
স্থানীয় ঐতিহাসিকদের রেকর্ড অনুযায়ী, মূল হলের কাঠামোটি ছিল একটি বিশাল লেকচার প্লেসের মতো। মাস্টার ইউ ইউয়ের ক্যালিগ্রাফিতে লিখিত জিঙ্কগো কাঠের অনুভ‚মিক ফলক দেখে তা বোঝা যায়। যেহেতু একই জেলায় অনেক মুসলিম জ্যাড শ্রমিকের ব্যবসা ছিল, তাদের অনুদানের ফলে পুরো চীনে মসজিদটিকে সবচেয়ে সমৃদ্ধ করেছিল এবং ১৯২০ এর দশকে সেখানে ইসলামিক এবং কনফুসীয় পাঠের একটি স্কুল খোলা হয়েছিল।
অনেক মসজিদেই মুসলিম কমিউনিটির শিশুদের আরবি ভাষা এবং ইসলামিক লেখা শেখানোর জন্য সংযুক্ত স্কুল ছিল। সুঝু অন্যতম প্রথম সংস্কৃতি কেন্দ্র যেখানে চীনা ভাষায় ইসলামী ধর্মগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল। ফার্সি থেকে চীনা ভাষায় অনুবাদ ষোড়শ শতাব্দীর সুঝু পন্ডিত, ঝাং ঝং এবং ঝো শিকির হাতে তৈরি হয়েছিল। তারা শহরটিকে ইসলামিক বৌদ্ধিক সংস্কৃতির এক প্রাথমিক কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলেছিলেন।
তবে এটি ছিল চীনবান্ধব হাইব্রিডাইজড একটি ইসলামিক কেন্দ। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যা জনাথন লিপম্যানের বই ‘ফেনাডেন্ট স্ট্রেঞ্জারস : অ্যা হিস্ট্রি অফ মুসলিম অব নর্থ-ওয়েস্ট চীন’-এ বর্ণিত হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় কনফুসীয়দের পাশাপাশি ইসলামিক লেখাগুলো শেখানো হত এবং ইসলামী লেখার একটি সারগ্রাহী কর্পসকে জন্ম দিয়েছিল।
প্রাচীনতম সুঝু মসজিদ জিগুয়ানের নামটি নেয়া হয়েছে পুরনো শহরের কেন্দ্রস্থল সংলগ্ন জিগুয়ান ব্রিজ থেকে। এটি ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ইউয়ান রাজবংশের সময়ে নির্মিত হয়েছিল, সম্ভবত বিশিষ্ট মুসলিম সাইয়্যিদ পরিবার এবং এর প্রভাবশালী ইউনান প্রদেশের গভর্নর সাইয়্যেদ আজল শামস আল-দীন ওমর বোখারীর (১২১১-১২৭৯) অর্থায়নে তৈরি করা হয়েছিল।
মিং রাজবংশের পরে এ মসজিদটি একটি সরকারি ভবনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সুতরাং কেবলমাত্র স্থানীয় চীনা রেকর্ডে এর লিখিত বিবরণের অস্তিত্ব রক্ষিত রয়েছে। এটি প্রমাণ করে এবং ঐতিহাসিকদের মূল্যায়নে এটি ব্যাপক প্রসিদ্ধ যে, ইউয়ান রাজবংশ তার প্রশাসন এবং সরকারি চাকরিতে মধ্য এশিয়া থেকে আসা মুসলমানদের আনুকুল্য দেখিয়েছিল। এসব জনগোষ্ঠী ১৯৫০ এর দশকে চীনের অভ্যন্তরে হুই সংখ্যালঘু হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ হয় এবং বর্তমানে চীনের মুসলিমদের প্রায় অর্ধেক এরাই।
অতীতের লক্ষণ
যেহেতু যে কোনো ধর্ম জনগণের প্রয়োজনকে পীড়ন ও স্তব্ধ করার সরঞ্জাম হিসাবে বিবেচিত হয়, তাই সাংস্কৃতিক বিপ্লব চীনে ইসলামকে কার্যকরভাবে নিষিদ্ধ করেছিল।
ফলস্বরূপ, এ ধর্মীয় ভবনগুলোর সামান্য কিছুর অস্তিত্বই আজ টিকে রয়েছে। তবে যেসব চিহ্ন এখনও রয়েছে তা হ’ল, একটি দরজা, একটি স্তম্ভ, ভবনের বহিঃকাঠামো বা কোনো পরিচিত ঠিকানা যা কোনো সংরক্ষণাগারে লেখা রয়েছে। এটি অতীত জীবনের প্রতীক। এগুলো বিভিন্ন সামাজিক প্রসঙ্গ এবং আধ্যাত্মিক ভ‚গোলের প্রমাণ যা এসব স্থান অনুপ্রাণিত করেছিল এবং এর একটি অংশ ছিল।
প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক আমেরিকান সিনোলজিস্ট ফ্রেডেরিক মট যুক্তি দিয়েছেন যে, সুঝুর অতীত পাথরের চেয়ে শব্দে মূর্ত রয়েছে এবং সুঝুর মুসলিম সমাজের কিছু অংশ লিখিত ঐতিহাসিক রেকর্ডের সাহায্যে একত্রিত করা যেতে পারে। বিভিন্ন দেশের অতীতের এসব রেকর্ড এমন একটি দেশের ভবিষ্যতের জন্যও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ যেখানে কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য রাজনৈতিক ক্ষমতা অস্থিতিশীল হিসাবে দেখছে বলে ধর্ম – প্রতিটি ধর্ম – কঠোর রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণের অধীন।
উত্তর-পশ্চিম চীনের উইঘুর জনগোষ্ঠীর প্রতি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের আদর্শিক পুনঃশিক্ষার প্রচেষ্টার সা¤প্রতিক প্রতিবেদন পরিস্থিতি আরো জটিল এবং আরো তদারকি ও গবেষণার যোগ্য করে তুলেছে। সূত্র : দ্য কনভারসেশন।
If you're thinking about building a barndominium in 2025, you're not alone. These barn-style homes…
A dead or drained car battery can be a frustrating issue, especially when you're in…
Dreaming of a tropical escape but want to explore on your own terms? If you’ve…
Teaching your child to share is one of the most valuable lessons they’ll learn in…
Old gasoline sitting in your garage or shed can pose serious risks to your health,…
If you’re a fan of anime and are curious about the stranger, more supernatural side…