ওহুদের ময়দানে এক নারী মহা পরাক্রমশালী বীর পুরুষের ন্যায় যুদ্ধ করেছিলেন। এই বীরাঙ্গনার নাম “নাসিবা (রাঃ)”। নাসিবার স্বামী এবং পুত্রদ্বয় ওহুদের যুদ্ধে গমন করলে নাসিবা (রাঃ) নিশ্চেষ্টভাবে গৃহে বসে থাকা অপেক্ষা যুদ্ধে গমন করা শ্রেয় বলে স্থির করলেন এবং আহত মুসলমান সৈনিকদেরকে পানি প্রদান করার জন্যে মশক আনয়ন পূর্বক আহত সৈনিকদেরকে উহা প্রদান করছিলেন। কিন্তু যখন মুসলমানদের করুণ অবস্থা, তখন নাসিবা আর স্থির থাকতে পারলেন না। এক আহত সৈনিকের হাত হতে তরবারী গ্রহণ করে শত্রু সৈন্যকে আক্রমণ করতে প্রবৃত্ত হলেন।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) স্বয়ং দূর হতে এই বীর রমণীর সৌর্য্য বীর্য দর্শন করছিলেন। রণক্ষেত্রে নাসিবা তাঁর পুত্রদ্বয়কে নিয়ে হযরতের সম্মুখেই যুদ্ধ করছিলেন। তাঁর হস্তে ঢাল ছিল না। তাই হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) একজন সৈনিককে বললেন, “নাসিবাকে একখানি ঢাল দিয়ে এসো।” সৈনিক হযরতের আদেশে এক খানি ঢাল নিয়ে নাসিবার নিকটে নিক্ষেপ করলে নাসিবা (রাঃ) সেই ঢাল তুলে নিয়ে ক্রুদ্ধা সিংহীর ন্যায় সদর্পে পরিভ্রমণ করে কুরাইশদের অস্ত্রাঘাত করতে লাগলেন।
সেই সময় একজন কুরাইশ অশ্বারোহী নাসিবার উপরে তরবারির আঘাত করল, কিন্তু নাসিবা স্বীয় হস্তস্থিত ঢাল দিয়ে আঘাত ব্যর্থ করে দিলেন এবং তৎক্ষণাৎ শত্রুর অশ্বের উপর তরবারী দিয়ে আঘাত করলেন। এতে অশ্বটা দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল। কুরাইশ সৈন্য পতনোন্মুখ অশ্ব হতে লম্ফ দিয়ে ভূমিতে দণ্ডায়মান হল। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) দূর হতে এই ব্যাপারটা দর্শন করে নাসিবার পুত্র আবদুল্লাহকে জননীর সাহায্যার্থে যেতে আদেশ করলে আবদুল্লাহ দ্রুত পদে জননীর নিকটে উপস্থিত হন। তখন নাসিবা পুত্রের সহায়তায় সেই কুরাইশকে আক্রমণপূর্বক তাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দিলেন।
একজন কুরাইশের অস্ত্রের আঘাতে আবদুল্লাহর অত্যন্ত শোণিত পাত হওয়াতে তিনি দুর্বল হয়ে ভূতলে পতিত হলেন। তদ্দর্শনে নাসিবা পুত্রের নিকটে গমন করে বললেন,”বৎস! উঠ। শত্রুর সাথে যুদ্ধ কর। আমার গর্ভে জন্মগ্রহণ করে ধূলির শয্যায় শয়ন করা কখনও তোমার পক্ষে সমীচীন নয়।” কথা শুনে আবদুল্লাহ মহা উৎসাহ সহকারে দণ্ডায়মান হয়ে শত্রু সংহারে প্রবৃত্ত হলেন। মুহাম্মাদ (সাঃ) এই নারীর সাহস, ক্ষমতা, তেজ আর বীরত্ব দেখে সেই বীরাঙ্গনার জন্য প্রাণ উজার করে দোয়া করেছিলেন।