এ ব্যাপারে ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, কবরের ‘আযাব থেকে মুক্তিদানকারী কারণসমূহ দুই প্রকার। সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিত।
সংক্ষিপ্ত কারণ: সেই সকল কারণ থেকে বিরত থাকতে হবে, যা কবরের শাস্তি বয়ে আনে। কবরের শাস্তি থেকে বাঁচার উপায় হলো, মানুষ ঘুমের পূর্বে এক ঘন্টা সময় আল্লাহর জন্য ব্যয় করবে, তাতে সে পুরো দিনের লাভ লোকসানের হিসাব সম্পর্কে নিজেকে জিজ্ঞাসা করবে। অতঃপর এর জন্য আল্লাহর নিকট তাওবা নাসূহা করে ঘুমাবে এবং দৃঢ় সংকল্প করবে যেন ঘুম থেকে জেগে পূনরায় অপরাধে লিপ্ত না হয়। এভাবে প্রত্যেক রাত্রিতে করবে, অতঃপর সে যদি ঐ রাত্রিতে মারা যায় তাহলে সে তাওবার ওপর মারা যাবে। আর যদি ঘুম থেকে জেগে যায়, তবে সময় বেশি পাওয়ায় আনন্দ চিত্তে কাজের জন্য ভবিষ্যত সুখী হয়ে জাগল যেন সে তার রবের দিকে অগ্রসর হয়ে হারানো জিনিস পেতে পারে। এ প্রকার ঘুম থেকে বান্দার জন্য আর কোনো জিনিস নেই। বিশেষকরে ঘুম না আসা পর্যন্ত সে যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের ওপর আমল করে এবং যিকির-আযকারর করে। আর এ কাজের তাওফীক আল্লাহ তাকেই দিয়ে থাকেন, তিনি যার মঙ্গল চান, নিশ্চয় তিনি সর্ব শক্তিমান।
বিস্তারিত বর্ণনা: কবরের ‘আযাব সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত কতগুলো হাদীস উল্লেখ করব।
ইমাম মুসলিম রহ. তার সহীহ মুসলিমে সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, একদিন একরাত্রি সীমান্ত পাহারা দেওয়া একমাস সাওম পালন করা এবং কিয়াম করা থেকে উত্তম। আর যদি সে মারা যায়, তবে যে কাজের ওপর মারা গেছে সে কাজের ওপর ভিত্তি করে পুণ্য পেতে থাকবে (সেই কাজের সাওয়াব তার ওপর জারি থাকবে) তার রিযিক চলতে থাকবে এবং ফিতনা থেকে নিরাপদে থাকবে।[1]
রিবাত: শব্দের অর্থ কাফিরদের হাত থেকে মুসলিমদেরকে রক্ষার জন্য সীমান্তে অবস্থান করা।
ছুগুর: বলা হয় প্রত্যেক এমন জায়গাকে, যার অধিবাসী শত্রু দ্বারা আতঙ্কিত এবং শত্রুরা তাদের দ্বারা আতঙ্কিত। রিবাতের ফযীলত অনেক বেশি এবং পূণ্যও অধিক। তন্মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট রিবাত হলো, যে সীমান্তে আতঙ্ক বেশি থাকে।[2]
এতে কি নিরাপত্তা বাহিনী শামিল হবে? যারা মুসলিমদের মঙ্গলের জন্য সার্বিক দিক দিয়ে পাহারা দেয়? বাহ্যিকভাবে বলা যায়, হ্যাঁ, তারাও এতে শামিল হবে; কিন্তু পূণ্যের আশা-আকাঙ্খা রাখতে হবে। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি বাণী উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি বলেন,
«عينان لا تمسهما النار: عين بكت من خشية الله وعين باتت تحرس في سبيل الله».
“দুই প্রকার চক্ষুকে আগুনে স্পর্শ করবে না: যে চক্ষু আল্লাহর ভয়ে কেঁদেছে এবং যে চক্ষু আল্লাহর রাস্তায় রাত্রি পাহারা দিয়েছে।”[3]
কবরের ‘আযাব থেকে মুক্তির উপায় হলো: ইমাম নাসাঈ কর্তৃক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক সাহাবী থেকে বর্ণিত হাদীস দ্বারা যা সাব্যস্ত রয়েছে, তিনি বলেন: এক ব্যক্তি বলল, মুমিন ব্যক্তিদের কী হলো যে, শহীদ ব্যতীত সকলেই তাদের কবরে ফিতনার সম্মুখীন হয়? তিনি বললেন: শহীদদের মাথার উপর তলোয়ারের ঝলকানির পরীক্ষাই তার জন্য যথেষ্ঠ।[4] ইমাম নাসায়ী ও ইবন মাজাহসহ অন্যান্যরা বিশুদ্ধ সনদে মিকদাদ ইবন মা‘দিকারিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, “শহীদদের জন্য আল্লাহর নিকট ছয়টি গুণ রয়েছে:
এ শব্দগুলো ইবন মাজাহ, তিরমিযীতে এসেছে যে, তার মাথায় ইয়াকুত পাথরের টুপি পরিয়ে দেওয়া হবে, যা পৃথিবী এবং এর সকল জিনিস থেকে উৎকৃষ্ট। বায়াত্তর জন হুরের সাথে বিবাহ দেওয়া হবে এবং তার আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে সত্তর জনের ব্যাপারে সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। এটা হলো আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ এবং এতে শহীদ হওয়ার কতিপয় ফযীলত।
কবরের ‘আযাব থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে আরো এসেছে যা আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবন মাজাহ এবং নাসাঈতে আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “ত্রিশটি আয়াত বিশিষ্ট কুরআনে একটি সূরা রয়েছে, যা তার পাঠকের জন্য আল্লাহর নিকট সুপারিশ করবে যতক্ষণ না তাকে ক্ষমা করা হয়।”[6]
এ হাদীসসহ সাহাবীদের এরকম যত আমল রয়েছে তা প্রমাণ করে যে, যে ব্যক্তি সূরা মূলক নিয়মিত পাঠ করবে এবং এর প্রতি আমল করবে, নিশ্চয় তাকে কবরের ‘আযাব থেকে তা রক্ষা করবে।
কবরের ‘আযাব থেকে মুক্তির আরো উপায় হলো: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যাকে তার পেটের কোনো রোগ হত্যা করে তাকে কখনো কবরে ‘আযাব দেওয়া হবে না।”[7]
এ হাদীস প্রমাণ করে যে, যে ব্যক্তির পেটের রোগ হবে তাকে হায় হুতাশ না করে ধৈর্য্য ধারণ করে আল্লাহর নিকট পুণ্যের আশা করতে হবে, আর যদি তার পরিবারও এ আশা করে তারাও সাওয়াব পাবে।
এ অধ্যায়ে আরো যা আনা ভালো মনে হয় তাহলো ইবন হিব্বান তার সহীহ’তে এবং অন্যান্যরা আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে যা বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন মৃত ব্যক্তিকে তার কবরে রাখা হয়, তখন সে তার নিকট থেকে ফিরে যাওয়া সাথীদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়। অতঃপর সে যদি মুমিন হয় তবে সালাত তার মাথার দিকে, সাওম তার ডান দিকে, যাকাত তার বাঁ দিকে এবং সদকা, আত্মীয়তা বন্ধন, সৎকাজ ও মানুষকে অনুগ্রহ করা -এ সকল ভালো কাজ তার পায়ের দিকে থাকে। অতঃপর কবরের ‘আযাব যখন তার মাথার দিক দিয়ে আসে তখন সালাত বলে, আমার দিক দিয়ে কোনো রাস্তা নেই। তারপর যখন তার ডান দিক দিয়ে আসে সাওম বলে: আমার নিকট দিয়ে প্রবেশ করার কোনো পথ নেই। তারপর যখন তার বাঁ দিক দিয়ে আসে যাকাত বলে, আমার দিক দিয়ে কোনো রাস্তা নেই। পায়ের দিক দিয়ে আসলে সদকা, আত্মীয়তা বন্ধন, সৎকর্ম এবং মানুষকে অনুগ্রহ করা -এ সকল ভালো কাজ বলতে থাকে, আমার নিকট দিয়ে প্রবেশ করার কোনো পথ নেই। তখন তাকে উঠতে বললে সে উঠে বসে। অতঃপর তার জন্য প্রায় অস্ত যাওয়া একটি সূর্য তুলে ধরে বলা হয় তোমাদের মধ্যে একজন ব্যক্তি ছিল তাকে তুমি চেন কি? তার ওপর তুমি কিসের সাক্ষ্য দাও? সে বলে প্রথমে আমাকে সালাত পড়তে দাও, তারা বলে নিশ্চয় তা করবে। আমরা যা জিজ্ঞাসা করেছি তার উত্তর দাও। তোমাদের মধ্যে একজন ব্যক্তি ছিল তাঁর সম্পর্কে তুমি কি জান? তাঁর ওপর কিসের সাক্ষ্য দাও? তিনি বলেন, তখন সে বলে তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে নিশ্চয় তিনি আল্লাহর রাসূল এবং তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্য বাণী নিয়ে এসেছেন। তাকে বলা হবে -এর ওপর জীবন কাটিয়েছ, এর ওপর মারা গিয়েছ এবং এর ওপরই আবার উঠানো হবে ইনশাআল্লাহ। অতঃপর তার জন্য জান্নাতের একটি দরজা খুলে দিয়ে বলা হবে এটাই তোমার স্থান, এর মধ্যে সব কিছুই আল্লাহ তোমার জন্য তৈরি করেছেন। তখন তার আনন্দ ও গর্ব বেড়ে যাবে। অতঃপর তার জন্য জাহান্নামের একটি দরজা খুলে দিয়ে বলা হবে, যদি তুমি আল্লাহর নাফরমানী করতে তাহলে তোমার স্থান হতো এটি এবং এতে যা কিছু রয়েছে সবই তোমার জন্য তৈরি ছিল, তাতে তার আনন্দ ও গর্ব আরো বেড়ে যাবে। তারপর তার কবরকে তার জন্য সত্তর গজ প্রশস্ত করে তা নূর দিয়ে আলোকিত করে দেওয়া হবে এবং পূর্বের ন্যায় তার শরীর ফিরিয়ে দিয়ে তার আত্মা ভালো আত্মাসমূহের অন্তর্ভুক্ত করে দিবেন। আর তা হলো জান্নাতের বৃক্ষে ঝুলানো একটি পাখী। তিনি বলেন: এটাই আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿يُثَبِّتُ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِٱلۡقَوۡلِ ٱلثَّابِتِ فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِۖ ﴾ [ابراهيم: ٢٧]
“আল্লাহ মুমিন বান্দাদেরকে পৃথিবী এবং আখিরাতে মজবুত বাক্য দ্বারা শক্তিশালী করেন।” [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ২৭]
তারপর পুরো হাদীস উল্লেখ করেন।[8] এতে প্রমাণিত হয় যে, ঐসকল আমল হলো সালাত, সাওম, যাকাত, সদকা, আত্মীয়তা বন্ধন, সৎকর্ম সম্পাদন এবং মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করা ইত্যাদি ভালো ভালো কাজ কবরের ‘আযাব, দুঃখ-যাতনা এবং ফিতনা থেকে মুক্তির উপায়।
মোটকথা আল্লাহর দেওয়া কর্তব্য আদায় এবং হারাম থেকে বিরত থাকা, বেশি বেশি তাওবা করা, ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং বেশি ফযীলত বিশিষ্ট আমল করা এবং কবরের ‘আযাব হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনার মাধ্যমেই আল্লাহ তা‘আলাকে প্রকৃত ভয় করা হয় বা পরহেজগারীতা বাস্তবায়িত হয়। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ قَالُواْ رَبُّنَا ٱللَّهُ ثُمَّ ٱسۡتَقَٰمُواْ فَلَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ ١٣﴾ [الاحقاف: ١٣]
“নিশ্চয় যারা বলে আমাদের রব আল্লাহ, অতঃপর এর ওপর দৃঢ় থাকে তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।” [সূরা আল-আহকাফ, আয়াত: ১৩] হে আল্লাহ আমাদের এবং আমাদের সকল মুসলিম ভাইদের কবরকে জান্নাতের বাগিচা বানিয়ে দাও। হে করুনাময়, তুমি প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ফিতনা থেকে আমাদেরকে বাঁচাও।
If you're thinking about building a barndominium in 2025, you're not alone. These barn-style homes…
A dead or drained car battery can be a frustrating issue, especially when you're in…
Dreaming of a tropical escape but want to explore on your own terms? If you’ve…
Teaching your child to share is one of the most valuable lessons they’ll learn in…
Old gasoline sitting in your garage or shed can pose serious risks to your health,…
If you’re a fan of anime and are curious about the stranger, more supernatural side…