জান্নাতের উচ্চ স্থানসমূহ কাদের জন্য?


জান্নাতের উচ্চ স্থানসমূহ শহীদদের জন্য। সেই শহীদদের জন্য, যারা প্রথম কাতারে থেকে যুদ্ধ করেন। যারা শহীদ হওয়া পর্যন্ত পিছন ফিরে তাকান না। এঁদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়ে হাসেন। এঁরাই হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ শহীদ। এঁদের কোন হিসাব নেই। এঁদের জন্যই রয়েছে জান্নাতের উচ্চ উচ্চ স্থান। (আহমাদ, সঃ জামে’ ১১১৮নং)

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, রাতে দু’জন লোক আমার কাছে এসে আমাকে গাছের উপর চড়ালো এবং আমাকে একটি সুন্দর ও উত্তম ঘরে প্রবেশ করালো, ওর চাইতে সুন্দর (ঘর) আমি কখনো দেখিনি। তারা (দু’জনে) বলল, — এই ঘরটি হচ্ছে শহীদদের ঘর। (বুখারী)

এমন কিছু কাজ আছে, যা করলে নবী (সাঃ)-এর কাছাকাছি দরজা পাওয়া যাবে। যেমনঃ

মহানবী (সাঃ) বলেন “আমি এবং নিজের অথবা অপরের অনাথ (এতীমের) তত্ত্বাবধায়ক জান্নাতে (পাশাপাশি) থাকব। আর বিধবা ও দুঃস্থ মানুষকে দেখাশুনাকারী ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর সমতুল্য।” (ত্বাবারানীর আওসাত্ব, সহীহুল জামে’ ১৪৭৬নং)।

আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেছেন, “আমি ও অনাথ (এতীমের) তত্ত্বাবধায়ক জান্নাতে এরূপ (পাশাপাশি) বাস করব।” এর সাথে তিনি তাঁর তর্জনী ও মধ্যমা অঙ্গুলি দ্বারা ইঙ্গিত করলেন এবং দুটির মাঝে একটু ফাঁক করলেন।” (বুখারী ৫৩০৪নং)।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর খাদেম ও আহলে সুফফার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব রাবীআহ ইবনে কাব আসলামী বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সঙ্গে রাত কাটাতাম। আমি তাঁর কাছে ওযুর পানি এবং প্রয়োজনীয় বস্তু এনে দিতাম। (একদিন তিনি খুশী হয়ে) বললেন, “তুমি আমার কাছে কিছু চাও।” আমি বললাম, আমি আপনার কাছে জান্নাতে আপনার সাহচর্য চাই। তিনি বললেন, “এ ছাড়া আর কিছু?” আমি বললাম, বাস ওটাই। তিনি বললেন, “তাহলে তুমি, অধিকাধিক সিজদা করে (অর্থাৎ প্রচুর নফল নামায পড়ে) তোমার (এ আশা পূরণের) জন্য আমাকে সাহায্য কর।” (মুসলিম)

তিনি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি দুটি অথবা তিনটি কন্যা, কিংবা দুটি অথবা তিনটি বােন তাদের মৃত্যু অথবা বিবাহ, অথবা সাবালিকা হওয়া পর্যন্ত, কিংবা ঐ ব্যক্তির মৃত্যু পর্যন্ত যথার্থ প্রতিপালন করে, সে ব্যক্তি আর আমি (পরকালে) তর্জনী ও মধ্যমা অঙ্গুলিদ্বয়ের মত পাশাপাশি অবস্থান করব।” (আহমদ ৩/ ১৪৭ ১৪৮, ইবনে হিব্বান ২০ ৪৫ নং সিলসিলাহ সহীহাহ ২৯৬ নং)

যারা শহীদদের দর্জা পান, তারাও তাদের কাছাকাছি উচ্চ স্থান পাবেন জান্নাতে। যেমনঃ

১৷ বিধবা ও মিসকীনদের অভাব দূরকরণে চেষ্টারত ব্যক্তি।

নবী (সাঃ) বলেছেন, “বিধবা ও মিসকীনদের অভাব দূর করার চেষ্টারত ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর সমতুল্য।” (হাদীসের বর্ণনাকারী বলেন) আমি ধারণা করছি যে, তিনি এ কথাও বললেন, “সে ঐ নফল নামায আদায়কারীর মত যে ক্লান্ত হয় না এবং ঐ রোযা পালনকারীর মত যে রোযা ছাড়ে না।” (বুখারী)।

২। আরো কতিপয় লোক।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “(পারলৌকিক পুরস্কারে পুরস্কৃত হওয়ার দিক দিয়ে) শহীদ পাঁচ ধরনের; (১) প্লেগরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত, (২) পেটের রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত, (৩) পানিতে ডুবে মৃত, (৪) মাটি চাপা পড়ে মৃত এবং (৫) আল্লাহর পথে থাকা অবস্থায় মৃত।” (বুখারী-মুসলিম)

একদা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, “তোমরা তোমাদের মাঝে কোন কোন ব্যক্তিকে শহীদ বলে গণ্য কর?” সকলেই সমস্বরে বলে উঠল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর পথে যে নিহত হয়, সেই শহীদ। তিনি বললেন, “তাহলে তো আমার উম্মতের মধ্যে শহীদ বড় অল্প।” লোকেরা বলল, ‘তাহলে তারা কে কে হে আল্লাহর রসূল? তিনি বললেন, “যে আল্লাহর পথে নিহত হয় সে শহীদ, যে আল্লাহর পথে মারা যায় সে শহীদ, যে প্লেগ রোগে মারা যায় সে শহীদ, যে পেটের রোগে প্রাণ হারায়, সে শহীদ এবং যে পানিতে ডুবে মারা যায় সেও শহীদ।” (মুসলিম)।

তিনি আরো বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার মাল-ধন রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ হারায় সে শহীদ। যে ব্যক্তি নিজ রক্ত (প্রাণ) রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয় সে শহীদ। যে তার দ্বীন রক্ষা করতে গিয়ে মারা যায় সে শহীদ এবং যে তার পরিবার রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ হারায় সেও শহীদ।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, হাসান সহীহ)

কম দর্জার জান্নাতীর নেক সন্তানের দুআতে জান্নাতে তার দর্জা উঁচু হতে থাকে। মহানবী (সাঃ) বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহ জান্নাতে নেক বান্দার দর্জা উঁচু করেন। সে তখন বলে, হে আমার প্রতিপালক! এ উন্নতি কীভাবে? আল্লাহ বলেন, তোমার জন্য তোমার ছেলের ক্ষমা প্রার্থনার ফলে।” (আহমাদ) আর তিনি বলেছেন, “আদম সন্তান মারা গেলে তার সমস্ত আমল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, অবশ্য তিনটি আমল বিচ্ছিন্ন হয় না; সাদকাহ জা-রিয়াহ (ইষ্টাপূর্ত কর্ম), লাভদায়ক ইলম, অথবা নেক সন্তান যে তার জন্য দুআ করে থাকে।” (মুসলিম ১৬৩ ১নং প্রমুখ)


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *