জান্নাতের বিভিন্ন স্তর বা শ্রেণীবিভাগ


জান্নাতের মাঝে বিভিন্ন স্তর আছে, বিভিন্ন শ্রেণী-বিভাগ আছে। সমস্ত জান্নাত সমান নয়, সকল জান্নাতীও সমশ্রেণীর নয়। জান্নাতীরা নিজ নিজ তাক্বওয়া ও আমল অনুযায়ী মান ও শ্রেণী লাভ করবে। বিভিন্ন জান্নাতীর দর্জাও ভিন্নতর হবে। উচ্চ মানের মুমিনরা উচ্চ শ্রেণীর দর্জা পাবে। মহান আল্লাহ বলেন,

وَمَن يَأْتِهِ مُؤْمِنًا قَدْ عَمِلَ الصَّالِحَاتِ فَأُولَٰئِكَ لَهُمُ الدَّرَجَاتُ الْعُلَىٰ

অর্থাৎ, আর যারা তাঁর নিকট বিশ্বাসী হয়ে ও সৎকর্ম করে উপস্থিত হবে, তাদের জন্য আছে সমুচ্চ মর্যাদাসমূহ। (ত্বাহাঃ ৭৫)।

ইহকালে যেমন সকল মুমিনগণ একই স্তরের নয়, পরকালেও সবাই এক স্তরের হবে না। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন,

مَّن كَانَ يُرِيدُ الْعَاجِلَةَ عَجَّلْنَا لَهُ فِيهَا مَا نَشَاءُ لِمَن نُّرِيدُ ثُمَّ جَعَلْنَا لَهُ جَهَنَّمَ يَصْلَاهَا مَذْمُومًا مَّدْحُورًا (18) وَمَنْ أَرَادَ الْآخِرَةَ وَسَعَىٰ لَهَا سَعْيَهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَٰئِكَ كَانَ سَعْيُهُم مَّشْكُورًا (19) كُلًّا نُّمِدُّ هَٰؤُلَاءِ وَهَٰؤُلَاءِ مِنْ عَطَاءِ رَبِّكَ ۚ وَمَا كَانَ عَطَاءُ رَبِّكَ مَحْظُورًا (20) انظُرْ كَيْفَ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ ۚ وَلَلْآخِرَةُ أَكْبَرُ دَرَجَاتٍ وَأَكْبَرُ تَفْضِيلًا (21)

অর্থাৎ, কেউ পার্থিব সুখ-সম্ভােগ কামনা করলে আমি যাকে যা ইচ্ছা সত্বর দিয়ে থাকি, পরে তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত করি; সেখানে সে প্রবেশ করবে নিন্দিত ও অনুগ্রহ হতে দুরীকৃত অবস্থায়। যারা বিশ্বাসী হয়ে পরলোক কামনা করে এবং তার জন্য যথাযথ চেষ্টা করে, তাদেরই চেষ্টা স্বীকৃত হয়ে থাকে। তোমার প্রতিপালক তার দান দ্বারা এদের ও ওদের (পরলোককামী ও ইহলোককামী উভয়কে) সাহায্য করেন এবং তোমার প্রতিপালকের দান অবারিত। লক্ষ্য কর, আমি কিভাবে তাদের এক দলকে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। আর নিশ্চয়ই পরকাল মর্যাদায় বৃহত্তর ও মাহাত্মেও শ্রেষ্ঠতর। (বানী ইস্রাঈলঃ ১৮-২১)

অবশ্যই নবী, সাহাবী, শহীদ, ওলী, পরহেযগার ও গোনাহগার সকলেই সমান নয়। যেমন নবীগণও মর্যাদায় সকলে এক সমান নন। আল্লাহ বলেন,

تِلْكَ الرُّسُلُ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ

অর্থাৎ, এ রসূলগণ, তাদের মধ্যে কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। (বাক্বারাহঃ ২৫৩)

وَرَبُّكَ أَعْلَمُ بِمَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۗ وَلَقَدْ فَضَّلْنَا بَعْضَ النَّبِيِّينَ عَلَىٰ بَعْضٍ ۖ وَآتَيْنَا دَاوُودَ زَبُورًا

অর্থাৎ, যারা আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে আছে, তাদেরকে তোমার প্রতিপালক ভালভাবে জানেন। আমি তো নবীদের কতককে কতকের উপর মর্যাদা দিয়েছি। আর দাউদকে আমি যাবুর দিয়েছি। (বানী ইস্রাঈলঃ ৫৫)।

মুমিন হলেও সকলেই এক পর্যায়ের নয়, সে কথা হাদীসেও এসেছে। মহানবী (সাঃ) বলেন, “দুর্বল মুমিন অপেক্ষা সবল মুমিনই আল্লাহর নিকট অধিক উত্তম এবং প্রিয়। আর প্রত্যেকের মধ্যেই কল্যাণ আছে।” (মুসলিম)

দর্জায় পার্থক্য ও ভিন্নতার ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন,

وَمَا لَكُمْ أَلَّا تُنفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلِلَّهِ مِيرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ لَا يَسْتَوِي مِنكُم مَّنْ أَنفَقَ مِن قَبْلِ الْفَتْحِ وَقَاتَلَ ۚ أُولَٰئِكَ أَعْظَمُ دَرَجَةً مِّنَ الَّذِينَ أَنفَقُوا مِن بَعْدُ وَقَاتَلُوا ۚ وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَىٰ ۚ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ

অর্থাৎ, তোমরা আল্লাহর পথে কেন ব্যয় করবে না? অথচ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মালিকানা তো আল্লাহরই। তোমাদের মধ্যে যারা (মক্কা) বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে ও সংগ্রাম করেছে (তারা এবং পরবর্তীরা) সমান নয়। তারা মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ তাদের অপেক্ষা, যারা পরবর্তীকালে ব্যয় করেছে ও সংগ্রাম করেছে। তবে আল্লাহ সকলকেই কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ তা সবিশেষ অবহিত। (হাদীদঃ ১০)।

لَّا يَسْتَوِي الْقَاعِدُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ غَيْرُ أُولِي الضَّرَرِ وَالْمُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ ۚ فَضَّلَ اللَّهُ الْمُجَاهِدِينَ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ عَلَى الْقَاعِدِينَ دَرَجَةً ۚ وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَىٰ ۚ وَفَضَّلَ اللَّهُ الْمُجَاهِدِينَ عَلَى الْقَاعِدِينَ أَجْرًا عَظِيمًا

অর্থাৎ, বিশ্বাসীদের মধ্যে যারা অক্ষম নয় অথচ ঘরে বসে থাকে তারা এবং যারা আল্লাহর পথে স্বীয় ধন-প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে, তারা সমান নয়। যারা স্বীয় ধন-প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে আল্লাহ তাদেরকে, যারা ঘরে বসে থাকে তাদের উপর মর্যাদা দিয়েছেন; আল্লাহ সকলকেই কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর যারা ঘরে বসে থাকে তাদের উপর, যারা জিহাদ করে তাদেরকে আল্লাহ মহা পুরস্কার দিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। (নিসা : ১৫)

أَمَّنْ هُوَ قَانِتٌ آنَاءَ اللَّيْلِ سَاجِدًا وَقَائِمًا يَحْذَرُ الْآخِرَةَ وَيَرْجُو رَحْمَةَ رَبِّهِ ۗ قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ ۗ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُو الْأَلْبَابِ

অর্থাৎ, যে ব্যক্তি রাত্রিকালে সিজদাবনত হয়ে এবং দাড়িয়ে ইবাদত করে, পরকালকে ভয় করে এবং তার প্রতিপালকের অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে, (সে কি তার সমান, যে তা করে না?) বল, যারা জানে এবং যারা জানে না, তারা কি সমান? বুদ্ধিমান লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে।’ (যুমারঃ ৯)

يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ

অর্থাৎ, তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদেরকে বহু মর্যাদায় উন্নত করবেন। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত। {মুজাদিলাহ ১১)

মহানবী (সাঃ) বলেন, “অবশ্যই জান্নাতে একশ’টি দরজা (মর্যাদা) রয়েছে, যা আল্লাহ তার পথে জিহাদকারীদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন; দুটি দরজার মধ্যবর্তী ব্যবধান আসমান ও জমিনের মত। সুতরাং তোমরা (জান্নাত) চাইলে ফিরদাউস চেয়ো। কারণ তা হল জান্নাতের মধ্যভাগ ও জান্নাতের উপরিভাগ, আর তার উপরে রয়েছে রহমানের আরশ।” (বুখারী ২৭৯০ নং)

নবী (সাঃ) বলেছেন, “অবশ্যই জান্নাতীগণ তাদের উপরের বালাখানার অধিবাসীদের এমনভাবে দেখতে পাবে, যেমন তোমরা আকাশের পূর্ব অথবা পশ্চিম দিগন্তে উজ্জ্বল অস্তগামী তারকা গভীর দৃষ্টিতে দেখতে পাও। এটি হবে তাদের মর্যাদার ব্যবধানের জন্য।” (সাহাবীগণ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! এ তো নবীগণের স্থান; তারা ছাড়া অন্যরা সেখানে পৌঁছতে পারবে না। তিনি বললেন, “অবশ্যই, সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ আছে! সেই লোকরাও (পৌছতে পারবে), যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান রেখে রসূলগণকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছে।” (বুখারী-মুসলিম)

হয়তোবা মহান আল্লাহ এক একটি গ্রহ-নক্ষত্রের মত জান্নাতসমূহকে বিন্যস্ত করেছেন। হতে পারে একটি গ্রহই হবে একজন জান্নাতীর একটি জান্নাত। অল্লাহু আ’লাম।

জান্নাত যে কত বিশাল, তা কল্পনার বাইরে। মহান আল্লাহ জান্নাতের বিশালতা সম্পর্কে বলেছেন,

وَسَارِعُوا إِلَىٰ مَغْفِرَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ

অর্থাৎ, তোমরা প্রতিযোগিতা (ত্বরা) কর, তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে ক্ষমা এবং বেহেশ্তের জন্য, যার প্রস্থ আকাশ ও পৃথিবীর সমান, যা ধর্মভীরুদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। (আলে ইমরানঃ ১৩৩)

سَابِقُوا إِلَىٰ مَغْفِرَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا كَعَرْضِ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ أُعِدَّتْ لِلَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ ۚ ذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ

অর্থাৎ, তোমরা অগ্রণী হও তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে, যার প্রশস্ততা আকাশ ও পৃথিবীর প্রশস্ততার মত, যা প্রস্তুত করা হয়েছে আল্লাহ ও তাঁর রসূলগণে বিশ্বাসীদের জন্য। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তিনি তাকে তা দান করেন। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। (হাদীদঃ ২১)।

মহাশূন্যে কত বিশাল জায়গা। সেই শূন্যগর্ভে রয়েছে লক্ষ-কোটি গ্রহনক্ষত্র। মানুষকে একটি করে দিয়েও কি তা পূর্ণ হবে? কোন কোন জান্নাতীর জন্য থাকবে দু’টি জান্নাত। মহান আল্লাহ বলেন,

وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ جَنَّتَانِ

অর্থাৎ, যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্য রয়েছে দুটি (জান্নাতের) বাগান। (রাহমানঃ ৪৬)

উক্ত জান্নাতের কথা বর্ণনার পর মহান আল্লাহ আরো দু’টি জান্নাতের কথা উল্লেখ করে বলেছেন,

وَمِن دُونِهِمَا جَنَّتَانِ

অর্থাৎ, এই জান্নাত দু’টি ছাড়া আরো দু’টি জান্নাত রয়েছে। (রাহমানঃ ৬২)

মহান আল্লাহ দুই শ্রেণীর জান্নাতের গুণ ও সুখ-সামগ্রী বর্ণনায় পার্থক্যও রেখেছেন। প্রথম শ্রেণীর জান্নাত হবে নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাদের জন্য এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর জান্নাত হবে ডান হাত-ওয়ালাদের জন্য (যাদেরকে ডান হাতে আমলনামা দেওয়া হবে।) (তাযকিরাহ, কুতুবী ৪৪০ পৃঃ)।

মহানবী (সাঃ) বলেছেন, “দু’টি জান্নাত আছে, তার পাত্রসমূহ এবং সবকিছুই রৌপ্য-নির্মিত। আর দু’টি জান্নাত আছে, তার পাত্রসমূহ এবং সবকিছুই স্বর্ণ-নির্মিত।..” (বুখারী-মুসলিম)।

যেমন জান্নাতে বিভিন্ন ঝরনা আছে। এক একটি ঝরনা এক এক শ্রেণীর জান্নাতীর জন্য খাস হবে।


One response to “জান্নাতের বিভিন্ন স্তর বা শ্রেণীবিভাগ”

  1. Hey there. I found your blog via Google even as looking for a related topic, your site came up. It appears good. I have bookmarked it in my google bookmarks to come back then. Mollie Bobbie Nalani

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *