জুম‘আর দিনে দো‘আ কবুলের সময়


শেষ নবী ও রাসূল মুহাম্মাদ (ছাঃ) এসেছিলেন মানবতার দিশারী হিসাবে। জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ ও জান্নাত লাভের পথ তিনি উম্মতকে সুস্পষ্টরূপে প্রদর্শন করে গেছেন। সাথে সাথে কোন কাজে ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ রয়েছে, তাও তিনি জানিয়ে দিয়ে গেছেন।

তেমনি একটি বিষয় হচ্ছে মুমিনের দো‘আ কবুলের বিষয়। মানুষ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে দো‘আ-প্রার্থনা করে থাকে। কিন্তু কোন সময় দো‘আ করলে আল্লাহ তা কবুল করেন এ সম্পর্কেই নিম্নের হাদীছ।-

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি তূর পর্বতে গেলাম এবং তথায় কা‘ব আল-আহবারের সাক্ষাৎ পেলাম। আমরা সেখানে একটি দিন একত্রে কাটালাম। আমি তার নিকট রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর হাদীছ বর্ণনা করলাম এবং সে আমার নিকট তাওরাত থেকে বর্ণনা করল।

আমি তাকে বললাম, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম হ’ল জুম‘আর দিন। এই দিন আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিন তাকে (জান্নাত থেকে পৃথিবীতে) নামিয়ে দেয়া হয়েছে, এই দিন তাঁর তওবা কবুল হয়েছে, এই দিন তিনি মৃত্যুবরণ করেন এবং এই দিন ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে।

মানুষ ব্যতীত পৃথিবীর যে কোন প্রাণী এই দিন ভোর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত ক্বিয়ামত সংঘটিত হওয়ার আশংকায় সন্ত্রস্ত থাকে। এই দিন এমন একটি দুর্লভ মুহূর্ত আছে, কোন মুমিন ব্যক্তি ছালাত অবস্থায় তা পেয়ে গেলে সে আল্লাহর নিকট যা চাইবে তিনি অবশ্যই তাকে তা দান করবেন। কা‘ব তাওরাত পড়ে বলল, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সত্য বলেছেন, তা প্রতি জুম‘আর দিন।

অতঃপর প্রত্যাবর্তনকালে পথিমধ্যে বাছরা ইবনে আবু বাছরা আল-গিফারী (রাঃ)-এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হ’ল। তিনি জিজ্ঞেস করেন, আপনি কোথা থেকে আসলেন? আমি বললাম, তূর পর্বত থেকে। তিনি বলেন, তথায় যাওয়ার পূর্বে যদি আপনার সাথে আমার সাক্ষাৎ হ’ত তবে আপনি তথায় যেতেন না।

আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কেন? তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, উটকে তিন মসজিদ ব্যতীত (অন্য কোথাও সফরে) কাজে খাটানো যাবে না- ‘মসজিদুল হারাম, আমার মসজিদ ও মসজিদ বায়তুল মাক্বদিস’।

অতঃপর আমি আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে বললাম, আপনি যদি আমাকে তূর পর্বতে যেতে দেখতেন! তথায় আমি কা‘ব আল-আহবারের দেখা পাই এবং একত্রে একটি দিন অতিবাহিত করি।

আমি তাকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর হাদীছ শুনিয়েছি এবং সে আমাকে তাওরাত থেকে শুনিয়েছে। আমি তাকে বলেছি, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম হ’ল জুম‘আর দিন।

এই দিন আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিন তাঁকে (জান্নাত থেকে পৃথিবীতে) নামিয়ে দেওয়া হয়েছে, এই দিন তাঁর তওবা কবুল হয়েছে, এই দিন তিনি মৃত্যুবরণ করেন এবং এই দিন ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে।

মানুষ ব্যতীত পৃথিবীর যে কোন প্রাণী এই দিন ভোর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত ক্বিয়ামত সংঘটিত হওয়ার আশংকায় সন্ত্রস্ত থাকে। এই দিন এমন একটি দুর্লভ মুহূর্ত আছে যে, কোন মুমিন ব্যক্তি ছালাতরত অবস্থায় তা পেয়ে গেলে সে আল্লাহর নিকট যা-ই চাইবে তিনি অবশ্যই তাকে তা দান করবেন। কা‘ব তাওরাত পড়ে বলল, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সত্য বলেছেন, তা প্রতি জুম‘আর দিনই।

আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, কা‘ব সত্য বলেছে। নিশ্চয়ই সেই দুর্লভ মুহূর্তটি আমি জ্ঞাত আছি। আমি বললাম, হে আমার ভাই! সেটি আমার নিকট বর্ণনা করুন। তিনি বলেন, তা জুম‘আর দিন সূর্যাস্তের পূর্ব মুহূর্ত।

আমি বললাম, আপনি কি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেননি যে, কোন মুমিন ব্যক্তি ছালাতরত অবস্থায় তা পায়? আর ঐ সময়টি ছালাতের সময় নয়। তিনি বলেন, আপনি কি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেননি, ‘যে ব্যক্তি ছালাত আদায় করার পর বসে বসে পরবর্তী ছালাতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, সে ছালাতের মধ্যেই থাকে, যাবত না তার নিকট পরবর্তী ছালাত উপস্থিত হয়’? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলেন, বিষয়টি তদ্রূপই (নাসাঈ হা/১৪৩০; তা‘লাকাতুল হাসান হা/২৭৫৫; মুওয়াত্ত্বা ১/১০৮, সনদ ছহীহ)

জুম‘আর দিন দো‘আ কবুল হওয়ার দু’টি সময়ের প্রমাণ পাওয়া যায়। (১) ইমাম ছাহেবের মিম্বারে বসা থেকে নিয়ে ছালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত (মুসলিম, মিশকাত হা/১৩৫৭-৫৮)। (২) আছরের পর থেকে নিয়ে সূর্য ডোবা পর্যন্ত (তিরমিযী, মিশকাত হা/১৩৬০)

পরিশেষে বলব, জুম‘আর দিনের উক্ত সময়ে আমরা আল্লাহর নিকটে দো‘আ করি এবং আমাদের যাবতীয় চাওয়া-পাওয়া তাঁর নিকটেই পেশ কর। তাহ’লে আল্লাহ আমাদের প্রার্থনা কবুল করবেন। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক্ব দিন-আমীন!


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *