গোটা বিশ্বজাতির পথ প্রদর্শক হযরত মুহাম্মদ সাল্লাললাহু ওলাইহিওয়া সাল্লাম। রাসূল সা. তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত এবং ধাপে আদর্শ স্থাপন করেছেন। তাঁর প্রতিটি কর্ম গোটা মানবজাতির জন্য অনুকরণীয়। একজন সত্যিকারের মুসলিম হতে হলে অবশ্যই রাসূল সাল্লাললাহু ওলাইহিওয়া সাল্লামের আদর্শ অনুসরণ করতে হবে।
নামায ইসলামের ফরয হুকুম। নামাযকে অস্বীকার করলে তার ঈমান থাকবে না। রাসূল সা. কিভাবে নামায আদায় করতে হবে তার শিক্ষা দিয়েছেন। তিনিও প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করতেন। নামায আদায়ের পর তিনি বেশ কিছু আমল করতেন। তাই তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর কি কি কাজ বা আমল করতেন এই নিয়ে আজকে আমরা আলোচনা করবো।
১.ফজরের নামায
একটি দিনের সূচনা হয় ফজর নামাযের মধ্যে দিয়ে। রাসূল সা. ফজর নামাযের পর এবং সূর্য উঠার আগে জিকির শেষে তিনি যখন হাঁটু গেড়ে বসতেন তখন সাহাবীগন তাঁর চারপাশে তাকে ঘিরে বসতেন। এই সময় রাসূল সাল্লাললাহু ওলাইহিওয়া সাল্লামের উপর কুরআনের সর্বশেষ যে আয়াত নাযিল হতো তা তাঁদেরকে বলতেন এবং তাঁদেরকে ধর্মীয়, সামাজিক ও নৈতিক শিক্ষা দিতেন।
সাহাবীগনের মধ্যে কোন ব্যাপারে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হলে তা মীমাংসা করে দিতেন। ইশরাকের সময় হলে তিনি ইশরাকের নামায পড়ে নিতেন। সূর্য উঠার বেশ পরে রা. আট রাকআত চাশতের নামায আদায় করতেন।
আব্দুল্লাহ ইবনু উমার রা: বলেন,
রাসূল সাল্লাললাহু ওলাইহিওয়া সাল্লাম ফজরের সালাতের পর (সূর্য পুরোপুরি উঠে মাকরুহ ওয়াক্ত শেষ হয়ে) সালাত জায়েজ হওয়ার সময় পর্যন্ত তাঁর বসার স্থান থেকে উঠতেন না।
তিনি বলেন: যে ব্যক্তি ফজরের সালাত আদায় করার পরে সালাত জায়েজ হওয়ার সময় পর্যন্ত তাঁর বসার স্থানে বসে থাকবে সে একটি মকবুল হজ্বের ও একটি মকবুল উমরার সাওয়াব পাবে।
তাবরানী, আ মুজামুল আউসাত ৫/৩৭৫, আলবানী, সহীহুত তারগীব ২/২৬১।
২.যোহরের নামায
নামায আদায়ের পর রাসূল সা. মদিনার বাজারগুলো দেখার জন্য বের হতে এবং ব্যবসায়ীদের খোঁজ খবর নিতেন। তাদের পণ্য পরীক্ষা, মাপে কম বেশী করছে কিনা ইত্যাদি বিষয় দেখতেন। এছাড়া গরীব লোকদের খোঁজ খবর নিতেন এবং বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা করতেন।
উকবা ইবনু আমির রা: বলেন,
রাসূল সাল্লাললাহু ওলাইহিওয়া সাল্লাম আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রত্যেক সালাতের পরে সূরা ফালাক ও নাস (অন্য বর্ণনায়: মুআওয়াযাত – সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস ) পাঠ করতে।
তিরমিযী, আবু দাউদ:১/২১৩, ইবন হাজার, ফাতহুল বারী: ৯/৬২।
৩.আসরের নামায
রাসূল সা. যেহেতু একাধিক বিবাহ করেছেন তাই আসরের নামায আদায় করে তাঁর বিবিদের সাথে দেখা করতেন এবং তাঁদের সুবিধা-অসুবিধা ও প্রয়োজন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন। তিনি তাঁদের সাথে বেশ কিছু সময় ব্যয় করতেন। এই কাজ রাসূল সা. নিয়মিত করতেন। ফলে নিয়মিত তিনি তাঁর বিবিদের সাথে নির্দিষ্ট সময় গিয়ে হাজির হতেন। এটা রাসূল সা. যে সময়ের সদ্বব্যবহার এবং সকলের হক রক্ষা করতেন তার অন্যতম প্রমাণ।
৪.মাগরিবের নামায
মাগরিবের নামায তিনি জামাতের সাথে আদায় করতেন। মাগরিবের নামায আদায়ের পর আওয়াবীনের নামায আদায় করে বাড়ি যেতেন। রাসূল সা. ধারাবাহিকতা বজায় রেখে তাঁর বিবিদের সাথে রাত্রি যাপন করতেন।
৫.এশার নামায
দীর্ঘ সময় ঈশার নামায আদায় করে রাসূল সা. তাঁর গৃহে ফিরে আসতেন। সাধারণত যে কামরায় পূর্ব থেকে আলো জ্বালানো হতো না, সে কামরায় তিনি ঘুমাতেন না। ঈশার নামাযের পর তিনি কথা বলা পছন্দ করতেন না।
এ সময় তার আমলকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়: ১. সালাতুল ঈশার পর এবং ২. সালাতুল ঈশার পর থেকে বিছানায় শোয়ার পূর্ব পর্যন্ত। রাসূল সা. সাধারণত প্রতিদিন ঘুমানোর পূর্বে সূরা আল- জুমুআ, আত- তাগাবুন ও আস-সাফ পাঠ করতেন।
তিনি রাতের প্রথম ভাগে ঘুমিয়ে পড়তেন এবং রাতের মধ্যভাগ শুরুর পূর্বেই জেগে উঠতেন। রাসূল সা. প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঘুমাতেন না আবার অতিরিক্ত জেগেও থাকতেন না। তন্দ্রা এলে তিনি আল্লাহর নামে ঘুমিয়ে পড়তেন, পরে আবার ইবাদতের জন্য জেগে উঠতেন।
যতক্ষণ তাঁর শরীর কুলাতো ততক্ষণ তিনি ইবাদাত করতেন। তারপর যখন মসজিদে মুয়াজ্জিন হযরত বেলাল রা. এর আযান শুনা যেত তখন তিনি সাথে সাথে মসজিদে চলে যেতেন এবং ফজর নামাযের ইমামতি করতেন।
হুযাইফা রা. বলেন,
আমি রাসূল সাল্লাললাহু ওলাইহিওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে তাঁর সাথে মাগরিবের সালাত আদায় করলাম। তিনি মাগরিবের পরে ঈশার সালাত পর্যন্ত নফল সালাতে রত থাকলেন। ইবনু আবী শাইবা, মুসান্নাফ: ২/১৫, নাসাঈ, সুনানে কুবরা: ১/৫১।
তবে এসময় তিনি কত রাকাত নফল নামায আদায় করতেন সে বিষয়ে সহীহ হাদিস নেই। তবে কিছু যয়ীফ হাদিসে ৪, ৬, ১০ বা ২০ রাকাত নফল নামায আদায়ের বিশেষ ফযিলতের কথা এসেছে।
নামাজ সম্পর্কে আরো পড়ুন
নামাজের গুরুত্ব ও উপকারিতা এবং স্বেচ্ছায় নামাজ ত্যাগকারীর পরিণতি
শেষ কথা
উপরে উল্লেখিত কাজ ছিল রাসূল সাল্লাললাহু ওলাইহিওয়া সাল্লামের দৈনিক নামাযের পরের রুটিন। তিনি প্রতি ওয়াক্তের নামায জামায়াতের সাথে আদায় করতেন। এছাড়া তিনি পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর বিভিন্ন জিকির ও দোআ পাঠ করতেন। যদিও রাসূল সাল্লাললাহু ওলাইহিওয়া সাল্লামের দৈনিক নামাযের পর সকল কাজের বিবরণ দেয়া সম্ভব হয়নি বরং সংক্ষিপ্ত ধারণা দেয়া হয়েছে।
দ্বীনি কথা শেয়ার করে আপনিও ইসলাম প্রচারে অংশগ্রহণ করুন।