নামাজ পড়ার জন্য কোনো বস্তুর আড়ালে দাঁড়ালে তাকে সুতরা বলা হয়। সুতরা আরবি শব্দ। অর্থ পর্দা। নামাজের সময় দৃষ্টি রাখতে হয় দাঁড়ানো অবস্থায় সেজদার স্থানে, বসা অবস্থায় কোলে। সম্পূর্ণ মনোযোগ রাখতে হয় আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলির প্রতি। নামাজের সামনে দিয়ে মানুষ চলাচল করলে নামাজি ব্যক্তির কাঙ্ক্ষিত ধ্যান নষ্ট হয়। মনোযোগ অন্যদিকে চলে যায়। অনিচ্ছায় দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরে যায়। সামনে দিয়ে মানুষের চলাচলের এ ক্ষতি থেকে নামাজকে হেফাজতের জন্য নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন নামাজ পড়বে তখন সুতরার পেছনে দাঁড়াবে।’ -আবু দাউদ :৬৯৮
নবী করিম (সা.) আরও ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন নামাজে দাঁড়ায় তখন সে যেন সুতরা ব্যবহার করে। যদিও একটি তীর দিয়ে হয়। -মুসনাদে আবু ইয়ালা :১/৪২২
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঈদের দিন নামাজের উদ্দেশে বের হলেন তখন তার নির্দেশমতো তার সামনে একটি ছোট বর্শা রাখা হলো। তিনি ওই তীরের পেছনে নামাজ আদায় করলেন আর অন্যরা তার পেছনে নামাজ আদায় করলেন। তিনি সফরে (পথঘাটে) এমনটিই করতেন। -সহিহ বোখারি :৪৯৫
নামাজের সামনে সুতরা থাকলে সুতরার বাইরে দিয়ে অন্যের চলাচল দ্বারা নামাজের ক্ষতি হবে না এবং চলাচলকারীদের কোনো গুনাহ হবে না। তাই খোলা মাঠ, পথের পাশ, বড় মসজিদের ভেতর, বাসাবাড়ি, দরজার কাছে নামাজে দাঁড়ালে সুতরা ব্যবহার করা উচিত। এসব স্থানে সুতরা ছাড়া নামাজে দাঁড়ালে অন্যদের জন্য ব্যাপারটা কষ্টকর হয়। যেহেতু নামাজের সামনে দিয়ে চলাচল করা শক্ত গুনাহ, সেহেতু এ গুনাহ থেকে বাঁচতে তাদের অনেকটুকু জায়গা ঘুরে যেতে হয়। নচেৎ নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত অন্যদের অপেক্ষা করতে হয়। অথচ একটি সুতরা ব্যবহার করে মানুষকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা যায়।
দেয়ালের পেছনে, পিলার বা খুঁটির পেছনে নামাজ পড়লে যেহেতু সামনে দিয়ে কারও চলাচলের কোনো সম্ভাবনা থাকে না, সেহেতু সেখানে আলাদা সুতরা ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। তবে সেখানে দাঁড়াতে হবে দেয়াল বা পিলারের কাছে। হজরত সাহাল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামাজের স্থান আর দেয়ালের মাঝে একটি ছাগল চলাচলের মতো দূরত্ব থাকত। _মুসনাদে আহমাদ :১৬৫৯০
অনুরূপভাবে যে স্থানে মানুষ চলাচলের সম্ভাবনা নেই সে স্থানে সুতরার প্রয়োজন নেই। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খোলা মাঠে নামাজ আদায় করলেন তখন তার সামনে কিছুই ছিল না (মুসনাদে আহমাদ :১৯৬৫)। অর্থাৎ তিনি কোনো সুতরা ব্যবহার করেননি।
সুতরার নূ্যনতম পরিমাণ হলো উচ্চতায় এক হাত আর প্রস্থে এক আঙুল। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সুতরার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে উত্তরে তিনি বলেছিলেন, সুতরা হবে হাওদার পেছনের লাঠির মতো। -সহিহ মুসলিম :১১৪২. কেউ যদি সুতরা ছাড়াই নামাজে দাঁড়ায় তখন চলাচলের সুবিধার্থে আমাদের সমাজে তিনটি ভুল রেওয়াজ আছে। যথা_
১. নামাজির সামনে রুমাল, গামছা ইত্যাদি কাপড় ধরে রেখে তার বাইরে দিয়ে চলাচল করা হয়। এটি একটি ভুল কাজ। এভাবে রুমাল ধরে নামাজির সামনে দিয়ে যাতায়াত করা যাবে না। কেননা, সুতরা সংক্রান্ত হাদিসগুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত করলে সহজেই প্রতীয়মান, সুতরা হবে এমন বস্তু যা মানুষের ধরে রাখা ব্যতীতই উঁচু হয়ে থাকতে পারে।
২. চলাচলকারী নিজেই নামাজির সামনে সুতরা রেখে চলাচল করে। এটাও অনুচিত কাজ। কেননা, সুতরা সংক্রান্ত হাদিসগুলোর দিকে দৃষ্টি দিলে বোঝা যায়, সুতরা রাখাটা নামাজির কাজ। শরিয়ত নামাজিকে নির্দেশ দিয়েছে নামাজ শুরু করার আগে নিজের সামনে সুতরা রাখতে। চলাচলকারীকে নামাজির সামনে সুতরা রেখে চলাচলের উৎসাহ বা অনুমতি শরিয়ত দেয়নি। বরং চলাচলকারীকে স্পষ্ট ভাষায় উৎসাহিত করেছে অপেক্ষা করতে। যদিও অপেক্ষার সময় দীর্ঘক্ষণ হয়। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নামাজির সামনে চলাচলকারী যদি এর ক্ষতি সম্পর্কে জানত, তবে নামাজিকে অতিক্রম না করে চলি্লশ (দিন-মাস-বছর) অপেক্ষা করা তার জন্য সহজ হতো। -সহিহ বোখারি :৫১০
৩. কারও পেছনে নামাজি থাকলে প্রয়োজন থাকলেও সে উঠে আসে না। অপেক্ষা করে অথবা আরেকজনকে দিয়ে সুতরা রেখে পরে উঠে আসে। এটা একটি অপ্রয়োজনীয় কাজ। কেননা, হাদিসে নামাজির সামনে দিয়ে চলাচল, যাতায়াত, অতিক্রমকে নিষেধ করা হয়েছে। উঠে আসাকে নিষেধ করা হয়নি। তাই কারও পেছনে নামাজি থাকলে উঠে চলে আসতে কোনো অসুবিধা নেই।
4 responses to “নামাজরতদের সামনে দিয়ে চলাচলের বিধান ?”
874399
874399
874399
874399