পরম করুণাময় মহান আল্লাহ তা’আলার নামে শুরু করছি
ভুমিকা
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক। মুত্তাকীদের জন্যই রয়েছে উত্তম পরিণতি। আর সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর মহান আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।
হামদ ও সালাতের পর। আল্লাহ তা’আলা তোমার প্রতি “রহমত বর্ষণ করুন” তোমার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর অশেষ কৃপায় তুমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে পরিপূর্ণ দীন-ইসলাম ও শারীআতের বিধান (আদেশ-নিষেধ) সম্পর্কিত এবং পুরস্কার ও শাস্তি, উৎসাহ ও ভীতি ইত্যাদি সংক্রান্ত যে সব সহীহ হাদীস অবিচ্ছিন্ন সনদ পরম্পরায় চলে আসছে, আর হাদীস শাস্ত্রবিশারদ মুহাদ্দিসগণ যা ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করে আসছেন, তা জানার জন্য আমার নিকট আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছে এবং তুমি যে ইচ্ছা পোষণ করেছে (আল্লাহ তোমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন) সে সমস্ত হাদীস একই স্থানে সংকলন আকারে পাওয়ার জন্য। তুমি আমাকে অনুরোধ করেছিলে যে, আমি যেন এ হাদীসগুলো সংকলন করতে গিয়ে কোন হাদীস বারবার উল্লেখ না করি এবং সংকলনটি যেন সংক্ষিপ্তাকারে প্রস্তুত করি। তোমার ধারণা একই হাদীসের পুনরাবৃত্তি ঘটলে তার নিগুঢ় তত্ত্ব অনুধাবন করা এবং তা থেকে বিভিন্ন মাসআলা বের করা যা তোমার মূল উদ্দেশ্য- তা ব্যাহত হবে। আল্লাহ তোমাকে সম্মানিত করুন। যে মহৎ কাজ আঞ্জাম দেয়ার জন্য তুমি আমাকে অনুরোধ করছে সে সম্পর্কে চিন্তা করে আমি যে সুন্দর ফলাফল দেখতে পাচ্ছি, আল্লাহ চান তো (ইনশাআল্লাহ) তা খুবই চমৎকার ও স্থায়ী ফলপ্রদ হবে।
তুমি আমাকে যে কষ্ট স্বীকার করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে আমি চিন্তা করে দেখেছি, যদি আমার দ্বারা এ কাজ সম্পন্ন হয় এবং আমার চেষ্টা ও সাধনা সার্থক প্রমাণিত হয় তা হলে আমিই প্রথমে এ সুফল লাভ করব। এর অনেক কারণ রয়েছে। সে সবের বর্ণনা করতে গেলে আলোচনা দীর্ঘ হয়ে পড়বে। তবে সার কথা হচ্ছে, অধিক সংখ্যক হাদীস আলোচনার চাইতে অল্প সংখ্যক হাদীস বিশুদ্ধ ও যথাযথাভাবে মনে রাখা লোকদের পক্ষে সহজ। এতে তারা বিশেষভাবে উপকৃত হবে। কারণ, তারা অন্যের সাহায্য ব্যতীত সহীহ এবং ত্রুটিপূর্ণ হাদীসের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণে সক্ষম নয়। এমতাবস্থায় তাদের জন্য অধিক সংখ্যক দুর্বল হাদীস বর্ণনা করার পরিবর্তে অল্প সংখ্যক সহীহ হাদীস বর্ণনা করা উত্তম। অবশ্য বিশেষ কিছু লোক যারা ইলমে হাদীসে বিশেষ পাণ্ডিত্যের অধিকারী এবং হাদীসের ত্রুটি-বিচ্যুতি নিরূপণে সক্ষম অধিক সংখ্যক হাদীন বর্ণনা, সংকলন এবং পুনরাবৃত্তি তাদের উপকারে আসতে পারে। এ সব লোক নিজেদের যোগ্যতা ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে হাদীসের বিরাট সংকলন থেকে আল্লাহ চান তো লাভবান হতে পারে। পক্ষান্তরে সাধারণ লোকের পক্ষে অধিক সংখ্যক হাদীসের খোজাখুঁজি অর্থহীন। কেননা তারা অল্প সংখ্যক হাদীসের মধ্যেই সহীহ য’ঈফ (বিশুদ্ধ ও দুর্বল) ইত্যাদি নির্ণয়ে অক্ষম।
অতঃপর তোমার আকাঙ্ক্ষাতে আল্লাহ চান তো হাদীস সংকলনের কাজে আমি একটি নীতি অবলম্বন করে এগিয়ে যাব। আর তা হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যে সব হাদীস অবিচ্ছিন্ন সনদ পরম্পরায় (মুত্তাসিল) বর্ণিত হয়ে আসছে, আমি শুধুমাত্র সেগুলো থেকেই সংকলন করব। অতঃপর বর্ণনাকারীদের তিনটি স্তর অনুযায়ী হাদীসগুলোকে পূরণ ছাড়া তিন ভাগে বিভক্ত করব বলে ইচ্ছা করেছি। তবে যদি কোন হাদীসের পুনরুল্লেখ অপরিহার্য হয়ে পড়ে তাহলে ভিন্ন কথা। এর দুটি কারণ-
প্রথমতঃ পরবর্তী বর্ণনায় কিছু বাড়তি বিষয় আছে। দ্বিতীয়তঃ কোন বিশেষ কারণে একটি সনদের সমর্থনে আরেকটি সনদ আনার প্রয়োজন হয়। কেননা, একটি বর্ধিত বিষয় একটি পূর্ণ হাদীসে স্থলাভিষিক্ত হয় বলে পুনর্বার উল্লেখ করা প্রয়োজন। কিংবা যদি সম্ভব হয়, তাহলে আমরা এ বর্ধিত অংশটুকু সংক্ষিপ্ত আকারে পূর্ণ হাদীস থেকে পৃথক করে বর্ণনা করব। তবে অনেক সময় পূর্ণ হাদীস থেকে সে অংশ পৃথক করা কঠিন হয়ে পড়ে বলে পূর্ণ হাদীসটির পুনরাবৃত্তি করাই নিরাপদ। অবশ্য যদি আমরা পূর্ণ হাদীসটির পুনরোল্লেখ না করে অতিরিক্ত অংশ পৃথকভাবে বর্ণনা করতে পারি তাহলে কেবল সনদ সহকারে অতিরিক্ত অংশটুকুই বর্ণনা করবো ইনশাআল্লাহ।
প্রথম শ্রেণীতে আমরা এমন হাদীস বর্ণনা করবো, যেগুলো সব দিক থেকে ত্রুটি-বিচ্যুতিমুক্ত। কারণ এগুলোর বর্ণনাকারী হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে নিষ্কলুষ চরিত্রবান, ন্যায়পরায়ণ, নিষ্ঠাবান ও আস্থাভাজন। তাদের বর্ণনার মধ্যে বড় রকমের বিরোধ নেই কিংবা তেমন গরমিলও নেই, যেমনটা অনেক রাবীর মধ্যে দেখা যায় এবং তাদের বর্ণনায় তা স্পষ্টভাবে প্রকাশও পেয়েছে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে আমরা এমন হাদীস বর্ণনা করবো, যার বর্ণনাকারীদের কেউ কেউ প্রথম স্তরের রাবীদের অনুরূপ মেধা, স্মৃতিশক্তি ও সুখ্যাতির অধিকারী নন। এরা প্রথম স্তরের রাবীদের সমান মর্যাদা সম্পন্ন না হলেও এদের দোষত্রুটি প্রকাশ পায়নি এবং সত্যবাদী ও হাদীসের রাবী হিসেবে এরা গণ্য হয়েছেন। হাদীস বিশারদগণ এদের পরিত্যাগ না করে বরং এদের কাছে নিদ্বিধায় ইলম হাসিল করেছেন। যেমন আতা ইবনু সায়িব, ইয়াযীদ ইবনু আবূ যিয়াদ ও লায়স ইবনু আবূ সুলায়ম এবং এ ধরনের অন্যান্য রাবীগণ। এরা যদিও জ্ঞান, চরিত্র ও যোগ্যতার দিক থেকে আলিমদের কাছে প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন, কিন্তু তারা সমকালীন সিকাহ (স্মরণশক্তি ও বর্ণনার দৃঢ়তায় উত্তীর্ণ) রাবীদের সম-মর্যাদার অধিকারী নন। হাদীস বিশেষজ্ঞদের নিকট এ স্মৃতিশক্তি ও বিশ্বস্ততা, উন্নত মর্যাদা ও উত্তম বৈশিষ্ট্যের মাপকাঠি। তুমি কি লক্ষ্য করছে না যে, যদি উপরোক্ত তিনজন অর্থাৎ আতা, ইয়াযীদ ও লায়সকে মানসূর ইবনু মু’তামির, সুলাইমান আল-আমাশ ও ইসমাঈল ইবনু আবূ খালিদের সাথে হাদীস সংরক্ষণে দৃঢ়তা ও মজবুতির মান তুলনা কর দেখতে পাবে- তাদের মর্যাদা সম্পূর্ণ আলাদা। তারা মানসূর, আমাশ ও ইসমাঈলের কাছেও পৌছতে সক্ষম নন। নিঃসন্দেহে মানসূর, আমাশ ও ইসমাঈলের স্মৃতিশক্তি ও বিশ্বস্ততা হাদীস বিশেষজ্ঞদের কাছে যতখানি প্রসিদ্ধি পেয়েছে ‘আতা, ইয়াযীদ ও লায়সের ক্ষেত্রে ততখানি নয়।
যদি তুমি ইবনু আওন ও আইয়ুব সাখতিয়ানীকে সমকালীন রাবী আওফ ইবনু আবূ জামীলাহ আশ’আস হুমরানীর সঙ্গে তুলনা কর তবে দেখতে পাবে মর্যাদার পূর্ণতায় ও বর্ণনার নির্ভুলতায় তাদের মধ্যে যথেষ্ট ব্যবধান রয়েছে। অথচ ইবনু আওন ও আইয়ূব এবং আওফ ও আশ’আস চারজনই হাসান বাসরী ও ইবনু সীরনের শাগরিদ। আর হাদীস বিশেষজ্ঞদের মতে শেষোক্ত দুজনও সত্যনিষ্ঠ ও আমানতদার। তদুপরি হাদীস বিশেষজ্ঞদের নিকট প্রথমোক্ত দু’জনের সঙ্গে এ দু’জনের মর্যাদার পার্থক্য বিদ্যমান। আমরা এখানে কয়েকজন রাবীর নাম উল্লেখ করে উদাহরণ পেশ করছি। হাদীস বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিভিন্ন দিক থেকে যে মর্যাদাগত ও যোগ্যতার তারতম্য রয়েছে, তা যার জানা নেই এ দৃষ্টান্ত তার জন্য পথনির্দেশ হিসেবে কাজ করবে। ফলে উচ্চমর্যাদা ও যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে তার প্রাপ্য মর্যাদা থেকে খাটো করে দেখা হবে না এবং নিম্ন মর্যাদা ও যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে তার প্রাপ্য মর্যাদার উপরে স্থান দেয়া হবে না। বরং প্রত্যেককে তার প্রাপ্য অধিকার দিয়ে স্বীয় মর্যাদায় সমাসীন করাই আমাদের কাম্য।
আয়িশাহ সিদীকা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমরা যেন প্রত্যেককে তার আপন আপন মর্যাদা দেই। বিষয়টি কুরআনে এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত। ইরশাদ হচ্ছেঃ “প্রত্যেক জ্ঞানীর উপর রয়েছে এক মহাজ্ঞানী”- (সূরাহ ইউসুফ ১২ঃ ৭৬)। তোমার অনুরোধে আমরা উল্লেখিত শর্ত সামনে রেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীস সংকলন করব।
কিন্তু হাদীস বিশারদদের সবাই কিংবা তাদের অধিকাংশ যে সব রাবীর সমালোচনা করেছেন বা দোষ-ত্রুটি নির্দেশ করেছেন কিংবা তাদের মিথ্যাচারী বলে উল্লেখ করেছেন, আমরা এদের বর্ণিত হাদীস পরিত্যাগ করব। যেমন “আবদুল্লাহ ইবনু মিসওয়ার, আবূ জাফার আল মাদায়িনী, আমর ইবনু খালিদ, আবদুল কুদ্দুস শামী, মুহাম্মাদ ইবনু সাঈদ আল মাসলুব, গিয়াস ইবনু ইবনু ইবরাহীম, সুলাইমান ইবনু উমার, আবূ দাউদ নাখ’ঈ এবং এদের মতো আরও অন্যান্য রাবীগণ। এদের বিরুদ্ধে জাল হাদীস বর্ণনা করার এবং মনগড়া হাদীস রচনার অভিযোগ রয়েছে। আর যাদের বর্ণনা নির্ভরযোগ্য বর্ণনার পরিপন্থী (মুনকার) অথবা ভুল-ভ্রান্তি প্রমাণিত হয়েছে তাদের বর্ণিত হাদীসও গ্রহণ করা থেকে আমরা বিরত থাকব।
ইমাম মুসলিম (রহঃ) মুনকার হাদীসের সংজ্ঞা দিতে দিয়ে বলেছেনঃ মুনকার (প্রত্যাখ্যাত) হাদীসের নিদর্শন এই যে, কোন রাবীর বর্ণনাকে কোন স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন এবং সর্বজন-মান্য রাবীর বর্ণনার সাথে তুলনা করলে যদি দেখা যায় যে, প্রথমোক্ত রাবীর বর্ণনা শেষোক্ত (নির্ভরযোগ্য) রাবীর বর্ণনার সম্পূর্ণ বিরোধী কিংবা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গরমিল রয়েছে, সেরূপ হাদীসকে মুনকার হাদীস বলা হয়। সুতরাং যদি তার অধিকাংশ বর্ণনাই এরূপ হয় তাহলে তার বর্ণিত হাদীস গ্রহণযোগ্য নয় এবং প্রয়োগযোগ্যও নয়। এ পর্যায়ের রাবীদের মধ্যে রয়েছে আবদুল্লাহ ইবনু মুহাররার, ইয়াহইয়া ইবনু আবূ উনাইসাহ, আল ইবনু সুহবান এবং তাদের অনুরূপ হাদীস বর্ণনাকারগণ- যারা মুনকার হাদীস বর্ণনা করেছেন। অতএব আমরা এদের বর্ণিত হাদীসের প্রতি ভ্ৰক্ষেপ করব না এবং তাদের হাদীস বর্ণনাও করব না। একক রাবীর (মুফরাদ) বর্ণনা সম্পর্কে হাদীস বিশারদগণ যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন এবং এ ব্যাপারে তাঁদের যে মাযহাব জানা গেছে তা হলোঃ যে হাদীসটি মাত্র একজন রাবী বর্ণনা করেছেন, তিনি যদি হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে সিকাহ এবং হাফিযুল হাদীস রাবীদের সাথে পুরোপুরি অথবা আংশিকভাবে শারীক থাকেন এবং তাদের বর্ণনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষার প্রতি যত্নবান হন, তার বর্ণিত হাদীসে যদি কিছু অতিরিক্ত অংশ থাকে যা তাদের বর্ণনায় নেই তাহলে তার বর্ণিত হাদীস গ্রহণযোগ্য হবে।
হাদীস চর্চার ক্ষেত্রে ইমাম যুহরীর স্থান ও মর্যাদা অনেক উর্ধ্বে। তার বহু ছাত্র হাফিযুল হাদীস এবং শক্তিশালী রাবী হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তারা তার ও অপরাপর মুহাদ্দিসের হাদীসসমূহও নিখুঁতভাবে বর্ণনা করেছেন। হাদীস বিশারদদের মধ্যে ইমাম যুহরী ও হিশাম ইবনু উরওয়ার বর্ণিত হাদীস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে আছে। এ দু’জনের ছাত্রগণ ঐকমত্যে তাদের বর্ণিত হাদীস বর্ণনা করেছেন। এমতাবস্থায় যদি দেখা যায় যে, কোন ব্যক্তি তাদের উভয়ের (যুহরী ও হিশাম) থেকে অথবা তাদের কোন একজনের কাছ থেকে এমন কোন হাদীস বর্ণনা করার দাবী করে যে সম্পর্কে তাদের ছাত্রগণ অবহিত নন, তাছাড়া সে ব্যক্তি তাদের কারো সাথে কোন সহীহ বর্ণনায় শারীকও নয় এরূপ লোকের বর্ণিত হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ।
আর আমরা হাদীস ও হাদীস বর্ণনাকারীদের কয়েকটি মূলনীতির ব্যাখ্যা দিলাম, যাতে যিনি মুহাদ্দিসগণের পথ অনুসরণ করার ইচ্ছা পোষণ করেন এবং আল্লাহ তা’আলা যাকে এ পথে চলার তাওফীক দান করেন, তিনি এ দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে পারেন। ইনশাআল্লাহ, আমরা যথাস্থানে মু’আল্লালাহ (ক্ৰটিযুক্ত) হাদীস সম্পর্কে বর্ণনা করার সময় এ সম্পর্কে অধিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের প্রয়াস পাব। উল্লেখ্য যে, আল্লাহ তোমার প্রতি সদয় হোন।
আর তোমার প্রতি আল্লাহর রহম করে, এর পরে স্বঘোষিত মুহাদ্দিসদের অপকৰ্ম আমাদের চোখের সামনেই রয়েছে। তারা জানে এবং স্বীকারও করে যে, তারা শারী’আহ বিষয়ে জ্ঞানহীনদের কাছে ছড়িয়ে দেয় যেগুলো এমন সব লোক হতে বর্ণিত যারা আহলুল হাদীসগণের নিকট মিথ্যা বর্ণনার অভিযোগে অভিযুক্ত। যা মুনকার, অথচ উচিত ছিল এ সব মুনকার হাদীস বর্ণনা থেকে বিরত থাকা। তাদের উচিত কেবল সেসব হাদীস বর্ণনা করা যেগুলো সহীহ ও মাশহর, যেগুলো বিশ্বাসভাজন নিষ্ঠাবাস ও ন্যায়পরায়ণতায় প্রসিদ্ধ রাবীগণ বর্ণনা করেছেন। সেসব মহান রাবীগণের মধ্যে রয়েছেন মালিক ইবনু আনাস, শু’বাহ ইবনু হাজ্জাজ, সুফইয়ান ইবনু উওয়াইনাহ, ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ আল কাত্তান, ‘আবদুর রহমান ইবনু মাহদী প্রমুখ। কেবল তোমার অনুরোধে সহীহ হাদীসগুলো বাছাই করার কষ্ট স্বীকার করা আমার পক্ষে সম্ভব হতো না; কিন্তু যখন দেখতে পেলাম, তথাকথিত মুহাদ্দিসরা সাধারণের মধ্যে মুনকার ও মিথ্যা হাদীস প্রচার করছে তখনই কাজে সাড়া দেয়া আমার পক্ষে সহজ হলো।
জেনে রাখ, যারা সহীহ এবং নির্ভুল হাদীসের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণে সক্ষম এবং যাদের নির্ভরযোগ্য ও সন্দেহজনক রাবীদের যাচাই করার ক্ষমতা আছে তাদের কেবল এমন হাদীস বর্ণনা করার কর্তব্য যেগুলোর উৎস সহীহ এবং যেগুলোর রাবীগণের কোন দোষ প্রমাণিত হয়নি। তারা এমন হাদীস বর্ণনা করবেন না, যেগুলো এমন লোক বর্ণনা করেছে যারা অপবাদপ্রাপ্ত বিদ্বেষপ্রবণ, বিদ’আতী এবং দোষী।
আমরা যা বললাম তার এমন শক্ত দলীল পেশ করব যাতে তা মেনে নেয়া অপরিহার্য হয় আর তার বিরোধিতা করার কোন সুযোগ না থাকে। তা হচ্ছে মহান আল্লাহর বাণীঃ “হে মু’মিনগণ! যদি কোন ফাসিক লোক তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিয়ে আসে তবে তোমরা তার সত্যতা যাচাই করে নাও। এমন যেন না হয় যে, তোমরা অজ্ঞতাবশতঃ কোন মানবগোষ্ঠীর ক্ষতিসাধন করবে বসবে আর পরে নিজেদের কৃতকার্যের জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হতে হবে” (সূরাহ আল হুজুরাত ৪৯ঃ ৬)। অপর এক আয়াতে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ “তোমার পছন্দমত সাক্ষী নিযুক্ত কর” (সূরাহ আল বাকারাহ ২ঃ ২৮২)। তিনি আরো বলেনঃ “তোমাদের মধ্য থেকে দু’জন ন্যায়পরায়ণ লোককে সাক্ষী রাখবে”- (সূরাহ আত তালাক ৬৫ঃ ২)। এসব আয়াত থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে, ফাসিক লোকের খবর বাতিল ও অগ্রহণযোগ্য এবং যে ব্যক্তি ন্যায়পরায়ণ নয় তার সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যানযোগ্য। কোন কোন বিষয়ে রিওয়ায়াত ও শাহাদাতের মধ্যে (সাক্ষ্যদানের) পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও প্রধানতঃ এ দুটি এক ও অভিন্ন। হাদীস বিশেষজ্ঞদের কাছে ফাসিক ব্যক্তির খবর যেমন গ্রহণযোগ্য নয়, তেমনি তার শাহাদাত বা সাক্ষ্যও সবার নিকট প্রত্যাখ্যানযোগ্য। কুরআনুল মাজীদে যেমন ফাসিকের খবর পরিত্যাজ্য বলে প্রমাণিত, তেমনি হাদীসেও মুনকার রিওয়ায়াত বর্ণনা করা না-জায়িয বলে প্রমাণিত। এ প্রসিদ্ধ হাদীসটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার পক্ষ হতে এমন হাদীস বর্ণনা করে, যা সে জানে যে, তা মিথ্যা, তবে সেও মিথ্যাবীদের একজন। অর্থাৎ যদিও সে ঐ হাদীসটি নিজ হতে বানায়নি কিন্তু তার মনে মনে বুঝে যে, ঐ হাদীস সঠিক নয় তবুও যে সেটা বর্ণনা করে সেক্ষেত্রে সেও মিথ্যুকদের অন্তর্ভুক্ত।* (অথবা সে দুই মিথ্যাবাদীর অন্যতম)
(../.) এ হাদীসটি আবূ বাকর ইবনু আবী শাইবাহ (রহঃ), সামুরাহ ইবনু জুনদাব (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ (রহঃ) ….. মুগীরাহ ইবনু শুবাহ (রাযিঃ) থেকে অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন।* যে মিথ্যা রচনা করে সে এক মিথ্যুক এবং যে ঐ মিথ্যা কথা বর্ণনা করে সে আর এক মিথ্যাবাদী।
باب وُجُوبِ الرِّوَايَةِ عَنِ الثِّقَاتِ، وَتَرْكِ الْكَذَّابِينَ
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ. الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ وَصَلَّى اللَّهُ عَلَى مُحَمَّدٍ خَاتَمِ النَّبِيِّينَ وَعَلَى جَمِيعِ الأَنْبِيَاءِ وَالْمُرْسَلِينَ. أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّكَ يَرْحَمُكَ اللَّهُ بِتَوْفِيقِ خَالِقِكَ ذَكَرْتَ أَنَّكَ هَمَمْتَ بِالْفَحْصِ عَنْ تَعَرُّفِ جُمْلَةِ الأَخْبَارِ الْمَأْثُورَةِ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سُنَنِ الدِّينِ وَأَحْكَامِهِ وَمَا كَانَ مِنْهَا فِي الثَّوَابِ وَالْعِقَابِ وَالتَّرْغِيبِ وَالتَّرْهِيبِ وَغَيْرِ ذَلِكَ مِنْ صُنُوفِ الأَشْيَاءِ بِالأَسَانِيدِ الَّتِي بِهَا نُقِلَتْ وَتَدَاوَلَهَا أَهْلُ الْعِلْمِ فِيمَا بَيْنَهُمْ فَأَرَدْتَ- أَرْشَدَكَ اللَّهُ- أَنْ تُوَقَّفَ عَلَى جُمْلَتِهَا مُؤَلَّفَةً مُحْصَاةً وَسَأَلْتَنِي أَنْ أُلَخِّصَهَا لَكَ فِي التَّأْلِيفِ بِلاَ تَكْرَارٍ يَكْثُرُ فَإِنَّ ذَلِكَ- زَعَمْتَ- مِمَّا يَشْغَلُكَ عَمَّا لَهُ قَصَدْتَ مِنَ التَّفَهُّمِ فِيهَا وَالاِسْتِنْبَاطِ مِنْهَا. وَلِلَّذِي سَأَلْتَ- أَكْرَمَكَ اللَّهُ- حِينَ رَجَعْتُ إِلَى تَدَبُّرِهِ وَمَا تَؤُولُ بِهِ الْحَالُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ عَاقِبَةٌ مَحْمُودَةٌ وَمَنْفَعَةٌ مَوْجُودَةٌ وَظَنَنْتُ- حِينَ سَأَلْتَنِي تَجَشُّمَ ذَلِكَ- أَنْ لَوْ عُزِمَ لِي عَلَيْهِ وَقُضِيَ لِي تَمَامُهُ كَانَ أَوَّلُ مَنْ يُصِيبُهُ نَفْعُ ذَلِكَ إِيَّايَ خَاصَّةً قَبْلَ غَيْرِي مِنَ النَّاسِ لأَسْبَابٍ كَثِيرَةٍ يَطُولُ بِذِكْرِهَا الْوَصْفُ إِلاَّ أَنَّ جُمْلَةَ ذَلِكَ أَنَّ ضَبْطَ الْقَلِيلِ مِنْ هَذَا الشَّانِ وَإِتْقَانَهُ أَيْسَرُ عَلَى الْمَرْءِ مِنْ مُعَالَجَةِ الْكَثِيرِ مِنْهُ. ولاسيما عِنْدَ مَنْ لاَ تَمْيِيزَ عِنْدَهُ مِنَ الْعَوَامِّ إِلاَّ بِأَنْ يُوَقِّفَهُ عَلَى التَّمْيِيزِ غَيْرُهُ. فَإِذَا كَانَ الأَمْرُ فِي هَذَا كَمَا وَصَفْنَا فَالْقَصْدُ مِنْهُ إِلَى الصَّحِيحِ الْقَلِيلِ أَوْلَى بِهِمْ مِنَ ازْدِيَادِ السَّقِيمِ وَإِنَّمَا يُرْجَى بَعْضُ الْمَنْفَعَةِ فِي الاِسْتِكْثَارِ مِنْ هَذَا الشَّانِ وَجَمْعِ الْمُكَرَّرَاتِ مِنْهُ لِخَاصَّةٍ مِنَ النَّاسِ مِمَّنْ رُزِقَ فِيهِ بَعْضَ التَّيَقُّظِ وَالْمَعْرِفَةِ بِأَسْبَابِهِ وَعِلَلِهِ فَذَلِكَ إِنْ شَاءَ اللَّهُ يَهْجُمُ بِمَا أُوتِيَ مِنْ ذَلِكَ عَلَى الْفَائِدَةِ فِي الاِسْتِكْثَارِ مِنْ جَمْعِهِ. فَأَمَّا عَوَامُّ النَّاسِ الَّذِينَ هُمْ بِخِلاَفِ مَعَانِي الْخَاصِّ مِنْ أَهْلِ التَّيَقُّظِ وَالْمَعْرِفَةِ فَلاَ مَعْنَى لَهُمْ فِي طَلَبِ الْكَثِيرِ وَقَدْ عَجَزُوا عَنْ مَعْرِفَةِ الْقَلِيلِ
ثُمَّ إِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ مُبْتَدِئُونَ فِي تَخْرِيجِ مَا سَأَلْتَ وَتَأْلِيفِهِ عَلَى شَرِيطَةٍ سَوْفَ أَذْكُرُهَا لَكَ وَهُوَ إِنَّا نَعْمِدُ إِلَى جُمْلَةِ مَا أُسْنِدَ مِنَ الأَخْبَارِ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَنَقْسِمُهَا عَلَى ثَلاَثَةِ أَقْسَامٍ وَثَلاَثِ طَبَقَاتٍ مِنَ النَّاسِ عَلَى غَيْرِ تَكْرَارٍ. إِلاَّ أَنْ يَأْتِيَ مَوْضِعٌ لاَ يُسْتَغْنَى فِيهِ عَنْ تَرْدَادِ حَدِيثٍ فِيهِ زِيَادَةُ مَعْنًى أَوْ إِسْنَادٌ يَقَعُ إِلَى جَنْبِ إِسْنَادٍ لِعِلَّةٍ تَكُونُ هُنَاكَ لأَنَّ الْمَعْنَى الزَّائِدَ فِي الْحَدِيثِ الْمُحْتَاجَ إِلَيْهِ يَقُومُ مَقَامَ حَدِيثٍ تَامٍّ فلابد مِنْ إِعَادَةِ الْحَدِيثِ الَّذِي فِيهِ مَا وَصَفْنَا مِنَ الزِّيَادَةِ أَوْ أَنْ يُفَصَّلَ ذَلِكَ الْمَعْنَى مِنْ جُمْلَةِ الْحَدِيثِ عَلَى اخْتِصَارِهِ إِذَا أَمْكَنَ. وَلَكِنْ تَفْصِيلُهُ رُبَّمَا عَسُرَ مِنْ جُمْلَتِهِ فَإِعَادَتُهُ بِهَيْئَتِهِ إِذَا ضَاقَ ذَلِكَ أَسْلَمُ
فَأَمَّا مَا وَجَدْنَا بُدًّا مِنْ إِعَادَتِهِ بِجُمْلَتِهِ مِنْ غَيْرِ حَاجَةٍ مِنَّا إِلَيْهِ فَلاَ نَتَوَلَّى فِعْلَهُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ تَعَالَى. فَأَمَّا الْقِسْمُ الأَوَّلُ فَإِنَّا نَتَوَخَّى أَنْ نُقَدِّمَ الأَخْبَارَ الَّتِي هِيَ أَسْلَمُ مِنَ الْعُيُوبِ مِنْ غَيْرِهَا وَأَنْقَى مِنْ أَنْ يَكُونَ نَاقِلُوهَا أَهْلَ اسْتِقَامَةٍ فِي الْحَدِيثِ وَإِتْقَانٍ لِمَا نَقَلُوا لَمْ يُوجَدْ فِي رِوَايَتِهِمِ اخْتِلاَفٌ شَدِيدٌ وَلاَ تَخْلِيطٌ فَاحِشٌ كَمَا قَدْ عُثِرَ فِيهِ عَلَى كَثِيرٍ مِنَ الْمُحَدِّثِينَ وَبَانَ ذَلِكَ فِي حَدِيثِهِمْ
فَإِذَا نَحْنُ تَقَصَّيْنَا أَخْبَارَ هَذَا الصِّنْفِ مِنَ النَّاسِ أَتْبَعْنَاهَا أَخْبَارًا يَقَعُ فِي أَسَانِيدِهَا بَعْضُ مَنْ لَيْسَ بِالْمَوْصُوفِ بِالْحِفْظِ وَالإِتْقَانِ كَالصِّنْفِ الْمُقَدَّمِ قَبْلَهُمْ عَلَى أَنَّهُمْ وَإِنْ كَانُوا فِيمَا وَصَفْنَا دُونَهُمْ فَإِنَّ اسْمَ السِّتْرِ وَالصِّدْقِ وَتَعَاطِي الْعِلْمِ يَشْمَلُهُمْ كَعَطَاءِ بْنِ السَّائِبِ وَيَزِيدَ بْنِ أَبِي زِيَادٍ وَلَيْثِ بْنِ أَبِي سُلَيْمٍ وَأَضْرَابِهِمْ مِنْ حُمَّالِ الآثَارِ وَنُقَّالِ الأَخْبَارِ
فَهُمْ وَإِنْ كَانُوا بِمَا وَصَفْنَا مِنَ الْعِلْمِ وَالسِّتْرِ عِنْدَ أَهْلِ الْعِلْمِ مَعْرُوفِينَ فَغَيْرُهُمْ مِنْ أَقْرَانِهِمْ مِمَّنْ عِنْدَهُمْ مَا ذَكَرْنَا مِنَ الإِتْقَانِ وَالاِسْتِقَامَةِ فِي الرِّوَايَةِ يَفْضُلُونَهُمْ فِي الْحَالِ وَالْمَرْتَبَةِ لأَنَّ هَذَا عِنْدَ أَهْلِ الْعِلْمِ دَرَجَةٌ رَفِيعَةٌ وَخَصْلَةٌ سَنِيَّةٌ
أَلاَ تَرَى أَنَّكَ إِذَا وَازَنْتَ هَؤُلاَءِ الثَّلاَثَةَ الَّذِينَ سَمَّيْنَاهُمْ عَطَاءً وَيَزِيدَ وَلَيْثًا بِمَنْصُورِ بْنِ الْمُعْتَمِرِ وَسُلَيْمَانَ الأَعْمَشِ وَإِسْمَاعِيلَ بْنِ أَبِي خَالِدٍ فِي إِتْقَانِ الْحَدِيثِ وَالاِسْتِقَامَةِ فِيهِ وَجَدْتَهُمْ مُبَايِنِينَ لَهُمْ لاَ يُدَانُونَهُمْ لاَ شَكَّ عِنْدَ أَهْلِ الْعِلْمِ بِالْحَدِيثِ فِي ذَلِكَ لِلَّذِي اسْتَفَاضَ عِنْدَهُمْ مِنْ صِحَّةِ حِفْظِ مَنْصُورٍ وَالأَعْمَشِ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِتْقَانِهِمْ لِحَدِيثِهِمْ وَأَنَّهُمْ لَمْ يَعْرِفُوا مِثْلَ ذَلِكَ مِنْ عَطَاءٍ وَيَزِيدَ وَلَيْثٍ
وَفِي مِثْلِ مَجْرَى هَؤُلاَءِ إِذَا وَازَنْتَ بَيْنَ الأَقْرَانِ كَابْنِ عَوْنٍ وَأَيُّوبَ السَّخْتِيَانِيِّ مَعَ عَوْفِ بْنِ أَبِي جَمِيلَةَ وَأَشْعَثَ الْحُمْرَانِيِّ وَهُمَا صَاحِبَا الْحَسَنِ وَابْنِ سِيرِينَ كَمَا أَنَّ ابْنَ عَوْنٍ وَأَيُّوبَ صَاحِبَاهُمَا إِلاَّ أَنَّ الْبَوْنَ بَيْنَهُمَا وَبَيْنَ هَذَيْنِ بَعِيدٌ فِي كَمَالِ الْفَضْلِ وَصِحَّةِ النَّقْلِ وَإِنْ كَانَ عَوْفٌ وَأَشْعَثُ غَيْرَ مَدْفُوعَيْنِ عَنْ صِدْقٍ وَأَمَانَةٍ عِنْدَ أَهْلِ الْعِلْمِ وَلَكِنَّ الْحَالَ مَا وَصَفْنَا مِنَ الْمَنْزِلَةِ عِنْدَ أَهْلِ الْعِلْمِ
وَإِنَّمَا مَثَّلْنَا هَؤُلاَءِ فِي التَّسْمِيَةِ لِيَكُونَ تَمْثِيلُهُمْ سِمَةً يَصْدُرُ عَنْ فَهْمِهَا مَنْ غَبِيَ عَلَيْهِ طَرِيقُ أَهْلِ الْعِلْمِ فِي تَرْتِيبِ أَهْلِهِ فِيهِ فَلاَ يُقَصَّرُ بِالرَّجُلِ الْعَالِي الْقَدْرِ عَنْ دَرَجَتِهِ وَلاَ يُرْفَعُ مُتَّضِعُ الْقَدْرِ فِي الْعِلْمِ فَوْقَ مَنْزِلَتِهِ وَيُعْطَى كُلُّ ذِي حَقٍّ فِيهِ حَقَّهُ وَيُنَزَّلُ مَنْزِلَتَهُ
وَقَدْ ذُكِرَ عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهَا أَنَّهَا قَالَتْ أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ نُنَزِّلَ النَّاسَ مَنَازِلَهُمْ. مَعَ مَا نَطَقَ بِهِ الْقُرْآنُ مِنْ قَوْلِ اللَّهِ تَعَالَى: (وَفَوْقَ كُلِّ ذِي عِلْمٍ عَلِيمٌ).
فَعَلَى نَحْوِ مَا ذَكَرْنَا مِنَ الْوُجُوهِ نُؤَلِّفُ مَا سَأَلْتَ مِنَ الأَخْبَارِ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
فَأَمَّا مَا كَانَ مِنْهَا عَنْ قَوْمٍ هُمْ عِنْدَ أَهْلِ الْحَدِيثِ مُتَّهَمُونَ أَوْ عِنْدَ الأَكْثَرِ مِنْهُمْ فَلَسْنَا نَتَشَاغَلُ بِتَخْرِيجِ حَدِيثِهِمْ كَعَبْدِ اللَّهِ بْنِ مِسْوَرٍ أَبِي جَعْفَرٍ الْمَدَائِنِيِّ وَعَمْرِو بْنِ خَالِدٍ وَعَبْدِ الْقُدُّوسِ الشَّامِيِّ وَمُحَمَّدِ بْنِ سَعِيدٍ الْمَصْلُوبِ وَغِيَاثِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ وَسُلَيْمَانَ بْنِ عَمْرٍو أَبِي دَاوُدَ النَّخَعِيِّ وَأَشْبَاهِهِمْ مِمَّنِ اتُّهِمَ بِوَضْعِ الأَحَادِيثِ وَتَوْلِيدِ الأَخْبَارِ
وَكَذَلِكَ مَنِ الْغَالِبُ عَلَى حَدِيثِهِ الْمُنْكَرُ أَوِ الْغَلَطُ أَمْسَكْنَا أَيْضًا عَنْ حَدِيثِهِمْ
وَعَلاَمَةُ الْمُنْكَرِ فِي حَدِيثِ الْمُحَدِّثِ إِذَا مَا عُرِضَتْ رِوَايَتُهُ لِلْحَدِيثِ عَلَى رِوَايَةِ غَيْرِهِ مِنْ أَهْلِ الْحِفْظِ وَالرِّضَا خَالَفَتْ رِوَايَتُهُ رِوَايَتَهُمْ أَوْ لَمْ تَكَدْ تُوَافِقُهَا فَإِذَا كَانَ الأَغْلَبُ مِنْ حَدِيثِهِ كَذَلِكَ كَانَ مَهْجُورَ الْحَدِيثِ غَيْرَ مَقْبُولِهِ وَلاَ مُسْتَعْمَلِهِ
فَمِنْ هَذَا الضَّرْبِ مِنَ الْمُحَدِّثِينَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَرَّرٍ وَيَحْيَى بْنُ أَبِي أُنَيْسَةَ وَالْجَرَّاحُ بْنُ الْمِنْهَالِ أَبُو الْعَطُوفِ وَعَبَّادُ بْنُ كَثِيرٍ وَحُسَيْنُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ ضُمَيْرَةَ وَعُمَرُ بْنُ صُهْبَانَ وَمَنْ نَحَا نَحْوَهُمْ فِي رِوَايَةِ الْمُنْكَرِ مِنَ الْحَدِيثِ. فَلَسْنَا نُعَرِّجُ عَلَى حَدِيثِهِمْ وَلاَ نَتَشَاغَلُ بِهِ
لأَنَّ حُكْمَ أَهْلِ الْعِلْمِ وَالَّذِي نَعْرِفُ مِنْ مَذْهَبِهِمْ فِي قَبُولِ مَا يَتَفَرَّدُ بِهِ الْمُحَدِّثُ مِنَ الْحَدِيثِ أَنْ يَكُونَ قَدْ شَارَكَ الثِّقَاتِ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ وَالْحِفْظِ فِي بَعْضِ مَا رَوَوْا وَأَمْعَنَ فِي ذَلِكَ عَلَى الْمُوَافَقَةِ لَهُمْ فَإِذَا وُجِدَ كَذَلِكَ ثُمَّ زَادَ بَعْدَ ذَلِكَ شَيْئًا لَيْسَ عِنْدَ أَصْحَابِهِ قُبِلَتْ زِيَادَتُهُ
فَأَمَّا مَنْ تَرَاهُ يَعْمِدُ لِمِثْلِ الزُّهْرِيِّ فِي جَلاَلَتِهِ وَكَثْرَةِ أَصْحَابِهِ الْحُفَّاظِ الْمُتْقِنِينَ لِحَدِيثِهِ وَحَدِيثِ غَيْرِهِ أَوْ لِمِثْلِ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ وَحَدِيثُهُمَا عِنْدَ أَهْلِ الْعِلْمِ مَبْسُوطٌ مُشْتَرَكٌ قَدْ نَقَلَ أَصْحَابُهُمَا عَنْهُمَا حَدِيثَهُمَا عَلَى الاِتِّفَاقِ مِنْهُمْ فِي أَكْثَرِهِ فَيَرْوِي عَنْهُمَا أَوْ عَنْ أَحَدِهِمَا الْعَدَدَ مِنَ الْحَدِيثِ مِمَّا لاَ يَعْرِفُهُ أَحَدٌ مِنْ أَصْحَابِهِمَا وَلَيْسَ مِمَّنْ قَدْ شَارَكَهُمْ فِي الصَّحِيحِ مِمَّا عِنْدَهُمْ فَغَيْرُ جَائِزٍ قَبُولُ حَدِيثِ هَذَا الضَّرْبِ مِنَ النَّاسِ وَاللَّهُ أَعْلَمُ
قَدْ شَرَحْنَا مِنْ مَذْهَبِ الْحَدِيثِ وَأَهْلِهِ بَعْضَ مَا يَتَوَجَّهُ بِهِ مَنْ أَرَادَ سَبِيلَ الْقَوْمِ وَوُفِّقَ لَهَا وَسَنَزِيدُ- إِنْ شَاءَ اللَّهُ تَعَالَى- شَرْحًا وَإِيضَاحًا فِي مَوَاضِعَ مِنَ الْكِتَابِ عِنْدَ ذِكْرِ الأَخْبَارِ الْمُعَلَّلَةِ إِذَا أَتَيْنَا عَلَيْهَا فِي الأَمَاكِنِ الَّتِي يَلِيقُ بِهَا الشَّرْحُ وَالإِيضَاحُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ تَعَالَى
وَبَعْدُ- يَرْحَمُكَ اللَّهُ- فَلَوْلاَ الَّذِي رَأَيْنَا مِنْ سُوءِ صَنِيعِ كَثِيرٍ مِمَّنْ نَصَبَ نَفْسَهُ مُحَدِّثًا فِيمَا يَلْزَمُهُمْ مِنْ طَرْحِ الأَحَادِيثِ الضَّعِيفَةِ وَالرِّوَايَاتِ الْمُنْكَرَةِ وَتَرْكِهِمْ الاِقْتِصَارَ عَلَى الأَحَادِيثِ الصَّحِيحَةِ الْمَشْهُورَةِ مِمَّا نَقَلَهُ الثِّقَاتُ الْمَعْرُوفُونَ بِالصِّدْقِ وَالأَمَانَةِ بَعْدَ مَعْرِفَتِهِمْ وَإِقْرَارِهِمْ بِأَلْسِنَتِهِمْ أَنَّ كَثِيرًا مِمَّا يَقْذِفُونَ بِهِ إِلَى الأَغْبِيَاءِ مِنَ النَّاسِ هُوَ مُسْتَنْكَرٌ وَمَنْقُولٌ عَنْ قَوْمٍ غَيْرِ مَرْضِيِّينَ مِمَّنْ ذَمَّ الرِّوَايَةَ عَنْهُمْ أَئِمَّةُ أَهْلِ الْحَدِيثِ مِثْلُ مَالِكِ بْنِ أَنَسٍ وَشُعْبَةَ بْنِ الْحَجَّاجِ وَسُفْيَانَ بْنِ عُيَيْنَةَ وَيَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ الْقَطَّانِ وَعَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ مَهْدِيٍّ وَغَيْرِهِمْ مِنَ الأَئِمَّةِ- لَمَا سَهُلَ عَلَيْنَا الاِنْتِصَابُ لِمَا سَأَلْتَ مِنَ التَّمْيِيزِ وَالتَّحْصِيلِ
وَلَكِنْ مِنْ أَجْلِ مَا أَعْلَمْنَاكَ مِنْ نَشْرِ الْقَوْمِ الأَخْبَارَ الْمُنْكَرَةَ بِالأَسَانِيدِ الضِّعَافِ الْمَجْهُولَةِ وَقَذْفِهِمْ بِهَا إِلَى الْعَوَامِّ الَّذِينَ لاَ يَعْرِفُونَ عُيُوبَهَا خَفَّ عَلَى قُلُوبِنَا إِجَابَتُكَ إِلَى مَا سَأَلْتَ
وَاعْلَمْ- وَفَّقَكَ اللَّهُ تَعَالَى- أَنَّ الْوَاجِبَ عَلَى كُلِّ أَحَدٍ عَرَفَ التَّمْيِيزَ بَيْنَ صَحِيحِ الرِّوَايَاتِ وَسَقِيمِهَا وَثِقَاتِ النَّاقِلِينَ لَهَا مِنَ الْمُتَّهَمِينَ أَنْ لاَ يَرْوِيَ مِنْهَا إِلاَّ مَا عَرَفَ صِحَّةَ مَخَارِجِهِ. وَالسِّتَارَةَ فِي نَاقِلِيهِ. وَأَنْ يَتَّقِيَ مِنْهَا مَا كَانَ مِنْهَا عَنْ أَهْلِ التُّهَمِ وَالْمُعَانِدِينَ مِنْ أَهْلِ الْبِدَعِ.
وَالدَّلِيلُ عَلَى أَنَّ الَّذِي قُلْنَا مِنْ هَذَا هُوَ اللاَّزِمُ دُونَ مَا خَالَفَهُ قَوْلُ اللَّهِ جَلَّ ذِكْرُهُ: (يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا أَنْ تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَى مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ) وَقَالَ جَلَّ ثَنَاؤُهُ: (مِمَّنْ تَرْضَوْنَ مِنَ الْشُّهَدَاءِ) وَقَالَ عَزَّ وَجَلَّ: (وَأَشْهِدُوا ذَوَيْ عَدْلٍ مِنْكُمْ) فَدَلَّ بِمَا ذَكَرْنَا مِنْ هَذِهِ الآيِ أَنَّ خَبَرَ الْفَاسِقِ سَاقِطٌ غَيْرُ مَقْبُولٍ وَأَنَّ شَهَادَةَ غَيْرِ الْعَدْلِ مَرْدُودَةٌ وَالْخَبَرُ وَإِنْ فَارَقَ مَعْنَاهُ مَعْنَى الشَّهَادَةِ فِي بَعْضِ الْوُجُوهِ فَقَدْ يَجْتَمِعَانِ فِي أَعْظَمِ مَعَانِيهِمَا إِذْ كَانَ خَبَرُ الْفَاسِقِ غَيْرَ مَقْبُولٍ عِنْدَ أَهْلِ الْعِلْمِ كَمَا أَنَّ شَهَادَتَهُ مَرْدُودَةٌ عِنْدَ جَمِيعِهِمْ وَدَلَّتِ السُّنَّةُ عَلَى نَفْيِ رِوَايَةِ الْمُنْكَرِ مِنَ الأَخْبَارِ كَنَحْوِ دَلاَلَةِ الْقُرْآنِ عَلَى نَفْيِ خَبَرِ الْفَاسِقِ. وَهُوَ الأَثَرُ الْمَشْهُورُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ حَدَّثَ عَنِّي بِحَدِيثٍ يُرَى أَنَّهُ كَذِبٌ فَهُوَ أَحَدُ الْكَاذِبِينَ».
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ حَدَّثَنَا وَكِيعٌ عَنْ شُعْبَةَ عَنِ الْحَكَمِ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي لَيْلَى عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدَبٍ. (ح) وَحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ أَيْضًا حَدَّثَنَا وَكِيعٌ عَنْ شُعْبَةَ وَسُفْيَانَ عَنْ حَبِيبٍ عَنْ مَيْمُونِ بْنِ أَبِي شَبِيبٍ عَنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ قَالاَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَلِكَ.