পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা হচ্ছে আল্লাহ তাআলার নিয়ামত। হোক তা আত্মার, শারিরীক কিংবা পরিবেশের। মানুষের উপর আল্লাহর এই নিয়ামত তখনই পরিপূর্ণতা লাভ করে যখন মানুষ সঠিক পন্থায় আত্মা ও শরীর উভয়ের তাহারাত বা পাক-পবিত্রতা অর্জনের পাশাপাশি পরিবেশেরও জন্য পূর্ণ জ্ঞান ও হেদায়েত লাভ করতে সক্ষম হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- আততুহুরু শাতরুল ঈমান।
অর্থ : পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক। (সহীহ মুসলিম)
কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করবো :
আমরা দুই ভাবে পবিত্রতা অর্জন করতে পারি-
ক. অযুর মাধ্যমে;
খ. গোসলের মাধ্যমে ও
গ. তায়াম্মুমের মাধ্যমে
মানুষ সাধারণত ইবাদত-বন্দেগী তথা নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি করার জন্য সব সময় অযুর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করে থাকে। আল্লাহ তাআ’লা বলেন-
ইয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানু- ইজা কুনতুম ইলাস সালাতি ফাগসিলু ওঝুহাকুম ওয়া আইদিয়াকুম ইলাল মারাফেক্বে ওয়ামসাহু বিরুয়্যুসিকুম ওয়ারঝুলাকুম ইলাল কা’বাইন। (সূরা মায়েদা : আয়াত ৬)
অর্থ : হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা নামাজ পড়ার ইচ্ছা করো, তখন তোমাদের সম্পূর্ণ মুখমণ্ডল ধৌত করো (কুলি করা, নাকে পানি দেয়া, পুরুষদের দাড়ি খিলাল করা এর অর্ন্তভূক্ত); উভয়হাত কনুইসহ ধৌত করা (দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত তিন বার করে ধৌত করা অর্ন্তভূক্ত); মাথা মাসেহ করা (কান ও ঘাড় মাসেহ এর অর্ন্তভূক্ত); উভয় পা টাখনুসহ ধৌত করা। এই চারটি হচ্ছে অযুর ফরজ।
জেনে রাখা ভালো, পায়খানা-পেশাবের পর, বমি করার পর, রক্ত-পুজ বের হলে, ঘুমালে, বেহুশ হলে, নামাজে অট্ট হাসি দিলে অযু নষ্ট হয়ে যায়। সুতরাং এর কোনটি ঘটলে আমরা উপরোক্ত নিয়ে অযুর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করবো।
গোসলের মাধ্যমে পাক-পবিত্রতা :
স্ত্রী সহবাস ও স্বপ্ন দোষের কারণে মানুষের উপর গোসল করা অত্যাবশক হয়ে যায়। যতক্ষণ না মানুষ গোসল না করে, শুধু অযুর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন সম্ভব নয়।
আল্লাহ বলেন, ইয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানু লা তাক্বরাবুস সালাতা ওয়া আনতুম সুকারা হাত্তা তা’লামু মা তাকুলুনা ওয়া লা ঝুনুবান ইল্লা আ’বিরি সাবিলিন হাত্তা তাগসিলু ওয়া ইন কুনতুম মারদা আও আ’লা সাফারিন আও ঝাআ আহাদুমমিনকুম মিনাল গাইতে আও লা আমাসতুমুন নিসাআ ফালাম তাজিদু মাআন ফাতায়াম্মামু সাই’দান ত্বাইয়্যেবান ফাআমসাহু বিওয়াঝহাকুম ওয়া আইদিয়াকুম ইন্নালল্লাহা কানা আফুয়্যান গাফুরা। (সূরা নিসা : আয়াত ৪৩)
অর্থ : হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন নেশাগ্রস্থ থাক, তখন তোমরা নামাজের ধারে-কাছেও যেও না, যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও, যা কিছু তোমরা বলছ আর (নামাজের কাছে যেও না) গোসল ফরজ হওয়া অবস্থায়; যতক্ষণ না তোমরা গোসল করে নাও; কিন্তু মুসাফির অবস্থার কথা স্বতন্ত্র আর যদি তোমরা অসুস্থ হয়ে থাকো কিংবা সফরে থাকো অথবা তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি প্রস্রাব-পায়খানা থেকে এসে থাকে কিংবা নারী গমন করে থাকে, কিন্তু পরে যদি পানিপ্রাপ্তি সম্ভব না হয়, তবে পাক-পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও- তাতে মুখমণ্ডল ও হাতকে ঘষে নাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআ’লা ক্ষমাশীল।
অতএব আল্লাহর বিধান হচ্ছে- গোসল ফরজ হলে তা গোসলের মাধ্যমেই পবিত্রতা অর্জন করতে হয়। গোসলের নিয়ম-
ক. কুলি করা;
খ. নাকের নসারন্ধ্রের/নাসিকামূলে পানি টেনে নেয়া;
গ. সমস্ত্র শরীর ভালভাবে ধৌত করা এবং
ঘ. গোসল সমাপ্তির পর গোসলের স্থান থেকে সরে যেয়ে পা ধৌত করা বা গোসলের জায়গা পরিস্কার করে পা ধৌত করা।
সতর্কতা-
গোসলের পূর্বে, যে স্থানে বা কাপড়ে নাজাসাত বা অপবিত্রতা লেগে থাকে তা আগে ভালভাবে ধুয়ে নেয়া। তারপর উপরোল্লিখিত নিয়মে গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা।
পানি পাওয়া না গেলে-
১. মুসাফির অবস্থায় ঘুমে অথবা কোনো কারণে গোসল ফরজ হয়ে যায় এবং পানি পাওয়া না যায় সে ক্ষেত্রে তায়াম্মুম করে নিতে হবে। অত্র আয়াতেই বলা হয়েছে যে, তায়াম্মু করেই পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব।
২. মসজিদে থাকা অবস্থায় যদি এই সমস্যা হয় এবং গোসলের ব্যবস্থা না থাকে তবে অযুর ব্যবস্থা থাকে তবে অযু করে মসজিদে অবস্থানের ব্যাপারে মতামত পাওয়া যায়।
তায়াম্মুম কী?
তায়াম্মুম শব্দের অর্থ হচ্ছে- ইচ্ছা করা, সংকল্প করা অর্থাৎ পাক-পবিত্র মাটি দ্বারা পবিত্রতা অর্জনের ইচ্ছা বা সংকল্প করা। তায়াম্মুম শুধু গোসল ফরজ হলেই নয় বরং অযুর বেলাতেও তায়াম্মুক করে পবিত্রতা অর্জন করতে হয়-
১. যদি পানি পাওয়া না যায়;
২. পানি পাওয়া গেলেও যদি পানি ব্যবহার করলে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে;
৩. ঐ বাচ্চা যার ঠাণ্ডা লেগে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে, যদি মা ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করে; এ ক্ষেত্রে তায়াম্মুম করে পবিত্রতা অর্জন করতে পারবে।
তায়াম্মুম করার নিয়ম-
তায়াম্মুম করার বিষয়টি অত্র আয়াতে বলা হয়েছে-
ক. সমস্ত্র মুখমণ্ডল মাসেহ করবে;
খ. উভয় হাত কুনুইসহ মাসেহ করবে;
এখন কেউ কেউ বলেছেন- পাক-পবিত্র মাটির উপর উভয় কাজ করার পূর্বে মাটিতে দু’হাত ঘসে নিতে হবে; আবার কেউ কেউ বলেছেন- একবার ঘষলেই চলবে; আমরা উভয় কাজের পূর্বেই আলাদা আলাদা ভাবে পবিত্র মাটি দ্বারা হাত ঘষে তায়াম্মুম করে থাকি। এটি আহনাফ তথা হানাফী মাজহাবের নিয়ম। তবে তায়াম্মুমের জন্য মাটির মধ্যে হাত ঘষা অপরিহার্য নয়। যে জায়গার ওপর ধূলো পড়ে আছে এবং শুকনো মাটি সম্বলিত যে কোনো জায়গায় হাত ঘষে নেয়াও বৈধ বিবেচিত হবে।
জ্ঞাতব্য বিষয় হচ্ছে যে-
মহিলাদের হায়েজ (ঋতুকালীন সময়) ও নেফাসের (সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পরের সময়) বিষয়েও ইদ্দতপূর্ণ (মেয়াদ) হওয়ার পর গোসলের মাধ্যমেই পবিত্রতা অর্জন করা জরুরী।
সর্বোপরি-
সব ধরনের পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতাই ঈমানের অর্ধেকের অন্তর্ভুক্ত। হাদীস শরীফে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
আলফিত্রাতু খামসুন (পাঁচটি জিনিস সুস্থ স্বভাবের দাবি রাখে)-
ক. আলখিতানু অর্থাৎ খৎনা করা;
খ. ওয়াইস্তহ্দাদু অর্থাৎ ক্ষৌরকার্য করা;
গ. ওয়া ক্বস্সুশ শারিবি অর্থাৎ গোঁফ খাটো করা;
ঘ. ওয়া তাক্বলিমুল আযফারি অর্থাৎ নখ কাটা;
ঙ. ওয়া নাত্ফুল ইবিত্বে অর্থাৎ বগলের লোম উপড়ানো (বগলের নিচের লোম উপড়ানো উত্তম, তবে চাঁছাও জায়িজ আছে। মূল উদ্দেশ্য হলো তা পরিষ্কার করা)। -সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও ইরশাদ করেন-
ইন্নাল্লাহা নাযিফুন ইউহিব্বুন নাযাফাতা ফানায্যিফু আফ্নিয়াতাকুম
অর্থাৎ আল্লাহ তাআ’লা পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন; তিনি পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করেন; তাই তোমরা বাড়ি ঘরের আঙ্গিনাকেও পরিচ্ছন্ন রাখো। -জামে আত তিরমিজি।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে আল্লাহ এবং রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিখানো নিয়মে পবিত্রতা অর্জন করে ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ লাভের তাওফিক দান করুন। আমীন, ছুম্মা আমীন।
তথ্যসূত্র : সহিহ বুখারী, সহিহ মুসলিম, জামে আত-তিরমিজি, আল হিদায়া (ইফা), ফুরুউল ঈমান, তাফহীম ও অন্যান্য গ্রন্থ।
সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আজীম ওয়া বিহামদিহি আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইকা।
If you're thinking about building a barndominium in 2025, you're not alone. These barn-style homes…
A dead or drained car battery can be a frustrating issue, especially when you're in…
Dreaming of a tropical escape but want to explore on your own terms? If you’ve…
Teaching your child to share is one of the most valuable lessons they’ll learn in…
Old gasoline sitting in your garage or shed can pose serious risks to your health,…
If you’re a fan of anime and are curious about the stranger, more supernatural side…