পাহাড়ের গুহায় আঁটকে পড়া তিন যুবক

পাহাড়ের গুহায় আঁটকে পড়া তিন যুবক

একবার তিনজন লোক পথ চলছিল, এমন সময় তারা বৃষ্টিতে আক্রান্ত হ’ল। অতঃপর তারা এক পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিল। হঠাৎ পাহাড় হ’তে এক খণ্ড পাথর পড়ে তাদের গুহার মুখ বন্ধ হয়ে গেল। তখন তারা একে অপরকে বলল, নিজেদের কৃত কিছু সৎকাজের কথা চিন্তা করে বের কর, যা আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য তোমরা করেছ এবং তার মাধ্যমে আল্লাহ্‌র নিকট দো‘আ কর।

তাহ’লে হয়ত আল্লাহ তোমাদের উপর হ’তে পাথরটি সরিয়ে দিবেন। তাদের একজন বলতে লাগল, হে আল্লাহ! আমার আব্বা-আম্মা খুব বৃদ্ধ ছিলেন এবং আমার ছোট ছোট সন্তানও ছিল। আমি তাদের ভরণ-পোষণের জন্য পশু পালন করতাম। সন্ধ্যায় যখন আমি বাড়ি ফিরতাম তখন দুধ দোহন করতাম এবং আমার সন্তানদের আগে আমার আব্বা-আম্মাকে পান করাতাম। একদিন আমার ফিরতে দেরী হয় এবং সন্ধ্যা হওয়ার আগে আসতে পারলাম না।

এসে দেখি তারা ঘুমিয়ে পড়েছেন। আমি দুধ দোহন করলাম, যেমন প্রতিদিন দোহন করি। তারপর আমি তাঁদের শিয়রে (দুধ নিয়ে) দাঁড়িয়ে রইলাম। তাদেরকে জাগানো আমি পসন্দ করিনি এবং তাদের আগে আমার বাচ্চাদেরকে পান করানোও সঙ্গত মনে করিনি। অথচ বাচ্চাগুলো দুধের জন্য আমার পায়ের কাছে পড়ে কান্নাকাটি করছিল। এভাবে ভোর হয়ে গেল। হে আল্লাহ! আপনি জানেন আমি যদি শুধু আপনার সন্তুষ্টির জন্যই এ কাজটি করে থাকি তবে আপনি আমাদের হ’তে পাথরটা খানিক সরিয়ে দিন, যাতে আমরা আসমানটা দেখতে পাই। তখন আল্লাহ পাথরটাকে একটু সরিয়ে দিলেন এবং তারা আসমান দেখতে পেল।

দ্বিতীয় ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ! আমার এক চাচাতো বোন ছিল। পুরুষরা যেমন মহিলাদেরকে ভালবাসে, আমি তাকে তার চেয়েও অধিক ভালবাসতাম। একদিন আমি তার কাছে চেয়ে বসলাম (অর্থাৎ খারাপ কাজ করতে চাইলাম)। কিন্তু তা সে অস্বীকার করল যে পর্যন্ত না আমি তার জন্য একশ’ দিনার নিয়ে আসি।

পরে চেষ্টা করে আমি তা যোগাড় করলাম (এবং তার কাছে এলাম)। যখন আমি তার দু’পায়ের মাঝে বসলাম (অর্থাৎ সম্ভোগ করতে তৈরী হলাম) তখন সে বলল, হে আল্লাহ্‌র বান্দা! আল্লাহকে ভয় কর। অন্যায়ভাবে মোহর (পর্দা) ছিঁড়ে দিয়ো না। (অর্থাৎ আমার সতীত্ব নষ্ট করো না)। তখন আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। হে আল্লাহ! আপনি জানেন আমি যদি শুধু আপনার সন্তুষ্টির জন্য এ কাজটি করে থাকি, তবে আপনি আমাদের জন্য পাথরটা সরিয়ে দিন। তখন পাথরটা কিছুটা সরে গেল।

তৃতীয় ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ! আমি এক ‘ফারাক’ চাউলের বিনিময়ে একজন শ্রমিক নিযুক্ত করেছিলাম। যখন সে তার কাজ শেষ করল আমাকে বলল, আমার পাওনা দিয়ে দাও। আমি তাকে তার পাওনা দিতে গেলে সে তা নিল না। আমি তা দিয়ে কৃষি কাজ করতে লাগলাম এবং এর দ্বারা অনেক গরু ও তার রাখাল জমা করলাম।

বেশ কিছু দিন পর সে আমার কাছে আসল এবং বলল, আল্লাহকে ভয় কর (আমার মজুরী দাও)। আমি বললাম, এই সব গরু ও রাখাল নিয়ে নাও। সে বলল, আল্লাহকে ভয় কর, আমার সাথে ঠাট্টা কর না। আমি বললাম, আমি তোমার সাথে ঠাট্টা করছি না, ঐগুলো নিয়ে নাও। তখন সে তা নিয়ে গেল। হে আল্লাহ! আপনি জানেন, যদি আমি আপনার সন্তুষ্টি লাভের জন্য এ কাজটি করে থাকি, তবে পাথরের বাকীটুকু সরিয়ে দিন। তখন আল্লাহ পাথরটাকে সরিয়ে দিলেন।

{আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রা.) হ’তে বর্ণিত, বুখারী হা/২৩৩৩, ‘চাষাবাদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৩; মুসলিম হা/২৭৪৩, মিশকাত হা/৪৯৩৮}।

শিক্ষা :
১. বান্দা সুখে-দুঃখে সর্বদা আল্লাহকে ডাকবে।
২. বিপদাপদের সময় আল্লাহকে ব্যতীত কোন মৃত ব্যক্তি বা অন্য কাউকে ডাকা শিরকে আকবর বা বড় শিরক।
৩. সৎ আমলকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করতে হবে।
৪. পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে হবে এবং স্ত্রী ও সন্তানদের উপর তাদেরকে প্রাধান্য দিতে হবে।
৫. শ্রমিককে তার ন্যায্য পাওনা প্রদান করতে হবে।