আখিরাত

মাগফিরাত ও জান্নাত লাভের কয়েকটি সহজ উপায়

শাহাদাহ এর উপর অবিচল থাকাঃ

আল্লাহ তা’য়ালা বলেন : “নিশ্চয়ই যারা বলে (ঘোষণা করে), আমাদের প্রভু হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ, অতঃপর তারা (ঘোষণার উপর) অটল রয়েছে, তাদের প্রতি (সুসংবাদ নিয়ে) ফিরিশতা অবতীর্ণ হয়, (এবং বলে যে) তোমরা ভয় পেয়ো না, চিন্তা করো না আর সেই জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেয়া হয়েছে। পার্থিব জীবনেও আমরা তোমাদের বন্ধু ছিলাম এবং পরকালেও থাকব, তোমাদের জন্য সেথায় রয়েছে, যা কিছু তোমাদের বাসনা হবে আর তাও মজুদ রয়েছে, যা কিছু তোমরা চাইবে। আর এগুলো ক্ষমাশীল ও করুণাময়ের পক্ষ থেকে মেহমানদারী।” – (সূরা হা-মীম সিজদা : ৩০-৩২)

পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের প্রতি যত্নবান হওয়াঃ

হযরত ওবাদা ইবন সামেত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : “আল্লাহ বান্দাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি সালাতসমূহের হকে কোন প্রকার কমতি ও তাচ্ছিল্য না করে সঠিকভাবে সেগুলো আদায় করে, তার জন্য আল্লাহর এ অঙ্গিকার যে, তিনি তাকে জান্নাত দান করবেন। আর যে এগুলোর ব্যাপারে কমতি ও তাচ্ছিল্য করে তা আদায় করবে, তার প্রতি আল্লাহর কোন অঙ্গিকার নেই। তিনি চাইলে তাকে শাস্তিও দিতে পারেন, আবার ক্ষমাও করতে পারেন’’। -[হাদীসটি মোয়াত্তায়ে মালিক, মুসনাদে আহমাদ, সুনানে আবু দাউদ, নাসায়ী ও ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে]

আজীবন দ্বীনি ইলম অর্জনের পথে সাধনা করাঃ

হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি দ্বীনি ইলম অর্জনের উদ্দেশ্যে কোন পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেন। কোন একদল লোক যখন আল্লাহ তা’য়ালার ঘর সমূহের মধ্যে কোথাও একত্র হয়ে আল্লাহর কিতাব পাঠ এবং পরস্পর আলোচনা করতে থাকে তখন তাদের উপর সাকিনা অবতীর্ণ হতে থাকে, আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ তাদেরকে ঢেকে দেয়, ফিরিশতাগণ তাদেরকে বেষ্টন করে নেন এবং আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী ফিরিশতাদের সামনে তাদের উল্লে¬খ করে থাকেন। – (সহীহ্ মুসলিম)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওসাহাবাগণের আদর্শের উপর কায়েম থাকাঃ

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “বানী-ইসরাইলীগণ বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল আর আমার উম্মাত বিভক্ত হবে তিয়াত্তর দলে, সকলেই জাহান্নামে যাবে কিন্তু একটি মাত্র দল জান্নাতে যাবে। সাহাবাগণ (রা) জিজ্ঞাসা করলেন- এই দল কারা? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : যারা আমার ও আমার সাহাবাগণের আদর্শের উপর কায়েম থাকবে।” – (তিরমিজি-২৫৭৮ : হাসান, আবু দাউদ ও সহীহ তারগীব-৪৮)

আল্লাহর সুন্দরতম নামসমূহ জানা ও তার যথার্থ বাস্তবায়ন করাঃ

হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহর নিরানব্বইটি নাম রয়েছে, যে ব্যক্তি সে গুলো জেনে তা বাস্তবায়ন করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
– [বুখারীঃ হাদিস নং ২৭৩৬]

আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল এবং দ্বীনের প্রতি সন্তুষ্টি জ্ঞাপনঃ

হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি বলে যে, আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নবী হিসেবে পেয়ে আমি সন্তুষ্ট। তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।”
– [আবু দাউদঃ হাদীস নং ১৫২৯]

ওজুর পর কালিমায়ে শাহাদাত পাঠঃ

হযরত ওমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “যে ব্যক্তি ভালো করে ওযু করে এবং ওযুর পর কালিমায়ে শাহাদাত (‘আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লা-হু ওয়াহদাহু- লা- শারী-কালাহু- ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহু-ওয়া রসূ-লুহূ) পড়ে- [অর্থাৎ- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন কোন ইলাহ নাই, তিন এক, তার কোন শরীক নাই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা এবং রাসূল।]- তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে। সে তখন যেটি দিয়ে খুশি সেটি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” – [বুখারী ও মুসলিম]

আযানের সময় আযানের জবাব দেওয়াঃ

হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “মুয়াজ্জিন যখন আল্লাহু আকবার , আল্লাহু আকবার বলে তখন তোমাদের কেউ আল্লাহু আকবার , আল্লাহু আকবার বলল। তারপর মুয়াজ্জিন যখন আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লালাহু বলে, তখন সেও আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লালাহু বলল। অতঃপর মুয়াজ্জিন যখন আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ বলে, তখন সেও আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ বলল। পরে মুয়াজ্জিন যখন হাইয়্যা ‘আলাস সালাহ বলে, তখন সে লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহ বলল। এরপর মুয়াজ্জিন যখন হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ বলে, তখন সেও লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহ বলল। তারপর মুয়াজ্জিন যখন আল্লাহু আকবার , আল্লাহু আকবার বলে, তখন সেও আল্লাহু আকবার , আল্লাহু আকবার বলল, তারপর মুয়াজ্জিন যখন লা ইলাহা ইল্লালাহু বলে, তখন সেও লা ইলাহা ইল্লালাহু বলল। -এসবই যদি সে বিশুদ্ধ অন্তরে বলে থাকে তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
– (মুসলিমঃ হাদীস নং ২/৭৪৯)

প্রতি ফরয সালাতের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করাঃ

হযরত আবু উমামা থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘‘যে ব্যক্তি প্রতি ফরয সালাতের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সে জান্নাতবাসী হবে।’’ – [নাসায়ী, তাবারানী, ইবনে হিববান এটি বর্ণনা করেছেন]

গুনাহ মাফ জান্নাত লাভের সর্বশ্রেষ্ঠ দো’আ সকাল-সন্ধ্যায় একবার পাঠঃ

হযরত সাদ্দাদ ইবনে আউস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : সর্বশ্রেষ্ঠ ইস্তিগফার হল-

اَللّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِيْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوْءُ لَكَ بِذَنْبِيْ فَاغْفِرْ لِيْ فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلَّا أَنْتَ০

‘‘হে আল্লাহ! তুমি আমার রব। তুমি ছাড়া আর কোন সত্য মা’বুদ নাই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ, আমি তোমার বান্দা। আমি তোমার ওয়াদা ও অঙ্গিকারের উপর সাধ্যানুযায়ী প্রতিষ্ঠিত। আমি অনিষ্টকর যা কিছু করেছি তা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমার উপর তোমার যে নেয়ামত আছে তার স্বীকৃতি দিচ্ছি। তোমার নিকট আমার গুনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও; কেননা তুমি ছাড়া আর কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না।’’

-যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সাথে দিনে এ দো‘আ পাঠ করে, সন্ধ্যা হওয়ার পূর্বেই যদি তার মৃত্যু হয়, তাহলে সে জান্নাতবাসী হবে। আর যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সাথে রাতে পাঠ করে এবং সকাল হওয়ার পূর্বেই মারা যায়, সেও জান্নাতবাসী হয়।’’ – [সহীহ বুখারী, তিরমিযী শরীফেও অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে]

নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে জান্নাতে প্রবেশের উপায়ঃ

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “হে লোক সকল! তোমরা ব্যাপকভাবে সালাম প্রচার কর, (ক্ষুধার্তকে) অন্ন দাও এবং লোকে যখন রাতে ঘুমিয়ে থাকবে তখন নামায পড়। তাহলে তোমরা নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
– (তিরমিযী : হাসান ও সহীহ)

পরস্পর বেশি বেশি সালাম বিনিময়ঃ

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : “তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষন না ঈমান আন আর তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষন না একে অন্যকে ভালবাসবে । আমি কি তোমাদের তা বাতলে দেব না যা করলে তোমাদের পারস্পরিক ভালবাসার সৃষ্টি হবে? তা হলো, তোমরা পরস্পর বেশি বেশি সালাম বিনিময় করবে।”
– [মুসলিম : হাদিস ৯৬]

লজ্জাস্থান ও জবানের হেফাযত করাঃ

হযরত সাহল ইবনে সা’দ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : “যে ব্যক্তি আমার কাছে ওয়াদা করবে যে, সে তার দুই চোয়ালের মধ্যস্থিত অঙ্গ (জিহ্বা) এবং দুই উরুর মধ্যস্থিত অঙ্গের (লজ্জাস্থান) হেফাযত করবে, আমি তার জন্য জান্নাতের জামিন হব।” – (বুখারী)

যে নারীর মধ্যে হাদিস বর্ণিত পাঁচটি গুণ পাওয়া যাবে সে জান্নাতী হবেঃ হযরত আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে মহিলা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, রমযান মাসে রোযা রাখে, স্বীয় লজ্জা-স্থান সংরক্ষণ করে, স্বীয় স্বামীর অনুগত থাকে, কিয়ামতের দিন তাকে বলা হবে যে, জান্নাতের যে দরজা দিয়ে খুশি তুমি জান্নাতে প্রবেশ কর।” -[ইবনে হিব্বান, সহীহ জামে আসসগীরঃ হাদিস নং-৬৭৩]

ইয়াতীমের লালন-পালন করাঃ

হযরত আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “ইয়াতীমের লালন পালনকারী-ইয়াতীম তার আত্মীয় হোক আর অনাত্মীয়- ও আমি জান্নাতে এ দুই আঙ্গুলের ন্যায় এ বলে তিনি তাঁর দুই আঙ্গুলকে একত্রিত করে দেখালেন যে এভাবে এক সাথে থাকব। (হাদিসের বর্ণনাকারী) ইমাম মালেক (রহঃ) শাহাদাত ও মধ্যমাঙ্গুলির প্রতি ইশারা করে দেখিয়েছেন।”
– [মুসলিম, জুহুদ অধ্যায়]

আল্লাহর জন্য মাসজিদ নির্মানঃ

হযরত উসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি : ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য মাসজিদ তৈরী করলো, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ ঘর তৈরী করবেন।’’
-[বুখারী ও মুসলিম]

আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করাঃ হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “মুসলিম মিল্লাতের কোন ব্যক্তি ক্ষণকালের জন্যও আল্লাহর পথে জিহাদ করলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।”
– (আবুদাউদ. তিরমিযী ও মুসনাদে আহমাদ)

Jahirul.Islam

View Comments

Share
Published by
Jahirul.Islam

Recent Posts

How Much Does It Cost to Build a Barndominium in 2025

If you're thinking about building a barndominium in 2025, you're not alone. These barn-style homes…

5 days ago

How Long Does It Take to Charge a Car Battery

A dead or drained car battery can be a frustrating issue, especially when you're in…

6 days ago

How Can I Plan a Trip to PR by Myself

Dreaming of a tropical escape but want to explore on your own terms? If you’ve…

6 days ago

How to Teach My Four Year Old to Share

Teaching your child to share is one of the most valuable lessons they’ll learn in…

6 days ago

How to Dispose of Old Gasoline Safely and Legally

Old gasoline sitting in your garage or shed can pose serious risks to your health,…

6 days ago

How to Date an Entity Hentai

If you’re a fan of anime and are curious about the stranger, more supernatural side…

6 days ago