মা ফাতিমার (রাঃ) দানশীলতা

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) একদিন মসজিদে নববীতে বসে আছেন। এমন সময় এক বৃদ্ধ মুসাফির নবীজীর সামনে এসে দাঁড়াল। সে করজোড়ে ফরিয়াদ জানাল, “হে আল্লাহর রাসূল! আমি খুব ক্ষুধার্ত, আমাকে খাবার দিন; আমার পরনের জামাটাও ছিড়ে গেছে, একটা জামা দিন; আমি একজন মুসাফির, আমার কোন বাহন নাই-আমাকে একটা বাহনের ব্যবস্থা করুন।”

মহানবী খুব মনোযোগ দিয়ে লোকটির ফরিয়াদ শুনলেন। এরপর বললেন, “হে মুসাফির! আমার কাছে এখন তেমন কিছু নেই যে তোমাকে দেবো। তুমি আমার মেয়ে ফাতিমার কাছে যাও। সে হয়তো তোমাকে সাহায্য করতে পারবে।”

নবীজীর কথামতো মুসাফির হযরত ফাতিমার বাড়িতে গিয়ে দরজায় কড়া নাড়ল। ভেতর থেকে হযরত ফাতিমা আগন্তকের পরিচয় জানতে চাইলেন। মুসাফির বলল, “মা আমি এক বৃদ্ধ মুসাফির। বড়ই ক্ষুধার্ত। আমার পরনের জামাটিও ছিঁড়ে গেছে। চলার মত কোন বাহনও নেই আমার। আমাকে কিছু সাহায্য করুন মা।”

মুসাফির যখন তার ফরিয়াদ জানাচ্ছিল তখন হযরত ফাতিমার ঘরে কোন খাবার ছিল না। দেয়ার মত কোন জামাও ছিল না। কিন্তু অসহায় একজন মুসাফিরকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে তাঁর মন চাইল না। তাই তিনি নিজের গলার হারটি বৃদ্ধ মুসাফিরকে দিয়ে বললেন, “এই হারটি ছাড়া দেয়ার মত আর কিছু নেই আমার। এটা নাও, বিক্রি করে যা পাবে তা দিয়ে তোমার অভাব পূরণ কর।”

হারটি পেয়ে মুসাফির খুশিতে আটখানা! সে আবার মসজিদে নববীতে গিয়ে হাজির হলো। নবীজীকে হারটি দেখিয়ে বলল, “ হে রাসূল! আপনার মেয়ে ফাতিমা তাঁর গলার হারটি আমাকে দিয়ে দিয়েছেন বিক্রি করার জন্য।”

এ কথা শুনে সাহাবীদের অনেকেই চমকে উঠলেন। হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসিরের মনটা মায়ায় ভরে উঠল। এমন ত্যাগ দেখে অবাক হয়ে গেলেন তিনি। এরপর বৃদ্ধ মুসাফিরকে বললেন, “কত পেলে তুমি ওই হারটি আমার কাছে বিক্রি করবে?”

মুসাফির জবাবে বলল, “পেট পুরে খাবার, পরনের একটি ভাল জামা আর বাড়ি ফেরার জন্য একটি বাহন পেলেই আমি খুশী।”

আম্মার বললেন, “ঠিক আছে। তোমাকে যথেষ্ট খাবার, ভাল ইয়েমেনী কাপড় এবং বাড়ি ফেরার জন্য একটি মোটাতাজা উট দেবো। আর বাড়তি আটটি সোনার মোহর ও দুশ’ রুপার দিরহামও দেব। তুমি হারটি আমার কাছে বিক্রি করে দাও।”

মুসাফির আম্মারকে হারটি দিতে রাজি হল। কথামত দাম পরিশোধ করলেন আম্মার। পেট পুরে খেয়ে দামী জামা গায়ে দিয়ে একটি মোটা তাজা উটের পিঠে চড়ে মুসাফির রওনা হল তার বাড়ির দিকে।

হযরত আম্মার হারটির গায়ে আতর মাখলেন। তারপর ওটাকে একটি কাপড়ে মুড়ে তার গোলামের হাতে দিয়ে বললেন, “নবীজীর কাছে যাও। এই হার ওনাকে দেবে। আর তুমিও তাঁর কাছে থাকবে।”

গোলাম খুশি মনে হারটি নিয়ে মহানবীর কাছে গেল। তাঁকে সবকিছু খুলে বলল। মহানবী গোলামের কথা শুনে আম্মারকে ধন্যবাদ জানালেন। তারপর গোলামকে বললেন, “ আম্মার তোমাকে আমার কাছে পাঠিয়েছে। আর আমি তোমাকে ফাতিমার জন্যে দিয়ে দিলাম। এই হারটি নিয়ে তুমি ফাতিমার কাছে চলে যাও।”

গোলাম মা ফাতিমার কাছে হারটি নিয়ে গেল এবং সব কিছু খুলে বলল। গোলামের কথা শূনে আল্লাহকে ধন্যবাদ জানালেন মা ফাতিমা। আম্মার ইবনে ইয়াসিরের জন্য দোয়া করলেন। তারপর গোলামকে বললেন, “তোমাকও আমি মুক্ত করে দিলাম। আজ থেকে তুমি স্বাধীন।”

গোলাম মা ফাতিমার কথা শুনে খুশি হয়ে বলল, “ বাহ! কী দারুণ এক হার! এটি একজনকে পেট পুরে খাওয়াল, নতুন কাপড় পরাল, গরীবের জন্য টাকা ও বাহনের ব্যবস্থা করল, একজন ক্রীতদাসও মুক্তি পেল। আবার যাঁর হার তাঁর কাছেটা আবার ফিরে এলো! সত্যিই কী চমৎকার ব্যাপার!

Jahirul.Islam

Share
Published by
Jahirul.Islam

Recent Posts

How Much Paint to Paint a Car?

If you're planning to give your car a new look, one of your first questions…

8 hours ago

How Much Does It Cost to Build a Barndominium in 2025

If you're thinking about building a barndominium in 2025, you're not alone. These barn-style homes…

6 days ago

How Long Does It Take to Charge a Car Battery

A dead or drained car battery can be a frustrating issue, especially when you're in…

7 days ago

How Can I Plan a Trip to PR by Myself

Dreaming of a tropical escape but want to explore on your own terms? If you’ve…

7 days ago

How to Teach My Four Year Old to Share

Teaching your child to share is one of the most valuable lessons they’ll learn in…

7 days ago

How to Dispose of Old Gasoline Safely and Legally

Old gasoline sitting in your garage or shed can pose serious risks to your health,…

7 days ago