ইসলামিক ঘটনা

যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট

‘তাওয়াক্কুল’ অর্থ আল্লাহর উপর ভরসা করা, নির্ভর করা। কুরআনুল কারীমে তাওয়াক্কুল সম্পর্কে বহু আয়াত, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বহু হাদীস, তাঁর পবিত্র জীবনের বহু ঘটনা এবং আউলিয়ায়ে কিরামের বহু কাহিনী রয়েছে। তাওয়াক্কুল হচ্ছে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য লাভের অন্যতম উপায়। আত্মা ও মনের প্রশান্তি অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ পন্থা। কোন লক্ষ্য হাসিলের জন্য চেষ্টা তদবীর বর্জন করার নাম তাওয়াক্কুল নয়। সাধ্যানুযায়ী সর্বাত্নক চেষ্টা সাধনা করার পর ফলাফলের জন্য আল্লাহর উপর ভরসা করাই হচ্ছে তাওয়াক্কুল।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
‘যে কেউ আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার পথ করে দিবেন, এবং তাকে তার ধারনাতীত উৎস থেকে রিয্ক দান করবেনে। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’ (৬৫:২,৩)
‘আর তোমরা একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা কর, যদি তোমরা মুমিন হও।’ (৫:২৩)
‘বস্তুত : যে জন ভরসা করে আল্লাহর উপর সে নিশ্চিণ্ণ, কেননা আল্লাহ অতি পরাক্রমশীল, প্রজ্ঞাময়।’ (৮:৪৯)
‘আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করলে তোমাদের উপর জয়ী হবার কেউ থাকবেনা। আর তিনি তোমাদেরকে সাহায্য না করলে, তিনি ছাড়া কে আছে, যে তোমাদেরকে সাহায্য করবে? মুমিনগণ আল্লাহর উপরই তাওয়াক্কুল করুক।’ (৩:১৬০)
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারী লোকদেরকে ভালবাসেন।’ (৩:১৫৯)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘আল্লাহ তা’আলার প্রতি যে রূপ তাওয়াক্কুল করা উচিত তোমরা যদি তাঁর প্রতি সে রূপ তাওয়াক্কুল করতে পার তবে তিনি তোমাদেরকে রিয্ক দান করবেন। পশু পাখিরা সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে বেরিয়ে যায় এবং দিন শেষে পূর্ণ উদরে তৃপ্ত হয়ে নিজ নিজ অবস্থানে ফিরে আসে।’ (তিরমিযি, ইবনে মাজা)
তাওয়াক্কুল একটি আত্মিক ও আধ্যাত্মিক মহৎ গুণ। যার আত্নিক ও আধ্যাত্নিক অবস্থা যত উন্নত তাঁর তাওয়াক্কুলের উৎকর্ষ তত অধিক। আল্লাহকে যিনি যত বেশী ভালবাসতে পারেন, তাঁর সত্ত্বাতে নিজেকে সমর্পণ করতে পারেন, তাঁর খুশী রেজামন্দিকে যত বেশী জীবনের চরম ও পরম লক্ষ্য বানাতে পারেন তাঁর তাওয়াক্কুলের উৎকর্ষও হয় তত অধিক। হযরত ইবরাহীম আ. তাওয়াক্কুলের জলণ্ত উদাহরণ। নমরূদ যখন তাঁকে ভয়াবহ অগ্নিকুন্ডে পুড়ে ভষ্ম করার জন্য নিক্ষেপ করল, তিনি অগ্নিতে পতিত হন হন এমাতাবস্থায় হযরত জিবরাঈল আ. উপস্থিত হয়ে তাঁকে সাহায্য করার প্রস্তাব করলেন। তিনি উত্তরে বললেন : ‘আপনার সাহায্যের আমার কোন প্রয়োজন নেই, হাসবিয়াল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকীল’-আল্লাহ্ই আমার সাহায্যের জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই আমার উত্তম কার্যনির্বাহক। সঙ্গে সঙ্গে সর্বশক্তিমান আল্লাহ হুকুম জারী করলেন: ‘হে অগ্নি তুমি ইবরাহীমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও’। (২১:৬৯)
হযরত দাউদ আ.কে আল্লাহ পাক জানিয়ে দেন, ‘হে দাউদ দুনিয়ার সকল আশ্রয় পরিত্যাগ করে কেউ আমার আশ্রয় গ্রহণ করলে যদি সমস্ত আসমান ও জমিন প্রবঞ্চনা ও প্রতারনা নিয়ে তার বিরূদ্ধে দাঁড়ায়, আমি সমস্ত বিপদ-আপদ ও দুঃখ-কষ্ট দূর করে থাকি’।
আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো সর্ব গুণেই সবার সেরা। তাঁর তাওয়াক্কুলও নজিরবিহীন। একদা তিনি নির্জনে একটি গাছের ছায়ায় শুয়ে ঘুমুচ্ছিলেন , এক দুশমন তা দেখে সেখানে উপস্থিত হয়ে তাঁর গরদান লক্ষ্য করে শানিত তরবারি উত্তোলন করে হুংকার দিয়ে বলল, ‘মুহাম্মদ স. ! আমার হাত থেকে এখন তোমাকে কে রক্ষা করবে? হযরত সেই তরবারির নীচ থেকে অকম্পিত নির্বিকার কণ্ঠে বললেন : আল্লাহ! সেই শব্দে ঘাতকের দেহ থরথর করে কেঁপে উঠল। হাত থেকে তরবারি খসে পড়ল। হযরত স. সে তরবারি ধারণ করে বললেন : ‘ এখন তোমাকে কে রক্ষা করবে? লোকটি বলল : যিনি মুহূর্তের মধ্যে আমার হাতের তরবারি আপনার হাতে তুল দিলেন-তিনি এবং কালেমায়ে শাহাদত পাঠ করে ঈমান এনে মুসলমান হয়ে গেল।
হিজরতকালীন সময়ের ঘটনা কি কম বিস্ময়কর! ঘাতক বাহিনীর চোখ এড়িয়ে বিশ্বনবী স. ও তাঁর সহচর আবু বকর রা. নৈশ অন্ধকারে আশ্রয় নিলেন এসে সুর পর্বত গুহায়। ঘাতকরা হযরতকে বিছানায় না পেয়ে বেরিয়ে পড়ল তাদের সন্ধানে। এক সময় পৌছে গেল সেই গুহার মুখে। তাদের পা দেখা যাচ্ছিল গুহার ভিতর থেকে। দারুনভাবে বিচলিত, সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লেন হযরত আবু বকর। এক্ষুনি বুঝি তারা গুহায় ঢুকে হত্যা করবে প্রিয় নবীকে। কী উপায় হবে আমাদের ! আমরা যে মাত্র দু’জন। হযরত প্রশান্ত চিত্তে নিরুদ্বিগ্ন ভাবে, মৃদু কন্ঠে বললেন : না, আমরা দু’জন নই, তিন জন। ‘লা- তাহ্যান ইন্নাল্লাহা মা’আনা’ তুমি চিন্তিত হয়োনা (হে আবু বকর)আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন।’ (৯:৪০)
আল্লাহর কী লীলা ! ঘাতকরা দেখতে পেল একটি মাকড়সা গুহামুখে জাল পেতে বসে আছে। ভাবল, গুহায় নিশ্চই কোন লোক প্রবেশ করেনি, তাহলে এ জাল অক্ষত থাকতনা। তারা চলে গেল। আল্লাহ সূক্ষ্ম সামান্য একটি মাকড়সার জালের ঢাল দিয়ে তাঁর হাবীবকে রক্ষা করলেন। এ হল আল্লাহর হাবীবের আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুলের আর একটি উদাহরণ। এমন উদাহরণ আছে আরও বহু।
‘যে কেউ আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার জন্য পথ করে দিবেন এবং ধারনাতীত উৎস থেকে রিয্ক দিবেন’- এতো স্বয়ং আল্লাহরই ঘোষণা। এর নজির হিসাবে ছোট্ট একটি ঘটনা পেশ করছি। এক আল্লাহওয়ালা লোক হজ্বে যাচ্ছিলেন। দুর্গম পার্বত্য পথ ধরে একাকি অগ্রসর হচ্ছেন তিনি। ক্ষুধা পাওয়ায় বসলেন এক পর্বত ছায়ায়। ঝোলা থেকে বের করলেন কিছু গোশ্ত ও রুটি। একটু ঘাড় ফেরাতেই একটি কাক ছো মেরে তা নিয়ে গেল। লোকটি দেখতে পেলেন, কাকটি তা খেলনা। বরং পরম যত্নে যেন তা নিয়ে উড়াল দিল। লোকটি বিস্ময় বোধ করলেন। ছুটলেন কাকের পেছনে পেছনে। আরেক পাহাড়ের আড়ালে গিয়ে দেখলেন, একটি লোক কঠিন রজ্জুতে হাত পা বাধা অবস্থায় পড়ে আছে। আর কাকটি ছিনিয়ে আনা গোশ্ত রুটি ঠোট দিয়ে সেই লোকটির মুখে তুলে দিচ্ছে। তিনি লোকটির কাছে গিয়ে বসলেন, বাঁধন মুক্ত করলেন। জিজ্ঞাসা করলেন তাঁর দুর্দশার কারণ। লোকটি বললেন, আমি হজ্বে যাচ্ছিলাম। এখানে এ পার্বত্য পথে ডাকাতরা আক্রমন করে এবং আমার সব কিছু ছিনিয়ে নিয়ে আমাকে বেঁধে রেখে চলে যায়। এভাবে ৭ দিন যাবত এখানে জীবন্মৃত অবস্থায় পড়ে আছি। তবে একটি কাক প্রতিদিন এসে আমাকে গোশ্ত রুটি খাইয়ে যায়। এই হলেন রাব্বুল আলামীন- মহান প্রতিপালক আল্লাহ।
অসীম ক্ষমতার মালিক আল্লাহ। অপার তাঁর করুনা দয়া ও মেহেরবানী। আল্লাহ বলেন : ‘আল্লাহ কি তাঁর বান্দার জন্য যথেষ্ট নন? -আলাইসাল্লাহু বিকাফিন আবদাহু।’ (৩৯:৩৬)
অবশ্যই যথেষ্ট। শিশু যখন মাতৃজঠরে ভ্রুণ আকারে, মুখ দিয়ে কিছু খেতে পারেনা, তখন তাকে কে নিয়মিত আহার যুগিয়ে ক্রমান্বয় বর্ধিত করে তোলেন? দুনিয়ায় আসার সাথে সাথে কে তার জন্য মাতৃস্তনে দুনিয়ার সর্বাধিক পুষ্টিকর খাবার প্রস্তুত করে রাখেন? তিনিই মহান পরোয়ারদেগার আল্লাহ। জটিল কঠিন মামলায় আমরা যদি ঝানু আইনবিশারদ, বাকপটু, সাহসী, সুচতুর, অভিজ্ঞ উকীল নিয়োগ করে নিশ্চিন্ত হতে পারি, সন্তানটিকে উন্নতমানের বিদ্যালয়ে দক্ষ, অভিজ্ঞ, আদর্শ শিক্ষকের কাছে সপে দিয়ে যদি নিশ্চিন্ত হতে পারি, তবে কেন সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান, মহাপরাক্রান্ত, পরম দয়ালু ও মেহেরবান আল্লাহর উপর আমাদের সব কিছুর ভার সঁপে দিয়ে তাওয়াক্কুল করতে পারবনা? তিনিতো বলেই দিয়েছেন ‘যে আমার উপর তাওয়াক্কুল করে আমি তার জন্য যথেষ্ট’। আগেই বলেছি কাজ কর্ম ছেড়ে দিয়ে, উপায় উপকরণ বর্জন করে, হাত পা গুটিয়ে অকর্মন্য হয়ে বসে থাকান নাম তাওয়াক্কুল নয়।
অমর দার্শনিক কবি মাওলানা জালাল উদ্দীন রূমী র. বলেন :
‘বৎস শোনো, হয় যদিও দিক-দিশারী তাওয়াক্কুল
কাজও করে যেতে হবে, এই কথাই কন রাসূল।
এই কথাটি খোদার রাসূল বলে দিছেন পরিস্কার
তাওয়াক্কুলের সাথে সাথে লও বাধিয়া উট তোমার।
খোদার প্রিয় বন্ধু সে জন, যে জন করে উপার্জন
তাওয়াক্কুলের দোহাই পেড়ে অলস না হও বৎসগণ।
খোদার পরে ভরসা কর, কাজও কর কায় মনে
কেবল কাজই যথেষ্ট নয়, ভরসাও চাই সেই সনে।’
যারা আস্তিক, বিশ্বাসী, মুমিনবান্দা- শত বিপদ, মুসিবত, ঝড়-ঝঞ্ঝার মাঝেও, তাদের দুঃখ-দুর্দশা পেশ করার মত একটা জায়গা আছে। আশ্রয় চাওয়ার মত একটা ঠাঁই আছে। আর এর মাঝেও আত্মিক প্রশান্তি লাভের মওকা আছে। কিন্তু অবিশ্বাসী নাস্তিকের সেই জায়গাটি নেই। তাই তাদের এরূপ দুরাবস্থায় দেওয়ানা পাগল হওয়া বা আত্মহত্যা ছাড়া উপায় থাকেনা। কেউ না দেখুক, কেউ না শুনুক, কেউ পার্শ্বে এসে না দাঁড়াক, আমার আল্লাহ আছেন। আমার এই জীবনই শেষ কথা নয়, পরকাল আছে। এখানে প্রতারণা, বঞ্চনার শিকার হলেও সেখানে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ইনসাফ আছে। পুরস্কার আছে। তাই চারদিকে আঁধার ঘিরে এলেও খাঁটি মুমিন বান্দা অবিচল থাকতে পারে। তাওয়াক্কুল তার মনে অসীম শক্তি ও সাহস যোগায়। মনে পড়ে এক ঘোর দুর্দিনের কথা। দৈনিক ইনকিলাব, জমিয়াতুল মোদার্রেসীন, মাওলানা এম,এ, মান্নান, তাঁর পরিবার এক কঠিন সঙ্কটে। কতিপয় অতিলোভী, ঈর্ষাকাতর লোক তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধানকে ভুল বুঝিয়ে ক্রোধান্বিত করে তোলে। আমরা যারা তাঁর নিকটবর্তীজন তারাও কিংকর্তব্য বিমুঢ়, দিশেহারা। গেলাম ইনকিলাব ভবনে, মাওলানা হুজুরের জ্যেষ্ঠপুত্র ইনকিলাব সম্পাদক জনাব এ.এম.এম বাহাউদ্দীন এর দফতরে। আমার এই দিশেহারা ভাব দেখে তিনি প্রশান্ত চিত্তে, নিরুদ্বিগ্ন কন্ঠে শান্তনার সুরে বললেন : শূন্য থেকে যাত্রা করার পরে যে সর্বশক্তিমান আল্লাহ এখানে পৌঁছিয়েছেন, সেই মহামহিম আল্লাহ আছেন। তিনি সব দেখেন, শোনেন। ভরসা রাখুন। তিনিই সব ঠিক করে দিবেন। আল্লাহর অনন্ত মেহেরবানীতে কিছু দিনের মধ্যেই লোভীদের মুখোশ উন্মোচিত হয়। ব্যর্থ হয় যড়যন্ত্র এবং ফিরে আসে স্বাভাবিক অবস্থা। সে দিন তাঁর কথায় মনে যে সাহস ও জোর পেয়েছিলাম, তা আজও অনুভব করছি। আল্লাহর ঘোষণা শ্বাস্বত সত্য : ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট’। আল্লাহ রাব্বূল আলামীন আরো বলেন : ‘কষ্টের সাথেই তো স্বস্তি আছে। অবশ্যই কষ্টের সাথে স্বস্তি আছে। অতএব তুমি যখনই অবসর পাও একান্তে ইবাদত করো এবং তোমার প্রতিপালকের প্রতি মনোনিবেশ করো।’ (৯৪:৭,৮)

Jahirul.Islam

Recent Posts

How Much Does It Cost to Build a Barndominium in 2025

If you're thinking about building a barndominium in 2025, you're not alone. These barn-style homes…

5 days ago

How Long Does It Take to Charge a Car Battery

A dead or drained car battery can be a frustrating issue, especially when you're in…

6 days ago

How Can I Plan a Trip to PR by Myself

Dreaming of a tropical escape but want to explore on your own terms? If you’ve…

6 days ago

How to Teach My Four Year Old to Share

Teaching your child to share is one of the most valuable lessons they’ll learn in…

6 days ago

How to Dispose of Old Gasoline Safely and Legally

Old gasoline sitting in your garage or shed can pose serious risks to your health,…

6 days ago

How to Date an Entity Hentai

If you’re a fan of anime and are curious about the stranger, more supernatural side…

6 days ago