যে মসজিদের প্রশংসা করেছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা


ইসলামের ইতিহাসে প্রথম নির্মিত মসজিদ ‘মসজিদে কুবা’। রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় আগমনের পর এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়। পবিত্র কোরআনে এই মসজিদ ও তার মুসল্লিদের প্রশংসা করা হয়েছে। বর্তমানে মসজিদে কুবা মদিনার দ্বিতীয় বৃহত্তম মসজিদ। কুবা মূলত একটি প্রাচীন কূপের নাম। কূপের নামানুসারে পরবর্তী সময়ে এলাকার নামকরণ হয়।মহানবী (সা.) মদিনায় আগমনের পর কুবা নামক স্থানে অবতরণ করেন। তিনি আবু আইয়ুব আনসারি (রা.)-এর ঘরে অবস্থান করেন। তখন এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়। মদিনার উত্তর প্রান্তে অবস্থিত এই মসজিদের নির্মাণকাজে স্বয়ং নবী করিম (সা.) অংশগ্রহণ করেন।মসজিদ নির্মাণে প্রথম পাথরটি তিনিই রাখেন। নির্মাণকাজ শেষ হলে তিনি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করেন এবং কুবাবাসীর প্রশংসা করেন। নবনির্মিত মসজিদে প্রথম নামাজ তিনিই আদায় করেন।কৃতজ্ঞতা আদায় করেন এবং কুবাবাসীর প্রশংসা করেন। নবনির্মিত মসজিদে প্রথম নামাজ তিনিই আদায় করেন।মসজিদে নববীর পাশে স্থায়ী আবাস গড়লেও মহানবী (সা.) প্রতি সপ্তাহের শনিবার মসজিদে কুবায় আসতেন। কোরআনে মসজিদে কুবার প্রশংসা করে বলা হয়েছে, ‘যে মসজিদ প্রথম দিন থেকে তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত সেখানে অবস্থান করা আপনার জন্য অধিক সংগত। সেখানে এমন কিছু লোক রয়েছে যারা পবিত্রতা পছন্দ করে। আর আল্লাহ পবিত্র ব্যক্তিদের ভালোবাসেন।’ (সুরা : তওবা, আয়াত : ১০৮)প্রতিষ্ঠার পর উসমান বিন আফফান (রা.), ওমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.), উসমানীয় সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ ও তাঁর ছেলে প্রথম আবদুল মাজিদ প্রমুখ শাসকরা মসজিদে কুবার সংস্কারকাজ করেন। বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ আলে সৌদের সময় সর্বশেষ সম্প্রসারণ হয়। ১৪০৫ হিজরিতে শুরু হওয়া সংস্কারকাজ শেষ হয় ১৪০৭ হিজরিতে।

যাতে মসজিদের আয়তন দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৫০০ স্কয়ার মিটার। মসজিদে কুবায় বর্তমানে ২০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারে

মুহাম্মদ সা: নিজ হাতে এই মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন

নবীর মসজিদ। আরবিতে বলা হয় মসজিদে নববী। হজরত মুহাম্মদ সা: নিজ হাতে এই মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন।নবীজি হযরত মুহাম্মদ (সা.) যখন মক্কা থেকে মদীনায় হিযরত করেন, তখন এ শহরটির নাম ছিল ‘ইয়াসরিব’। নবীজি (সা.) আগমনের পরপরই ইয়াসরিব নামটি পবির্তন করে মদিনা নামকরণ করেন।কিন্তু সেখানে কোন মসজিদ ছিল না যেখানে নবীজিসহ সাহাবীরা নামাজ আদায় করবেন। নতুন হিজরতকারীদের মধ্যে নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদের শূন্যতা দেখা দিলে নবীজি (সা.) নিজেই একটি মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন। আর এ মসজিদের নাম দেন ‘মদীনা মসজিদ’।যা ‘মসজিদে নববী শরীফ’ (সা.) বা মদিনায়ে মুনাওয়ারা হিসেবে পরিচিত। প্রথম মসজিদটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছিল প্রায় ৭ মাস। অর্থাৎ- ৬২২ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরে থেকে শুরু হয়ে ৬২৩ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় ৭ মাসব্যাপী ১ম মদিনা মসজিদের নির্মাণ কাজের সময় ধরা হয়।নবীজি (সা.)-এর হস্ত মোবারকে ভিত্তি দেয়া পবিত্র ‘মদিনা মসজিদ’ নির্মাণের জন্য নাজ্জার গোত্রের সাহল ও সোহাইল নামক দুই যুবক থেকে প্রয়োজনীয় জমি ক্রয় করে ছিলেন। এ জমির ক্ষুদ্র একটি অংশে নবীজি (সা.) বাসস্থান নির্মাণ করে বাকি পুরো অংশেই মদিনা মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করেন।এ জায়গার প্রতিটি কোণা থেকে তীর নিক্ষেপ করে যে পরিমাণ জায়গা পাওয়া গেল তা হলো মসজিদের একটি ক্ষেত্র। আর এ ক্ষেত্রে বর্গের প্রতিটি বাহুর পরিমাণ দাঁড়ালো ১০০ হাত বা ৫৬ গজ। ১ম নির্মিত পবিত্র মদিনা মসজিদের প্রাথমিক আয়তন ছিল ১০০ ´ ১০০ হাত বা ৫৬ ´ ৫৬ গজ।মসজিদের ভিত্তি ও দেয়ালের নিম্নভাগ ৩ হাত পর্যন্ত প্রস্তের হিসেবে নির্মিত ছিল। প্রথম পর্যায়ে মদিনা মসজিদ রৌদ্রে শুষ্ক ইট দ্বারা নির্মিত হয়। এই রৌদ্র শুষ্ক ইট ও সিমেন্ট হিসেবে আল-খাবখাবা উপত্যকা হতে আনিত কাদা দ্বারা তৈরি হয়েছিল। তখন মদিনা মসজিদের দেয়াল ছিল ৭ হাত উঁচু। এর ছাদকে শক্তিশালী ও মজবুত রাখার জন্য মদিনা মসজিদের ৩৬টি খেজুর গাছকে স্তম্ভ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।মসজিদের ছাদ নির্মিত হয়েছিল খেজুর পাতা দিয়ে। ছাদকে সুন্দর, রৌদ্র ও বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য খেজুর পাতার উপর কাদামাটির আস্তরণ লেপে দেয়া হয়েছিল। ১ম নির্মিত পবিত্র মদিনা মসজিদে প্রবেশের জন্য ৩টি দরজা ছিল।প্রধান প্রবেশ পথটি ছিল দক্ষিণ দিকে যা দিয়ে মুসল্লিরা মসজিদে প্রবেশ করতেন এবং বাহির হতেন। পশ্চিম দেয়ালে ছিল মসজিদের দ্বিতীয় প্রবেশ পথ যা ‘বাবে রহমত’ নামে স্বীকৃত। তৃতীয় প্রবেশ পথটি ছিল পূর্ব দেয়ালে যা দিয়ে নবীজি হযরত মুহাম্মদ (সা.) মসজিদে প্রবেশ করতেন। এ জন্য এটির নামকরণ হয় ‘বাব উন নবী (সা.)’।ঐতিহাসিকদের মতে, মদিনা মসজিদেই সর্ব প্রথম মেহরাব, মিম্বার, আজান দেয়ার স্থান বা মিনার এবং অজুর স্থানের ব্যবস্থা করা হয়। বর্তমানে মসজিদে নববী শরীফ বহুগুণ বড় ও সম্প্রসারিত। সম্পূর্ণ আধুনিক নতুন নকশার ভিত্তিতে এটিকে সম্প্রসারণ ও পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। যাহাতে এক সাথে কয়েক লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।সংস্কার ও সম্প্রসারণ
পবিত্র মসজিদে নববী (সা.) বা মদিনা মসজিদ তখন থেকেই মুসলমান শাসকদের দ্বারা বহুবার সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। নবীজি হযরত মুহাম্মদ (সা.) বিদায় নেয়ার পর ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর (রা.) ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে মসজিদে নববী (সা.)’র একদফা সম্প্রসারণ ও সংস্কার কাজ করেন।এসময় মসজিদের উত্তরে ৩০ হাত, দক্ষিণে ১০ হাত ও পশ্চিম দিকে ২০ হাত প্রশস্ত করেন। খলীফা হযরত ওমর (রা.)’র সময় মসজিদের জায়গার পরিমাণ হয় উত্তর-দক্ষিণে ১৪০ হাত এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১২০ হাত।এরপর ৩য় খলীফা হযরত ওসমান গণি জিন্ নূরাইন (রা.)’র খেলাফতকালে ৬৪৬-৬৪৭ খ্রিস্টাব্দে খেজুর পাতার পরিবর্তে মসজিদের ছাদে ব্যবহার করা হয় সেগুন গাছের কাঠ। তখন ছাদের আকার দাঁড়ায় ১৬০ ´ ১৩০ হাত। এ সময় মসজিদের আয়তন হয় উত্তর দক্ষিণে ১৬০ হাত এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১৫০ হাত।পরবর্তীতে খলিফা আল্ ওয়ালিদের সময় মদিনা মসজিদটি আধুনিক ইমারতে পরিণত হয়। ওয়ালিদ ৭০৭ খ্রিস্টাব্দে সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে পবিত্র মসজিদে নববী (সা.)-কে সাজিয়ে তোলেন।তাঁর সময় মসজিদে নববী (সা.)’র আয়তন বেড়ে দাঁড়ায় ২০০ ´ ২০০ হাত। ৭০৭ খ্রিস্টাব্দের এসময়ই সর্ব প্রথম পবিত্র মসজিদে নববী (সা.)’র ৪ কোণায় ৪টি মিনার নির্মাণ করেন বাদশা বা খলিফা আল-ওয়ালিদ। তখন প্রতিটি মিনারের উচ্চতা ছিল ৫০ হাত এবং প্রস্থে ছিল ৮ হাত। এরপর খলিফা মাহদী ৭৭৫-৭৮৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এ পবিত্র মসজিদটি আবারো সম্প্রসারণসহ সংস্কার করেন এসময় এ আয়তন দাঁড়ায় ৩০০ ´ ৩০০ হাত। পরবর্তীতে ১৪৮১ খ্রিস্টাব্দে মামলুক সুলতান কয়েত-বে পবিত্র মসজিদে নববী (সা.)-এর মধ্যে গম্বুজ প্রতিষ্ঠিত করেন।কিন্তু ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে পবিত্র এ গম্বুজ শরীফে রং-এর আস্তরণ দিয়ে সবুজ গম্বুজ বানিয়ে ছিলেন ওসমানী সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ। আর সেই থেকেই আজঅবধি মদিনায়ে মুনাওয়ারা তথা পবিত্র মসজিদে নববী শরীফের উপর নূরানী এ সবুজ গম্বুজ শরীফটি কোটি কোটি ঈমানদার তথা আশেকে রাসুল (সা.)দের মাঝে আলোকবর্তিকা ও প্রাণস্পন্দন হয়ে আছে। যা কিয়ামত পর্যন্ত ঈমানি চেতনা দান করবেন নবী প্রেমিকদের অন্তরে।সর্বশেষ আধুনিকায়নে পবিত্র মসজিদ-এ নববী (সা.)’র নব সজ্জা ও রূপদান করেন সৌদি বাদশাহ আব্দুল আজিজ ইবনে সউদ। এর পরিকল্পনা করা হয় ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে। ১৯৫৩-১৯৫৫ সাল নাগাদ মসজিদ আধুনিকায়ন করা হয়। বিশালকার এ পবিত্র মসজিদে নববী (সা.)’র সমস্ত রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সৌদি রাজ পরিবারের।

মসজিদের পাশেই ছিল হজরত মুহাম্মদ সা: এর বসবাসের ঘর। মসজিদের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে রয়েছে একটি সবুজ গম্বুজ। গম্বুজটি নবীর মসজিদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কারণ এ গম্বুজের নিচেই রয়েছে শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর রওজা মোবারক। হজরত মুহাম্মদ সা: মসজিদের পাশে যে ঘরে ইন্তেকাল করেন সেখানেই তাকে দাফন করা হয়।

পরে মসজিদ সম্প্রসারণের মাধ্যমে তার রওজা মোবারক মসজিদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

পবিত্র মসজিদে নববী (সা.) তথা মহানবী (সা.)’র রওজা পাকের দু’পাশেই রয়েছে নবীজির প্রাণপ্রিয় ছিদ্দীক ইসলামের ১ম খলিফা হযরত আবুবকর (রা.) ও ২য় খলিফা ফারুকে আজম হযরত ওমর (রা.)-এর রাওজা শরীফ। আল্লাহ আমাদের সকলকে নূরানী নবীজির (সা.) নূরী রাওজায়ে আকদাস শরীফ জেয়ারতের মাধ্যমে জীবনকে ধন্য করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

পৃথিবীর প্রথম জমিন হচ্ছে পবিত্র কাবাঘর

মুসলিম ইম্মাহর ভাষ্য মতে এটাকে বলা হয় বাইতুল্লাহ বা আল্লাহর ঘর। কাবা শরিফ ও পবিত্র কাবাঘরও বলা হয়ে থাকে। এই পবিত্র কাবা ঘরের অভিমুখী হয়েই আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করেন পৃথিবীর কোটি কোটি মুসলিম। সৃষ্টির সূচনা থেকেই মহান পবিত্র এই কাবাকে মহান আল্লাহ তার মনোনীত বান্দাদের মিলনস্থল করেছেন।আমরা সকলেই জানি , ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। এ বিষয়ে পিএইচডি করেছেন ড. হুসাইন কামাল উদ্দীন আহমদ। তাঁর থিসিসের শিরোনাম হলো—‘ইসকাতুল কুররাতিল আরধিয়্যা বিন্ নিসবতে লি মাক্কাতিল মুকাররামা।’ (মাজাল্লাতুল বুহুসুল ইসলামিয়া, রিয়াদ : ২/২৯২)ওই থিসিসে তিনি প্রাচীন ও আধুনিক দলিল-দস্তাবেজের আলোকে এ কথা প্রমাণ করেছেন যে কাবাই পৃথিবীর মেরুদণ্ড ও পৃথিবীর মধ্যস্থলে অবস্থিত। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পানিসর্বস্ব পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি এ কাবাকে কেন্দ্র করেই।আরেকটি বিষয় হলো, মাটিতে রূপান্তর হওয়ার আগে কাবা সাদা ফেনা আকারে ছিল। সে সময় পৃথিবীতে পানি ছাড়া কিছু ছিল না। আল্লাহর আরশ ছিল পানির ওপর। হাদিসের ভাষ্য মতে, কাবার নিচের অংশটুকু পৃথিবীর প্রথম জমিন। বিশাল সাগরের মাঝে এর সৃষ্টি। ধীরে ধীরে এর চারপাশ ভরাট হতে থাকে। সৃষ্টি হয় একটি বিশাল মহাদেশের। এক মহাদেশ থেকেই সৃষ্টি হয় অন্য সব মহাদেশ। মাটি বিছানোর পর জমিন নড়তে থাকে। হেলতে থাকে।এর জন্য মহান আল্লাহ পাহাড় সৃষ্টি করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদের নিয়ে আন্দোলিত না হয় (হেলে না যায়)।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ১৫)


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *