মিরাজের রজনীতে রাসূল (সা.) শিবে আবী তালিবে উম্মে হানী রা. এর গৃহে ঘুমিয়ে ছিলেন। অতঃপর জিবরাঈল আ. তাকে মসজিদে হারামের হাতিমে কা‘বায় নিয়ে গেলেন এবং সেখানে হযরত জিবরাঈল আ. ও মিকাঈল আ. তাঁর বক্ষ বিদীর্ন করলেন এবং ঈমান ও হেকমত তাঁর সিনা মুবারকে ঢেলে দিলেন।
তার পরে গাধা হতে বড় এবং খচ্চর হতে ছোট সাদা রং এর লম্বা আকৃতিসম্পন্ন বোরাক নামক একটি পশু তথা বাহন আনা হল। তা ছিল বিদ্যুৎ হতে দ্রুত গতিসম্পন্ন। এক কদমেই সে দৃষ্টির শেষ সীমা অতিক্রম করত।
রাসূূল (সা.) বোরাকে আরোহন করতেই বোরাক খুশীতে নাচতে আরম্ভ করল। তখন জিবরাঈল আ. বললেন “হে বোরাক এটি কী ধরনের আচরণ, তুমি মুহাম্মাদ (সা.) এর সাথে এমন করছো? অথচ তাঁর চেয়ে অধিক সম্মানিত কোনও ব্যক্তি আজ পর্যন্ত তোমার উপর আরোহন করে নাই!!!
বোরাক তখন লজ্জায় ঘর্মাক্ত হয়ে গেল, অতঃপর বোরাক বাইতুল মুকাদ্দাসের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করল। রাসূল (সা.) এর সাথে ছিল হযরত জিবরাঈল ও মিকাঈল (আ.)।
বাইতুল মুকাদ্দাসে পৌছার পথে রাসূল (সা.) আল্লাহ তায়ালার অনেক নিদর্শন দেখলেন। সেখানে পৌছার পর রাসূল (সা.) তার বাহনকে একটি পাথরের সাথে বেঁধে রাখলেন।
অতঃপর মসজিদ আল আকসায় প্রবেশ করে ফেরেশতাদেরকে নিয়ে নামায আদায় করলেন। এবং নবীগণের সাথে সাক্ষাত শেষে হযরত জিবরাঈল আ. তাকে উর্ধ্বলোকে নিয়ে গেলেন। এক্ষেত্রে তার বাহন ছিল মিরাজ।
একটি বিষয় লক্ষণীয় যে রাসূল (সা.) এর এ সফরে মোট পাঁচটি বাহন ছিল। আল্লামা আলাঈ রহ. বলেন-
মূলত: রাসূল (সা.) এর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্যেই এরূপ বাহারি রকমের বাহনের ব্যবস্থা করেছিলেন। নচেৎ, মহান আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছে করলেই তাকে বাহন বিহীন আরশে আজীমে নিয়ে যেতে পারতেন।
আল্লামা কবি শেখ সাদি রহ. বলেন-
একরাতে চড়েছিলেন বোরাকের পিঠে
সপ্ত আকাশ ছেড়ে গেলেন উপরেতে উঠে।।
মর্যাদা ও সম্মান বেড়ে গেল তাঁর
কুলাইতে না পারিল ফেরেশতা খোদার।।
দ্রুত চালাইলেন সওয়ারী তিনি
সিদরাতুল মুন্তাহা গিয়ে জিবরাঈল বেকার।।
বাইতুল্লাহর সেনাপতি কহিল তাঁকে
ওহী বাহক! আরও চল একটু তুমি আগে ।।
বন্ধু কহেন, আগে যাইবার সুযোগ আমার নাই
থেমে গেলাম, বাহু আমার দুর্বল হল তাই।।
একচুল সমান উপরে যদি আমি উড়তে যাই
পরগুলো সব তাজাল্লীতে জ্বলে হবে ছাই।
রাসূল (সা.) বলেন- রফরফে আরোহন করে আরো অনেক উপরে উঠানো হল। অতঃপর যেতে যেতে আরশ পর্যন্ত গিয়ে পৌছি।
(সীরাতুল মুস্তফা, এক খ. পৃ.৩০৪-৩০৫)
অতঃপর রাসূল (সা.) আল্লাহর দীদার লাভে ধন্য হলেন। তারপর মুহাম্মাদ (সা.) এর সাথে আল্লাহ তায়ালার কথোপথন হয়।
রাসূল (সা.) বলেন- আমার প্রতিপালক ছয়টি বিষয়ে আমাকে অন্য নবীদের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।
অতঃপর খোদার দরবার থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ উম্মতের জন্য হাদিয়াস্বরূপ নিয়ে আসেন।
মিরাজের উদ্দেশ্য: মিরাজের উদ্দেশ্য হল নবী করীম (সা.) কে আল্লাহ পাকের কুদরত প্রত্যক্ষ করানো। আর তা ছিল সশরীরে জাগ্রত অবস্থায়। আধ্যাত্মিক ও স্বপ্নযোগে নয়। সূরা নাজমে আল্লাহ তায়ালা বলেন-
“তার দৃষ্টিবিভ্রম হয়নি, দৃষ্টি লক্ষ্যচ্যুতও হয়নি। সে তো তার প্রতিপালকের মহান নিদর্শনাবলি দেখেছিল” (সূরা নাজ্মঃ: ১৭-১৮)
এর অন্যতম আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল প্রিয় হাবিবকে শান্তনা দেয়া। দুঃখে, কষ্টে যখন তার হৃদয় ছিন্নভিন্ন ছিল।
মিরাজ ও বিজ্ঞান:
বর্তমান বিজ্ঞানের যুগে এমন সব যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়েছে যার দ্বারা দেহকে শৈত্য ও অগ্নির প্রভাব হতে সম্পূর্ণ মুক্ত রাখা যায়। তো যে সকল ধর্মান্ধ বিজ্ঞানীরা বলে মিরাজ সশরীরে নয়, তাদের প্রতিউত্তরে বলব যে,
সসীম ক্ষমতার অধিকারী মানুষের পক্ষে যদি এরূপ করা সম্ভব হয় তবে অসীম ক্ষমতার অধিকারী মহান আল্লাহ পাকের পক্ষে তাঁর নবীকে এসব কিছু তথা বায়ুমন্ডলের উপরিভাগের শৈত্য মন্ডল বা অগ্নি মন্ডল এর প্রভাব থেকে মুক্ত রেখে সপ্তাকাশ ভ্রমন করানো কেমন করে অসম্ভব হবে???………….
উম্মতে মােহাম্মদীর জন্যে মে’রাজের পয়গামঃ
মে’রাজ রজনীতে যখন মহান রাব্বুল আলামীনের সাথে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সান্নিধ্য লাভ হয় তখন আল্লাহ তাঁর হাবীব কে তাঁর উম্মতের কাছে যে বিশেষ পয়গামে এলাহীগুলাে পৌছিয়ে দেয়ার নির্দেশ করেন।
তা মে’রাজ সম্পর্কিত আয়াতের তাফসীরের মাধ্যমে বর্ণনা করা হলো
* মহান আল্লাহ পাক বলেন : হে আমার হাবীব মুহাম্মদ (সাঃ)! আপনার উম্মত যদি কাউকে উপকারের ভিত্তিতে বন্ধুত্বের অন্তর্ভুক্ত করে, তখন তারা যেন সর্ব প্রথম আমাকে তাদের বন্ধু হিসেবে পরিগণিত করে। কারণ আমি আল্লাহ, আমার বান্দাহর প্রধান উপকারী বন্ধু।
* যদি তারা কেউ কাউকে ভয় করে, তখন তারা যেন আমাকে বেশী ভয় করে। কারণ আমি হলাম সর্ব শক্তিমান।
* যদি আমার বান্দাগণ কারাে সাহয্যে কোন উদ্দেশ্যে উপনীত হতে চায়, তখন তাদের উচিত আমার উপর ভরসা করা, কারণ মহান আল্লাহ পাকের বাণী,
যে আল্লাহ পাকের উপর ভরসা করবে, আল্লাহ পাক-ই তার জন্য যথেষ্ট।
* যদি কারাে প্রতি জুলুম ও অত্যাচার হেতু তার কাছে লজ্জিত হতে হয়। তবে উত্তম হবে | আমার কাছে লজ্জিত হওয়া ।
* যদি কাউকে স্বীয় জান ও মাল দ্বারা খেদমত করতে হয়। তখন উত্তম হবে জান-মাল আমার রাস্তায় খরচ করা। এবং আমার জন্য তার জান ও মাল উৎসর্গ করা। কারণ আমার মধ্যে লােভ লালসা নেই।
মে’রাজ রজনীতে মহান আল্লাহ পাক স্বীয় হাবীবের কাছে এসব পয়গামগুলােই পৌছিয়ে দিয়েছিলেন, কারণ এগুলােই হল শরীয়তের মূল বিধান।।
শেষ কথাঃ
উম্মতে মােহাম্মদীর জন্যে মে’রাজের রজনিতে অনেক পয়গামই প্রদান করা হয়েছে। তবে এখানে শবে মেরাজের ঘটনা সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হয়েছে। পরবর্তী লেখায় মেরাজের শিক্ষা নিয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা করা হবে ইনশা আল্লাহ।
দ্বীনি কথা শেয়ার করে আপনিও ইসলাম প্রচারে অংশগ্রহণ করুন।
If you're planning to give your car a new look, one of your first questions…
If you're thinking about building a barndominium in 2025, you're not alone. These barn-style homes…
A dead or drained car battery can be a frustrating issue, especially when you're in…
Dreaming of a tropical escape but want to explore on your own terms? If you’ve…
Teaching your child to share is one of the most valuable lessons they’ll learn in…
Old gasoline sitting in your garage or shed can pose serious risks to your health,…