সর্বাবস্থায় পূণ্যবান স্বামীর অনুগত হওয়াই পূণ্যবতী স্ত্রীর বৈশিষ্ট্য

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পারিবারিক জীবন ছিল অত্যন্ত সাধাসিধা। তিনি স্বেচ্ছায় দরিদ্রতা বরণ করেছিলেন। তাঁর পূণ্যবতী স্ত্রীগণও তা হাসিমুখে বরণ করেছিলেন। কিন্তু ৫ম হিজরীতে আহযাব যুদ্ধের পর বনু নাযীর ও বনু কুরায়যার বিজয় এবং গণীমতের বিপুল মালামাল প্রাপ্তির ফলে মুসলমানদের মধ্যে সচ্ছলতা ফিরে আসে।

তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর স্ত্রীগণ তাঁর নিকটে তাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও অন্যান্য খরচাদি বৃদ্ধির আবেদন জানান। সাধারণ মুসলমানদের প্রাচুর্য দেখে মানুষ হিসাবে তাঁদের এ ধরনের আবেদন অস্বাভাবিক ছিল না। কিন্তু নবী করীম (ছাঃ) এতে মর্মাহত হন এবং তাঁদেরকে তালাক গ্রহণের অধিকার প্রদান করেন।

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে তাখয়ীরের আয়াত (আহযাব ৩৩/২৮-২৯) নাযিল হয়। সাথে সাথেই তাঁরা দুনিয়াবী ক্ষণস্থায়ী সুখের কথা ভুলে গিয়ে পরকালীন চিরস্থায়ী সুখের প্রতি আরো বেশী আগ্রহী হন। ফলে তাঁদের পারিবারিক বন্ধন আরো সুদৃঢ় হয়ে ওঠে। এ সম্পর্কেই নিম্নোক্ত হাদীছ-

আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম (ছাঃ)-এর স্ত্রীগণের মধ্যে ঐ দু’জন সম্পর্কে ওমর (রাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞেস করতে সব সময় আগ্রহী ছিলাম, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘যদি তোমরা দু’জনে আল্লাহর নিকট তওবা কর (তবে সেটাই উত্তম), কেননা তোমাদের অন্তর বাঁকা হয়ে গেছে’ (তাহরীম ৬৬/৪)

একবার আমি তাঁর সঙ্গে হজ্জে রওয়ানা হ’লাম। তিনি রাস্তা হ’তে সরে গেলেন। আমিও একটি পানির পাত্র নিয়ে তাঁর সঙ্গে গতি পরিবর্তন করলাম। তিনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে ফিরে এলেন। আমি পানির পাত্র হ’তে তাঁর দু’হাতে পানি ঢাললাম, তিনি ওযূ করলেন। আমি বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! নবী করীম (ছাঃ)-এর স্ত্রীগণের মধ্যে সেই দু’জন কারা, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘যদি তোমরা দু’জন তওবা কর (তবে সেটাই কল্যাণকর)।

কেননা তোমাদের অন্তর বাঁকা হয়ে গেছে’ (তাহরীম ৬৬/৪)। তিনি বললেন, হে ইবনু আববাস! এটা তোমার জন্য আশ্চর্যের বিষয় যে, তুমি তা জান না। তারা দু’জন হ’লেন আয়েশা ও হাফছাহ (রাঃ)। অতঃপর ওমর (রাঃ) পুরো ঘটনা বলতে শুরু করলেন। আমি ও আমার এক আনছারী প্রতিবেশী মদীনার অদূরে বনু উমাইয়া ইবনু যায়েদের মহল্লায় বাস করতাম। আমরা দু’জন পালাক্রমে নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট হাযির হ’তাম।

একদিন তিনি যেতেন, আরেকদিন আমি যেতাম। আমি যেদিন যেতাম সেদিনের অহী ও অন্যান্য খবর তাঁকে অবহিত করতাম। আর তিনি যেদিন যেতেন তিনিও অনুরূপ করতেন। আমরা কুরাইশ গোত্রের লোক মহিলাদের উপর কর্তৃত্ব করতাম। কিন্তু আমরা যখন মদীনায় আনছারদের কাছে আসলাম, তখন দেখলাম মহিলারা তাদের উপর কর্তৃত্ব করছে।

ধীরে ধীরে আমাদের মহিলারাও আনছারী মহিলাদের রীতিনীতি গ্রহণ করতে লাগল। একদিন আমি আমার স্ত্রীকে ধমক দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে সে প্রত্যুত্তর করল। তার এই প্রত্যুত্তর আমি অপসন্দ করলাম। সে বলল, আমার প্রত্যুত্তরে আপনি অসন্তুষ্ট হন কেন? আল্লাহর কসম! নবী করীম (ছাঃ)-এর স্ত্রীগণও তো তাঁর কথার প্রত্যুত্তর করে থাকেন এবং তাঁর কোন কোন স্ত্রী রাত পর্যন্ত পুরো দিন তাঁর কাছ হ’তে আলাদা থাকেন।

একথা শুনে আমি ঘাবড়ে গেলাম এবং বললাম, যিনি এরূপ করেছেন তিনি বড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারপর আমি জামা-কাপড় পরে (আমার মেয়ে) হাফছাহ (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে বললাম, হে হাফছাহ! তোমাদের কেউ কেউ নাকি রাত পর্যন্ত পুরো দিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে অসন্তুষ্ট রাখো? সে বলল, হ্যাঁ। আমি বললাম, তাহ’লে সে বিফল ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তোমার কি ভয় হয় না যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অসন্তুষ্ট হ’লে আল্লাহও অসন্তুষ্ট হবেন? ফলে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে। তাঁর সাথে বাড়াবাড়ি করো না, তাঁর কথার প্রত্যুত্তর কর না এবং তাঁর থেকে পৃথক থেকো না। তোমার কোন কিছুর দরকার হ’লে তা আমাকে বলবে। তোমার প্রতিবেশিনী তোমার চেয়ে অধিক সুন্দরী এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর অধিক প্রিয় এটা যেন তোমাকে ধোঁকায় না ফেলে।

তিনি উদ্দেশ্য করেছেন আয়েশা (রাঃ)-কে। সে সময় আমাদের মধ্যে আলোচনা চলছিল যে, গাসসানের লোকেরা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ঘোড়াগুলিকে প্রস্ত্তত করছে। একদিন আমার সাথী তার পালার দিন নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট গেলেন এবং এশার সময় এসে আমার দরজায় খুব জোরে করাঘাত করে বললেন, তিনি (ওমর রাঃ) কি ঘুমিয়ে গেছেন? তখন আমি ঘাবড়িয়ে গিয়ে তাঁর কাছে এলাম।

তিনি বললেন, বড় এক ঘটনা ঘটেছে? আমি বললাম, সেটা কী? গাসসানের লোকেরা কি এসে গেছে? তিনি বললেন, না, বরং তার চেয়েও বড় ঘটনা ও বিরাট ব্যাপার। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর স্ত্রীগণকে তালাক দিয়েছেন। ওমর (রাঃ) বলেন, তাহ’লে তো হাফছার সর্বনাশ হয়েছে এবং সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমার তো ধারণা ছিল যে, এমন কিছু ঘটতে পারে।

আমি কাপড় পরে বেরিয়ে এসে নবী করীম (ছাঃ)-এর সাথে ফজরের ছালাত আদায় করলাম। ছালাত শেষে নবী করীম (ছাঃ) তাঁর কোঠায় প্রবেশ করলেন এবং একাকী বসে থাকলেন। তখন আমি হাফছাহ (রাঃ)-এর কাছে গিয়ে দেখি সে কাঁদছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কাঁদছ কেন? আমি কি তোমাকে আগেই সতর্ক করে দেইনি?

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কি তোমাদেরকে তালাক দিয়েছেন? সে বলল, জানি না। তিনি তাঁর ঐ কোঠায় আছেন। আমি বের হয়ে মিম্বরের কাছ আসলাম, দেখি যে, লোকজন মিম্বরের চারপাশে বসে আছে এবং কেউ কেউ কাঁদছেন। আমি তাঁদের সাথে কিছুক্ষণ বসলাম। তারপর আমার আগ্রহ প্রবল হ’ল এবং তিনি যে কোঠায় ছিলেন আমি তার নিকটে আসলাম।

আমি তাঁর এক কালো গোলামকে বললাম, ওমরের জন্য অনুমতি গ্রহণ কর। সে প্রবেশ করে নবী করীম (ছাঃ)-এর সাথে কথা বলে বেরিয়ে এসে বলল, আমি আপনার কথা তাঁর কাছে উল্লেখ করেছি, কিন্তু তিনি নীরব রইলেন। তাই আমি ফিরে এসে মিম্বরের পাশে বসা লোকদের কাছে গিয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ পর আমার উদ্বেগ প্রবল হ’লে আমি এসে গোলামটিকে বললাম, ওমরের জন্য অনুমতি গ্রহণ কর।

এবারও সে আগের মতই বলল। তারপর যখন আমি ফিরে আসছিলাম, তখন বালকটি আমাকে ডেকে বলল, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আপনাকে অনুমতি দিয়েছেন। আমি তাঁর কাছে প্রবেশ করে দেখি তিনি খেজুরের পাতায় তৈরী ছোবড়া ভর্তি একটা চামড়ার বালিশে হেলান দিয়ে খালি চাটাইয়ের উপর কাত হয়ে শুয়ে আছেন।

তাঁর শরীর ও চাটাইয়ের মাঝখানে কোন বিছানা ছিল না। ফলে তাঁর শরীরের পার্শ্বদেশে চাটাইয়ের দাগ পড়ে গেছে। আমি তাঁকে সালাম করলাম এবং দাঁড়িয়ে থেকেই জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি আপনার স্ত্রীগণকে তালাক দিয়েছেন? তিনি আমার দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে বললেন, না।

এরপর আমি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য দাঁড়িয়ে থেকেই বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমরা কুরাইশ গোত্রের লোকেরা নারীদের উপর কর্তৃত্ব করতাম। যখন আমরা এমন এক সম্প্রদায়ের নিকট আসলাম, যাদের উপর তাদের নারীরা কর্তৃত্ব করছে।

তিনি এ ব্যাপারে আলোচনা করলেন। এতে নবী (ছাঃ) মুচকি হাসলেন। আমি বললাম, আপনি হয়তো লক্ষ্য করেছেন যে, আমি হাফছার ঘরে গিয়েছি এবং তাকে বলেছি, তোমাকে একথা যেন ধোঁকায় না ফেলে যে, তোমার প্রতিবেশিনী (সতীন) তোমার চেয়ে অধিক আকর্ষণীয় ও নবী করীম (ছাঃ)-এর অধিক প্রিয়।

একথা দ্বারা তিনি আয়েশা (রাঃ)-কে বুঝিয়েছেন। নবী করীম (ছাঃ) আবার মুচকি হাসলেন। তাঁকে মুচকি হাসতে দেখে আমি বসলাম এবং তাঁর ঘরের ভিতর এদিকে সেদিকে দৃষ্টি করলাম। কিন্তু আল্লাহর কসম! তার ঘরে তিনটি কাঁচা চামড়া ব্যতীত দৃষ্টিপাত করার মত আমি আর কিছুই দেখতে পেলাম না।

তখন আমি বললাম, আল্লাহর নিকট দো‘আ করুন, তিনি যেন আপনার উম্মতকে পার্থিব সচ্ছলতা দান করেন। কেননা পারস্য ও রোমবাসীদেরকে সচ্ছলতা দেয়া হয়েছে এবং তাদেরকে পার্থিব প্রাচুর্য দেয়া হয়েছে, অথচ তারা আল্লাহর ইবাদত করে না। তিনি তখন হেলান দিয়ে ছিলেন, বললেন, হে ইবনুল খাত্তাব! তোমার কি সন্দেহ আছে যে, তারা এমন এক জাতি, যাদেরকে তাদের ভাল কাজের প্রতিদান দুনিয়ার জীবনেই দিয়ে দেয়া হয়েছে।

আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমার ক্ষমার জন্য দো‘আ করুন। হাফছাহ (রাঃ) একথা আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট প্রকাশ করলেই নবী করীম (ছাঃ) স্ত্রীগণের নিকট হ’তে আলাদা হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আল্লাহর কসম! আমি একমাস তাদের কাছে যাব না। তাঁদের প্রতি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ভীষণ রাগের কারণে তা হয়েছিল। যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। যখন ঊনত্রিশ দিন কেটে গেল তিনি সর্বপ্রথম আয়েশা (রাঃ)-এর কাছে  এলেন।

আয়েশা (রাঃ) তাঁকে বললেন, আপনি কসম করেছেন যে, এক মাসের মধ্যে আমাদের কাছে আসবেন না। এ পর্যন্ত আমরা ঊনত্রিশ রাত অতিবাহিত করেছি। যা আমি ঠিক ঠিক গণনা করেছি। তখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন, মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়। আর এ মাসটি মূলত ঊনত্রিশ দিনেরই ছিল।

আয়েশা (রাঃ) বলেন, যখন ইখতিয়ারের আয়াত নাযিল হ’ল তখন তিনি তাঁর স্ত্রীগণের মধ্যে সর্বপ্রথম আমার কাছে এসে বললেন, আমি তোমাকে একটি কথা বলতে চাই, তবে তুমি তোমার পিতা-মাতার সাথে পরামর্শ না করে এর জওয়াবে তাড়াহুড়া করবে না। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি ভাল ভাবেই জানি যে, আমার পিতা-মাতা আপনার নিকট হ’তে আলাদা হওয়ার পরামর্শ কখনো আমাকে দিবেন না।

তারপর নবী করীম (ছাঃ) বললেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে বলুন, তোমরা যদি পার্থিব জীবন ও তার চাকচিক্য কামনা কর তবে আস, আমি তোমাদের ভোগের ব্যবস্থা করে দেই এবং তোমাদেরকে সদ্ভাবে বিদায় করে দেই। আর যদি তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও পরকালীন সাফল্য কামনা কর তবে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের সৎকর্মশীলদের জন্য মহা প্রতিদান প্রস্ত্তত করে রেখেছেন’ (আহযাব ৩৩/২৮-২৯)

(আয়েশা (রাঃ) বলেন) আমি বললাম, এ ব্যাপারে আমি আমার পিতা-মাতার কী পরামর্শ নিব? আমি তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টি ও পরকালীন সাফল্য পেতে চাই। তারপর তিনি তাঁর অন্যান্য স্ত্রীগণকেও ইখতিয়ার দিলেন এবং প্রত্যেকে একই জবাব দিল, যা আয়েশা (রাঃ) দিয়েছিলেন (বুখারী হা/২৪৬৮, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, ৩য় প্রকাশ ২০১০ ২য় খন্ড, পৃঃ ৫৫১-৫৫৫)

অপর বর্ণনায় রয়েছে- জাবির (রাঃ) বলেন, আবুবকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট পৌঁছার জন্য অনুমতি নিতে আসলেন। দেখলেন বহু লোক তাঁর দরজায় বসে আছে, তাদের কাউকে অনুমতি দেয়া হয়নি। রাবী বলেন, কিন্তু আবুবকরের জন্য অনুমতি দিলে তিনি ভিতরে প্রবেশ করলেন।

অতঃপর ওমর (রাঃ) আসলেন এবং অনুমতি চাইলেন। তাঁকেও অনুমতি দেয়া হ’ল। তিনি প্রবেশ করে নবী করীম (ছাঃ)-কে বিমর্ষ অবস্থায় বসে থাকতে দেখলেন। তখন তাঁর স্ত্রীগণ তাঁর চারিদিকে বসা। ওমর (রাঃ) বলেন, আমি মনে মনে বললাম যে, আমি এমন কথা বলব, যা নবী করীম (ছাঃ)-কে হাসিয়ে ছাড়বে। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আপনি দেখতেন (আমার স্ত্রী) বিনতে খারেজা আমার কাছে এরূপ খরচ চাচ্ছে, তাহ’লে আমি উঠে তার ঘাড়ে কিছু লাগিয়ে দিতাম (প্রহার করতাম)।

এতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হাসলেন এবং বললেন, এই যে আপনি দেখছেন, তারা আমার চারপাশে ঘিরে আমার কাছে তাদের খরচাদি চাচ্ছে। অতঃপর আবু বকর (রাঃ) উঠে গিয়ে (তাঁর কন্যা) আয়েশার ঘাড়ে প্রহার করতে লাগলেন এবং ওমর (রাঃ) উঠে গিয়ে (কন্যা) হাফছার ঘাড়ে প্রহার করতে লাগলেন ও তাঁরা উভয়ে বলতে লাগলেন, তুমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট এমন জিনিস চাচ্ছ যা তাঁর নিকট নেই।

তখন তাঁরা বললেন, আল্লাহর কসম! আমরা আর কখনো রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট এমন জিনিস চাইব না, যা তাঁর নিকট নেই। অতঃপর তিনি (পূর্ব প্রতিজ্ঞা অনুসারে) তাদের নিকট হ’তে একমাস বা ঊনত্রিশ দিন পৃথক থাকলেন। তখন এই আয়াত নাযিল হ’ল- ‘হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে বলুন, যদি তোমরা দুনিয়ার জীবন ও ভোগবিলাস চাও তবে আস, আমি তোমাদেরকে কিছু দিয়ে ভালভাবে বিদায় করে দেই।

আর যদি আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও আখেরাতকে চাও, তবে তোমাদের মধ্যে যারা সৎকর্মশীল আল্লাহ তাদের জন্য মহা পুরস্কার প্রস্ত্তত করে রেখেছেন’ (আহযাব ৩৩/২৮-২৯)

রাবী বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আয়েশাকে ধরে কথা বলতে আরম্ভ করে বললেন, হে আয়েশা! আমি তোমার কাছে একটি কথা বলতে চাই। আশা করি তুমি তোমার পিতা-মাতার সাথে পরামর্শ না করে ঐ ব্যাপারে তাড়াহুড়া করে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে না। আয়েশা (রাঃ) বললেন, তা কী হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)!

তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার নিকট আয়াতটি পাঠ করে শুনালেন। আয়েশা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার ব্যাপারেও কি আমি আমার পিতা-মাতার সাথে পরামর্শ করব? বরং আমি আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও আখেরাতকেই গ্রহণ করলাম। তবে আমি চাই যে, আমি যা বলেছি তা আপনি আপনার অন্য স্ত্রীগণকে বলবেন না (দেখি তারা কী বলে?) তিনি বললেন, তা হবে না।

তাদের মধ্যে যে কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করবে (আয়েশা কী বলেছেন?) আমি তাকে তা বলব। কেননা কাউকে কষ্টে ফেলতে বা কারো পদস্খলন কামনা করতে আল্লাহ আমাকে পাঠাননি। বরং আমাকে শিক্ষা দিতে ও সহজ করতে পাঠিয়েছেন (মুসলিম, মিশকাত, হা/৩২৪৯; অনুবাদ মিশকাত হা/৩১১১)

উপরোক্ত ঘটনায় সতী-সাধ্বী স্ত্রীগণের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে। তারা সুখে-দুঃখে প্রাচুর্যে-অভাবে সর্বাবস্থায় পূণ্যবান স্বামীর একনিষ্ঠ অনুসারী হয়ে থাকেন। পার্থিব ক্ষুদ্র ও ক্ষণস্থায়ী ভোগ-বিলাসের জন্য তারা কখনোই পরকালীন চিরস্থায়ী সুখ বিকিয়ে দিতে পারেন না। এছাড়া আরো প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) মানুষ ছিলেন।

বিধায় তাঁর  মানবীয় গুণ, রাগ-অভিমান ও দুঃখ-বেদনা ছিল। স্বামী-স্ত্রীর প্রকৃত প্রেম ও ভালবাসার সম্পর্ক এসবের মাধ্যমে মাঝে-মধ্যে ঝালাই হয়ে আরো প্রগাঢ়, দৃঢ়তর ও মধুর হয়। প্রিয়নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) ও উম্মাহাতুল মুমিনীন-এর মধ্যকার এ ধরনের ঘটনা তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ভবিষ্যতে কোন মুমিন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এরূপ কোন ঘটনা ঘটলে তারা যেন আলোচ্য হাদীছের অনুসরণে সংসার ভেঙ্গে না দিয়ে আরো দৃঢ় করেন। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন-আমীন!

Jahirul.Islam

Recent Posts

How Much Does It Cost to Build a Barndominium in 2025

If you're thinking about building a barndominium in 2025, you're not alone. These barn-style homes…

5 days ago

How Long Does It Take to Charge a Car Battery

A dead or drained car battery can be a frustrating issue, especially when you're in…

6 days ago

How Can I Plan a Trip to PR by Myself

Dreaming of a tropical escape but want to explore on your own terms? If you’ve…

6 days ago

How to Teach My Four Year Old to Share

Teaching your child to share is one of the most valuable lessons they’ll learn in…

6 days ago

How to Dispose of Old Gasoline Safely and Legally

Old gasoline sitting in your garage or shed can pose serious risks to your health,…

6 days ago

How to Date an Entity Hentai

If you’re a fan of anime and are curious about the stranger, more supernatural side…

6 days ago