বাংলাদেশ নাম করণ করা তখনও হয়নি। তখন বর্তমান বাংলাদেশ ছিল তুর্কি সুলতানদের অধীন। পূর্ব বাংলার রাজধানী ছিল বর্তমান সোনারগাঁ। নারায়ণগঞ্জে তিন মাইল পূর্বে, মোগরাপাড়া এর কাছের কয়েকটি গ্রাম নিয়ে ছিল পুরাতন সোনারগাঁ। সোনারগাঁ রাজধানী হওয়ার কারণে আমাদের ঢাকার মত এটাও ছিল জমজমাট শহর। আজ থেকে ছয় শত বছর আগে সোনারগাঁ থেকে জাভা দ্বীপ পর্যন্ত জাহাজ চলাচল করতো। তখন এখানে একটি টাকশাল ছিল।
প্রায় পাঁচ শত পঞ্চাশ বছর আগে চীন দেশ থেকে এখানে পরিব্রাজক মা-হুয়ান এসেছিলেন সোনারগাঁয়ে। তিনি এই সোনারগাঁকে দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তাইতো তিনি বলেছিলেন, ”সোনারগাঁ শহর দেয়াল দিয়ে ঘেরা। অনেক পুকুর, রাস্তাঘাট ও বাজারের শহর সোনারগাঁ। এই শহরে সব রকম জিনিস কেনা বেচা হয়।” তাইতো তুর্কিদের আমলে এ শহরকে বলা হতো হযরত-ই জালাল।
ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগ ছিল সোনারগাঁর স্বর্ণযুগ কেননা এসময় সোনারগাঁয়ের অধিপতি ছিল বিখ্যাত নেতা ঈসা খাঁ। ক্ষমতা আর ঐতিহ্য সব কিছুতেই পরিপূর্ণ ছিল এই শহর। ঐতিহাসিক ফিচ বলেছিলেন, ”তৎকালে ভারতবর্ষের সবচেয়ে ভালো মসলিন তৈরি হতো সোনারগাঁয়ে।” মসলিনের সুখ্যাতি তখন ছিল জগত জোড়া। এ রকম বিখ্যাত এক মসলিনের নাম ছিল শবনম। শবনম শব্দটি ফরাসি শব্দ এর অর্থ সান্ধ্য-শিশির। সান্ধ্য-শিশির কিন্তু এমনি এমনি বলা হতো না বরং এ কাপড় এতই মিহি ছিল যে ঘাসের উপর বিছিয়ে রাখলে রাতে শিশির পড়লে মসলিন কাপড় আর দেখা যেত না। দেখলে মনে হতো ঘাসের উপরে কোন কাপড় নেই, শুধু শিশির পড়ে আছে।
আর এক প্রকার মসলিন কাপড়ের নাম ছিল আবেরোয়ান। এই আবেরোয়ান নামও কিন্তু এমনি এমনি দেয়া হয়নি বরং এর অর্থ জলস্রোত। পানির মধ্যে এই কাপড় ফেললে পানির সাথে একদম মিলিয়ে যেত, কাপড়ের আর কোন অস্তিত্ব থাকতো না। কি অদ্ভুত ব্যাপার তাই না!
ওহ! সোনারগাঁ নিয়ে অনেক কথা বলে ফেললাম, সুলতান গিয়াসউদ্দিনের গল্পই বলা হলো না। আসলে এতক্ষণ যেই সময়ের কথা বলছিলাম সেই বিখ্যাত সময়ের বাংলার সুলতান ছিলেন একজন বিখ্যাত ব্যক্তি। তিনি হলেন গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ। তিনি প্রায় ১৮ বছর পর্যন্ত এই বাংলা রাজত্ব করেছিলেন।
সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ কেবল শাসক ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন ধার্মিক, ন্যায় পরায়ণ এবং সুবিচারক শাসক। তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে ইসলামি শরিয়ার নিয়ম কানুন পালন করতেন।
একদিন তীর ছোঁড়াবার সময় সুলতানের অজান্তে এক বিধবার ছেলের গায়ে সুলতানের তীরের আঘাত লাগলো। কাজী সিরাজ উদ্দিন এর কাছে বিধবা গিয়ে নালিশ জানালো। কাজী সিরাজ উদ্দিন সুলতানকে বিচারালয়ে ডেকে আনার জন্য এক পেয়াদাকে পাঠালেন। এই দিকে কাজী বিচারাসনে বসার আগে আসনের তলায় একটি বেত রেখে দিলেন।
সুলতানের প্রসাদের কাছে পৌঁছে পেয়াদা দেখল সুলতানের কাছে পৌছানো এত সহজ নয়। তাই সে চিন্তা করতে লাগলো কি করে সহজে সুলতানের নজরে আসা যায়। এ নিয়ে অনেক চিন্তা ভাবনা করে অবশেষে তার মাথায় একটু বুদ্ধি বের হলো।
পেয়াদা আযান দিতে আরম্ভ করলো যদিও তখন নামাজের সময় ছিল না। এই আযান আবার সুলতানের কানে গেল। অসময় আযান শুনে সুলতান মুয়াজ্জিনকে তার কাছে হাজির করার হুকুম দিলেন। পেয়াদাকে সুলতানের সামনে হাজির করা হলো। সুলতান তাকে অসময়ে আজান দেয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলো। পেয়াদা তখন বিনয়ের সাথে বলল, ”আপনি নাকি এক বিধবার ছেলেকে তীর মেরে আহত করেছেন। কাজী আমাকে পাঠিয়েছেন আপনাকে আদালতে হাজির করতে। আপনার কাছে সহজে পৌঁছাতে না পেরে অসময় আজান দিয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বাধ্য হয়েছি। এখন আপনি বিচারালয় চলুন?”
সুলতান তখন তার বগলের নিচে একটি ছোট তলোয়ার লুকিয়ে নিয়ে কাজীর আদালতে হাজির হলেন। সুলতান কে কোন রকম সম্মান না দেখিয়ে, কাজী বিধবাকে হুকুম দিলেন, ”এ বুড়ী আপনার বিরুদ্ধে নালিশ করেছে, এর মনে সান্ত্বনা দিন।”
সুলতান তখন সে বিধবাকে যথেষ্ট টাকা পয়সা দিয়ে সন্তুষ্ট করে দিলেন। কাজী সাহেব ফিরে জিজ্ঞাসা করলেন, ”তুমি কি ক্ষতিপূরণ পেয়েছ, খুশি মনে অপরাধীকে ক্ষমা করেছো?” বিধবা উত্তরে বলল, ”হ্যাঁ হুজুর, আমি খুশি হয়ে সুলতান কে ক্ষমা করেছি।”
তখন কাজী মহা আনন্দে উঠে দাঁড়ালেন এবং সুলতান কে যথাযথ সম্মান দেখিয়ে মসনদে বসালেন। সুলতান তখন তার তলোয়ার বের করে বললেন, ”কাজী সাহেব আইনের হুকুম মেনে আপনার আদালতে হাজির হয়েছি। আজ যদি আপনি আইনের বিধান না মেনে আমার পক্ষপাত করতেন, তাহলে এটি দিয়ে আপনার মাথা কেটে দুই ভাগ করে ফেলতাম। শুকরিয়া আল্লাহর আপনি ন্যায় বিচার করতে সক্ষম হয়েছেন।”
কাজিও কম যান না। তিনি তাঁর বিচারাসনের নিচের থেকে বেতটি বের করে বলেন, ”হুজুর শরীয়তের বিধান মতে বিচারের আদেশ অমান্য করলে আপনার প্রাপ্য শাস্তি ছিল বেত্রাঘাত। আল্লাহর কসম আপনি যদি পবিত্র আইনের বিধান পালন করতে ইতস্তত করতেন, তাহলে আমি এই বেত দিয়ে আপনার পিঠে আঘাত করতে এক মিনিটও বিলম্ব করতাম না। যাই হোক আমার উপর একটি বিপদ এসেছিল। আল্লাহর হুকুমে বিপদ কেটে গেছে।”
কাজী অবশ্য জানতেন সুলতানকে বেত্রাঘাত করলে তার প্রাণহানি সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু এত কিছুর পরেও ন্যায়পরায়ণ কাজীর কাছে তার জীবনের চেয়ে বড় ছিল আইনের মর্যাদা।
ন্যায় বিচার আরেক উদাহরণ দিল্লির বাদশাহ সম্রাট জাহাঙ্গীর যার ন্যায় বিচারে মুগ্ধ হয়ে গিয়ে ছিল গোটা রাজ্য এই ঘটনাটিও পড়ে দেখতে পারেন।
If you're planning to give your car a new look, one of your first questions…
If you're thinking about building a barndominium in 2025, you're not alone. These barn-style homes…
A dead or drained car battery can be a frustrating issue, especially when you're in…
Dreaming of a tropical escape but want to explore on your own terms? If you’ve…
Teaching your child to share is one of the most valuable lessons they’ll learn in…
Old gasoline sitting in your garage or shed can pose serious risks to your health,…