হজরত মুসা (আ.)-এর রোজা কবে রাখতেন ?


রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। যুগে যুগে নবি রাসুলগণ রোজার বিধান পালন করেছেন। পৃথিবীর প্রথম রোজা পালন করেছেন আদি মানব হজরত আদম আলাইহিস সালাম। তারপর হজরত নুহ ও ইবরাহিম আলাইহিস সালাম রোজা পালন করেছেন। হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের পর প্রসিদ্ধ নবি ও রাসুল ছিলেন হজরত মুসা আলাইহিস সালাম। কেমন ছিল তাঁর রোজা পালন?

হজরত মুসা আলাইহিস সালামও রোজা পালন করেছেন। কেননা যুগে যুগে নবি-পয়গম্বরদের রোজা পালনের কথা সুস্পষ্ট ভাষায় কুরআনে ওঠে এসেছে এভাবে-
‘হে ঈমাদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমারে আগের লোকদের (নবি-রাসুল ও তাদের উম্মত) ওপর। যাতে তোমরা পরহেজগার হতে পার।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)

এ আয়াতে বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, রোজা শুধু উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য ফরজ নয়; বরং আগের অনেক নবি-রাসুল ও তাদের অনুসারীদের জন্যও ফরজ ছিল।

হজরত মুসা আলাইহিস সালামের রোজা
হজরত ইবরাহিম আলাহিস সালামের পর সর্বাধিক পরিচিত আসমানি কিতাবধারী নবি ছিলেন হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম। তাঁর যুগেও রোজার বিধান ছিল।
আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে আসমানি কিতাব ‘তাওরাত’ নাজিল করার আগে ৪০ দিন রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। হজরত মুসা আলাইহিস সালাম তুর পাহাড়ে রোজা পালনে ক্ষুধা ও পিপাসায় ৪০ দিন অতিবাহিত করেছিলেন।

সে হিসেবে মুসা আলাইহিস সালামের অনুসারীরা ৪০ দিন পর্যন্ত রোজা পালনকে উত্তম বলে বিবেচনা করতেন। ৪০তম দিনে রোজা রাখাকে তারা ফরজ তথা আবশ্যক মনে করতো। আর তা ছিল তাদের সপ্তম মাসের (তাশরিন) দশম তারিখ। এ দশম দিন ছিল তাদের কাছে আশুরা।

এ আশুরার দিনে আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে ১০ আহকাম দান করেছিলেন। আর এ কারণেই তাওরাতে ১০ তারিখ রোজা পালনের জন্য জোর তাগিদ করা হয়। এছাড়াও ইয়াহুদিদের অন্যান্য ছহিফাগুলোতেও অন্যান্য দিনে রোজা পালনের হুকুম পাওয়া যায়।

এছাড়াও হাদিসের বিখ্যাত দুই গ্রন্থ বুখারি ও মুসলিমের বর্ণনায় আরও এসেছে-
হজরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় (হিজরত করে) এসে ইয়াহুদিদের আশুরার দিন (মুহররমের ১০ তারিখ) রোজা অবস্থায় দেখতে পেলেন। তাই তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, আজকে তোমরা কিসের রোজা করছো?
তারা বলল, এটা সেই মহান দিন; যেদিন মহান আল্লাহ হজরত মুসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর কাওমকে মুক্ত করেছিলেন। আর ফেরাউন ও তার জাতিকে ডুবিয়ে মেরেছিলেন।
ফলে শোকরিয়া স্বরূপ মুসা আলাইহিস সালাম ঐদিন রোজা রেখেছিলেন। তাই আমরা আজকে ঐ রোজা করছি।’ (বুখারি ও মুসলিম)

আর তাতেও প্রমাণিত হয় যে, মুসা আলাইহিস সালামের যুগে এবং তার আগে ও পরে ইয়াহুদিদের মধ্যে রোজার প্রচলন ছিল।

সে ধারাবাহিকতায় আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুসলিমার জন্যও রোজার বিধান ফরজ করেছেন। আর রমজানের উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাতের মাস হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, রমজানের রোজার প্রস্তুতি এখন থেকেই নেয়া। বিশেষ করে এ শাবান মাসের রোজা রাখার মাধ্যমেই সে প্রস্তুতি শুরু করা উত্তম।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নবুয়ত ও রেসালাতের অন্যতম আদর্শ রোজা পালনে নিজেদের প্রস্তুতি গ্রহণের তাওফিক দান করুন। রমজানজুড়ে রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।