হাদীসের সনদ বর্ণনা করা দীনের অন্তর্ভুক্ত, নির্ভরযোগ্য বর্ণনা ছাড়া রিওয়ায়াত গ্রহণ করা উচিত নয়; বর্ণনাকারীদের দোষ-ত্রটি তুলে ধরা শুধু জায়িয নয়, বরং ওয়াজিব; ওটা গীবাত নয়- যা শরীআতের দৃষ্টিতে হারাম; ক্ষতিকারক জিনিসগুলো দূর করে শারীআতের বিধানসমূহ নিখুঁত ও ত্রুটিমুক্ত করা অতীব প্রয়োজন।


(…/…) হাসান ইবনু রবী’ (রহঃ) ….. মুহাম্মাদ ইবনু সীরন (বিখ্যাত তাবি’ঈ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই এ ইলম হলো দীন। কাজেই কার কাছ থেকে তোমরা দীন গ্রহণ করছে তা যাচাই করে নাও। (অর্থাৎ সত্যবাদী, দীনদার এবং নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির কাছ থেকে ইলমে দীন শিক্ষা করা প্রযোজন।)


(…/…) আবূ জাফার মুহাম্মাদ ইবনুস্ সাব্বাহ (রহঃ) ….. ইবনু সীরীন (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এমন এক সময় ছিল যখন লোকেরা সনদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতো না। কিন্তু পরে যখন ফিতনাহ (হাদীসের নামে মিথ্যা কথার আমদানী) দেখা দিল তখন লোকেরা হাদীস বর্ণনাকারীদেরকে বললো, তোমরা যাদের নিকট থেকে হাদীস গ্রহণ করেছ, আমাদের কাছে তাদের নাম বল। তারা এ কথা এ কারণে জানতে চাইত, যাতে দেখা যায় তারা আহলে সুন্নাত কিনা? যদি তারা এ সম্প্রদায়ের হয় তাহলে তাদের হাদীস গ্রহণযোগ্য হবে। আর যদি দেখা যায় তারা বিদ’আতী তাহলে তাদের হাদীস গ্রহণ করা হবে না।


(…/…) সুলাইমান ইবনু মুসা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি তাউস (রহঃ) এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম এবং বললাম, অমুক ব্যক্তি আমাকে এরূপ এরূপ হাদীস শুনিয়েছেন। তিনি বললেনঃ যদি সে ব্যক্তি নির্ভরযোগ্য হয়, তাহলে তার থেকে হাদীস গ্রহণ কর।


(…/…) সুলাইমান ইবনু মূসা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি তাউস (রহঃ) কে বললাম, অমুক ব্যক্তি আমাকে এ হাদীস বলেছেন। তিনি বললেন, তোমার নিকট হাদীস বর্ণনাকারী যদি নির্ভরযোগ্য হয় তাহলে তার থেকে তা গ্রহণ কর।


(…/…) ইবনু আবূ যিনাদ (রহঃ) (আসল নাম আবদুল্লাহ ইবনু যাকওয়ান যিনি হাদীসের একজন ইমাম) তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তিনি বললেন, আমি মদীনায় একশ জন লোকের সাক্ষাৎ পেয়েছি যারা মিথ্যা থেকে নিরাপদ ছিলেন। তবুও তাদের কাছ থেকে হাদীস গ্রহণ করা হতো না। কেননা তাদের সম্পর্কে বলা হতো যে, তাদের কেউ হাদীস বর্ণনা করার ক্ষেত্রে যোগ্য নন।


(…/…) মুহাম্মাদ ইবনু আবূ উমার আল মাক্কী ও আবূ বকর ইবনু খাল্লাদ আল বাহিলী (রহঃ) ….. মিসআর (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি সা’দ ইবনু ইবরাহীমকে বলতে শুনেছি; নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি (সিকাহ) ব্যতীত অন্য কারো কাছ থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীস গৃহীত হবে না।


(…/…) মার্ভ (স্পেনের একটি অঞ্চল)-এর অধিবাসী মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু কুহযায (রহঃ) ….. ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুবারাক (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, হাদীসের সনদ বর্ণনা করা দীনের অন্তর্ভুক্ত। যদি সনদ না থাকতো তাহলে যার যা ইচ্ছা তাই বলতো।

মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ….. ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুবারাক (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমাদের ও লোকদের মাঝখানে রয়েছে সেতু বন্ধন বা খুঁটি অর্থাৎ সনদ।

আবূ ইসহাক ইবরাহীম ইবনু আত তালাকানী বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু মুবারাক (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, হে আবূ আবদুর রহমান! এ হাদীসটি সম্পর্কে আপনার কি অভিমত যাতে আছে, “অন্যতম সৎকাজ হলো আমার সালাতের সাথে পিতা-মাতার জন্যও সালাত পড়ে নিও আর তোমার সিয়ামের সাথে পিতা-মাতার জন্যও সিয়াম পালন করে নিও?” তিনি বললেন, হে আবূ ইসহাক! কার বরাতে এ হাদীসটি বর্ণনা করছো? আমি বললাম, এটি শিহাব ইবনু খিরাশ থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বললেন, হ্যাঁ, ইনি নির্ভরযোগ্য। তবে তিনি কার নিকট থেকে বর্ণনা করেছেন? আমি বললাম, হাজ্জাজ ইবনু দীনার থেকে। তিনি বললেন, হ্যাঁ, ইনি নির্ভরযোগ্য। তিনি কার নিকট থেকে বর্ণনা করেছেন? আমি বললাম, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বললেন, হে আবূ ইসহাক! হাজ্জাজ ইবনু দীনার ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাঝে এত বিশাল প্রান্ত রয়েছে যা অতিক্রম করতে গেলে উটের গর্দানও ভেঙ্গে পড়বে।* তবে পিতা-মাতার জন্য সদাকাহ করার বিষয়ে কোন মতভেদ নেই।

মুহাম্মদ (রহঃ) বলেন, আমি শুনেছি আলী ইবনু শাকীককে সে বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুবারাক (রহঃ) থেকে বর্ণনা করতে আমি শুনেছি যে, তিনি একদিন লোকেদের সামনে বলেছিলেন, তোমরা আমর ইবনু সাবিত (রহঃ) এর হাদীস বর্জন কর, কেননা সে সাহাবা তাবিঈনদের (সালফে সলিহীনদের) দোষারোপ করে।* অর্থাৎ হাজ্জাজ ইবনু দীনার তাবি-তাবিঈ ছিলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সরাসরি রিওয়ায়াত করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। সুতরাং এ হাদীসটি গ্রহণযোগ্য নয়।

باب فِي أَنَّ الإِسْنَادَ مِنَ الدِّينِ وَأَنَّ الرِّوَايَةَ لَا تَكُونُ إِلَّا عَنْ الثِّقَاتِ وَأَنَّ جَرْحَ الرُّوَاةِ بِمَا هُوَ فِيهِمْ جَائِزٌ بَلْ وَاجِبٌ وَأَنَّهُ لَيْسَ مِنْ الْغِيبَةِ الْمُحَرَّمَةِ بَلْ مِنْ الذَّبِّ عَنْ الشَّرِيعَةِ الْمُكَرَّمَةِ

حَدَّثَنَا حَسَنُ بْنُ الرَّبِيعِ، حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ أَيُّوبَ، وَهِشَامٍ، عَنْ مُحَمَّدٍ، وَحَدَّثَنَا فُضَيْلٌ، عَنْ هِشَامٍ، قَالَ وَحَدَّثَنَا مَخْلَدُ بْنُ حُسَيْنٍ، عَنْ هِشَامٍ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ سِيرِينَ، قَالَ إِنَّ هَذَا الْعِلْمَ دِينٌ فَانْظُرُوا عَمَّنْ تَأْخُذُونَ دِينَكُمْ ‏.‏

حَدَّثَنَا أَبُو جَعْفَرٍ، مُحَمَّدُ بْنُ الصَّبَّاحِ حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ زَكَرِيَّاءَ، عَنْ عَاصِمٍ الأَحْوَلِ، عَنِ ابْنِ سِيرِينَ، قَالَ لَمْ يَكُونُوا يَسْأَلُونَ عَنِ الإِسْنَادِ، فَلَمَّا وَقَعَتِ الْفِتْنَةُ قَالُوا سَمُّوا لَنَا رِجَالَكُمْ فَيُنْظَرُ إِلَى أَهْلِ السُّنَّةِ فَيُؤْخَذُ حَدِيثُهُمْ وَيُنْظَرُ إِلَى أَهْلِ الْبِدَعِ فَلاَ يُؤْخَذُ حَدِيثُهُمْ ‏.‏

حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ الْحَنْظَلِيُّ، أَخْبَرَنَا عِيسَى، – وَهُوَ ابْنُ يُونُسَ – حَدَّثَنَا الأَوْزَاعِيُّ، عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ مُوسَى، قَالَ لَقِيتُ طَاوُسًا فَقُلْتُ حَدَّثَنِي فُلاَنٌ، كَيْتَ وَكَيْتَ ‏.‏ قَالَ إِنْ كَانَ صَاحِبُكَ مَلِيًّا فَخُذْ عَنْهُ ‏.‏

وَحَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الدَّارِمِيُّ، أَخْبَرَنَا مَرْوَانُ، – يَعْنِي ابْنَ مُحَمَّدٍ الدِّمَشْقِيَّ – حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ عَبْدِ الْعَزِيزِ، عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ مُوسَى، قَالَ قُلْتُ لِطَاوُسٍ إِنَّ فُلاَنًا حَدَّثَنِي بِكَذَا، وَكَذَا، ‏.‏ قَالَ إِنْ كَانَ صَاحِبُكَ مَلِيًّا فَخُذْ عَنْهُ ‏.‏
حَدَّثَنَا نَصْرُ بْنُ عَلِيٍّ الْجَهْضَمِيُّ، حَدَّثَنَا الأَصْمَعِيُّ، عَنِ ابْنِ أَبِي الزِّنَادِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ أَدْرَكْتُ بِالْمَدِينَةِ مِائَةً كُلُّهُمْ مَأْمُونٌ ‏.‏ مَا يُؤْخَذُ عَنْهُمُ الْحَدِيثُ يُقَالُ لَيْسَ مِنْ أَهْلِهِ ‏.‏
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ أَبِي عُمَرَ الْمَكِّيُّ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، ح وَحَدَّثَنِي أَبُو بَكْرِ بْنُ خَلاَّدٍ الْبَاهِلِيُّ، – وَاللَّفْظُ لَهُ – قَالَ سَمِعْتُ سُفْيَانَ بْنَ عُيَيْنَةَ، عَنْ مِسْعَرٍ، قَالَ سَمِعْتُ سَعْدَ بْنَ إِبْرَاهِيمَ، يَقُولُ لاَ يُحَدِّثُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِلاَّ الثِّقَاتُ ‏.‏

وَحَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ قُهْزَاذَ، – مِنْ أَهْلِ مَرْوَ – قَالَ سَمِعْتُ عَبْدَانَ بْنَ عُثْمَانَ، يَقُولُ سَمِعْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ الْمُبَارَكِ، يَقُولُ الإِسْنَادُ مِنَ الدِّينِ وَلَوْلاَ الإِسْنَادُ لَقَالَ مَنْ شَاءَ مَا شَاءَ ‏.‏

وَقَالَ مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ حَدَّثَنِي الْعَبَّاسُ بْنُ أَبِي رِزْمَةَ، قَالَ سَمِعْتُ عَبْدَ اللَّهِ، يَقُولُ بَيْنَنَا وَبَيْنَ الْقَوْمِ الْقَوَائِمُ ‏.‏ يَعْنِي الإِسْنَادَ ‏.‏

وَقَالَ مُحَمَّدٌ سَمِعْتُ أَبَا إِسْحَاقَ، إِبْرَاهِيمَ بْنَ عِيسَى الطَّالَقَانِيَّ قَالَ قُلْتُ لِعَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْمُبَارَكِ يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْحَدِيثُ الَّذِي جَاءَ ‏ “‏ إِنَّ مِنَ الْبِرِّ بَعْدَ الْبِرِّ أَنْ تُصَلِّيَ لأَبَوَيْكَ مَعَ صَلاَتِكَ وَتَصُومَ لَهُمَا مَعَ صَوْمِكَ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ يَا أَبَا إِسْحَاقَ عَمَّنْ هَذَا قَالَ قُلْتُ لَهُ هَذَا مِنْ حَدِيثِ شِهَابِ بْنِ خِرَاشٍ ‏.‏ فَقَالَ ثِقَةٌ عَمَّنْ قَالَ قُلْتُ عَنِ الْحَجَّاجِ بْنِ دِينَارٍ ‏.‏ قَالَ ثِقَةٌ عَمَّنْ قَالَ قُلْتُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏‏ قَالَ يَا أَبَا إِسْحَاقَ إِنَّ بَيْنَ الْحَجَّاجِ بْنِ دِينَارٍ وَبَيْنَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مَفَاوِزَ تَنْقَطِعُ فِيهَا أَعْنَاقُ الْمَطِيِّ وَلَكِنْ لَيْسَ فِي الصَّدَقَةِ اخْتِلاَفٌ ‏.‏

وَقَالَ مُحَمَّدٌ سَمِعْتُ عَلِيَّ بْنَ شَقِيقٍ، يَقُولُ سَمِعْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ الْمُبَارَكِ، يَقُولُ عَلَى رُءُوسِ النَّاسِ دَعُوا حَدِيثَ عَمْرِو بْنِ ثَابِتٍ فَإِنَّهُ كَانَ يَسُبُّ السَّلَفَ ‏.‏


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *