আসসালামু ওয়ালাইকুম বন্ধুরা আশা করি আপনারা সকলেই ভাল আছেন…
আজ আমি আপনাদের সামনে অনেক বড় একজনের বিষয়ে বলবো যার থেকে পৃথিবীর সকল মানুষের জন্মর উৎপত্তি _তার কথাই আজ বলবো ঐ মানুষটি হলো মা, জন্মদাত্রী গভধারীনি মমতাময়ী মা…
মেয়ের জন্য একজন মায়ের অফুরন্ত ভালোবাসার সত্য কাহিনী শুনাতে যাচ্ছি। মায়ের ত্যাগ এর মহিমা নিয়ে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা_ এক দু:খী মা আর স্বর্ণের চুড়ি ।।পড়তে আজীব লাগলেও কাহিনীটি আপনার চোখে পানি এনে ছাড়বে। ঘটনাটি পড়ার পর আপনার মায়ের জন্য আপনার শ্রদ্ধ্যা ভালোবাসা আগের থেকে কয়েকগুন বেড়ে যাবে ।
যখন কেউ জিজ্ঞেস করে পৃথিবীতে ভালোবাসা কোথায় আছে? ঠিক তখন ঠোটের কোনায় মনের মাঝে শান্তির ঝরনাধারার প্রবাহ শুরু হয়ে মনে পরে যায় মায়ের কথা । মায়ের ভালোবাসা সকল ভালোবাসার উর্ধ্বে ।মেরি পেয়ারী মা মেরি জিন্দেগী নামের একটি বই আছে যেখানে ড: আাধিয়া লিখেছেন…পান্জাবের ছোট্র একটি গ্রামে বসবাস করতাম তখনকার সময় ১টাকার মুল্য ছিলো অনেক…। এক আনা, দুই আনার যুগ ছিলো। আমার মা আমার তালিম এর শখ সম্পর্কে জানতেন, এতো দারিদ্রতায় আমার মা না জানি কোথায় থেকে আমার প্রতিটা ইচ্ছে শখ পূরন করে দিত শত দুঃখ কষ্টের মাঝেও ।
আমার বাবা ছোটকালেই এতিম হয়ে গেছিলেন কেউ তাকে লেখাপড়া শিখায়নি, বাল্যকাল খেলাধুলায়ই চলে যায। বড় হয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পরও বাবা তার দায়িত্ব কতব্য সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয়তার খেয়াল রাখতেন না। আমার মা এমন একজন নিষ্ঠাবান মানুষ _এমন মানুষ আমি কখনো দেখে নি ,আমার মা আমার কাছে ছিলো হিরো । আমার মা নিজে শিক্ষিত না হয়েও তার মনে আশা ছিলো আমি লেখাপড়া শিখে তার নাম উচু করি।তিনি চেয়েছিলেন আমার মেয়ে ইসলাম এবং দুনিয়ার সকল শিক্ষা লাভ করুক, তাহলেই তার মেয়ে ইসলাম আর দুনিয়াতে সফলতা পাবে।
এই কারনেই আমার বাবার সাথে ঝগড়া করে_ লড়াই করে আমাকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করান।এরপর একটি ঘটনা ঘটে এই ঘটনা আমার জীবনকে পাল্টিয়ে দেয়, ১৯৪০ সালে মার্চ মাসে পান্জাবে প্রাইমারী স্কলারশিপের পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং সেন্টার আমার গ্রাম থেকে অনেক দুরে ছিলো। আমাদের গুরু ঘোষণা দিল যে মাত্র ৭জন বাচ্চাকে সিলেক্ট করা হবে যারা পরিক্ষা দিবে। সেই শহরে যাওয়া আসা _খাওয়া দাওয়া মিলে খরচ হবে ১টাকা মানে ১৬ আনা, ১৪আনা যাওয়া আসা আর ২আনা খাওয়া দাওয়া ।
আমরা যখন বিষয়টি জানতে পারি এবং বাবার কাছে টাকা চাই কিন্তু তখন বাবা বলে তুমি ভালো করেই জানো মেয়ের লেখাপড়ার জন্য আমি কোন মতেই রাজি ছিলাম না তাই টাকা দেওয়ার কোন প্রশ্নই উঠেনা।আর লাভকি মেয়েদের শিক্ষা নিয়ে? ঘরের সব খরচ দোকান থেকে বাকি আনা হয়েছিলো_ তাহলে বুঝাই যায় ঘরে কোন টাকা ছিলো না। এখন ১টাকা কোথায় পাবো?
আর এইটার জন্য আমার মা বাবার মাঝে অনেক ঝগড়া হলো যা আমি শুধু চুপচাপ দেখছিলাম আর ভাবলাম _আমার মা এতো শান্ত মনের মানুষ আমার বাবার সাথে এতো ঝগড়া করছে শুধু মাএ আমাকে স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য ! কিন্তু লাভ কি হলো ১টা তো আর জোগার হলো না !! সকাল সকাল আমার গরু ৬ টা বাচ্চাকে নিয়ে ঐ শহরে চলে গেলেন যেখানে পরিক্ষা হবার কথা_ আমি চুপুচুপি কাঁদতে থাকি_ পরিক্ষা দিতে না পারার কষ্টে।
আর এইজন্য আমাকে ঘিরে ধরেছিলো প্রচন্ড জ্বর _ আমার জ্বরে আমার মুখ থেকে একটা কথাই বের হচ্ছিলো আমি পরিক্ষা দিতে যাবো। আমার এই অবস্থা দেখে আমার মা_ আমার মামা কে বললেন ভাই আমার একটা কাজ করে দে _মা বলেন ভাই আমার কাছে এক পয়সাও নাই !হ্যাঁ আমার একটা স্বর্ণের চুড়ি আছে এই চুড়ি আমার শেষ সম্বল কিন্তু এই চুড়ি দিয়ে আমার কি হবে? ভাই তুই আমার এই চুড়ি বিক্রি করে আমায় কিছু টাকা এনে দে! যাতে আমার মেয়ে ঐ পরিক্ষাটা দিতে পারে। আমার মেয়েটা সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে আমার এই টাকা টা লাগবেই।
মামা বললেন দেখ বোন ওর কতো জ্বর এই অসুস্থতা নিয়ে কিভাবে যাবে ঐ দুর শহরে? মা বললেন ও সুস্থ্য হয়ে যাবে আমায় শুধু জলদি এই চুড়ি বেচে কিছু টাকা এনে দে।সোনার চুড়িটা ৪টাকা দিয়ে বিক্রি হলো। যখন ৪ টাকা মা হাতে পায় মা তখন আল্লাহর দরবারে আচল ফেলিয়ে দোয়া করেন _আল্লাহ আমার সন্তান কে সুস্থতা দান করুন। যাতে পরিক্ষাটা দিতে পারে। দু:খী মায়ের ফরিয়াদ শুনে আল্লাহ তাওয়াল্লার অশেষ রহমতে আমার জ্বর কমতে লাগলো আর সন্ধ্যায় আমি বাস স্ট্যান্ডে এসে দাড়িয়ে আছি বাসের অপেক্ষায় ।
আপনাদের আমি বলবো একটি ছোট্র জায়গা থেকে উঠে আসা একটি মেয়ে এসব করে দেখিয়েছেন। মায়ের দোয়া পদে পদে আমার সাথে ছিলো এবং কিছুদিন পরে খবর আসলো সেই মেয়ে পুরো শহরে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। প্রাইম মিনিষ্টার এসে আমাকে পুরুষ্কার দিল_ মেডেল দিল_ মেধমী বাচ্চাদের নামের তালিকায় আমার নামটাও যুক্ত হয়ে গেল। মায়ের দোয়া আর সোনার চুড়িটা এই সমস্ত কারিসমা করে দেখালো।আমি একজন শুন্য মানুষ ছিলাম আমার মায়ের কারনে আমি আজ পরিপূনআল্লাহর রহমতে মায়ের স্বপ্ন পুরন হয়েছিল ,এইটা আমার প্রথম পদক্ষেপ ছিলো এর পর আমি পদে পদে সফলতা পেতে থাকিআমার দুখিনী মা আমার বাবার সাথে লড়াই করে এতোটা কষ্ট করছে শুধুমাত্র আমার জন্য।
আমার মায়ের সোনার চুড়ি ৪ টাকায় বিক্রি হয়েছিলো_ আর আজ তার মেয়ে শহরের এক নাম্বার ডাক্তার এবং দীন ইসলাম নিয়ে আমার অনেক বই ও প্রকাশ হয়েছে আর এই সবকিছুর মুলেই আমার মা। মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য।
আমার মা আমার জীবন_ আমার মা আমাকে হাসতে শিখিয়েছে_আমার কষ্টে যখন কেউ ছিলো না তখন পাশে শুধু মা ছিলো,আমার না বলা কথাও আমার মা শুনে যেতো, আমার প্রয়োজনীয়তা আমার মা যেভাবে পেরেছে সেভাবেই পূরণ করেছে, সব পর হয়ে যায় কিন্তু মা পর হয় না !!
আমার মা শুধু এইটা দেখেছে আমার মেয়ে পড়তে চায় আর সে চায় আমাকে একটা ভালো মানুষ করতে, আমি এখন যে অবস্থায় আছি যে সফলতা অর্জন করেছি সবকিছু শুধুমাত্র আমার মায়ের জন্য। আমি স্যালুট করতে চাই সব মাকে যারা তার মেয়ের জন্য এতোটা পজেটিব চিন্তা করে।স্যালুট করি সেই মমতাময়ী মাকে যে তার বাচ্চার সফলতার জন্য এতোটা ত্যাগ করেন। মা এর জন্য কিছু কথা উংসর্গ করতে চাই…
আল্লাহ পৃথিবী সব মাকে ভালো রাখুক, সুস্থ্য রাখুক,দুনিয়ার সব বাচ্চাদের কাছে মা নামের বট গাছের ছায়ায় থাকুক.