বর্ণনায় হযরত ইব্রাহীম খওয়াস (রহঃ) এক বছর আমি হজ্জের জন্য রওয়ানা হই। যেতে যেতে রাস্তায় হঠাৎ আমার মনে এই খেয়াল আসে যে, আমি যেন সবার থেকে বিছিন্ন হয়ে, সাধারণ রাস্তা ছেড়ে, অন্য পথে যাই। সুতরাং আমি সাধারণ পথ ছেড়ে, অন্য পথে চলতে শুরু করি। সেই পথ ধরে আমি একটানা তিনদিন-তিনরাত চলতে থাকে। সেই সময় আমার না খানাপিনার কথা মনে পড়েছে না অন্য কোনও প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত এক সুজলা-সুফলা ফলের গাছ-গাছালি।
সেখানে একটা ছোট পুকুরও ছিল। আমি তখন মনে মনে বলি, এ যে দেখছি জান্নাত-তুল্য জায়গা। এমন সময় আমি অবাক হয়ে যাই একদল লোককে সেখানে আসতে দেখে। তাদের চেহারা ছিল মানুষের মতো। বেশ বাস পরিচ্ছন্ন। কোমরে সুন্দর কোমরবন্ধনী। তারা এসেই আমাকে ঘিরে ধরল। এবং সবাই আমাকে সালাম দিল। উত্তরে আমি বললাম, ওয়ালাইকুম আস সালাম ওরহমাতুল্লাহি ওবারকাতুহু।
এরপর আমার মনে হল ওরা জ্বিন এবং অদ্ভুত ধরণের জ্বিন। সেই সময় ওদের মধ্যে একজন বলল, আমাদের মধ্যে একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে এবং তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে মতভেদের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা জ্বিন সম্প্রদায়ের অন্তর্গত। আমরা অন্তত মহান আল্লাহর কালাম তাঁর নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর পবিত্র মুখে শুনেছি। এবং লাইলাতুল আক্বাবায় তাঁর সান্নিধ্যে হাজির হবার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। মহানবী (সাঃ)-এর মোবারক বাণী আমাদের থেকে দুনিয়ার যাবতীয় কাজ নিয়ে নিয়েছে। এবং আল্লাহ তায়ালা এই জঙ্গলে আমাদের থাকার জায়গা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।
আমি প্রশ্ন করি, আমার সহযাত্রীরা এখন সেখানে আছেন, সে জায়গা এখান থেকে কত দূরে?
এ কথা শুনে তাদের মধ্যে একজন হেসে ফেলে বলে, হে আবূ ইসহাক! যে জায়গায় আপনি এখন রয়েছেন, এ হল বিশ্বপালক আল্লাহর বিস্ময়কর নিদর্শনাবলীর অন্তর্ভুক্ত। এখানে আজ পর্যন্ত একজন মানুষ ছাড়া আর কেউ আসেনি। তিনি ছিলেন আপনার সঙ্গীদের অন্তর্গত। তিনি এখানে ইন্তেকাল করেন। দেখুন, ওই তাঁর কবর।
এই বলে সে একটি কবরের দিকে ইঙ্গিত করল। কবরটি ছিল এক দিঘীর পাড়ে। তার ধারে ছিল ফুল বাগান। বাগানে ফুটে ছিল রং-বেরঙের ফুল। অমন সুন্দর ফুল আর মনোরম বাগান আমি কখনও দেখিনি।
এরপর সেই জ্বিনটি বলে, আপনার সহযাত্রীদের সাথে আপনার দূরত্ব এত বছরের (মতান্তরে, এত মাসের)।
আমি সেই জ্বিনদের বলি, ওই ব্যক্তির কথা কিছু বলো। ওদের মধ্যে একজন বলল, আমরা এখানে এই দিঘীর পাড়ে আল্লাহ-প্রেমের কথা আলোচনা করছিলাম। হঠাৎ এক ব্যক্তি এখানে আসেন। আমাদের সালাম করেন। আমরা জবাব দেই। এবং জানতে চাই, আপনি কোথায় থেকে আসছেন? উনি বলেন, নীশাপুর থেকে। আমরা বলি, কবে বের হয়েছিলেন? উনি বলেন, সাতদিন আগে। এরপর আমরা জিজ্ঞাসা করি, বাড়ি থেকে বের হবার কারণ কি? উনি বলেন, কারণ আল্লাহর কালামের এই আয়াত انيبوا الى ربكم অর্থাৎ তোমাদের উপর শাস্তি এসে পড়ার এবং তোমাদের সাহায্য না করার আগেই তোমরা আল্লাহর দিকে ফিরে এসো এবং তাঁর অনুগত হয়ে যাও।
আমরা জানতে চাই, আচ্ছা, ইনাবাত, তাসলীম ো আযাব শব্দের অর্থ কি? উনি উত্তর দেন, ইনাবাত বলতে বোঝায় আপন প্রভুর দিকে ফিরে তারই অনুগত হয়ে থাকা। বারী বলেছেন, এই ঘটনায় তাসলীম এর উল্লেখ নেই। সম্ভবত তাসলীম এর অর্থ হল নিজের জীবনকে আল্লাহর কাছে সপে দেওয়া এবং মনে করা যে, আমার চাইতে আল্লাহ-ই এর অধিক মালিক ও হকদার। এরপর তিনি আযাব-এর অর্থ বলতে কেবল আযাব শব্দটি উচ্চারণ করেন। সেই সাথে চিৎকার করে উঠেন এবং সঙ্গে সঙ্গে ইন্তেকাল করেন। আমরা তাকে এখানে দাফন করেছি। আর, ওই তাঁর কবর। আল্লাহ তাঁর প্রতি প্রসন্ন হোন।
(বর্ণনাকারী হযরত ইব্রাহীম খওয়াস রহঃ বলেছেন।) ওদের কথাবার্তা শুনে আমি তাজ্জব হয়ে যাই। তারপর আমি সেই কবরের কাছে যাই দেখি, কবরের মাথার দিকে নার্গিস ফুলের একটি বিশাল বড় ফুলদানী রাখা আছে। আর দেখলাম, একটি ফলকে লেখা আছে- এটি আল্লাহর এক বন্ধুর সমাধি। লজ্জা তথা সূক্ষ্ম কর্যাদাবোধের কারণে তাঁর ইন্তেকাল হয়েছে। আর একটি পাতায় ইনাবাত শব্দের মর্মার্থ লেখা ছিল। যা কিছু লেখা ছিল সব আমি পড়লাম। সেই জ্বিনের দলও সেসব জানার আবেদন পেশ করল। আমি বয়ান করলাম। তারা বড় খুশি হল। এবং বলল, আমরা আমাদের সমস্যার সমাধান পেয়ে গেছি।
হযরত ইব্রাহীম খওয়াস (রহঃ) বলেছেনঃ এরপর আমি শুনে পড়ি। এক সময় চেতনা হারাই। তারপর ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখি, আমি আছি পবিত্র মক্কায় হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর মসজিদের কাছে। আমার কাছে ছিল ফুলের তোড়া। তার সুগদ্ধি ছিল টানা এক বছর। তারপর সেটা নিজে থেকেই হারিয়ে যায়।
One response to “কুরআনের বিষয়ে জ্বিনদের জিজ্ঞাসা”
khuboi upokari post