জান্নাতে প্রবেশ-সুখ

জান্নাতে প্রবেশ-সুখ

বিচার দিনে মুমিনরা মাত্র যোহর থেকে আসরের সময়কাল অবধি অপেক্ষা করবে। অতঃপর তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশাধিকার দেওয়া হবে। সে কি আনন্দের দিন! যেদিন ফিরিশতাগণ তাদেরকে সম্মানের সাথে চির সুখময় বেহেশতের দিকে দলে দলে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবেন। কত কষ্ট ভোগা ও দেখার পর যখন জান্নাতের দরজায় পৌছবে, তখন ফিরিশতাগণ তাদেরকে সালাম ও স্বাগত জানাবেন। মহান আল্লাহ বলেন,

وَسِيقَ الَّذِينَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ إِلَى الْجَنَّةِ زُمَرًا ۖ حَتَّىٰ إِذَا جَاءُوهَا وَفُتِحَتْ أَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا سَلَامٌ عَلَيْكُمْ طِبْتُمْ فَادْخُلُوهَا خَالِدِينَ

অর্থাৎ, যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করত, তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা জান্নাতের নিকট উপস্থিত হবে এবং জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হবে এবং তার রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, ‘তোমাদের প্রতি সালাম (শান্তি), তোমরা সুখী হও এবং স্থায়ীভাবে বাস করার জন্য জান্নাতে প্রবেশ কর। (যুমার ও ৭৩)।

এই জান্নাত হল সেই মু’মিনদের পুরস্কার, যাদের বিশ্বাস, কথা ও কর্ম শুদ্ধ ছিল। যাদের অন্তর ছিল নির্মল, কথা ছিল উত্তম এবং কর্ম ছিল সৎ।

তবে বেহেশতে পৌঁছনোর আগে কিছু কষ্ট স্বীকার অবশ্যই করতে হবে। জান্নাতে যাওয়ার আগে জাহান্নামের ওপর স্থাপিত পুল আছে। সেই পুল পার হয়ে যেতে হবে জান্নাতে। পুল পার হওয়ার আগে মুমিনদের আপোসের দেনা-পাওনার প্রতিশোধ দেওয়া-নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। জান্নাত প্রবেশের জন্য আমাদের শেষ নবী আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করবেন।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, বরকতময় মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন সকল মানুষকে একত্রিত করবেন। অতঃপর মুমিনগণ উঠে দাঁড়াবে এমনকি জান্নাতও তাদের নিকটবর্তী করে দেওয়া হবে (যার কারণে তাদের জান্নাতে যাওয়ার ইচ্ছা প্রবল হয়ে যাবে) সুতরাং তারা আদম (আঃ) এর নিকট আসবে অতঃপর বলবে হে আমাদের পিতা! আমাদের জন্য (আল্লাহর কাছে) জান্নাত খুলে দেওয়ার আবেদন করুন। তিনি বলবেনঃ (তোমরা কি জানো না যে,) একমাত্র তোমাদের পিতার ভুলই তোমাদেরকে জান্নাত থেকে বহিষ্কার করেছে? সুতরাং আমি এর যোগ্য নই। তোমরা আবার ছেলে ইব্রাহিম (আঃ) এর নিকট যাও। নবী (সাঃ) বলেন, অতঃপর তারা ইব্রাহিম (আঃ) এর নিকট যাবে। ইব্রাহিম (আঃ) বলবেন, আমি এর উপযুক্ত নই। আমি আল্লাহর খলিল ছিলাম বটে কিন্তু এত উচ্চ মর্যাদার অধিকারী নই। (অতএব) তোমরা মূসা (আঃ) এর নিকট যাও, যার সঙ্গে আল্লাহ সরাসরি কথা বলেছেন। ফলে তারা মূসার নিকট যাবে। কিন্তু তিনি বলবেন, আমি এর যোগ্য নই। তোমরা আল্লাহর কালেমা ও তার রূহ ঈসার নিকট যাও। কিন্তু ঈসাও বলবেন, আমি এর উপযুক্ত নই। অতঃপর তারা মোহাম্মদ (সাঃ) এর নিকট আসবে। সুতরাং তিনি দাঁড়াবেন। অতঃপর তাকে (দরজা খোলার) অনুমতি দেয়া হবে। আর আমানত ও আত্মীয়তার বন্ধনকে ছেড়ে দেওয়া হবে।

সুতরাং উভয়ে পুল সিরাতের দুদিকে ডানে ও বামে দাঁড়িয়ে যাবে। অতঃপর তোমাদের প্রথম দল বিদ্যুৎ গতিতে (অতি দ্রুতবেগে) পুল পার হয়ে যাবে। আমি (আবূ হুরায়রা) বললাম, আমার পিতা মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক! বিদ্যুতের মতো গতিতে পার হওয়ার অর্থ কি? তিনি বললেন, তোমরা কি দেখনি যে বিদ্যুৎ কিভাবে চোখের পলকে যায় আসে? অতঃপর (দ্বিতীয় দল) বাতাসের মতো গতিতে পার হবে। অতঃপর (পরবর্তী দল) পাখির মতো এবং মানুষের দৌড়ের মতো গতিতে। তাদেরকে নিজ নিজ আমল (সিরাত্ব) পার করাবে। আর তোমাদের নবী পুল সিরাতের উপর দাঁড়িয়ে থাকবেন। তিনি বলবেন হে প্রভু! বাঁচাও, বাঁচাও! শেষ পর্যন্ত তাদের আমল সমূহ অক্ষম হয়ে পড়বে। এমনকি কোন ব্যক্তি পাছা ছেঁচড়াতে ছেঁচড়াতে (পুল-সিরাত) পার হবে। আর সিরাতের দুই পাশে আঁকড়া ঝুলে থাকবে। যাকে ধরার জন্য আদিষ্ট তাকে ধরে নেবে। অতঃপর (কিছু লোক) জখম হলেও বেঁচে যাবে। আর কিছু লোককে মুখ থুবড়ে জাহান্নামে ফেলা হবে। সেই সত্তার কসম যাঁর হাতে আবু হুরায়রার প্রাণ আছে! নিশ্চয় জাহান্নামের গভীরতা ৭০ বছরের (দূরত্বের পথ)। (মুসলিম ১৯৫ নং)


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *