মানুষের ইতিহাসের প্রথম পর্যায়ে আদি পিতা আদম (আঃ) ও মাতা হাওয়াকে জান্নাতেই রাখা হয়েছিল। মহান আল্লাহ বলেন,
وَقُلْنَا يَا آدَمُ اسْكُنْ أَنتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ وَكُلَا مِنْهَا رَغَدًا حَيْثُ شِئْتُمَا وَلَا تَقْرَبَا هَٰذِهِ الشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ الظَّالِمِينَ
অর্থাৎ, আমি বললাম, হে আদম তুমি তোমার স্ত্রীসহ বেহেস্তে বসবাস কর এবং যথা ও যেথা ইচ্ছা আহার কর, কিন্তু এই বৃক্ষের নিকটবর্তী হয়ো না; হলে তোমরা অনাচারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (বাক্বারাহঃ ৩৫)
وَيَا آدَمُ اسْكُنْ أَنتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ فَكُلَا مِنْ حَيْثُ شِئْتُمَا وَلَا تَقْرَبَا هَٰذِهِ الشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ الظَّالِمِينَ
অর্থাৎ, আর বললাম, হে আদম! তুমি ও তোমার সঙ্গিনী জান্নাতে বসবাস কর এবং যথা ও যেথা ইচ্ছা আহার কর। কিন্তু এ বৃক্ষের নিকটবর্তী হয়ো না, হলে তোমরা অত্যাচারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (আরাফ ও ১৯)
কিন্তু শয়তানের প্রলোভন ও চক্রান্তে পড়ে আদম ও হাওয়া আল্লাহর অবাধ্য হয়ে গেলেন। ফলে তার শাস্তি স্বরূপ উভয়কে সেই সুখময় জান্নাত থেকে দুঃখময় এই মাটির ধরাধামে নামিয়ে দেওয়া হল। মহান আল্লাহ বলেন,
وَلَقَدْ عَهِدْنَا إِلَىٰ آدَمَ مِن قَبْلُ فَنَسِيَ وَلَمْ نَجِدْ لَهُ عَزْمًا (115) وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ أَبَىٰ (116) فَقُلْنَا يَا آدَمُ إِنَّ هَٰذَا عَدُوٌّ لَّكَ وَلِزَوْجِكَ فَلَا يُخْرِجَنَّكُمَا مِنَ الْجَنَّةِ فَتَشْقَىٰ (117) إِنَّ لَكَ أَلَّا تَجُوعَ فِيهَا وَلَا تَعْرَىٰ (118) وَأَنَّكَ لَا تَظْمَأُ فِيهَا وَلَا تَضْحَىٰ (119) فَوَسْوَسَ إِلَيْهِ الشَّيْطَانُ قَالَ يَا آدَمُ هَلْ أَدُلُّكَ عَلَىٰ شَجَرَةِ الْخُلْدِ وَمُلْكٍ لَّا يَبْلَىٰ (120) فَأَكَلَا مِنْهَا فَبَدَتْ لَهُمَا سَوْآتُهُمَا وَطَفِقَا يَخْصِفَانِ عَلَيْهِمَا مِن وَرَقِ الْجَنَّةِ ۚ وَعَصَىٰ آدَمُ رَبَّهُ فَغَوَىٰ (121) ثُمَّ اجْتَبَاهُ رَبُّهُ فَتَابَ عَلَيْهِ وَهَدَىٰ (122) قَالَ اهْبِطَا مِنْهَا جَمِيعًا ۖ بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ ۖ فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُم مِّنِّي هُدًى فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلَا يَضِلُّ وَلَا يَشْقَىٰ (123)
অর্থাৎ, আমি তো ইতিপূর্বে আদমের প্রতি নির্দেশ দান করেছিলাম। কিন্তু সে ভুলে গিয়েছিল; আমি তাকে দৃঢ়সংকল্প পাইনি। (স্মরণ কর,) যখন আমি ফিরিশ্তাগণকে বললাম, তোমরা আদমকে সিজদাহ কর’, তখন ইবলীস ব্যতীত সকলেই সিজদাহ করল; সে অমান্য করল। অতঃপর আমি বললাম, হে আদম! এ তোমার ও তোমার স্ত্রীর শত্রু, সুতরাং সে যেন কিছুতেই তোমাদেরকে জান্নাত হতে বের করে না দেয়, দিলে তোমরা কষ্ট পাবে। তোমার জন্য এটাই থাকল যে, তুমি জান্নাতে ক্ষুধার্ত হবে না এবং নগ্নও হবে না। সেখানে পিপাসার্ত হবে না এবং রোদ্র-ক্লিষ্টও হবে না। অতঃপর শয়তান তাকে কুমন্ত্রণা দিল। সে বলল, ‘হে আদম! আমি কি তোমাকে বলে দেব অনন্ত জীবনপ্রদ বৃক্ষ ও অক্ষয় রাজ্যের কথা?’ অতঃপর তারা তা হতে ভক্ষণ করল, তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের নিকট প্রকাশ হয়ে পড়ল এবং তারা উদ্যানের বৃক্ষপত্র দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত করতে লাগল। আদম তার প্রতিপালকের অবাধ্য হল; ফলে সে পথভ্রষ্ট হয়ে গেল। এরপর তার প্রতিপালক তাকে মনোনীত করলেন। সুতরাং তিনি তার তওবা কবুল করলেন ও তাকে পথ নির্দেশ করলেন। তিনি বললেন, তোমরা একে অপরের শত্রুরূপে একই সঙ্গে জান্নাত হতে নেমে যাও। পরে আমার পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট সৎপথের নির্দেশ এলে, যে আমার পথনির্দেশ অনুসরণ করবে, সে বিপথগামী হবে না এবং দুঃখ-কষ্টও পাবে না। (ত্বাহাঃ ১১৫-১২৩)
আমাদের নবী (সাঃ) মিরাজের রাত্রে জান্নাত দর্শন করেছেন। এ ছাড়া শহীদগণ কিয়ামত হওয়ার পূর্বেই জান্নাতে বসবাস করেন। মাসরুক হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ)-কে (وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا ۚ بَلْ أَحْيَاءٌ عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ) (অর্থাৎ, যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে কখনই মৃত মনে করো না, বরং তারা তাদের প্রতিপালকের নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত।) (আলে ইমরানঃ ১৬৯) এই আয়াত প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, ‘শোন! আমরাও এ বিষয়ে (নবী (সাঃ)-কে) জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি উত্তরে বলেছিলেন, “তাদের (শহীদদের) আত্মাসমূহ সবুজ পক্ষীকুলের দেহ মধ্যে অবস্থান করবে। ঐ পক্ষীকুলের অবস্থানক্ষেত্র হল (আল্লাহর) আরশে ঝুলন্ত দীপাবলী। তারা বেহেশতে যেখানে ইচ্ছা বিচরণ করে বেড়াবে। অতঃপর পুনরায় ঐ দীপাবলীতে ফিরে এসে আশ্রয় নেবে। একদা তাদের প্রতিপালক তাদের প্রতি দৃষ্টি ফিরিয়ে বললেন, ‘তোমরা কি (আরো) কিছু কামনা কর? তারা বলল, ‘আমরা আর কী কামনা করব? আমরা তো বেহেস্তে যেখানে খুশী সেখানে বিচরণ করে বেড়াচ্ছি!’ (আল্লাহ) অনুরূপভাবে তাদেরকে তিনবার প্রশ্ন করলেন। অতঃপর যখন তারা দেখল যে, কিছু না চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে না, তখন তারা বলল, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা কামনা এই করি যে, আপনি আমাদের আত্মাসমূহকে আমাদের নিজ নিজ দেহে ফিরিয়ে দিন, যাতে আমরা আপনার রাহে দ্বিতীয়বার নিহত হয়ে আসতে পারি। অতঃপর আল্লাহ যখন দেখবেন যে, তাদের আর কোন প্রয়োজন (কামনা বা সাধ) নেই, তখন তাদেরকে স্ব-অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া হবে।” (মুসলিম ১৮৮৭)।