আল্লাহর রসুল (স) একবার চারটা দাগ কেটে সাহাবীদের (রা) জিজ্ঞেস করলেন
” তোমরা কি জানো এগুলো কি?” সাহাবিগণ উত্তর দিলেন ” আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ভাল জানেন” ।
রসুল (স) বললেন ” সর্বশ্রেষ্ঠ চার জান্নাতি নারী হল
1-খাদিজাহ বিনতে খুআইলিদ,
2- ফাতিমাহ্ বিনতে মুহাম্মাদ(সা)
3- মারিয়াম বিনতে ইমরান ( ঈসা আর এর মা ) এবং
4-আসিয়াহ্ বিনতে মুযাহিম ( ফেরাউনের স্ত্রী) ।
খাদিজাহ (রা )হল প্রথম ব্যক্তি যিনি আল্লাহর রাসুলের প্রতি ইমান এনেছিলেন। কেন তাকে সর্বশ্রেষ্ঠ নারীদের একজন বলা হয়েছে? এটা কি তাঁর ব্যবসায়িক সাফল্যের জন্য?
নাকি তাঁর জ্ঞানের জন্য?
ঠিক কি কারণে তাঁকে এই উপাধি দেয়া হয়েছে তা নিয়ে আমাদের গভীর ভাবে চিন্তা করা দরকার।
বিশেষ করে আমাদের মা -বোনদের।
আমরা যদি এই চার মহীয়সী নারীর জীবন পর্যালোচনা করি তাহলে তাদের মধ্যে দুটি বিষয়ের মিল দেখি –
প্রথমত:
তাঁরা অত্যন্ত শক্তিশালী ইমানের অধিকারী ছিলেন। তাঁদের ইমান ছিল সর্বোচচ পর্যায়ের । এটা হল সেই রকম বিশ্বাস যাতে কোন ভাবেই চিড় বা ফাটল ধরানো যায়না।
যে অন্তরে বিশ্বাস আছে সে অন্তর চোখের দেখা, কানের শোনা কে উপেক্ষা করে তাঁর বিশ্বাসকে প্রাধান্য দেয়।
তাঁর কল্পনায় শুধুই থাকে বিশ্বাস । আর এঁদের সকলের ইমান যে বিশ্বাসের অনেক উঁচু পর্যায়ে ছিল ,এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।
ফিরাউনের স্ত্রী , আসিয়াহ ( আ ) উদাহরণ ধরুন-
একজন মহিলা পৃথিবীতেে যা চাইতে পারে তার সবই তাঁর ছিল। আরামদায়ক জীবন, ধন সম্পদ, ধনী ও প্রভাবশালী স্বামী, ক্ষমতা, দাসদাসী, খাদেম। কিন্তু ইমানের স্বার্থে, আল্লাহর জন্য তিনি এর সবই পরিত্যাগ করতে রাজি ছিলেন।
তিনি বাস করতেন সে সময়ের সর্বোৎকৃষ্ট প্রাসাদে। কিন্তু তারপরও তিনি আল্লাহ সুবহানা তাআলার কাছেো দুয়া করেছিলেন –
আর ঈমানদারদের ব্যাপারে ফেরাউনের স্ত্রীর উদাহরণ দিচ্ছেন –
যখন সে দোয়া করলো, ”
হে আমার রব, আমার জন্য তোমার কাছে জান্নাতে একটি ঘর বানিয়ে দাও …!
(66:11)
আমাদের বুঝতে হবে আসিয়াহ(আ) একটি অত্যন্ত বিষাক্ত পরিবেশে ছিলেন, যা ছিল সব দিক থেকেই ইমানের পরিপন্থী। আল্লাহর শত্রুদের সাথেই ছিল তাঁর বসবাস। কুফরি শক্তিকে উপেক্ষা করে নিজেকে আল্লাহর পথে অটুট রেখে তিনি ইমানের এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গিয়েছেন ।
আমরা অপর তিন জনের জীবন পর্যালোচনা করলেও একই রকম বলীয়ান ইমানের দৃষ্টান্ত দেখতে পাই।
তাদের মধ্যে দ্বিতীয় যে ব্যপারটি ছিল তা হলো-
তাঁরা সর্বশ্রেষ্ঠ মা অথবা স্ত্রী ছিলেন।
( অবশ্য এই ব্যপারে নারীবাদীদের এবং আমাদের সেসব বোনদের যারা নারীবাদীদের আদর্শে প্রভাবিত তাদের আপত্তি থাকতে পারে।)
মরিয়ম (আ ) বড় করেছিলেন ঈসা( আ)কে আর আসিয়াহ্ (আ)বড় করেছিলেন মুসা (আ)কে ।
মা খাদিজাহ (রা) কে আল্লাহ এত মর্যাদা দিয়েছেন তা কিন্তু এই জন্য নয় যে তিনি অনেক সফল ব্যবসায়ী ছিলেন।
বরং তিনি ছিলেন আল্লাহর রসুল মুহাম্মদ (স) এর অসাধারণ এক সহধর্মিণী। আল্লাহর রাসুলের (স) যখনি প্রয়োজন, তখনি তিনি পাশে পেয়েছিলেন খাদিজাকে(রা)কে ।
ইসলামের শিশু অবস্থায় সবচেয়ে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন মা খাদিজা ( রা)।
আল্লাহর রসুলের (স) নবুয়তের শুরুতে সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতিতে অবিচল সাহস আর প্রেরণা দিয়েছেন মা খাদিজাহ্ (রা)।
রসূল ( সা) কে একজন অভিভাবকের মতো আগলে রেখে হেরা গূহায় ধ্যান রত অবস্থায় কি অকৃত্রিম বন্ধুর মতো সেবা করেছেন সে ইতিহাস অনেকেরই জানা ।
আর ফাতিমা(রা) ছিলেন রসূল ( সা ) সবচেয়ে ছোট ও আদরের কন্যা এবং আমিরুল মু’মিনীন আলীর (রা) সহধর্মিণী।
আলী অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন করতেন। ঘরের কাজ করতে ফাতিমাকে(রা)কে অনেক কষ্ট পেতে হত।
আটা পিষতে পিষতে তাঁর কোমল হাতে কঠিন ক্ষত হয়ে গিয়েছিল । অথচ তিনি ছিলেন সর্ব শ্রেষ্ঠ রাসূল এবং তৎকালীন মদিনা ইসলামি রাষ্ট্রের কর্ণধারের সম্মানিত কন্যা!
একবার আলী (রা ) এর ইচ্ছায় তাঁরা আল্লাহর রাসুল (স) এর কাছে একজন ভৃত্য প্রার্থনা করলেন।
আল্লাহর রসুল (স) তাদের জবাবে বললেন আমি তোমাদের এরচেয়েও উত্তম কিছু শিখিয়ে দিচ্ছি।
তোমরা শুতে যাবার আগে 33 সুবহানাল্লাহ ,
33 বার আলহামদুলিললাহ এবং
34 আল্লাহু আকবর পড়বে ।
ফাতিমাকে আল্লাহর রাসুল (স) অত্যন্ত ভালবাসতেন।
তিনি বলেছিলেন ফাতিমা আমার দেহের অংশ,
সে যাতে খুশি হয় , আমিও তাতে খুশি হই। সে যাতে কষ্ট পায়, আমিও তাতে কষ্ট পাই। ফাতিমা(রা) ছিলেন আল্লাহর রাসুলের (সা) অত্যন্ত আদরের সন্তান।
তিনি পৃথিবীতেই জাননাতের সু- সংবাদ পেয়েছিলেন । তিনি হবেন জাননাতের নারীদের কর্ণধার! সুবহান আললাহ!
তাঁর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত একমাত্র তিনি ই ছিলেন তাঁর জীবিত সন্তান ।
আল্লাহর রাসুল (স) চাইলে ফাতিমা( রা)কে একজন কেন, দশ জন খাদেম দিতে পারতেন । কিন্তু তিনি তা না করে ফাতিমাকে(রা) কে উপদেশ দিলেন, ঘরের কাজ নিজের হাতে করে যেতে।
আর হয়তো এই কারণেই ফাতিমা (রা) হয়ে উঠলেন চার সর্বশ্রেষ্ঠ নারীদের একজন।
জ্ঞানের দিক থেকে যদিও মা আয়েশা (রা )খাদিজাহ(রা) ও ফাতেমার (রা )উপরে, কিন্তু মর্যাদার দিক থেকে উনি খাদিজাহ(রা) ও ফাতেমার(রা) সমকক্ষ ছিলন না।
আমাদের বোনেরা, আপনারা যখন আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করবেন তখন আপনাদের কিসের উপর বেশি প্রাধান্য দেয়া দরকার তা ঠিক করে নেবেন ।
তথাকথিত নারীবাদীরা আপনাদের কে জাগতিক ব্যপারে কিছুটা সাহায্য করলেও আখিরাতে জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করতে পারবে না ।
আপনারা রক্ষা পাবেন আললাহ সুবহানা তাআলার সন্তুষ্টির কারণে !
আমি এ কথা বলছিনা যে আপনারা জ্ঞান ও ডিগ্রি অর্জন করবেন না বা ইসলামের ও সমাজের উন্নয়নের জন্য কাজ করবেন না, কিন্তু কিসে আল্লাহ সুবহানা তাআলা আপনাদের সবচেয়ে বেশি মর্যাদা দিয়েছেন এবং কিসে আপনাদের ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ সাধিত হবে ,সেই দিকটা খেয়াল রাখার চেষ্টা করবেন! Please! ***
আললাহ সুবহানা তাআলা আমাদের সবাই কে হেদায়েতের আলো দান করুন ।
আমীন! ***
One response to “চার সর্বশ্রেষ্ঠ জান্নাতী নারী”
আমিন