একজন পরহেযগার বাদশাহ ছিলেন; যাঁর একজনই মেয়ে সন্তান ছিল। কোনো ছেলে সন্তান ছিল না। তাই পরবর্তী বাদশাহী সোপর্দ করতে হবে নিজ জামাতার নিকট, এজন্য প্রয়োজন একজন নেককার পরহেযগার ন্যায়পরায়ণ, যোগ্য ছেলে। বাদশাহ এ সম্পর্কে তার উযিরে আ’যমের সাথে কথা বললেন।
উযিরে আ’যম বললেন, “আপনি সারা রাজ্যে ঘোষণা করে দিন, যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম শাহী মসজিদে এসে ফযরের আযান দিতে পারবে, তার সাথে বাদশাহর একমাত্র মেয়ের বিয়ে দেয়া হবে। আর অন্যদিকে শাহী মসজিদের যেই রাস্তা রয়েছে সেটা অনেক জাঁকজমকভাবে সাজানো হোক।” উযিরে আ’যমের পরামর্শ অনুযায়ী তাই করা হলো। সারা রাজ্যে ঘোষণা দেয়া হলো এবং শাহী মসজিদের পথটি স্বর্ণ-রুপা, মণি-মুক্তা, হিরা-যহরত ইত্যাদি দ্বারা চোখ ধাঁধানো সাজে অপরূপ আকর্ষণীয় করে অভিনব কারুকর্যে সাজানো হলো।
অপরদিকে ঘোষণা শুনে যারা রাজকন্যাকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক, তারা বলতে শুরু করলো, ‘এই কাজ তো খুবই সহজ’। প্রস্তুত হতে শুরু করে তারা। যখন সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত গভীর হতে শুরু করলো, তখন বাদশাহর জামাতা হতে আকাঙ্খীরা সকলেই রওয়ানা হয় শাহী মসজিদ পানে। যেইমাত্র সকলে শাহী মসজিদের গলিতে পৌঁছে, তারা থমকে দাঁড়িয়ে যায় সেখানেই। এত সুন্দর করে সাজানো শাহী মসজিদের পথ, যা থেকে চোখ ফিরানো ছিল সকল দর্শকের জন্য অসাধ্য ব্যাপার। সকলের চোখ আটকে যায় এই সাজ-সজ্জার উপরে।
সকলেই এসে তাদের আসল উদ্দেশ্য ভুলে গিয়ে রাজপথের সৌন্দর্য উপভোগে মেতে উঠে। শাহী মসজিদের পথের বাহিরে দাঁড়িয়ে এক যুবক এরূপ দেখে সে তার নিজ দুই চোখ কাপড় দিয়ে বেঁধে নিলো এই ভেবে যে- যদি আমি এই সৌন্দর্য দেখে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকি, তাহলে আমি আর আমার আসল উদ্দেশ্য পর্যন্ত পৌঁছতে পারবো না।
তারপর সে যুবক হাঁটা শুরু করলো শাহী মসজিদের পথ ধরে এবং সে শাহী মসজিদ পর্যন্ত পৌঁছলো। এবং ফজর ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথেই আযান দিলো। তার উদ্দেশ্য সফল হলো।
আর ফজর আযান শুনে বাকিদের সৌন্দর্য দর্শনের মোহ কাটলো; কিন্তু তাতে কোনো লাভ হলো না। তারা কেউ তাদের মাকছুদ হাছিল করতে পারলো না।
নছীহত:- খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দাদেরকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন একমাত্র উনার এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মা’রিফত-মুহব্বত অর্জন করার জন্য। অর্থাৎ উনাদের সন্তুষ্টি হাছিল করার জন্য। কিন্তু বান্দা দুনিয়ার মোহে মোহগ্রস্ত হয়ে তার আসল উদ্দেশ্য-কর্তব্য ভুলে দুনিয়ার পিছনে ছুটছে। যার ফলে তারা তাদের দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ই ধ্বংস করে দিচ্ছে। তাই ফিরে এসো হে গাফিল মুসলমান! তোমরা তোমাদের মূল উদ্দেশ্যের দিকে রুজু হও।