একটি কলম চিরজীবন পৃথিবীতে থাকে না। কিন্তু এটি থেকে যা বের হয়, অর্থাৎ, কলম দিয়ে যা লেখা হয় তা চিরজীবন থেকে যায়। তেমনি একজন মানুষও চিরজীবন পৃথিবীতে থাকে না। কিন্তু তার থেকে যে আচার-আচরণ, ব্যবহার মানুষ পায় সেটি চিরজীবন থেকে যায়। এর উত্তম নিদর্শন হিসেবে একজন উত্তম আর একজন অধম ব্যক্তির কথা তুলে ধরব।
১ম. হযরত আবু বকর (রা.) এর কথাই ধরা যাক। তিনি ছিলেন ইসলামের প্রথম খলিফা। রাসূল (সা.) এর হিজরতের সঙ্গী। যার এক রাতের আমলকে এক পাল্লায় রাখা হলে, আরেক পাল্লায় যদি উম্মতে মুহাম্মাদীর সকল আমল রাখা হয়, তাহলে দ্বিতীয় পাল্লার চেয়ে প্রথম পাল্লার ওজন বেশি হবে। (সুবহানাল্লাহ)।
ছোট্ট এই উদাহরণ থেকে আমরা নিরুপণ করতে পারি যে, আবু বকর রা. কত মহৎ ব্যক্তি ছিলেন। মুসলিম উম্মাহর কে না তাকে স্বরে? কেউ কি এমন আছে যে, হযরত আবু বকর রা. এর নাম নিতে সম্মান প্রদর্শন করে না?
প্রিয় পাঠকবন্ধুরা, তোমাদের খেদমতে আরজ করতে চাই, যে মানুষটির নাম নিতে এত সম্মান করি আমরা, সে মানুষটিকে কাছে পেলে কতই না উত্তম ব্যবহার তার সাথে করতাম! তা আমার কলমে প্রকাশ করা মুশকিল। আচ্ছা এ মানুষটির সম্মান কি এমনিতেই বেড়ে গেছে? নাকি এ সম্মানের পিছনে কোন না কোন কারণ আছে।
অবশ্যই এ সম্মানের পিছনে অনেক শ্রম অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। সেই ত্যাগের স্বরূপ তার জীবনীতে সুস্পষ্টাক্ষরে জলজল করছে।
ভাবার বিষয় হলো তিনি আজ এ ধরাধামে নেই কিন্তু তার থেকে যে ব্যবহার, কথা-বার্তা; কাজ-কর্ম প্রকাশিত হয়েছে সেগুলোইতো আজ বসুধার মানুষের কাছে চিরস্বরণীয়-বরণীয়। আমরাওতো একদিন এ পৃথিবীতে থাকবো না। আমাদের মৃত্যুর পর কি মানুষ আমাদেরকে স্মরণ করবে? নাকি…..!
২য়. যে ব্যক্তির কথা বলা হবে সে সিদ্দীকে আকবরের সমসাময়িক। সেও আজ ধরার বুকে নেই। তার নাম আবু জেহেল। প্রিয় পাঠকগণ! তার নাম কিন্তু আবু জেহেল ছিল না, তার নাম ছিল আবুল হাকাম। আবু জেহেল অর্থ মূর্খের পিতা আর আবুল হাকাম অর্থ জ্ঞানীর পিতা।যদি সে নবীজির ডাকে সাড়া দিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতো, তাহলে হয়তো আজও তার নাম আবুল হাকাম থাকতো।
প্রিয় বন্ধুরা, একটু খেয়াল করুন তার নাম কিন্তু এমনিতেই আবুল হাকাম দেওয়া হয়নি। এর পিছনে অনেক কারণ বিদ্যমান। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে, সে এমন জ্ঞানী ছিল, মানুষের পায়ের ছাপ দেখে বলতে পারতো লোকটি পুরুষ নাকি মহিলা, এবং সে কোন গোত্রের।
আরও অনেক কথা তার সম্পর্কে বলা যায়। কিন্তু লিখতে গেলে যে কলম আগাতে চায় না। কারণ, তার প্রতি সম্মানটা মনে হয় বেড়ে যায়। আমি চাইনা আমার কলম দ্বারা এমন হতভাগার প্রশংসা লিখিত হোক। যা লিখছি তা শুধু পাঠগণদের বুঝানোর জন্য লিখছি।
এখানে আবু জেহেলের কথা উল্লেখ করার কারণ হলো তার হীন মনের কথা বুঝানো। সে যে কত নিকৃষ্ঠ ছিল তা আমাদের কাছে অজানা নয়। যার কারণে আজ তার বাড়িতে হাজিদের জন্য টয়লেট বানানো হয়েছে। কী হল তার জ্ঞান দ্বারা? কী হয়েছে ধন-সম্পদ দ্বারা? পৃথিবীর মানুষের কোন উপকার হয়েছে তার বাহাদুরির দ্বারা? হয়তো বলতে পারবেন তার বাড়িতে যে টয়লেট হয়েছে এর দ্বারাতো হাজীদের উপকার হয়। কিন্তু দেখা যাক কাজটা কি?
প্রিয় পাঠক শুধু তাই নয়। তার নামটা উচ্চারণ করলে পৃথিবীর মানুষরা কি সম্মান দেখায়? কখনোই না। বরং নামটি উচ্চারণ করার সাথে তার প্রতি লা’নত না করে কেউ ক্ষ্যান্ত হয় না। এই হচ্ছে পৃথিবীতে রেখে যাওয়া তার কর্মকান্ডের ফল। কিন্তু কি হলো এই কাজের ফল?
আর ঐদিকে হযরত আবু বকর রা. এর অবস্থান চিন্তা করুন। দুই জনের একজনও আজ নেই। একজনের নাম চির সম্মানে স্মরণ করা হয়। অপর জনের নাম ঘৃণার সাথে স্মরণ করা হয়।
আমরাও তো একদিন এ পৃথিবীতে থাকবো ন। ১০০ বছর আগে আমরা ছিলাম না। আবার ১০০ বছর পরেও আমরা থাকবো না। তাই আমাদেরকে একটু সচেতন হতে হবে। আমাদের কথা-বার্তা, কাজ-কর্ম, এমন হয় মরেও যাতে পৃথিবীর মাঝে অমর হয়ে রই। মোদেরে যাতে মানুষ দোয়ার সাথে স্মরণ করে। শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।
হতে পারি আমি ছাত্র, হতে পারি আমি ব্যাবসায়ি, নয়তো আমি একজন কর্মঠো মানুষ। যাই হই না কেন আমার আচার-আচরণ, কথা-বার্তা, লেনদেন সব কিছু যেন একজন আদর্শ মানুষের ন্যায় হয়ে থাকে।
আর তার বিপরীতে রয়েছে অনাদর্শ ব্যক্তি। দুনিয়া থেকে বিদায় হওয়ার পরও তার নাম মানুষ ঘৃণা ভরে মনে করে। ভাই একটু চিন্তা করে দেখুনতো এমন জীবনের কোন মূল্য আছে? একমাত্র তার ব্যবহারের কারণে মানুষের মাঝে ঘৃণার পাত্র হয়ে আছে।
তাই আসুন আমরা আমাদের থেকে এমন কিছু পৃথিবীতে রেখে যাই, যার মাধ্যমে মানুষের মাঝে আমরা আদর্শবান হয়ে থাকব। তা ঠিক আমরা আবু বকর রা. এর মতো হতে পারবো না। কিন্তু ওনার মতো একটা সুন্দর মন নিয়েতো চলা যেতে পারে।
তাই আল্লাহর কাছে শুকরিয়ার সাথে কথাগুলো কবুল করার জন্য ফরিয়াদ জানাই। আল্লাহ যেন কবুল করেন। আমিন। একটি কলমের কালি এখানেই সমাপ্ত। আল্লাহ হাফেজ।