মৃত্যু সম্পর্কে জনৈক বুজুর্গের চমৎকার একটি কথা দিয়ে আজকের লেখাটি শুরু করলাম। তিনি বলেন, মানুষ দুনিয়ার শত্রু থেকে রক্ষা পেতে কত ব্যবস্থা গ্রহন করে, কত টাকা নষ্ট করে উন্নত মানের দালান-কোঠা নির্মান করে।
কিন্তু আমাদের প্রধান এবং প্রকাশ্য শত্রু শয়তান থেকে বেঁচে থাকার জন্য এবং কঠিন মৃত্যু যন্ত্রনা থেকে বেঁচে থাকার জন্য কি ব্যবস্থা গ্রহন করেছে তথা কী আমল সে করেছে?
জগতের কোন কিছু নির্দিষ্ট না হলেও মৃত্যু কিন্তু সুনির্দিষ্ট ও সুনির্ধারিত। তা জানা সত্ত্বেও আমরা অধিকাংশই মৃত্যুর জন্য একেবারেই প্রস্তুত থাকিনা। নির্ধারিত সময়ের আগে কারো মৃত্যু হবে না এবং মওতের সময় উপস্থিত হলে এক মুহূর্তও বিলম্ব করা হবে না। বিষয়টি ভালোভাবে উপলব্ধি করার জন্য এখন এক দাম্ভিক বাদশার ঘটনা লিখছি।
হযরত ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বেহ (রঃ) বলেন, কোনো একদিন এক বাদশাহ ঘোড়ার উপর আরোহন করে সফরে যেতে চাইলেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি পোশাক চাইলে পোশাক আনা হল। কিন্তু সে পোশাক তার পছন্দ হলনা। অবশেষে তিনি সর্বোৎকৃষ্ট পোষাকটি পছন্দ করলেন এবং সে পোশাকটি পরিধান করলেন।
এরপর অনেকগুলো ঘোড়া তার সামনে উপস্থিত করা হয়। কিন্তু তার একটিও তার পছন্দ হলনা। শেষ পর্যন্ত রাজা রাজ্যের সর্বোৎকৃষ্ট ঘোড়াটি পছন্দ করে তাতে আরোহন করলেন। এরপর সুসজ্জিত সৈন্যবাহিনী নিয়ে ভ্রমনের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলেন।
তার অহংকারের দাপটে কেউ তার নিকটে আসতে সক্ষম হয়না। গর্ব-অহমিকা এত প্রকট যে, কারো দিকে দৃষ্টিপাত পর্যন্ত করেন না। এমন সময় মালাকুল মাউত মলিন পোশাক পরিধান করে ফকিরবেশে বাদশাহর সামনে এসে সালাম দিলেন। বাদশাহ সালামের জবাব দিলনা। একজন ফকিরের সালামের জবাব দিবে সে? এত ক্ষমতাধর বাদশাহ হয়ে একজন ফকিরের সালামের জবাব দেয়াটা খুবই ঘৃণ্য কাজ বলে মনে করল বাদশাহ।
মালাকুল মাউত তথা আযরাঈল আ. তখন রাগান্বিত হয়ে ঘোড়ার লাগাম ধরে ফেললেন। অবস্থা দেখে বাদশাহ বললেন, এ বড় বেয়াদবী! এ ফকিরকে দূরে সরিয়ে দাও। তখন আযরাঈল আ. বললেন, মহারাজ! আপনার নিকট আমার কিছু কথা আছে। বাদশাহ বললেন, থাম! আমি ঘোড়া হতে নেমে নেই। আযরাঈল আ. বললেন, না আমি এখনই বলব। বাদশাহ বললেন, তবে বল।
তখন আযরাঈল আ. বাদশাহর কানে কানে বললেন, আমি যমদূত, এ মুহূর্তেই তোমার প্রাণ বের করার জন্য আমি এসেছি। এই কথা শুনামাত্র বাদশাহর চেহারা মলিন হয়ে গেল; মুখে আর কোনও কথা বলার মত শক্তি তার রইলনা। অনেক কষ্টে বাদশাহ বলতে লাগলেন- ঘরে গিয়ে স্ত্রী-পুত্রদের নিকট হতে বিদায় নেয়ার জন্য কিছুটা সময় দিন। আযরাঈল আ. বললেন, না! এক মুহূর্ত সময়ও তোমাকে দেয়া হবেনা এবং সাথে সাথে বাদশাহর প্রাণ হরণ করে নিলেন।
এমনি ভাবে পৃথিবীর কেউই মৃত্যু থেকে রেহাই পায়নি। মৃত্যুর যন্ত্রনা এমন কঠিন যন্ত্রনা যা পৃথিবীর সকলকেই আস্বাদন করতে হবে।
স্বয়ং রাসূলে কারীম (সা.) মৃত্যুর যন্ত্রনা ও কষ্টের কথা উল্লেখ করে বলেন- তলোয়ার দ্বারা তিনশত আঘাত করলে যেরুপ যন্ত্রনা হয়, মৃত্যু যন্ত্রনা তদ্রুপ।
হাদীস শরীফে আছে, মূসা (আঃ) এর মৃত্যুর সময় মহান আল্লাহ তায়ালা মূসা (আঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, মৃত্যুর যন্ত্রনা কেমন মনে করছ? মূসা (আঃ) উত্তরে বলেন, জীবন্ত একটি পাখিকে ভাজা করার মত। যেমন সে উড়েও যেতে পারেনা বা মরেও যন্ত্রনা হতে মুক্তি লাভ করতে পারেনা।
হযরত কাবুল আহবার (রাঃ) হযরত ওমর (রাঃ) কে মৃত্যুর যন্ত্রনার অবস্থা জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তর দিলেন- কাঁটা যুক্ত একটি ডালা পেটের ভিতর ঢুকে গিয়ে এক একটি রগে বিঁধে গেলে সেটি টেনে বের করতে যেরুপ কষ্ট হয় মৃত্যুর যন্ত্রনা তদ্রুপ।
এখন প্রশ্নের বিষয় হল, এ ভয়াবহ মৃত্যুর জন্য আমরা কতটুকু প্রস্তুতি গ্রহন করেছি।
পরিশেষে দয়াময় প্রভূর নিকট আরজি নিবেদন করছি, তিনি যেন আমাদেরকে মৃত্যু যন্ত্রনা থেকে হেফাজত করেন। আমীন. ইয়া রাব্বাল আলামিন!!!