বিশ্বনবী সা. এর মু’জেযা, নবুওয়াতের সাক্ষ্য দিল গুইসাপ


মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সা. কে আমরা না চিনলেও প্রাণীকুল ঠিকই চিনেছে। এটা বিশ্বনবী সা. এর একটি মহান মু’জেযা। তেমনি এক মু’জেযা আমরা এই ঘটনার মাঝে দেখতে পাব।

হযরত উমর বিন খাত্তাব রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা. সাহাবীদের এক মাহফিলে ছিলেন হঠাৎ বনী সুলাইম গোত্রের বেদুঈন আগমন করল। সে একটি গুইসাপ শিকার করে তার জামার আস্তিনে রেখে দিয়েছে। সে এটা নিয়ে তার বাহনের নিকট গেল এবং মানুষের ভীড় দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করল, কার  জন্য তারা একত্র হয়েছে?

সাহাবীরা জবাব দিলেন, ঐ ব্যক্তি কে কেন্দ্র করে, যে নিজেকে নবী দাবি করে। এ কথা শুনে লোকের ভীড় ছেদ করে সে রাসূল সা. এর সামনে দাঁড়িয়ে বলল, হে মুহাম্মাদ! বাকপটু কোন মহিলাও তোমার চেয়ে বেশী মিথ্যাবাদী ও ঘৃণিত হয় না। যদি আমার সম্প্রদায় আমাকে হঠকারী উপাধি দেয়ার ভয় না করতাম তাহলে এক্ষুণি আমি তোমাকে হত্যা করতাম এবং তোমাকে হত্যা করে মানুষদেরকে আনন্দিত করতাম।

এ কথা শুনে উমর রা. বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে অনুমতি দিন আমি তাকে হত্যা করে ফেলি। তিনি বললেন, হে উমর তুমি কি জান না ধৈর্যশীল ব্যক্তি নবী হওয়ার উপযোগী? এরপর বেদুঈন ব্যক্তি  রাসূল সা. এর মুখোমুখি হয়ে বললো, লাত ও উজ্জার শপথ! আমি তোমার প্রতি ঈমান আনয়ন করব না।

রাসূল সা. তাকে বললেন- বেদুঈন! তুমি যা বলছ কোন জিনিস তোমাকে তা বলার প্রতি উৎসাহিত করল, তুমি তো অসত্য কথা বলেছ অথচ আমার এ অবস্থান কে তুমি সম্মান করলে না? সে রাসূল সা. কে উপহাস করে তার আস্তিন থেকে গুইসাপটি বের করে বলল, তুমি আবার আমার সাথে কথা বলছ, লাত ও উজ্জার শপথ! আমি তোমার প্রতি ঈমান আনয়ন করব না। আর না এই গুইসাপটি তোমার প্রতি ঈমান আনয়ন করবে।

এ কথা বলে জামার আস্তিন থেকে একটি গুইসাপ বের করে রাসূল সা. এর সামনে নিক্ষেপ করল এবং বলল যদি এ গুইসাপটি তোমার প্রতি ঈমান আনে তাহলে আমিও তোমার প্রতি ঈমান আনব। এবার রাসূল সা. গুইসাপকে লক্ষ্য করে বললেন, হে গুইসাপ (কথা বল)। অতঃপর গুইসাপ এমন স্পষ্ট বিশুদ্ধ ভাষায় কথা বলল যে উপস্থিত সকলে তার কথা বুঝতে পারল।

সে বলল, হে বিশ্ব প্রতিপালকের রাসূল! আমি উপস্থিত। রাসূল সা. তাকে বললেন, তুমি কার ইবাদত কর? সে বলল, আমি ঐ মহান সত্ত্বার ইবাদত করি যার আরশ আসমানে, যার রাজত্ব গোটা বিশ্বে, সমুদ্রকে যিনি রাস্তা বানিয়েছেন, জান্নাতে তার রহমত আর জাহান্নামে তার শাস্তি।

রাসূল সা. তাকে আবার প্রশ্ন করলেন, হে গুইসাপ আমি কে?  আপনি বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর রাসূল, শেষ নবী। যে আপনাকে সত্যায়ন করবে সে সফলকাম হবে। আর যে আপনাকে অস্বীকার করবে সে ধ্বংস হবে।

তখন বেদুঈন বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আপনি আল্লাহর সত্য রাসূল। আল্লাহর কসম! আমি যখন আপনার কাছে এসেছিলাম তখন পৃথিবীতে আমার কাছে আপনার চেয়ে অপ্রিয় আর কেউ ছিল না কিন্তু আল্লাহর শপথ করে বলছি, এ মুহূর্তে আপনি আমার কাছে আমার জীবন ও পিতা-মাতার চেয়ে অধিক প্রিয়। আমি আমার পশম, চামড়া, বাহ্যিক, অভন্তরীণ, গোপন ও প্রকাশ্যভাবে আপনার প্রতি ঈমান আনলাম।

রাসূল সা. বললেন, সেই মহান আল্লাহর প্রশংসা তিনি তোমাকে সঠিক দ্বীনের দিশা দিয়েছেন। আর আল্লাহ তায়ালা নামাজ ব্যতিরেকে এ দ্বীনকে গ্রহণ করেন না আর কোরআন ব্যতিরেকে নামাজ কবুল করেন না। আর কুরআন ছাড়া নামায পূর্ণ হয়না। এই বলে তাকে আলহামদুল্লিল্লাহ (সূরা ফাতিহা), ও কুল হুয়াঅল্লাহু আহাদ (সূরা ইখলাস) শিক্ষা দিলেন।

এ সূরা দুটি শুনার পর বেদুঈন বলল, আমি এর থেকে সুন্দর কথা আর শুনিনি। অতঃপর রাসূল সা. বললেন, এটা বিশ্ব জাহানের প্রতিপালকের বাণী, এটা কোন কবির কবিতা নয়। যখন তুমি একবার সূরা ইখলাস পাঠ করবে তা কুরআনের এক তৃতীয়াংশ পাঠ করার সমান। আর যখন তুমি দুইবার পাঠ করবে তা দুই তৃতীয়াংশ পাঠের ন্যায়। আর তিনবার পাঠ করলে তা গোটা কুরআন তিলাওয়াতের সমান সাওয়াব হবে।

বেদুঈন ব্যক্তি বলল, আমাদের প্রভূ কতইনা উত্তম! যিনি নগন্য! বিনিময়ে অনেক বেশী প্রতিদান দেন। কেননা তিনি সহজ জিনিস কবুল করেন আর অতি উত্তম প্রতিদান প্রদান করেন। অতঃপর রাসূল সা. সাহাবাদের লক্ষ্য করে বললেন, তোমরা তাকে কিছু দান কর। তাঁরা দান করে তাকে বিস্মিত করে দিল। হযরত অব্দুর রহমান বিন আওফ রা. বলেন, হে আল্লাহর রাসূল আমি তাকে দশ মাসের গর্ভবতী একটি উট প্রদানের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে চাই।

রাসূল সা. বললেন, তুমি তাকে যা দিবে তার অবস্থা বর্ণনা করলে। আমি কি বর্ণনা করব না, আল্লাহ তায়ালা তোমাকের এর বিনিময়ে কী প্রদান করবেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহ তোমাকে জান্নাতে একটি স্বর্ণের উট দান করবেন যার জিনপোষ হলো- রেশমী-পশমী দ্বারা আবৃত তুমি প্রকান্ত মুক্তা দ্বারা তৈরী একটি উটের মালিক হবে। যার পাগুলো হবে সবুজ পান্নার। আর ঘাড় হবে হলুদ যবরজাদের (গোমেদ মনিঃ)। যার পিঠে হাওদা আর হাওদার উপর থাকবে সূক্ষ্ম ও পুরু  রেশমের কাপড়। চক্ষু ঝলসানো বিদ্যুৎ চমকানির ন্যায় সে পুলসিরাত অতিক্রম করবে। 

এরপর বেদুঈন ব্যক্তি রাসূল সা. এর নিকট থেকে প্রস্থান করল। অতঃপর এক হাজার অশ্বারোহী তিরন্দাজ যোদ্ধার সাথে দেখা হলো। সে তাদেরকে বলল, তোমরা কোথায় যাও? তারা বলল, এই মিথ্যাবাদী নবী দাবীদারের সাথে যুদ্ধ করতে। বেদুঈন বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সা. আল্লাহর রাসূল।

তারা বলল, তুমি ধর্ম পরিবর্তন করলে? সে বলল, আমি ধর্ম পরিবর্তন করিনি। এই বলে, বিস্তারিত ঘটনা খুলে বলল। তখন তারা সবাই একত্রে কালিমা তায়্যিবা পাঠ করে বললো, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।

এ সংবাদ রাসূল সা. এর নিকট পৌঁছলে তিনি তাদের সাথে চাদর পরে সাক্ষাত করলেন। তারা সকলে তাদের বাহন থেকে অবতরণ করে তাকে চুম্বন করতে লাগল এবং সকলে বলল- লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।

তারা বলল, আমাদেরকে কোন বিষয়ের আদেশ করুন। তিনি বললেন, তোমরা সকলে খালিদ বিন ওয়ালিদের পতাকাতলে আশ্রয় নাও। রাবী বলেন, একত্রে এক হাজার মানুষ বনী সুলাইম ব্যতিত আরবের অন্য কোন গোত্র ঈমান আনয়ন করেনি।

শিক্ষা:

১. আল্লাহর একাত্ববাদে বিশ্বাস করা হবে ।

২ বিশ্ব নবীর মো’জেযা বিশ্বাস করা হবে । 

৩. নবীজীকে চিনে মান্য করতে হবে।

৪. নবীকে জীবনের চাইতেও বেশী  ভালোবাসতে   হবে।

দ্বীনি কথা শেয়ার করে আপনিও ইসলাম প্রচারে অংশগ্রহণ করুন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *