মৌমাছিদের গল্প | মৌমাছি সম্পর্কে বিস্ময়কর কিছু তথ্য


প্রবাহমান জীবন ধারায় সহসা আমাদের মুখোমুখি হতে হয় প্রাণী জগতের আশ্চর্য কিছু ঘটনার সাথে। যেমন-

ঘুমন্ত পাখি ডাল থেকে পড়ে যায় না কেন? টিকটিকির লেজ খসে পড়লে কোন রক্ত বের হয় না বরং মেঝেতে পড়া লেজটা নড়াচড়া করে কেন?  কুকুর জিভ দিয়ে লালা ঝরায় কেন? সাপ কেন খোলস ছাড়ে? ইত্যাদি।

সেই ১৭৩৫ খ্রি.কথা। সুইডেনের এক তরুণ বিজ্ঞানী, নাম তার লিনিয়াস। তিনি তাঁর সময়কার সকল পরিচিত প্রাণী ও উদ্ভিদের শ্রেণী বিভাগ করে তাদের আলাদা নামকরন করে এক বিশাল তালিকা প্রস্তুত করলেন।

লিনিয়াস প্রাণী জগতের সর্বোচ্চ শ্রেণীর নাম দিয়েছিলেন “প্রাইমেটস” দ্বিতীয় স্তরের প্রাণীর নাম “সিমিয়া”। লিনিয়াসের সময় হতে আজ পর্যন্ত প্রায় দেড়শ বছরের ব্যবধানে প্রাণী জগতের কোন তথ্যই আজ মানুষের কাছে অজানা নয়।

প্রাণী বিজ্ঞানীরা প্রাণী জগতের আচরনের ব্যাপারে বিস্ময়কর সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার কথা বলতে গিয়ে প্রায়ই যে প্রানীর কথা উল্লেখ করেন তার মধ্যে মৌমাছি অন্যতম। আজকে আমরা মৌমাছি নিয়েই শুধুমাত্র কথা বলবো ইনশাআল্লাহ।

 মৌমাছি:

ছোট পতঙ্গ ধরনের প্রাণী মৌমাছি। আকারে ছোট হলেও তাদের চালচলন, আচার-আচরন উল্লেখ করার মত। এই মৌমাছির পেট থেকে নিঃসৃত একটি অতিমূল্যবান তরল পদার্থ হচ্ছে “মধু”।

গাছের ফুলের মধ্যে থাকে ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ। যা মৌমাছির জারক রসের সাথে মিশে হয় মধু। মানব দেহে যত ভিটামিন দরকার তার ৭৫% আছে মধুতে। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের তথ্য অনুসারে জানা যায় ২০০ গ্রাম মধুর পুষ্টিমান ক্ষমতা ১.১৩ কিলোগ্রাম দুধ বা ৮টি কমলা অথবা ১০টি ডিমের সমান।

এই মধু সংগ্রহে প্রতিটি মৌমাছিকে  কঠোর পরিশ্রম করতে হয়, কিন্তু তা আমরা অনেকেই জানি না। এক কিলোগ্রাম মধু সংগ্রহ করতে প্রতিটি কর্মী মৌমাছিকে প্রায় এক কোটি ফুলের কাছে যেতে হয়। এক কিলোগ্রাম মধু সংগ্রহ করতে প্রতিটি মৌমাছিকে অতিক্রম করতে হয় তিন লক্ষ ষাট হাজার থেকে চার লক্ষ পঞ্চাশ হাজার কিলোমিটার দূরত্ব।

উড়ার সময় এদের বেগ থাকে ঘন্টায় চব্বিশ থেকে চল্লিশ কিলোমিটার। এজন্য মৌমাছিকে বলা হয় “Master of flight” এরা দলবদ্ধভাবে মৌচাকে বসবাস করে। প্রতিটি মৌমাছি তাদের ভাবের আদান প্রদান করে থাকে।

অস্ট্রিয়ান বিজ্ঞানী কার্লভন ফ্রিস এ সম্পর্কে গবেষণা করে দারুন সব মজার তথ্য দেন। তিনি বিষয়টিকে ভালোভাবে দেখার জন্য নিজেই একটি কৃত্রিম মৌচাক তৈরি করেন। কাঁচ দিয়ে ঘেরা সেই বানানো মৌচাকের ভেতরটা বাইরে থেকে দেখা যায়। তিনি বিষয়টিকে লক্ষ্য করেন এবং দেখতে পান যে, মৌমাছিরা মধু আহরন করে ফিরে এসে মৌচাকের উপর বিষয় অঙ্গ-ভঙ্গি করতে থাকে।

তিনি এই অঙ্গ-ভঙ্গিকে মৌমাছির নাচ বলেছেন। ঐ নাচের মধ্যে তিনি দুই রকমের ভঙ্গি দেখেছেন। ১. ঘুরে ঘুরে বৃত্তাকার নাচ, ২. দেহ দুলিয়ে নাচ। প্রত্যেক প্রকারের নাচের অর্থই তারা বোঝে এবং সেই অনুযায়ী সাড়া দেয়।

নাচের ভাষা বোঝার পাশাপাশি মৌমাছিরা গন্ধ দিয়েও ভাবের আদান প্রদান করতে পারে। এক একটা মৌচাকের মৌমাছির এককে রকম গন্ধ থাকে। বাইরের কোন মৌচাকের মৌমাছি অন্য কোন মৌচাকে আসলেই সেই চাকের মৌমাছিরা বুঝতে পারে বাইরের কেউ মৌচাকে প্রবেশ করেছে।

বিজ্ঞানী ফ্রিসের পরীক্ষা থেকে আরো জানা যায়, মৌমাছিরা নাচের মাধ্যমে কত দূর থেকে এবং কতটুকু উচ্চতা থেকে মধু আনছে তা বুঝতে পারে। সবচেয়ে মজার ব্যপার হল, কোন মৌমাছি গভীর অন্ধকারেও যদি নাচে তাহলেও অন্য মৌমাছিরা সেই নাচের ঠিক অর্থ বুঝতে পারে।

মৌমাছির মাথার উপর যেই এন্টেনা বা শিং থাকে সেটা কিন্তু আমাদের বর্তমান যোগাযোগ ব্যবস্থার মোবাইলের মত কাজ করে। তারা সেই এন্টেনা দ্বারা একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করতে পারে, কথাগুলো তরঙ্গ আকারে পাঠাতে পারে এবং অন্য মৌমাছির সেই তরঙ্গ গ্রহন করার মত রিসিভারও আছে।

ফলে তারা মধু আনতে যেয়ে কোন সমস্যার সম্মুখীন হলে বা বিপদে পড়লে কিংবা রাস্তা ভুলে গেলে সেই এন্টিনার সাহায্যে অন্য মৌমাছির সঙ্গে যোগাযোগ করে।

দ্বীনি কথা শেয়ার করে আপনিও ইসলাম প্রচারে অংশগ্রহণ করুন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *