জুমুআর নামাজে আমরা যে ৫টি ভুল করি


প্রতিটি মুসলমানের জন্য জুমআর নামাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামের অন্যতম একটি ইবাদাত হল জুমআর দিন। এই দিনে অনান্য ইবাদাতের জন্যেও রয়েছে অতিরিক্ত সওয়াবের হুকুম। তাই এই দিনটিকে সঠিক ভাবে ইসলামী হুকুম মোতাবেক পালন করা জরুরি।

জুমুআর নামাজে

জুমআর দিনে জুমুআর নামাজ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। মোটামুটি আমরা কম বেশী সবাই জুমআর নামাজ আদায় করে থাকি। কিন্তু এই নামাজের সময় আমরা বেশ কিছু ভুল করে থাকি। আজকে জুমআর নামাজে করা এরকম ৫টি ভুল নিয়ে কথা বলব।

১. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে না যাওয়া

জুমআর নামাজে যাওয়ার পূর্বে অবশ্যই গোসল করে যেতে হবে। অনেকে এই দিনে এত বেশী ব্যস্ত থাকে যে অনান্য দিনের মত কোন রকম জুমুআর ফরজ ২ রাকআত আদায় করে চলে আসে অথচ আমর ইবনু সুলাইম আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

আবু সা‘ঈদ খুদ্‌রী (রাঃ) হতে বর্ণিত, আমি এ মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: জুমু‘আহ’র দিন প্রত্যেক বালিগের জন্য গোসল করা ওয়াজিব। আর মিসওয়াক করবে এবং সুগন্ধি পাওয়া গেলে তা ব্যবহার করবে।[১]

উক্ত হাদিসে স্পষ্ট বলা আছে গোসল করা এবং মিসওয়াক করার কথা এবং যদি সামর্থ্য থাকে তবে সুগন্ধি ব্যবহার করা।

যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের উচিত ভাল এবং পরিষ্কার জামা কাপড় পড়ে মসজিদে যাওয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও এই দিন ভাল ও পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করতেন।

২. মসজিদের দেরী করে যাওয়া

জুমুআর নামাজ কেবল ২ রাকাত নামাজ আদায় করার নাম নয়। জুমুআর নামাজ খুতবা শোনা এবং অনান্য আনুষঙ্গিক কাজের মাধ্যমে পালন করতে হয়। কিন্তু আপনি যদি শুধু ২ রাকাত নামাজ পড়ে নিজেকে জুমুআর নামাজী ভেবে বসে থাকেন তবে সমস্যা। যেমন আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,

আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন জানাবাত গোসলের ন্যায় গোসল করে এবং সালাতের জন্য আগমন করে সে যেন একটি উট কুরবানি করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে সে যেন একটি গাভী কুরবানি করল। তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমন করে সে যেন একটি শিং বিশিষ্ট দুম্বা কুরবানি করল। চতুর্থ পর্যায়ে যে আগমন করল সে যেন একটি মুরগী কুরবানি করল। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করল সে যেন একটি ডিম কুরবানি করল। পরে ইমাম যখন খুতবা দেয়ার জন্য বের হন তখন মালাইকা (ফেরেশতাগণ) যিক্‌র শ্রবণের জন্য উপস্থিত হয়ে থাকে।[২]

তাই অবশ্যই জুমুআর নামাজের দিন পূর্ব প্রস্তুতি নেয়া জরুরি। তাহলে সময়মত নামাজ আদায় করা সম্ভব অন্যথায় দেখা যাবে নামাজ মিস হয়ে যাবে কিংবা খুতবা মিস হয়ে যাবে। আর এই ভাবে দেরী করার দ্বারা একটা বদ অভ্যাসও তৈরি হবে।

৩. জুমুআর নামাজের সময় অন্য কাজ করা

জুমআর নামাজের সময় অন্যান্য কাজ করা নিষিদ্ধ। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মসজিদের দিকে যাওয়া জরুরি। জুমআর প্রথম আজান শোনার সাথে সাথে ব্যবসায় কিংবা অন্যান্য কাজ বন্ধ করে দেয়া অথবা নামাজের জন্য বিরতি দেয়া উচিত। ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা‘ঈদ (রহ.) থেকে বর্ণিত,

তিনি আমরাহ (রহ.) কে জুমু‘আহ’র দিনে গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। আমরাহ (রহ.) বলেন, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেছেন যে, লোকজন নিজেদের কাজকর্ম নিজেরাই করতেন। যখন তারা দুপুরের পরে জুমু‘আহ’র জন্য যেতেন তখন সে অবস্থায়ই চলে যেতেন। তাই তাঁদের বলা হল, যদি তোমরা গোসল করে নিতে।[৩]

৪. ঠিকমত খুতবা না শোনা

পূর্বেই বলা হয়েছে খুতবা শোনাটা জুমুআর নামাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সেই সাথে ঠিকমত খুতবা শোনাটাও জরুরি। যারা ঠিকমত খুতবা শুনেনা, তারা জুমুআর নামাজের পুরোপুরি সওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়। আবু হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযু করার পর জুমু‘আর সলাতে এলো, নীরবে মনোযোগ সহকারে খুতবাহ্‌ শুনল, তার পরবর্তী জুমু‘আহ্‌ পর্যন্ত এবং আরও অতিরিক্ত তিন দিনের পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি (অহেতুক) কঙ্কর স্পর্শ করল সে অনর্থক, বাতিল, ঘৃণিত ও প্রত্যাখ্যান যোগ্য কাজ করল।[৪]

আরবি এবং বাংলা উভয় খুতবা মনোযোগ সহকারে শোনাটা জরুরি।

৫. খুতবার সময় কথা বলা

খুতবা শোনা ওয়াজিব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবার সময় কথা বলা নিষিদ্ধ করেছেন। আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

জুমু‘আহ’র দিন যখন তোমার পাশের মুসল্লিকে চুপ থাক বলবে, অথচ ইমাম খুতবা দিচ্ছেন, তা হলে তুমি একটি বেহুদা কথা বললে।[৫]

উপরের হাদিস দ্বারা সহজেই বোঝা যাচ্ছে খুতবার সময় যদি কেউ কথা বলে তাকে থামতে বলাটাও উচিত নয়। অর্থ্যৎ খুতবার সময় মুখ পুরোপুরি বন্ধ রাখা উচিত। সাধারণত আমরা যারা তরুণ তাদের মধ্যে এই সমস্যা প্রধান। তাই এই বিষয়ে আমাদের প্রত্যেকের সর্তক থাকা জরুরি।

শেষ কথা

ইসলামের প্রতিটি ইবাদাত পালনের ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন করা জরুরি। কেননা এত কষ্ট করে করা ইবাদাতের দ্বারা যদি আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট না হয় তবে তো আপনার জীবনের ষোল আনাই বৃথা।

সূত্র

১. বুখারী পর্ব ১১: /৩ হা: ৮৮০, মুসলিম ৭/১, হা: ৮৪৬

২. সহীহ বোখারী: ৮৮১

৩. বুখারী পর্ব ১০ : /১৬ হা: ৯০৩, মুসলিম ৭/১, হা: ৮৪৭

৪. সহিহ মুসলিম জুমু’আ ১৮৭৩

৫. বুখারী পর্ব ১১ : /৩৬ হা: ৯৩৪, মুসলিম ৭/৩, হা: ৮৫১

দ্বীনি কথা শেয়ার করে আপনিও ইসলাম প্রচারে অংশগ্রহণ করুন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *