যে ৫টি কাজ প্রতিদিন একজন মুসলমানের করা উচিত


একজন মুসলমান তার দৈনন্দিন কার্যক্রম কিভাবে পরিচালনা করবে তা কুরআন এবং হাদিসে বর্ণিত আছে। কিছু কিছু কাজ আছে যা দৈনিক করার প্রয়োজন নেই যেমন জুম্মার নামায। তবে যেসব কাজ দৈনিক করতে হয় তার মধ্যে থেকে ৫টি কাজকে নির্বাচন করে এই লেখায় উপস্থাপন করা হয়েছে।

এই কাজ গুলো নারী পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেকের করা উচিত। নিচে এরকম ৫টি কাজের তালিকা দেয়া হল।

১. মসজিদে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায়

নামায ইসলামের ফরয হুকুম। নামায ত্যাগ করলে কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে। নামাজের গুরুত্ব ও উপকারিতা এবং স্বেচ্ছায় নামাজ ত্যাগকারীর পরিণতি কি হতে পারে এটা জানাও জরুরি। নামাজ ইসলামের প্রথম একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত হওয়ার ফলে এটা ত্যাগ করার শাস্তি ভয়ংকর। প্রতিদিন একজন মুসলমানের উপর ৫ ওয়াক্ত নামায ফরয। আর এই ৫ ওয়াক্ত নামায অবশ্যই একজন মুসলমানকে আদায় করতে হবে। আল্লাহ তায়লা বলেন,

হে ঈমানদারগণ! তোমরা সবর এবং নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সহায়তা কামনা করো। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ সবরকারীদের সাথে রয়েছেন।

(সূরা বাকারাঃ ৪৫)

পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাতের সাথে মসজিদে গিয়ে আদায় করার জন্য বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। যদি কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে জামাত ত্যাগ করে তবে তার জন্য হাদিস শরীফে কঠিন হুশিয়ারি দেয়া হয়েছে। 

(সহীহুল বুখারী ৬৪৫, ৬৪৬, ৬৪৭, মুসলিম ৬৫০, তিরমিযী ২১৫, নাসায়ী ৮৩৭, ইবনু মাজাহ ৭৮৯, আহমাদ ৫৩১০, ৫৭৪৫, ৫৮৮৫, মুওয়াত্তা মালিক ২৯০)

নামাজ আদায় করলে কেবল যে ইবাদাত পালন হয় তা কিন্তু নয়। বরং নামাজের মধ্যে রয়েছে দৈহিক, মানসিক এবং আত্মিক প্রশান্তি। নামাজ আদয়ের দ্বারা অনান্য গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। প্রবাহমান নদীতে দৈনিক ৫ বার গোসল করলে শরীরে যেমন পরিষ্কার এবং ভাল থাকে তেমনি ৫ ওয়াক্ত নামাজও। তাই নামাজ ইসলামের মৌলিক এবং ফরয ইবাদাত হওয়ার কারণে একজন মুসলমানের প্রতিদিন এটা আদায় করা উচিত।

২. প্রতিদিন কুরআন তিলাওয়াত

কুরআন তিলাওয়াত মন এবং দেহকে প্রশান্ত করে। প্রতিদিন কুরআন তিলাওয়াত করা কুরআনের হক। কুরআন হল হৃদয়ের আালো। কুরআন তিলাওয়াতের দ্বারা হৃদয়ের আলো বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিনের সকালটি যদি আপনি কুরআন তিলাওয়াত দিয়ে শুরু করতে পারেন তবে আপনি নিজেই এর উপকারিতা দেখতে পারবেন।

প্রতিদিন বেশ কিছু সূরা পাঠ করার ব্যাপারেও রাসূল সা: তাগিদ দিয়েছেন এবং এর ফযিলত বর্ণনা করছেন। কুরআন তিলাওয়াতের ব্যাপারে সওয়াব এবং এর উপকারের কথা রাসূল সাঃ তাঁর হাদিসের মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন। আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এটা খুবই খারাপ কথা যে, তোমাদের মধ্যে কেউ বলবে, আমি কুরআনের অমুক অমুক আয়াত ভুলে গেছি; বরং তাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। সুতরাং তোমরা কুরআন তিলাওয়াত করতে থাক কেননা, তা মানুষের অন্তর থেকে উটের চেয়েও দ্রুত গতিতে চলে যায়।

(৫০৩৯; মুসলিম ৬/৩৩, হাঃ ৭৯০, আহমাদ ৩৬২০)

প্রতিদিন পাঠ করার মত বেশ কিছু সূরা এবং এর ফযিলত সূমহ:

  • সুরা ওয়াকিয়া – রিজিক বৃদ্ধি করে
  • সূরা ইয়াসিন – মৃত্যু যন্ত্রণা সহজ হয়, পূর্বের গুনাহ মাফ, অভাব দূর, শান্তি ও রিজিক বুদ্ধি পায়
  • সূরা কাহাফ – দাজ্জালের ফেৎনা থেকে মুক্তি, গুনাহ মাফ
  • সূরা বাকারা – ঘর থেকে শয়তান দূর হয়ে
  • সূরা মূলক –  এই সূরা পাঠকারীর জন্য ক্ষমা লাভ না করা পর্যন্ত সুপারিশ করে
  • সূরা দুখান – বার হাজার ফেরেশতা ক্ষমা প্রার্থনা করে তার জন্য

৩. যিকির এবং আল্লাহর প্রশংসা করা

যিকির তথা আল্লাহকে সর্বদা স্মরণ রাখা। আল্লাহকে সর্বদা স্মরণ রাখার প্রধান উপকারিতা হল গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা যায়। আল্লাহর ভয়ে পাপ থেকে বিরত থাকা যায়। এছাড়া আল্লাহর প্রশংসা এবং যিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। আবুল আহওয়াস (র) থেকে বর্ণিত,

আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন, আল্লাহর যিকির করলে শয়তানের পক্ষ থেকে ঘুম এসে যাবে। তোমরা চাইলে অনুশীলন করে দেখতে পারো। তোমাদের কেউ যখন শয্যাগত হয়ে ঘুমাতে ইচ্ছা করে তখন সে যেন মহামহিম আল্লাহর যিকির করে।

(বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ)

যিকিরের মধ্যেও রয়েছে মানসিক প্রশান্তি। আর যিকিরের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল যিকির সব সময় করা যায়। আপনি গাড়িতে আছেন কিংবা রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন সেই সময়ও যিকির করতে পারেন। তাই যিকির একজন মুসলমানের প্রতিদিনের আমল হওয়া চাই।

৪. তওবা এবং ইস্তিগফার করা

মানুষের মৃত্যু অনিশ্চিত। যেকোন সময় যেকোন ভাবে একজন মানুষের জীবনের অবসান হতে পারে। আর এরকম অনিশ্চিত জীবনে আমরা সর্বদা বিভিন্ন পাপে লিপ্ত হয়ে যাই। তাই একজন মুসলমানের উচিত প্রতিদিন তওবা এবং ইস্তিগফার করা। আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা নিজ হাত রাতে প্রসারিত করেন; যেন দিনে পাপকারী (রাতে) তওবা করে এবং দিনে তাঁর হাত প্রসারিত করেন; যেন রাতে পাপকারী (দিনে) তওবাহ করে। যে পর্যন্ত পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় না হবে, সে পর্যন্ত এই রীতি চালু থাকবে।’

(রিয়াদুস সালেহীন)

মৃত্যু অনিশ্চিত, আপনার মৃত্যু কখন হবে আপনি জানবেন না। আর মৃত্যুর পর কোন তওবাও কবুল হবে না। তাই একজন মুসলমানের উচিত সর্ব অবস্থায় তওবা করা। কারণ একজন সাধারণ মুসলমান হিসাবে গুনাহ হতেই পারে, এই জন্য অনুতপ্ত হওয়া উচিত এবং হতাশ না হয়ে আল্লাহর উপর আস্থা রেখে তওবা করা উচিত।

৫. দান-সদকাহ করা

দান করার দ্বারা সম্পদ বৃদ্ধি পায়। দান করার ফলে গুনাহ মাফ হয় এছাড়া অন্যান্য ভাইয়ের উপকারও হয়। তাই সর্বদা দান করা উচিত। আল্লাহ তায়লা বলেন,

যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, নামায কায়েম করে, এবং আমি যা দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসা আশা কর, যাতে কখনও লোকসান হবে না।

(সূরা ফাতির: ২৯)

দান সদকাহ পাপ মোচন করে, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং সম্পদ বৃদ্ধি করে। একজন মুসলমান নিয়মিত দান করবে এটাই স্বাভাবিক। দান করলে কখনোই সম্পদ হ্রাস পায় না তাই একজন মুসলমান হিসাবে বেশী  বেশী দান করা উচিত।

উপরোল্লিখিত কাজগুলো একজন মুসলমান নিয়মিত করলে গুনাহ থেকে যেমন বেঁচে থাকতে পারবে পাশাপাশি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবে ইন শা আল্লাহ। হতে পারে প্রথম দিকে সবগুলো কাজ করা কঠিন হবে তবে নিয়মিত করলে তা সহজ হয়ে যাবে।

দ্বীনি কথা শেয়ার করে আপনিও ইসলাম প্রচারে অংশগ্রহণ করুন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *