প্রত্যেক কাজ করতে হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। আল্লাহ তায়ালা যখন বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যাবে তখন আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন করাও সম্ভব হবে। তাই একজন মুমিন বান্দার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন করা।
আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসা অর্জনের উপায় কি কি তা নিয়ে পবিত্র কুরআন-হাদিসে অনেক কিছু বলা হয়েছে। মুত্তাকী আল্লাহ ভীরু, ধার্মিক ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা ভালোবাসেন।
একজন মুসলমান হিসাবে আমাদের প্রত্যেকের জেনে রাখা উচিত কি করলে আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসা অর্জন করা যায়। আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসা অর্জনের উপায় নিয়েই আজকে আমার এই লেখা।
আল্লাহর উপর ভরসা রাখা
আমাদের সৃষ্টি করেছেন একমাত্র আল্লাহ। আমাদের রিজিক থেকে শুরু করে সব কিছুর মালিক আল্লাহ। তাই সবকিছুতে একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে এটাই স্বাভাবিক। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
আল্লাহ তো তিনি, যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, আর মুমিনগন আল্লাহর উপরই তাওয়াককুল করে।
সূরা তাগবুন:১৩
তাওয়াককুল তথা আল্লাহর উপর ভরসা করা মুমিন বান্দার গুন। আর সূরা আলে ইমরানেও আল্লাহ তায়ালা উল্লেখ করে দিয়েছেন যে তিনি তাঁর উপর ভরসা কারীকে ভালবাসেন।
রাসূল সা: এর অনুসরণ
আল্লাহকে পেতে হলে আগে তাঁর রাসূলকে ভালবাসতে হবে এবং অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন।
বলে দিন আনুগত্য কর আল্লাহ ও রাসূলের। যারা এ থেকে ফিরে যায় আল্লাহ সেই সব কাফেরদেরকে মোটেও পছন্দ করেন না।
সূরা আলে ইমরান:৩২
আল্লাহ তায়ালাকে কিভাবে পেতে হবে তার বিস্তারিত শিক্ষা আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ শিক্ষা দিয়ে গেছেন। তাঁর দেখানো পদ্ধতি ব্যতীত অন্য পদ্ধতি অবলম্বন করলে তখন সে আর শরীয়তের মধ্যে থাকবেনা। তখন সে হবে গুনাহগার এবং আল্লাহ তায়ালা গুনাহগারকে অপছন্দ করেন।
শিরক মুক্ত আমল
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন,
মানুষদের মধ্যে এমন কিছু রয়েছে যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে তাঁর সমকক্ষ হিসাবে গ্রহণ করে, তারা তাদেরকে আল্লাহকে ভালবাসার ন্যায় ভালবাসে। আর যারা ঈমান এনেছে, তাদের সর্বাধিক ভালবাসা আল্লাহর জন্য।
সূরা বাকারা – ১৬৫
সূরা ইখলাসে আল্লাহ তায়ালা তাঁর পরিচয় দিয়ে দিয়েছেন। তিনি এক ও অদ্বিতীয়। তাই প্রত্যেক কাজ করতে হবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে অন্য কারো উদ্দেশ্য করলে তবে সেই অন্যজন খুশি হবে আল্লাহ তায়ালা নয়। ফলে সে বঞ্চিত হবে আল্লাহ তায়ালার ভালবাসা থেকে।
ইসলামের হুকুম আহকাম পালন
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা আর এই পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থায় সব কিছুর বিধান বলে দেয়া হয়েছে। আর সেই বিধান পালনের নিয়ম কানুন আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসূলের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন,
তাদেরকে বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবেসে থাক তাহলে আমার অনুসরণ কর, তবেই আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহসমূহ মাফ করে দিবেন।
সূরা আলে ইমরান:৩১
দুনিয়ার জীবনে আমরা যেমন কারও ভালবাসা পাওয়ার জন্য তার মনের মত করে তার হুকুম পালন করি, তেমনি আল্লাহর ভালবাসা পেতে হলে আল্লাহর হুকুম আহকাম সূমহ পালন করতে হবে।
উত্তম আখলাক
আখলাক শব্দের অর্থ চরিত্র। আপনার চরিত্র যদি ভাল না হয় তবে দুনিয়ার কেউ যেমন আপনাকে মন থেকে ভালবাসবে না, তেমনি স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাও আপনাকে ভালবাসবে না। আল্লাহ বলেন,
নিশ্চয়ই আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে পছন্দ করেন না যে আত্ম অহংকারী ও নিজেকে বড় মনে করে গর্বে বিভ্রান্ত এবং যারা কৃপণতা করে ও লোকদেরকে কৃপণতার নির্দেশ দান করে এবং আল্লাহ তাদেরকে যে অনুগ্রহ প্রদান করেছেন তা গোপন করে, আল্লাহ সেই সব কাফেরদের জন্য নিকৃষ্টতম আযাব তৈরি করে রেখেছেন।
সূরা নিসা:৩৬-৩৭
আল্লাহর ভালবাসা পেতে হলে সর্বপ্রথম নিজের চরিত্রকে সংশোধন করা জরুরি।
মুত্তাকী হওয়া
মুত্তাকী বলতে বোঝায় তাকওয়াবান লোকদেরকে। যারা আল্লাহর ভয়ে খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকে তাদেরকে মুত্তাকী বলা হয়। মুত্তাকী ব্যক্তিদের অন্তরে যেহেতু সর্বদা আল্লাহর কথা স্মরণ থাকে তাই তারা সাধারণত পাপ কাজ থেকে বিরত থাকে।
আর যিনি পাপ কাজ থেকে বিরত থাকবে তাকে আল্লাহ তায়ালা ভালবাসবে এটাই স্বাভাবিক। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
হ্যাঁ, যারা ওয়াদা পূরণ করে ও আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ সেই সব মুত্তাকীদের ভালোবাসেন
সূরা আলে ইমরান ৭৬
তওবা করা
দুনিয়ার জীবনে গুনাহ হয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। তবে অস্বাভাবিক হলো গুনাহ করার পর যদি নিজের অন্তরে অনুশোচনা না আসে এবং তওবা না করে। আল্লাহ তায়ালা অনেক দয়ালু আর তাই পাপ করার পর তওবা করলে আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করে দেন।
আর যেই ব্যক্তি আল্লাহর নিকট তওবা করে আল্লাহ তায়ালা তাকে ভালবাসে। আল্লাহ বলেন,
নিশ্চই আল্লাহ প্রত্যাবর্তনকারীদেরকে (তওবাকারী) ভালবাসেন এবং ভালবাসেন পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে।
সূরা বাকারা:২২২
সদাচার এবং ক্ষমা করা
সকলের সাথে যিনি ভাল ব্যবহার করে এবং অপরকে ক্ষমা করে তাকে আল্লাহ তায়ালাও ভালবাসে। আল্লাহ বলেন,
অতএব আপনি তাদেরকে ক্ষমা করুন ও সংশোধন করুন, নিশ্চই আল্লাহ সদাচারীদেরকে ভালোবাসেন। সূরা মায়েদা:১৪
ধৈর্যশীল হওয়া
দুনিয়ার জীবনে বালা-মুসিবত, বিপদ-আপদ আসবে। আর এই সময় এর ফলে ধৈর্য হারা হলে চলবে না। বিপদ-আপদে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রাখতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
আর কত না নবী যুদ্ধ করেছে, তাদের সাথে যুদ্ধ করেছে বহু জ্ঞানী-গুণী সাধক পুরোহিত, সেক্ষেত্রে আল্লাহর পথে তাদের প্রতি যে বিপদ এসেছে তাতে তারা হতাশ হয়নি, দুর্বলতা দেখায়নি, আর মাথা নত করেনি, আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদের ভালোবাসেন।
সূরা আলে ইমরান:১৪৬
ন্যায়বিচার এবং জুলুম না করা
অন্যের উপর যখন ন্যায়বিচার করা না হয় তখন তা জুলুম হিসাবে চিহ্নিত হয়। জুলুমকারীকে আল্লাহ পছন্দ করে না। জুলুমকারীর স্থান জাহান্নাম। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
মন্দের প্রতিশোধ সমপরিমাণ মন্দ, তবে যে ক্ষমা করে দেয় ও সংশোধন করে তার পুরস্কার আল্লাহর নিকট, নিশ্চয়ই আল্লাহ জালেমদেরকে পছন্দ করে না।
সূরা শূরা:৪০
আল্লাহর পথে লড়াই করা
লড়াই বলতে জিহাদকে বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে অসংখ্য বার জিহাদের কথা বলেছেন। দুনিয়ার বুকে ইনসাফ তথা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। আল্লাহ বলেন,
নিশ্চই আল্লাহ ভালবাসেন তাদেরকে যারা আল্লাহর পথে সারিবদ্ধভাবে লড়াই করে এমনভাবে যে সীসা গলিত প্রাচীর।
সূরা ছফ: ৫
শেষ কথা
প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর ভালবাসা অর্জন করা মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আল্লাহ তায়ালার ভালবাসা অর্জনের উপায় সম্পর্কে ইতোমধ্যে আলোচনা করা হয়েছে।
উপরে উল্লেখিত বিষয় ছাড়া আরও অনেক বিষয় রয়েছে যার মাধ্যমে আল্লাহর ভালবাসা অর্জন সম্ভব। তবে সর্বোপরি মুত্তাকী, খোদা ভীরু, পরহেজগার, ধৈর্যশীল, সৎকর্মশীলগনই অর্জন করতে পারে আল্লাহর ভালবাসা।
দ্বীনি কথা শেয়ার করে আপনিও ইসলাম প্রচারে অংশগ্রহণ করুন।