আবু মাহযুরা (রাঃ)-এর আযান এবং এ সম্পর্কে বিভিন্নরূপ রিওয়ায়াত


৮৭৭(১). আবু বাকর আন-নায়সাপুরী (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনে মুহায়রীয (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি ইয়াতীম হিসেবে আবু মাহযুরা (রাঃ)-এর তত্ত্বাবধানে ছিলেন, যখন তাকে তিনি সিরিয়ায় পাঠান। তিনি বলেন, আমি আবু মাহযুরা (রাঃ)-কে বললাম, হে চাচাজান! আমি সিরিয়া যাচ্ছি। আমি আশংকা করছি, তথায় আমি আপনার আযান সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবো। অতএব আমাকে অবহিত করুন । তিনি বলেন, হাঁ। আমি একদল লোকের সঙ্গে সফরে বের হলাম। আমরা হুনায়েনের পথে ছিলাম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনায়েন যুদ্ধশেষে প্রত্যাবর্তন করছিলেন। আমরা পথিমধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সাক্ষাত করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুয়াযযিন নামাযের আযান দিলেন। রাবী বলেন, আমরা মুয়াযযিনের আযানের শব্দ শুনলাম। তখন আমরা (তাদের থেকে দূরে ছিলাম। আমরা হাসি-ঠাট্টাচ্ছলে উচ্চস্বরে তার আযানের প্রতিধ্বনি করলাম।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই শব্দ শুনলেন। তিনি আমাদেরকে তাঁর সামনে উপস্থিত হতে ডেকে পাঠালেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তোমাদের মধ্যে কার উচ্চ কণ্ঠস্বর শুনেছি? দলের সবাই আমার দিকে ইশারা করলো এবং সত্যায়ন করলো। তিনি তাদের সকলকে বিদায় দিলেন, কিন্তু আমাকে রেখে দিলেন। তিনি বললেনঃ তুমি দাঁড়িয়ে নামাযের আযান দাও। অতএব আমি দাঁড়ালাম। তখন আমার নিকট নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অমনোপূত লাগলো।

আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে দাঁড়ালাম এবং তিনি নিজেই আমাকে আযান শিক্ষা দিলেন। তিনি বলেন, তুমি বলো, আল্লাহু আকবার (আল্লাহ মহান) আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার। আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু (আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই), আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ (আমি সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল), আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ। তারপর তিনি আমাকে বললেনঃ পুনরায় তোমার উচ্চস্বরে বলো। তারপর তিনি আমাকে বললেনঃ তুমি বলো, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ, হায়্যা আলাস সালাহ (নামাযের জন্য এসো), হায়্যা আলাস সালাহ, হায়্যা আলাল ফালাহ (কল্যাণের দিকে এসো) হায়্যা আলাল ফালাহ। আল্লাহু আকবার। আল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।

আমি আযান শেষ করলে পর তিনি আমাকে ডাকলেন এবং আমাকে একটি থলে দিলেন যাতে রুপা ছিলো। তারপর তিনি নিজের হাত আবু মাহযুরা (রাঃ)-এর মাথার সম্মুখভাগে রাখলেন, এবং তা তার মুখমণ্ডলে, তার বুকে ও তার কাঁধে বুলালেন, এমনকি তাঁর হাত আবু মাহযুরা (রাঃ)-এর নাভি পর্যন্ত পৌঁছালেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তোমার মধ্যে এবং তোমার উপর বরকত নাযিল করুন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে মক্কায় আযান দেওয়ার জন্য নিয়োগ দিন। তিনি বলেন, আমি তোমাকে এ ব্যাপারে নিয়োগ দিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ব্যাপারে আমার সমস্ত অপছন্দনীয় বিষয় দূর হলো এবং তৎপরিবর্তে তাঁর প্রতি ভালোবাসা আমার অন্তরে ঠাই নিলো।

আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমেল (মক্কার শাসক) আত্তাব ইবনে উসাইদ (রাঃ)-এর নিকট গেলাম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশ মোতাবেক নামাযের আযান দিলাম। ইবনে জুরাইজ (রহঃ) বলেন, আবু মাহযুরা (রাঃ)-এর বংশের যার সাথে আমার দেখা হয়েছে তিনি আমাকে ইবনে মুহাইরীয (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরূপ অবহিত করেছেন। এটা আর-রাবী (রহঃ) বর্ণিত হাদীস এবং তার বর্ণিত পাঠ এখানে উধৃত করা হলো।

بَابٌ : فِي ذِكْرِ أَذَانِ أَبِي مَحْذُورَةَ ، وَاخْتِلَافِ الرِّوَايَاتِ فِيهِ

حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ النَّيْسَابُورِيُّ ، ثَنَا أَبُو حُمَيْدٍ الْمِصِّيصِيُّ ، ثَنَا حَجَّاجٌ ، عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ ، ح : وَحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ النَّيْسَابُورِيُّ ، ثَنَا الْعَبَّاسُ بْنُ مُحَمَّدٍ ، وَأَبُو أُمَيَّةَ ، وَمُحَمَّدُ بْنُ إِسْحَاقَ ، وَغَيْرُهُمْ ، قَالُوا : حَدَّثَنَا رَوْحٌ ، عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ ، ح : وَحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ ، ثَنَا الرَّبِيعُ بْنُ سُلَيْمَانَ ، ثَنَا الشَّافِعِيُّ ، ثَنَا مُسْلِمُ بْنُ خَالِدٍ ، عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ ، أَخْبَرَنِي عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ عَبْدِ الْمَلِكِ بْنِ أَبِي مَحْذُوَرَةَ أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ مُحَيْرِيزٍ أَخْبَرَهُ – وَكَانَ يَتِيمًا فِي حِجْرِ أَبِي مَحْذُورَةَ – حِينَ جَهَّزَهُ إِلَى الشَّامِ – قَالَ : فَقُلْتُ لِأَبِي مَحْذُورَةَ : أَيْ عَمِّ ، إِنِّي خَارِجٌ إِلَى الشَّامِ ، وَإِنِّي أَخْشَى أَنْ أُسْأَلَ عَنْ تَأْذِينِكَ ؟ فَأَخْبِرْنِي . قَالَ : نَعَمْ ، خَرَجْتُ فِي نَفَرٍ ، فَكُنَّا فِي بَعْضِ طَرِيقِ حُنَيْنٍ ، فَقَفَلَ رَسُولُ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – مِنْ حُنَيْنٍ ، فَلَقِينَا رَسُولَ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – فِي بَعْضِ الطَّرِيقِ ، فَأَذَّنَ مُؤَذِّنُ رَسُولِ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – بِالصَّلَاةِ ، فَقَالَ : فَسَمِعْنَا صَوْتَ الْمُؤَذِّنِ وَنَحْنُ مُتَنَكِّبُونَ فَصَرَخْنَا نَحْكِيهِ ، وَنَسْتَهْزِئُ بِهِ ، فَسَمِعَ النَّبِيُّ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – الصَّوْتَ ، فَأَرْسَلَ إِلَيْنَا إِلَى أَنْ وَقَفْنَا بَيْنَ يَدَيْهِ ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – : ” أَيُّكُمُ الَّذِي سَمِعْتُ صَوْتَهُ قَدِ ارْتَفَعَ ؟ ” . فَأَشَارَ الْقَوْمُ كُلُّهُمْ إِلَيَّ ، وَصَدَقُوا ، فَأَرْسَلَ كُلَّهُمْ وَحَبَسَنِي ، فَقَالَ : ” قُمْ فَأَذِّنْ بِالصَّلَاةِ ” . فَقُمْتُ وَلَا شَيْءَ أَكْرَهُ إِلَيَّ مِنَ النَّبِيِّ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – ، وَمَا يَأْمُرُنِي بِهِ ، فَقُمْتُ بَيْنَ يَدَيْ رَسُولِ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – ، فَأَلْقَى عَلَيَّ رَسُولُ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – التَّأْذِينَ هُوَ بِنَفْسِهِ ، فَقَالَ : ” قُلِ : اللَّهُ أَكْبَرُ ، اللَّهُ أَكْبَرُ ، اللَّهُ أَكْبَرُ ، اللَّهُ أَكْبَرُ ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ ، أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ ، أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ ” ثُمَّ قَالَ لِيَ : ” ارْجِعْ فَامْدُدْ مِنْ صَوْتِكَ ” . ثُمَّ قَالَ لِيَ : ” قُلْ : أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ ، أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ ، أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ ، حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ ، حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ ، حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ ، حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ ، اللَّهُ أَكْبَرُ ، اللَّهُ أَكْبَرُ ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ ” . ثُمَّ دَعَانِي حِينَ قَضَيْتُ التَّأْذِينَ ، وَأَعْطَانِي صُرَّةً فِيهَا شَيْءٌ مِنْ فِضَّةٍ ، ثُمَّ وَضَعَ يَدَهُ عَلَى نَاصِيَةِ أَبِي مَحْذُورَةَ ، ثُمَّ أَمَرَّهَا عَلَى وَجْهِهِ ، ثُمَّ أَمَرَّ بَيْنَ ثَدْيَيْهِ ، ثُمَّ عَلَى كَبِدِهِ ، حَتَّى بَلَغَتْ يَدُهُ سُرَّةَ أَبِي مَحْذُورَةَ ، ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – : ” بَارَكَ اللَّهُ فِيكَ ، وَبَارَكَ عَلَيْكَ ” . فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، مُرْنِي بِالتَّأْذِينِ بِمَكَّةَ . فَقَالَ : ” قَدْ أَمَرْتُكَ بِهِ ” وَذَهَبَ كُلُّ شَيْءٍ كَانَ لِرَسُولِ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – مِنْ كَرَاهِيَةٍ ، وَعَادَ ذَلِكَ كُلُّهُ مَحَبَّةً لِلنَّبِيِّ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – ، فَقَدِمْتُ عَلَى عَتَّابِ بْنِ أَسِيدٍ عَامِلِ رَسُولِ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – فَأَذَّنْتُ بِالصَّلَاةِ عَنْ أَمْرِ رَسُولِ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – . قَالَ ابْنُ جُرَيْجٍ : فَأَخْبَرَنِي مَنْ أَدْرَكْتُ مِنْ آلِ أَبِي مَحْذُورَةَ عَلَى نَحْوِ مَا أَخْبَرَنِي ابْنُ مُحَيْرِيزٍ . هَذَا حَدِيثُ الرَّبِيعِ وَلَفْظُهُ


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *