সর্বাবস্থায় ইসলামের মৌলিক বিধানগুলো পালন করতে হবে। এগুলো অস্বীকার করা বা পালন না করে পার পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। এর পাশাপাশি আল্লাহর ভালবাসা ও সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ইসলামের ছোট ছোট নেক আমল গুলোর প্রতিও সমানভাবে গুরুত্বারোপ করতে হবে। সেরকম কিছু আমল আজকের লেখায় তুলে ধরবো ইনশা আল্লাহ।
দয়া-ভালবাসা আর সহানুভূতি সৃষ্টিকারী প্রভূর, দয়া ভালবাসার বিরাট এক অংশ দখল করতে সক্ষম হয়, শরীয়তের ছোট ছোট নেক কাজ গ্রহণ আর ছোট ছোট বদকাজ বর্জন। মাওলার সুরে ঘোষিত হয়-
“অতঃপর যে অণুপরিমাণ নেক কাজ করবে সে তা দেখতে পাবে, আবার যে অণুপরিমাণ বদ কাজ করবে তাও সে দেখতে পাবে” (যিলযাল= ৭-৮)
ছোট্ট আমলগুলোর কারণেই আল্লাহ বান্দাকে ভালবেসে ফেলেন। শরীয়তের সামান্য বিষয় অবহেলা করবেন, তো পড়বেন মহা বিপাকে। যেমনটি দেখা যায়; মুফাস্সিরকুল শিরোমণির রক্ষিত স্মৃতির পাতায়-
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি কবরের পাশ দিয়ে গমনকালে বললেন, নিশ্চই তাদের দু’জনকে আযাব দেয়া হচ্ছে। তবে বড় কোন কারণে তাদের আযাব দেয়া হচ্ছে না! তাদের একজন পেশাব থেকে পবিত্র হত না, অপর জন করতো চোগল খুরি…. (মেশকাত:৩৩৮,বুখারী,মুসলিম)
এজন্যে কোন সামান্য গুনাহকেও ছোট মনে করার সুযোগ নেই। বিন্দু বিন্দু করেই হয় মহা সিন্ধু। ছোট গুনাহ হতে হতে দেখা যাবে গুনার পাহাড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কিছু গুনাহকেতো সভ্য সমাজ গুনাহ বলে মানতে নারাজ। যেমন:- গিবত, শেকায়াত, চুগলখুরী ইত্যদি। আবার অনেকের কাছে সীরাত-সুরাত, লেবাস- পোশাকেরও কোনো গুরুত্ব নেই। অথচ আল্লাহ বলেছেন “তাকওয়ার পোশাকই উত্তম”
কতকে দাড়ির সাথে জুরে আড়ি। মনে করে দাড়ি ফেললেই যেন সে নারীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
হৃদয় গলে সিরিজের ৩৬ নং বইতে পুরুষের দাড়ি নিয়ে এক নারীর অভিমত ছিল এরূপঃ ‘যারা দাড়ি কেটে ফেলে বা শেভ করে তাদের দেখলে কাপুরুষের মতো মনে হয়। গ্রাম্য ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয় “মাইগ্যা”।
দাড়ি মোচ না থাকা হলো মেয়েদের বৈশিষ্ট্য। পুরুষের বৈশিষ্ট্য নয়। পুরুষের বৈশিষ্ট হলো দাড়ি-গোঁফ থাকা। কারণ পুরুষ হলো সিংহের জাতি। সিংহতো শিয়ালের মতো ক্লিন সেভ করা নয়!
আচ্ছা, কেউ যদি মনে মনে ভাবে, ইস! বেচারা সিংহকে কেমন দেখা যায়! পুরো মুখ দাড়ি বেষ্টিত। দাড়ি বা পশমগুলো না থাকলে সিংহকে কত সুন্দর দেখাত! একথা ভেবে যদি সিংহের দাড়িগুলো কেটে পরিষ্কার করে দেয় তাহলে সেই সিংহ কি আর সিংহ থাকবে? নাকি শিয়ালসদৃশ হয়ে যাবে?
তদ্রুপ যে পুরুষ দাড়ি সেভ করে, সে জাতে পুরুষ হয়েও মহিলার সাদৃশ্য হয়ে যায়। আর মহিলা সাদৃশ্যতা কোনো পুরুষকে আর যাই হোক, কোনো অবস্থাতেই বীরপুরুষ বলা যায় না! তাকে বরং কাপুরুষই বলতে হয়।
অপর দিকে ছোট্ট ছোট্ট নেক কাজও ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রেও তো সেই বিন্দু থেকে মহা সিন্ধু থিওরী বিদ্যমান। আবু হোরায়রা রা. থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন নবীজী সা. বলেছেন
“এক যেনাকারীনিকে ক্ষমা করা হয়েছে। সে কুপের কিনারায় এক কুকুরের পাশ দিয়ে গমন করে, কুকুরটি পিপাসার তাড়নায় মৃত প্রায় হয়ে জিহ্বা ঝুলিয়ে দিয়েছে। মহিলা তার মুজা খুলে নিজ ওড়না দিয়ে বেধে (পানি ওঠানোর পর) কুকুরটির জন্য চিপড়িয়ে পানি বের করে (পান করাল) অতঃপর মহিলাকে এ কারণে ক্ষমা করা হল…। (মেশকাত:১৯০২,বুখারী,মুসলিম)
এমনিভাবে গাছ লাগানো, রাস্তা থেকে কষ্ট দায়ক বস্তু সরানো, মুমিনের সাথে হাসিমুখে মিষ্টি বাক্যে কথা বলা অতি উত্তম।
হযরত সোলায়মান আ. বলেন ‘মিষ্টি বাক্য ক্রোধ প্রশমিত করে’। আপনার মিষ্টি বাক্যের ওসিলায় অপর ভাইতো ক্রোধের গুনাহ থেকেও বাচতে পারল!
মাওলায়ে আকরাম বলেন “তোমরা ইসলামে পূর্ণরূপে প্রবেশ কর, শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না” (বাক্বারাহ্:২০৮)
আবার গুনাহ থেকে বেচে থাকাও সওয়াবের কাজ। গুনাহতো আত্মার মৃত্যু ঘটায়। হাসান বসরী র. বলেন আত্মার মৃত্যুই সর্বাপেক্ষা বড় আযাব।
ঈসা নবীর বানী দিয়ে এবার যবনিকা টানি; তিনি বলেন, “আমি মৃতকে (আল্লাহর ইচ্ছায়) পূনর্জীবিত করেছি কিন্তু আহাম্মককে সচেতন করতে ব্যর্থ হয়েছি।”
দয়াবান প্রভূ এমন আহাম্মকের দল থেকে আমাদের হেফাজত করার সাথে সাথে সকলকে উপরিউক্ত কথাগুলো আমলে পরিণত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
দ্বীনি কথা শেয়ার করে আপনিও ইসলাম প্রচারে অংশগ্রহণ করুন।