শ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হচ্ছিল তরুণীর। এমনকি কথাও বলতে সমস্যা হচ্ছিল। ভাঙা ভাঙা গলায় কেবল বলেছিলেন শেষ ইচ্ছার কথা। তিনি জানিয়েছিলেন, মনের মানুষটা যেন একবার তার সিঁথি রাঙিয়ে দেন। প্রেমিকার শেষ ইচ্ছা পূরণে কসুর করেননি সুব্রত। ১০ বছর ধরে তো এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলেন তিনি।মেয়ের কথা মতো, হাসপাতালের ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটেই হয়েছিল ব্যবস্থা। সেখানেই মনের মানুষকে সিদুঁর পরিয়ে আপন করে নিয়েছিলেন। কিন্তু, আটকে রাখতে পারলেন না। সিঁদুর পরিয়ে দেয়ার মাত্র দুই ঘণ্টা পর না ফেরার দেশে চলে গেলেন বীথি।জানা গেছে, ছোটবেলার পরিচয় খুব সহজেই গাঢ় হয়েছিল। ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। সদ্য যৌবনে পা রাখা দুটো মন নিজেদের মতো করে জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখছিল।তবে হঠাৎ জানা গেল, মনের মানুষটা জটিল রোগে আক্রান্ত। ভারতের শিলিগুড়ির ডাবগ্রামের দাস বাড়ির ছোটো মেয়েটাকে দেখে ভালো লেগেছিল উত্তর দিনাজপুরের সুব্রত কুণ্ডুর। সেই ভালোলাগা ভালোবাসায় পরিণত হতে খুব একটা সময় নেয়নি।যখন দুজন এক সঙ্গে অনেকটা পথ পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন দেখছিল, তখনই সামনে আসে বীথির অসুখের কথা। শুরু হয় চিকিৎসা। শুরু হয়েছিল কেমো থেরাপি। যার জেরে মাথায় চুল প্রায় সবটাই উঠে যেতে থাকে। আস্তে আস্তে বুড়িয়ে যেতে থাকেন বীথি।হারিয়ে যেতে থাকে যৌবনের সেই লাবণ্য। তখন ২০১৭ সাল। একটি হাতও কেটে বাদ দিতে হয়। ফুটফুটে মেয়েটা নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকে সকলের কাছ থেকে।কিন্তু, সে দিনও একটি বারের জন্য প্রেমিকার কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখেননি পেশায় বেসরকারি সংস্থার কর্মী সুব্রত। পাশে থেকেছেন, সাহস দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। হাতে হাত ধরে বলেছিলেন লড়াই করার কথা।চিকিৎসার প্রয়োজনে কখনো মুম্বই, কখনো শিলিগুড়ি যেতে হয়েছিল বীথিকে। কখনো বীথিকে সঙ্গ ছাড়া করেননি সুব্রত। প্রথমে না জানলেও ততদিনে সুব্রতর পরিচয় জানা হয়ে গেছে দাস পরিবারের সকলের। এক দিন মেয়ের মোবাইলে চোখ পড়তেই সব স্পষ্ট হয়ে যায় কালিপদ দাসের।বোন ক্যান্সারে আক্রান্ত মেয়ের ভবিষ্যৎ জানলেও সাহস পাননি বাধা দেওয়ার। কিন্তু, বাস্তব আর স্বপ্নের মধ্যে পার্থক্য আকাশ-পাতাল। শক্তি জোগানোর কথা বললেও, বীথির শরীর কিন্তু ধীরে ধীরে শেষ হয়ে আসছিল। হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে।গত শনিবার ঠিক মতো কথাও বলতে পারছিলেন না। বারবার বুজে আসছিল চোখ। চিকিৎসকরাও আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তখনই মুখ ফুটে শেষ ইচ্ছার কথাটা বলেন বীথি। মেয়ের সেই ইচ্ছার মর্যাদা দেন তার বাবা-মা। আয়োজন করা হয় বিয়ের। বীথির নাকে তখন অক্সিজেন মাস্ক।স্বপ্ন পূরণের কিছু মুহূর্ত পরেই বিছানায় ঢলে পড়েন বীথি। তখনো একটা হাত সুব্রতর হাতে ধরা। শরীরটা আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয় পড়তে থাকে। চিকিৎসকরা শেষ চেষ্টা শুরু করার আগেই সব শেষ।চোখের সামনেই বীথিকে শেষ বিদায় দিলেন সুব্রত। মেয়েকে হারালেও যেন একটা ছেলে পেলেন বীথির বাবা-মা। তারা বলেছেন, মেয়ের কঠিন সময় যেভাবে সুব্রত পাশে ছিল, তা কথায় প্রকাশ করতে পারব না। মেয়েকে হারিয়েছি কিন্তু, এমন একটা ছেলেকে পাবো ভাবতেও পারিনি।আর সুব্রতের তখনো চোখের কোণায় চিক চিক করছে বিন্দুগুলো। শত চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হলো না। কথা জড়িয়ে আসছে। একটু যেন একলা থাকতে চাইছেন। চার পাশের পরিবেশটা তখন সুব্রতের কাছে বড্ড অচেনা। তখনো ভাবেননি কী করবেন। বাকি জীবনটা কি একলাই কাটাবেন তিনি। স্মৃতিটুকু সম্বল করে