নামাজ মানুষের জন্য ফরজ ইবাদাত। ফরজ নামাজ ছাড়াও রয়েছে ওয়াজিব, সুন্নাত, নফল নামাজসহ অনেক নামাজ। এ সব নামাজের রুকু, সিজদা, তাশাহহুদ, দরূদসহ অনেক দোয়া ও নিয়ম কানুন রয়েছে। নামাজের শেষ বৈঠকে সালাম ফিরানোর পূর্বেও রয়েছে দোয়া। যা পড়া সুন্নাত। এ ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে অনেকগুলো দোয়ার দিক-নির্দেশনা এসেছে। যার কয়েকটি তুলে ধরা হলো-
১. হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদেরকে এই দোয়া শিক্ষা দিতেন, যেভাবে তাঁদেরকে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন-
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজা-বি ঝাহান্নাম ওয়া আউজুবিকা মিন আজা-বিল ক্ববর, ওয়া আউজুবিকা মিং ফিতনাতিল মাসীহিদ দাঝঝা-ল, ওয়া আউজুবিকা মিং ফিতনাতিল মাহ্ইয়া ওয়াল মামা-ত, আল্লা-হুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল্ মা’ছামি ওয়া মিনাল মাগরাম।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট জাহান্নামের আজব হতে আশ্রয় চাই, কবরের আযাব হতে আশ্রয় চাই, আশ্রয় চাই কানা দাঝঝালের পরীক্ষা ফিতনা থেকে। তোমার নিকট আশ্রয় চাই জীবন ও মৃত্যুর পরীক্ষা হতে এবং তোমার নিকট আশ্রয় চাই পাপ ও ঋণের বোঝা হতে।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)
২. হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললাম, আমাকে একটি দোয়া শিক্ষা দিন, যা আমি আমার ছালাতের মধ্যে পড়ব। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি বল,
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাছিরাও ওয়া লা- ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা- আংতা ফাগফিরলি মাগফিরাতাম মিন্ ইন্দিকা ওয়ার হামনি ইন্নাকা আংতাল গাফুরুর রাহিম।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আমার উপর অত্যধিক অত্যাচার করেছি এবং তুমি ব্যতিত পাপ ক্ষমা করার কেউ নেই। সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। ক্ষমা একমাত্র তোমার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। আমার প্রতি রহম কর। নিশ্চয়ই তুমি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)
৩. হজরত আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহু তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তার পিতা বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দোয়া পড়তেন-
উচ্চারণ : আল্লা-হুম মাগফিরলি মা- ক্বদ্দামতু ওয়ামা- আখখারতু ওয়ামা- আসরারতু ওয়ামা- আ‘লানতু ওয়ামা- আংতা আ’লামু বিহী মিন্নি আংতাল মুক্বাদ্দিমু ওয়া আংতাল মুওয়াখখিরু লা-ইলা-হা ইল্লা- আংতা।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি যে সব গুনাহ ইতিপূর্বে করেছি এবং যা পরে করব, সব তুমি মাফ করে দাও। মাফ করে দাও সেই পাপরাশি, যা আমি গোপনে করেছি, আর যা প্রকাশ্যে করেছি। মাফ কর আমার সীমালংঘনজনিত পাপ সমূহ এবং সেই সব পাপ, যে পাপ সম্বন্ধে তুমি আমার চেয়ে অধিক জান। তুমি যা চাও, তা আগে কর এবং তুমি যা চাও তা পিছনে কর। তুমি আদি, তুমি অনন্ত। তুমি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোন মাবুদ নেই।’ (মুসলিম)
৪. হজরত সাদ ইবনু আবি ওয়াক্কাছ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ শব্দগুলোর দ্বারা পরিত্রাণ চাইতেন-
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বুখলি ওয়া আউজুবিকা মিনাল জুবনি ওয়া আউজুবিকা মিন্ আন্ উরাদ্দা ইলা আরযালিল ও’মুরি ওয়া আউজুবিকা মিং ফিতনাতিদ দুনইয়া ওয়া ‘আউজুবিকা মিন ‘আজাবিল ক্বাবরি।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি কৃপণতা হতে, কাপুরুষতা হতে, বার্ধক্যের চরম দুঃখ-কষ্ট থেকে, দুনিয়ার ফিৎনা-ফাসাদ ও কবরের আযাব হতে।’ (বুখারি, মিশকাত)
৫. হজরত মুআয ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার হাত ধরে বললেন, হে মুআয! নিশ্চয়ই আমি তোমাকে ভালবাসি, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমিও আপনাকে ভালবাসি। তিনি বললেন, মুআয তুমি প্রত্যেক ছালাতের শেষে এই দোয়াটি কখনো ছেড়ো না।
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আ’ইন্নি আ’লা জিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিক।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনাকে স্মরণ করার জন্য, আপনার শুকরিয়া আদায় করার জন্য এবং আপনার সুন্দর ইবাদত করার জন্য আমাকে সাহায্য করুন (মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ, নাসাঈ, মিশকাত)
৬. হজরত বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন লোককে বলতে শুনলেন-
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নি আস্আলুকা বিআন্নি আশহাদু আন্নাকা আংতাল্লা-হু লা- ইলা-হা ইল্লা- আংতাল আহাদুসসামাদুল্লাজি লাম্ ইয়ালিদ্ ওয়া লাম্ ইউলাদ্ ওয়া লাম্ ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট চাই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি একমাত্র তুমিই আল্লাহ। তুমি ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই। তুমি একক অমুখাপেক্ষী। যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কারো থেকে জন্ম নেননি। তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।’ (আবু দাউদ)
তারপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, অবশ্যই সে আল্লার্হ এমন নামে ডেকেছে, যে নামে চাওয়া হলে প্রদান করেন এবং প্রার্থনা করা হলে কবুল করেন।
লক্ষণীয় বিষয়…
প্রকাশ থাকে যে, ছালাতের মধ্যে সালাম ফিরানোর পূর্বে কুরআন হাদিস থেকে যে কোন দোয়া পড়া বৈধ। (বুখারি) তবে ছালাতের মধ্যে আপন আপন ভাষায় দোয়া করা যাবে না। এমনকি আরবিতেও নিজের বা কারো বানানো দোয়া পাঠ করা যাবে না এবং কুরআন ও হাদিসে প্রমাণিত দোয়াগুলো অনুবাদ করে পড়াও চলবে না। কেননা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের ভাষাকে ছালাতের মধ্যে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই ছালাত মানুষের কথাবার্তা বলার ক্ষেত্র নয়। এটাতো কেবল তাসবিহ, তাকবির ও কুরআন তিলাওয়াতের জন্যই সুনির্দিষ্ট।’ (মুসলিম,আবু দাউদ, নাসাঈ, মুসনাদে আহমদ)
পরিশেষে…
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে উপরোল্লিখিত দোয়াগুলো থেকে যে কোনোটিই পড়ার মাধ্যমে আল্লাহ সাহায্য কামনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
জাগো ইসলামে লেখা পাঠাতে ই-মেইল : [email protected]
জাগোনিউজ২৪.কমের সঙ্গে থাকুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।