আরাফাতের ময়দানে হাজিরা
আরাফাতের ময়দান থেকে: জিলহজের ৯ তারিখকে আরাফা দিবস বলা হয়। আল্লাহ তায়ালার কাছে এ দিনটি সর্বোত্তম এবং প্রিয়।
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, আরাফার দিবসে আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদেরকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।
এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘এরপর তোমরাও সে জায়গা (আরাফা) থেকে প্রত্যাবর্তন করো।
যেখান থেকে সব মানুষ প্রত্যাবর্তন করে। আল্লাহতায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। -সূরা বাকারা: ১৯৯।
আরাফাতের ময়দান হারাম এলাকার বাহিরে অবস্থিত। এটা কাবা শরিফ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে মসজিদুল হারাম হতে ২২ কিলোমিটার দূরে ১০.৪ কি.মি. বিস্তৃত এক ময়দানের নাম। এ ময়দানে চতুর্দিকে সীমানা নির্ধারণমূলক উঁচু ফলক রয়েছে।
আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের শর্ত
আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের শর্ত তিনটি। যথা-
১. আরাফাতের অবস্থান বিশুদ্ধ হওয়া। অর্থাৎ এমন হজ ও ওমরার ইহরামে থাকা যার মধ্যে হজ বাতিল ও ফাসেদ হওয়ার কোনো জিনিস পাওয়া যাবে না। সুতরাং কোনো ব্যক্তি যদি ইহরাম ছাড়া অবস্থান করে অথবা ওমরার ইহরাম বেঁধে অবস্থান করে বা হজ বাতিল হওয়ার পর এক বৎসর ইহরাম অবস্থায় থেকে নতুন ইহরাম না বেঁধে সেই পুরানো ইহরাম দ্বারা আরাফায় অবস্থান করে তবে তার অবস্থান শুদ্ধ হবে না।
তদ্রুপ কোনো ব্যক্তি হজের ইহরাম বেঁধে আরাফাতে অবস্থানের পূর্বেই স্বামী-স্ত্রী পরস্পরে সহবাস করে তাহলেও তাদের ইহরাম ফাসেদ হয়ে যায়। তাদের অবস্থান শুদ্ধ হবে না। যদিও হাজিদের মতো হজের অবশিষ্ট কাজগুলো করা তার জন্য অপরিহার্য।
আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের স্থান
বাতনে উরনা ছাড়া আরাফাতের সমগ্র অঞ্চল। কেউ অজ্ঞতাবশত বা ভুল করেও যদি আরাফার বাহিরে অবস্থান করে তবুও অবস্থান শুদ্ধ হবে না।
দুঃখজনক হলেও সত্য, অনেক হজপালনকারী অজ্ঞতাবশত আরাফার বাইরে অবস্থান করে। তাই আমাদের পরামর্শ হলো- আরাফার সীমানার শুরু এবং শেষের সাইনবোর্ড দেখে অবস্থান করতে হবে।
অবস্থানের সময়
৯ জিলহজ সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ার পর থেকে ১০ জিলহজ সুবহে সাদিক উদয়ের পূর্ব পর্যন্ত চলমান থাকে। এই সময়ের মধ্যে যে কেউ কিছুক্ষণের জন্য হলেও আরাফায় অবস্থান করলে তার অবস্থান সহিহ হয়ে যায়।
অবস্থানের ওয়াজিবসমূহ
১. যে ব্যক্তি দিনের বেলায় অর্থাৎ সূর্যাস্তের পূর্বে অবস্থান করেন, তার জন্য ওয়াজিব হলো- অবস্থানের সময়টিকে সূর্যাস্তের কিছু পর পর্যন্ত দীর্ঘায়িত করা। যেন রাতেরও যৎসামান্য অংশ অবস্থানে এসে যায়।
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি রাতে অবস্থান করে তার জন্য ওয়াজিব আদায়ের সময় থাকে না। ফরজ আদায়ের জন্য নির্ধারিত সময়ের কোনো এক মুহূর্তে অবস্থান করলে বা আরাফার ময়দানের ওপর দিয়ে অতিক্রম করলে যথেষ্ট হয়ে যায় কিংবা সূর্যাস্তের পূর্বে আরাফার সীমানা অতিক্রম করলে দম ওয়াজিব হবে। অসুস্থ, অক্ষম, দুর্বল এবং নারীরা ভিড় এড়ানোর জন্য এমনটি করলে তাদেরকে দম (ক্ষতিপূরণ) দিতে হবে।
২. ৯ জিলহজ ফজর থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরে একবার তাকরিরে তাশরিক বলা ওয়াজিব। যারা হাজি নন তাদের জন্যও এটা ওয়াজিব।
আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের সুন্নতসমূহ
১. অবস্থানের জন্য গোসল করা।
২. জোহর ও আসর একত্রে পড়ার পর দ্রুত অবস্থান করা।
৩. আরাফা থেকে ইমামের সঙ্গে রওয়ানা হওয়া এবং ইমামের পূর্বে রওয়ানা না হওয়া।
৪. সূর্যাস্তের পর রাতের একটি অংশ অবস্থান করা, সঙ্গে সঙ্গে রওয়ানা না দেওয়া।
অবস্থানের মুস্তাহাব
১. তালবিয়া, তাকবির, দোয়া, জিকির, কোরআন তেলাওয়াত ও দুরূদ শরিফ অধিক পরিমাণে পাঠ করা।
২. দোয়া কবুলের আশা রাখা।
৩. খুব অনুনয়-বিনয় ও কাকুতি-মিনতি সহকারে দোয়া করা, দোয়ায় খুব কান্নাকাটি ও ইস্তিগফার করা।
৪. ইমামের পেছনে ও কাছাকাছি দাঁড়ানো।
৫. সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ার পূর্বে অবস্থানের প্রস্তুতি নেওয়া।
৬. অবস্থানের নিয়ত করা।
৭. যথাসম্ভব দাঁড়িয়ে অবস্থান করা। অসুস্থ ও ক্লান্ত হলে বসে অবস্থান করা।
৮. অসুস্থ হয়ে পড়ার আশংকা থাকলে ছায়া ও তাঁবুর মধ্যে অবস্থান করা।
৯. দোয়ার সময় উভয় হাত আকাশের দিকে তোলা।
১০. দোয়ার শুরুতে ও শেষে আল্লাহতায়ালার প্রশংসা ও নবী করিম (সা.)-এর প্রতি দরূদ শরিফ পাঠ করা।