ইবরাহীম (আ.), সারা ও অত্যাচারী বাদশাহ


আবূ হুরায়রা (রা.) হ’তে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবরাহীম (আ.) তিনবার ছাড়া কখনও মিথ্যা বলেননি। তন্মধ্যে দু’বার ছিল আল্লাহ্‌র ব্যাপারে। তার উক্তি ‘আমি অসুস্থ’ (ছাফফাত ৮৯) এবং তাঁর অন্য এক উক্তি ‘বরং এ কাজ করেছে, এই তো তাদের বড়টি’ (আম্বিয়া ৬৩)। বর্ণনাকারী বলেন, একদা তিনি [ইবরাহীম (আ.)] এবং সারা অত্যাচারী শাসকগণের কোন এক শাসকের এলাকায় এসে পৌঁছলেন।

তখন তাকে খবর দেয়া হল যে, এ এলাকায় জনৈক ব্যক্তি এসেছে। তার সঙ্গে একজন সবচেয়ে সুন্দরী মহিলা আছে। তখন সে তাঁর নিকট লোক পাঠাল। সে তাঁকে নারীটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল, এ নারীটি কে? তিনি উত্তর দিলেন, মহিলাটি আমার বোন। অতঃপর তিনি সারার নিকট আসলেন এবং বললেন, হে সারা! তুমি আর আমি ব্যতীত পৃথিবীতে আর কোন মু’মিন নেই।

এ লোকটি আমাকে তোমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিল। তখন আমি তাকে জানিয়েছি যে, তুমি আমার বোন। কাজেই তুমি আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করো না। অতঃপর বাদশাহ সারাকে আনার জন্য লোক পাঠাল। তিনি তার নিকট প্রবেশ করলেন এবং রাজা তার দিকে হাত বাড়াল। সারা অযূ করে ছালাত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন এবং এ দো‘আ করলেন, হে আল্লাহ!

আমিতোমার উপর এবং তোমার রাসূলের উপর ঈমান এনেছি এবং আমার স্বামী ব্যতীত অন্যদের থেকে আমার লজ্জাস্থানকে সংরক্ষণ করেছি। তুমি এই কাফেরকে আমার উপর ক্ষমতা দিও না। তখন রাজা বেহুঁশ হয়ে পড়ে মাটিতে পা দ্বারা আঘাত করতে লাগল। অতঃপর সারা বললেন, হে আল্লাহ!

এ যদি মৃত্যুবরণ করে তবে লোকেরা বলবে, মহিলাটি একে হত্যা করেছে। তখন সে জ্ঞান ফিরে পেল। এ ঘটনা আরো দু’বার বা তিনবার ঘটার পর রাজা তার এক দারোয়ানকে ডেকে বলল, তুমি তো আমার নিকট কোন মানুষ আননি। বরং এনেছ এক শয়তান। অতঃপর রাজা সারার খিদমতের জন্য হাজেরাকে দান করল।

অতঃপর তিনি (সারা) তাঁর (ইবরাহীম) নিকট আসলেন, তিনি দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করছিলেন। তখন তিনি হাত দ্বারা ইশারা করে সারাকে বললেন, কি ঘটেছে? তখন সারা বললেন, আল্লাহ কাফির বা ফাসিকের চক্রান্ত তারই বুকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আর সে হাজেরাকে খিদমতের জন্য দান করেছে। আবূ হুরায়রা (রা.) বলেন, হে আকাশের পানির (যমযম) ছেলেরা! হাজেরাই তোমাদের আদি মাতা।

(বুখারী হা/২২১৭, ৩৩৫৮ ‘নবীদের কাহিনী’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৮, মিশকাত হা/৫৭০৪)।

শিক্ষা :
১. আল্লাহ তাঁর একনিষ্ঠ বান্দাদেরকে যাবতীয় বিপদ থেকে রক্ষা করেন।
২. সারার ঈমান ও চারিত্রিক দৃঢ়তা সকল মুসলিম রমণীর জন্য অনুকরণীয়।
৩. প্রকৃত ঈমানদারদের সংখ্যা সর্বদা কমই হয়ে থাকে। তাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্যের মানদণ্ড নয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *