ঈমানের মৌলিক বিষয়াবলীর অন্যতম হচ্ছে তাক্বদীরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। সৃষ্টির পঞ্চাশ হাযার বছর পূর্বে মহান আল্লাহ মানুষের তাক্বদীর লিখে রেখেছেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ হিসাবে তিনি ভাগ্যলিপি লিখে রেখেছেন। মুমিনের কর্তব্য হচ্ছে তাক্বদীরের উপরে দৃঢ় বিশ্বাস রাখা। এই বিশ্বাস সম্পর্কেই নিম্নের হাদীছ।-
আবুছ ছালাত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ওমর ইবনে আব্দুল আযীয (রহঃ)-এর কাছে তাক্বদীর (নিয়তি) সম্পর্কে জানতে চেয়ে চিঠি লিখে। উত্তরে তিনি লিখেন, অতঃপর আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, আল্লাহকে ভয় কর, ভারসাম্যপূর্ণভাবে তাঁর হুকুম পালন কর, নবী করীম (ছাঃ)-এর আদর্শ ও সুন্নাতের অনুসরণ কর, তাঁর আদর্শ প্রতিষ্ঠা লাভের ও সংরক্ষিত হওয়ার পর বিদ‘আতীদের আচার-অনুষ্ঠান ত্যাগ কর। সুন্নাতকে অাঁকড়ে ধরা তোমার কর্তব্য।
কেননা এ সুন্নাত তোমাদের জন্য আল্লাহ্র অনুমতিক্রমে রক্ষাকবয। তারপর জেনে রাখো! মানুষ এমন কোন বিদ‘আত আবিষ্কার করেনি যার বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে কোন দলীল-প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হয়নি বা তার বিরুদ্ধে এমন কোন শিক্ষা নেই যা তার ভ্রান্তি প্রমাণ করেন। কেননা সুন্নাতকে এমন এক ব্যক্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন, যিনি সুন্নাতের বিপরীত সম্বন্ধে অবগত। আর ইবনে ফাসির তার বর্ণনায়- ‘তিনি অবগত ছিলেন ভুল-ত্রুটি, অজ্ঞতা ও গোঁড়ামি সম্পর্কে’ একথাগুলো উল্লেখ করেননি।
কাজেই তুমি নিজের জন্য ঐ পথ বেছে নাও, যা অবলম্বন করেছেন তোমার পূর্ববর্তী মহাপুরুষগণ তাদের নিজেদের জন্য। কারণ তারা যা জানতে পেরেছেন তার পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করেছেন এবং তীক্ষ্ণ দূরদর্শিতার সাথে বিরত রয়েছেন; তারা দ্বীনের ব্যাপারসমূহে পারদর্শী ছিলেন। আর যা করতে তারা নিষেধ করেছেন, তা জেনে-শুনেই নিষেধ করেছেন। তারা দ্বীনের অর্থ উপলব্ধির ক্ষেত্রে আমাদের চেয়ে অনেক মেধাবী ছিলেন।
আর তোমাদের মতাদর্শ যদি সঠিক হয়, তাহ’লে তোমরা তাদেরকে ডিঙ্গিয়ে গেলে। আর যদি তোমরা বল যে, তারা দ্বীনের মধ্যে নতুন কথা উদ্ভাবন করেছেন, তবে বলব, পূর্বকালের লোকজনই উত্তম ছিলেন এবং তারা এদের তুলনায় অগ্রগামী ছিলেন। যতটুকু বর্ণনা করার তা তারা বর্ণনা করেছেন, আর যতটুকু বলা প্রয়োজন তা তারা বলেছেন। এর অতিরিক্তও কিছু বলার নেই এবং এর কমও বলার নেই।
অপর এক সম্প্রদায় তাদেরকে উপেক্ষা করে কিছু কমিয়েছে, তারা সঠিক পথ থেকে সরে গেছে এবং যারা বাড়িয়েছে তারা সীমালঙ্ঘন করেছে। আর পূর্ববর্তী মহাপুরুষগণ ছিলেন এর মাঝামাঝি সঠিক পথের অনুসারী। পত্রে তুমি তাক্বদীরে বিশ্বাস ও স্বীকার করা সম্পর্কে জানতে চেয়ে (আমাকে) লিখেছ। আল্লাহ্র কৃপায় তুমি এমন ব্যক্তির কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছ, যিনি এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ।
আমার জানামতে, তাক্বদীরে বিশ্বাসের উপর বিদ‘আতীদের নবতর মতবাদ প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। এটা কোন নতুন ব্যাপার নয়; জাহিলিয়াতের সময়ও এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। জাহেল বা অজ্ঞ লোকেরা তখনও তাদের আলাপ-আলোচনা ও কবিতায় এ ব্যাপারে উল্লেখ করত এবং তাদের ব্যর্থতার জন্য তাক্বদীরকে দায়ী করত। ইসলাম এসে এ ধারণাকে আরো বদ্ধমূল করেছে এবং এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অনেক হাদীছ উল্লেখ করেছেন।
আর মুসলমানগণ তাঁর নিকট সরাসরি শুনেছে এবং তাঁর জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পরে পরস্পর আলোচনা করেছে- তারা অন্তরে বিশ্বাস রেখে, তাদের প্রভুর প্রতি আত্মসমর্পণ করে, নিজেদেরকে অক্ষম মনে করে এ বিশ্বাস স্থাপন করেছে যে, এমন কোন বস্ত্ত নেই যা আল্লাহ্র জ্ঞান, কিতাব ও তাক্বদীর বহির্ভূত। এতদ্ব্যতীত তা আল্লাহ্র অমোঘ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ রয়েছে। আর যদি তোমরা বল, কেন আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেছেন এবং কেন একথা বলেছেন, তবে জেনে রাখো!
তারাও কিতাবের ঐসব বিষয় পড়েছেন যা তোমরা পড়ছ। উপরন্তু তারা সেসব ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সম্পর্কে অবহিত ছিলেন যা তোমরা জান না। এতদসত্ত্বেও তারা বলেছেন, সবকিছু আল্লাহ্র কিতাব ও তাক্বদীর অনুযায়ী সংঘটিত হয়ে থাকে। আল্লাহ যা নির্ধারণ করেছেন তা অবশ্যই ঘটবে, আল্লাহ যা চান তাই হয় এবং যা চান না তা হয় না। লাভ বা ক্ষতি কোন কিছুই আমরা নিজেদের জন্য করতে সক্ষম নই। এরপর তারা ভালো কাজের প্রতি উৎসাহী ও খারাপ কাজের ব্যাপারে সন্ত্রস্ত থেকেছেন। (আবু দাঊদ হা/৪৬১২; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩০, আলোচনা দ্রঃ, সনদ ছহীহ)।
ওমর ইবনু আব্দুল আযীয (রহঃ) তাক্বদীরের প্রতি ছাহাবায়ে কেরামের ঈমানী দৃঢ়তা তুলে ধরে তাঁর নিকটে লিখিত পত্রের উত্তর দিয়েছেন। ছাহাবায়ে কেরাম ছিলেন ইসলামের বিভিন্ন বিধান সম্বলিত অহী নাযিলের প্রত্যক্ষদর্শী এবং রাসূলের নিকট থেকে আগত শারঈ নির্দেশের সরাসরি শ্রোতা। তাক্বদীরের প্রতি তাঁদের যেমন সুদৃঢ় ঈমান ছিল, মুমিনদেরকে অনুরূপ ঈমান পোষণ করতে হবে। তাহ’লে আমরা ইহকাল ও পরকালে সফলকাম হ’তে পারব। আল্লাহ আমাদের তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!